গন্তব্য যদি হয় খানিকটা দূরে, আর হাতে যদি থাকে সারা দিনের সময়, তাহলে ঘুরে আসতে পারেন নারায়ণগঞ্জের জিন্দা পার্ক (Zinda Park) থেকে। ঢাকাতে সময় কাটানোর মতো অনেক পার্ক আছে,তবে নোংরামি ও অশ্লীলতার কারনে পার্কগুলোতে যেতে এখন মানুষের ভয় করে৷ ঢাকার যানযট, কোলাহল থেকে কিছুক্ষনের জন্য মুক্তি পেতে হলে ঘুড়ে আসা উচিত জিন্দা পার্ক থেকে৷ অসাধারন স্থাপত্যশৈলীর ব্যাবহার ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পার্কটিতে৷ পার্কটি কোন সরকারি উদ্যাগের ফসল নয়। আবার কোন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নির্মাণও নয়। পার্কটি তৈরী হয়েছে এলাকাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং তাদের প্রাণান্ত অংশগ্রহনের মাধ্যমে। এলাকার ৫০০০ সদস্য নিয়ে “অগ্রপথিক পল্লী সমিতি” ১৯৮০ সালে যাত্রা শুরু করে। এ দীর্ঘ ৩৫ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম আর ত্যাগের ফসল এই পার্কটি। এ রকম মহাউদ্দেশ্য, এত লোকের সক্রিয় অংশগ্রহন এবং ত্যাগ স্বীকারের উদাহারণ খুব কমই দেখা যায়। অপস ক্যাবিনেট, অপস সংসদ এবং অপস কমিশন নামে পার্কটিতে ৩টি পরিচালনা পর্ষদ রয়েছে। বর্তমানে জিন্দা গ্রামটিকে একটি আদর্শ গ্রাম ও বলা হয়৷
জিন্দা পার্ক এর অবস্থান নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। প্রায় ১০০ বিঘা জায়গা জুড়ে গড়ে ওঠা জিন্দা পার্কে রয়েছে একটি কমিউনিটি স্কুল, কমিউনিটি ক্লিনিক, নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী বিশিষ্ট একটি লাইব্রেরি, মসজিদ, ঈদগাহ, কবরস্থান, রয়েছে একটি রেস্তোরা। ২৫০ প্রজাতির ১০ হাজারের বেশী গাছ-গাছালী আছে পার্কটিতে। গাছের এই সমারোহ এর পরিবেশকে করেছে শান্তিময় সবুজ, কলকাকলীতে মুখর করেছে অসংখ্য পাখীরা। শীতল আবেশ এনেছে ৫ টি সুবিশাল লেক। তাই গরম যতই হোক পার্কের পরিবেশ আপনাকে দেবে শান্তির ছোঁয়া।
ফ্যামিলি পিকনিকের জন্য জিন্দা পার্ক এখন বেশ পরিচিত জায়গা। কাঠের ব্রিজ পার হয়ে দিঘির মাঝামাঝি তৈরি করা বাঁশের টি রুমে বসে প্রিয়জনের সঙ্গে এক কাপ চা কিংবা জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকার সময়গুলো দারুণ উপভোগ করবেন। সঙ্গে গাড়ি না থাকলেও সমস্যা নেই। বাড়ি ফেরার জন্য পার্কের সামনেই পাবেন গাড়ি, সিএনজি। আর হ্যাঁ, পিকনিক করতে চাইলে দু-তিন দিন আগেই যোগাযোগ করুন। পিকনিকের খাবারের ব্যবস্থা পার্ক কর্তৃপক্ষই করে।
জিন্দা পার্কে প্রবেশের টিকিট মূল্য প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিজন ১০০ টাকা। ৫ বছরের নিচে ছোট বাচ্চাদের টিকেট ৫০ টাকা। খাবার নিয়ে প্রবেশ করলে টিকিটের মুল্য হবে ১২৫টাকা। এছাড়া লাইব্রেরিতে প্রবেশমুল্য ২৫ টাকা এবং পুকুরে নৌকায় ঘুরে বেড়াতে পারেন, খরচ পড়বে ৩০ মিনিট ২০০ টাকা।
পার্কিং খরচ গাড়ি ভেদে ৫০/- থেকে ১০০ টাকা।
ঢাকা থেকে জিন্দা পার্ক এর দূরত্ব ৩৭ কিঃ মিঃ। ঢাকার যেখানেই থাকুন না কেন প্রথমেই চলে যান কুড়িল বিশ্বরোড। কুড়িলের বিআরটিসি বাস কাউন্টার থেকে কাঞ্চন ব্রিজের টিকিট কেটে নামতে হবে কাঞ্চন ব্রিজ। এ পর্যন্ত ভাড়া পড়বে ২৫ টাকা। কাঞ্চন ব্রিজ থেকে জিন্দা পার্ক বাইপাসে যেতে লেগুনা বা অটোতো গুনতে হবে ২০-৩০ টাকা। বাইপাসে নেমে ডিরেকশন অনুযায়ী হেটেই পৌছাতে পারবেন পার্কের গেট পর্যন্ত। তবে রিক্সায় গেলে ভাড়া পড়বে ৮০-১০০ টাকা। রিক্সা করে সরাসরি পার্কের গেটে চলে যেতে পারবেন।
ফেরার সময় একইভাবে অটো বা রিক্সায় কাঞ্চন ব্রীজ চলে আস্তে হবে। সেখান থেকে বিআরটিসি বাসে কুড়িল বিশ্বরোড। কাঞ্চন ব্রিজ থেকে ১৫ মিনিট পর পর বাস পাবেন।
এছাড়া কুড়িল বিশ্বরোড থেকে সিএনজি নিয়েও সরাসরি পার্কে যাওয়া যায়, ভাড়া ৪০০ টাকা।
খাওয়ার জন্য পার্ক এর ভিতর মহুয়া স্ন্যাকস অ্যান্ড মহুয়া ফুডস রেস্টুরেন্ট আছে। এখানে বিভিন্ন রকম দেশীয় খাবার পাওয়া যায়, যার প্যাকেজ মূল্য জনপ্রতি ২২০ টাকা থেকে ৬৭০ টাকা। পিকনিক এর জন্যও এখানে খাবার অর্ডার দেয়া যায়। সেক্ষেত্রে নির্ধারিত দিনের অন্তত একদিন পূর্বে অর্ডার নিশ্চিত করতে হবে। যোগাযোগ: 01715025083, 01716260908
এছাড়া জিন্দা পার্ক থেকে বের হয়ে পার্কের ঠিক সামনের রাস্তায় অবস্থিত “নাহার হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে” খাওয়া দাওয়া সারতে পারেন। জনপ্রতি ১৫০/- থেকে ২০০/- বেশ ভালো মানের লাঞ্চ করতে পারবেন।
তবে পার্কে ঘুরা শেষে ৩০০ ফিট এসে খেলে ভালো হয়। ৩০০ ফিটে খাওয়া ভালো এবং খরচও কম হবে। তবে বাহিরে থেকে খাবার নিয়ে পার্কে যেতে চাইলে অতিরিক্ত ২৫/- জন প্রতি দিতে হবে।
জিন্দা পার্ক এ ঘুরতে ঘুরতে যদি কখনও মনে হয় যে রাতে থেকে যেতে পারলে মন্দ হতো না, সেক্ষেত্রেও কোন চিন্তার কারন নেই। কারন রাতে থাকার জন্যে আছে মহুয়া গেস্ট হাউজ।
ওয়েবসাইটঃ http://zindapark.com
ই-মেইলঃ shahin.swd007@gmail.com
ফোনঃ +৮৮০ ১৭১৬২৬০৯০৮, +৮৮০ ১৭১৫০২৫০৮৩, +৮৮০ ১৮১৬০৭০৩৭৭
Leave a Comment