মহামায়া লেক (Mohamaya Lake) বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হৃদ যা চট্রগ্রামের মিরসরাই এ অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ১১ বর্গ কিলোমিটার। মিরসরাই উপজেলার ৮ নম্বর দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদিঘী বাজার থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে তোলা ১১ বর্গ কিলোমিটারের কৃত্রিম লেক নিয়ে গঠিত মহামায়া লেক। আপনি যদি এই যায়গায় না যান তবে মনে করবেন আপনার চট্রগ্রাম সফরটাই বৃথা! মহামায়া লেক একটি প্রাকৃতিক লেক বিশাল এলাকা জুড়ে পাহাড়ি লেকের পানি দিয়ে এই এলাকা গঠিত। এখানে রয়েছে অসাধারণ পাহাড়ি গুহা, রাবার ড্যাম এবং ঝর্ণা। আপনি বোটে করে লেক পার হয়ে দূর পাহাড়ে অবস্থিত ঝর্ণার শীতল পানির ছোঁয়া নিয়ে আসতে পারেন। মহামায়া লেকের ঝর্ণার পানিতে গোসল করার অনুভূতি অসাধারণ। এই প্রকল্প বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে, এটি লেকের পানি থেকে পার্শ্ববর্তী এলাকার সেঁচের পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে এবং ভবিষ্যতে জল বিদ্যুৎ প্রকল্প করার জন্য এই প্রোজেক্ট হাত নিয়েছে।
মহামায়া লেকে প্রবেশের জন্যে ১০ টাকা দিয়ে টিকেট কাটতে হবে।
কায়াকিং (kayaking) এর মজার অভিজ্ঞতা নিতে ঘুরে বেড়াতে পারবেন মহামায়া লেকের মাঝে ৮ কিলোমিটার। ঘন্টা প্রতি খরচ হবে মাত্র ৩০০ টাকা। ছাত্রদের জন্য এই খরচ আরও কম। মাত্র ২০০ টাকা তবে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড দেখাতে হবে। এক কায়াকে চড়া যাবে ২ জন। ৩জনের বোট ঘন্টা ৪৫০ টাকা এবং আধা ঘন্টা ৩০০ টাকা। সকাল সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫ঃ৩০ পর্যন্ত কায়াকিং করা যায়। সবার জন্য লাইফ জ্যাকেট থাকবে, তাই যারা সাতাঁর পারেন না তারাও কায়াকিং করতে পারবেন।
এছাড়া মহামায়া লেকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ইঞ্জিন চালিত বোট আছে। মাঝারি মানের ইঞ্জিন চালিত বোটে ঘন্টা প্রতি ভাড়া পড়বে ৮০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত। একসাথে ৮-১০ জন উঠতে পারবেন এই বোটে। আর বড় বোটে ঘন্টা প্রতি ভাড়া পড়বে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। এসব বোটে একসাথে ১৫-২০ জন উঠতে পারবেন।
প্যাকেজে যা যা থাকছে
প্যাকেজে যা যা থাকছে না
কিছু দরকারী তথ্য
ঢাকা-চট্টগ্রামের যেকেনো বাসে করে সরাসরি নামতে হবে চট্টগ্রামের মিরসরাইতে। সেখান থেকে সিএনজি চালিতে অটো রিকশা কিংবা হিউম্যান হলারে করে আসতে পারবেন লেকে। অটোরিকশায় ভাড়া পড়বে একশো টাকা। এছাড়া লোকাল চলাচলরত হিউম্যান হলারে চড়ে যেতে পারেনে। ভাড়া পড়বে ১০ টাকা।
সিলেট থেকে সড়ক ও রেলপথে চট্টগ্রাম আসা যায়। সড়কপথে গ্রিনলাইন পরিবহনের এসি, নন এসি বাস যায় চট্টগ্রাম। এছাড়া সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে সপ্তাহের শনিবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে আন্তনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস, সপ্তাহের রবিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টা ২০ মিনিটে আন্তনগর উদয়ন এক্সপ্রেস এবং সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০টা ৩০ মিনিটে মেইল ট্রেন জালালাবাদ এক্সপ্রেস ছেড়ে যায় চট্টগ্রামের উদ্দেশে। ভাড়া ১৭৫ থেকে ১২০০ টাকা।
ট্রেনে ঢাকা-চট্টগ্রামের রুটে মহানগর প্রভাতী ঢাকা ছাড়ে সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে, চট্টলা এক্সপ্রেস সকাল ৯টা ২০ মিনিটে, মহানগর গোধূলি ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৩টায়, সুবর্ণ এক্সপ্রেস ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে, তূর্ণা ঢাকা ছাড়ে রাত ১১টায়। ভাড়া ১৬০ থেকে ১১০০ টাকা।
ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমান (০২-৯৫৬০১৫১-১০), জিএমজি এয়ারলাইনস (০২-৮৯২২২৪৮) ও ইউনাইটেড এয়ার (০২-৮৯৫৭৬৪০), রিজেন্ট এয়ারে (০২-৮৯৫৩০০৩) সরাসরি চিটাগং যাওয়া যায়।
আপনি চট্রগ্রাম নগরীর মাদার বাড়ি এলাকা থেকে সরাসরি বাস সার্ভিসে করে চলে যেতে পারেন মহামায়া লেকে। কিংবা অলংকার সিটি গেইট থেকে যেকোনো লোকাল বাসে করেও যেতে পারবেন সময় লাগবে ১ ঘন্টা। ভাড়া ৪০ থেকে ৭০ টাকা। আর নিজে যদি আলাদা যেতে চান তবে সিএনজি অটো রিক্সা কিংবা মাইক্রোবাস মিনি কারে করে যেতে পারবেন সেক্ষেত্রে ভাড়া আশা যাওয়া ১০০০ থেকে ১৪০০ নিতে পারে। শহর থেকে গাড়িতে আপনাকে মিরসরাই থানার ঠাকুর দিঘী নামক বাজারে নামতে হবে। সেখান থেকে পায়ে হাটা পথ, সাথে গাড়ি থাকলে কথাই নেই।
ঢাকা থেকে আন্তঃনগর ট্রেনে আসলে ফেনী রেলওয়ে স্টেশন নামত হবে, তারপর স্টেশন থেকে ইজিবাইকে করে মহিপাল বাসস্ট্য্যান্ড তারপর চট্টগ্রামগামী যে কোন বাস থেকে ঠাকুরদীঘি বাজার আসতে হবে ভারা-৩০/৪০ টাকা, বাজার থেকে সিনজিতে জনপ্রতি ১৫ টাকা টাকা ভাড়াই মহামায়া ইকোপার্কের মেইন গেইট।
মহামায়া লেকে তাঁবুতে থাকতে পারেন। তবে মহামায়াতে ক্যাম্পিং এ মেয়েদের থাকার অনুমতি নেই, কেবলমাত্র ছেলেরা থাকতে পারবে। এছাড়া মিরসরাই এ থাকার মত তেমন ভালো কোন আবাসিক হোটেল নেই। থাকতে চাইলে মিরসরাই এর কাছে সীতাকুণ্ডে কিছু সাধারণ মানের হোটেল আছে সেখানে থাকতে পারবেন।
সীতাকুন্ড কাঁচা বাজার এলাকায় এবং সীতাকুণ্ড থানা সংলগ্ন এলাকায় মোটামুটি মানের অল্পকিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে যাদের মধ্যে হোটেল কম্পোট জোন, জলসা, নিউ সৌদিয়া, সৌদিয়া, সায়মন উল্লেখযোগ্য। হোটেল কম্পোট জোন, জলসা, নিউ সৌদিয়া অপেক্ষাকৃত নতুন এবং মান ভালো। এদের রুম ভাড়া এসি ডাবল বেড – ১০০০ টাকা এবং নন এসি ৫০০-৭০০ টাকার মধ্যে।
হোটেল সৌদিয়ায় ৬০০ থেকে ১৬০০ টাকায় বিভিন্ন মানের রুম পাবেন এবং সাইমুন ও অন্য আবাসিক হোটেলে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকায় থাকতে পারবেন। হোটেল সৌদিয়ায় বুকিং দিতে ফোন করতে পারেন 01991-787979, 01816-518119 নাম্বারে। তবে আরো ভালো কোথাও থাকতে চাইলে আপনাকে চট্রগ্রাম শহরে চলে যাওয়াই উত্তম। মিরসরাই থেকে চট্রগ্রাম যেতে ১ঘন্টা ৩০ মিনিটের মত লাগবে। অংলকার মোড়ে মোটামুটি মানের থাকার মত হোটেল পাবেন। অথবা চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এর স্টেশন রোড এলাকায় বিভিন্ন মানের হোটেল আছে, পছন্দ মতো কোন এক হোটেলে রাত্রিযাপন করতে পারেন।
চট্টগ্রামে নানান মানের হোটেল আছে। নীচে কয়েকটি বাজেট হোটেলে নাম ঠিকানা দেয়া হলো। এগুলোই সবই মান সম্পন্ন কিন্তু কম বাজেটের হোটেল।
Leave a Comment