ঝিনাইদহ

মিয়ার দালান

মিয়ার দালান (Miyar Dalan) বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার সদর থানার মুরারীদহে অবস্থিত একটি পুরানো জমিদার বাড়ি। এটি ঝিনাইদহের একটি দর্শনীয় স্থান যা অনেকের কাছে সলিমুল্লাহ চৌধুরীর বাড়ি নামেও পরিচিত। বাড়ীটি স্থানীয় নবগঙ্গা নদীর উত্তর দিকে অবস্থিত। ঝিনাইদহ শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে মিয়ার দালান অবস্থিত। বর্তমানে বাড়িটি ভগ্নপ্রায়। প্রাচীন ঐতিহ্য অনুযায়ী মিয়ার দালান এর প্রধান ফটকে নির্মাণ সময়ের কিছু কথা কাব্যিক ভাবে খোদাই করা আছে। চুন-সুরকির সঙ্গে ইটের গাঁথুনির এ বাড়িটির দেয়াল ২৫ ইঞ্চি পুরু। উত্তর-দক্ষিণে দৈর্ঘ্য প্রায় ৮২ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ৬৬ ফুট। মিয়ার দালান ভবনে ছোট-বড় ১৬টি কক্ষ রয়েছে। দ্বিতীয় তলার ছাদের ওপর রয়েছে একটি চিলেকোঠা। শ্বেতপাথর দিয়ে আচ্ছাদিত এই চিলেকোঠা নামাজঘর হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল।

মিয়ার দালানের ইতিহাস

১২২৯ বঙ্গাব্দে ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু করেন তত্কালীন জমিদার সলিমুল্লাহ চৌধুরী। ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে বাড়িটির নির্মাণকাজ শেষ হয় ১২৩৬ বঙ্গাব্দে। সলিমুল্লাহ চৌধুরী স্থানীয় লোকজনের কাছে মিয়া সাহেব নামে পরিচিত ছিলেন। সে জন্য বাড়িটি মিয়ার দালান বলে পরিচিতি পায়। তবে তিনি ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের সময় ভবনটি সেলিম চৌধুরী নামের এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন। তাই ভবনটিকে স্থানীয়ভাবে কেউ কেউ সেলিম চৌধুরীর বাড়িও বলে থাকেন।

কথিত আছে, সলিমুল্লাহ চৌধুরীর পিতা বধুই বিশ্বাস ছিলেন নলডাঙ্গা রাজবংশের দেওয়ান। বধুই বিশ্বাসের মৃত্যুর পর সলিমুল্লাহ নলডাঙ্গা রাজবংশের কর্মচারী হিসেবে যথেষ্ট উন্নতি করেন এবং তাঁকে চৌধুরী উপাধি দেওয়া হয়। তিনি মুরারী নামে এক হিন্দু রমণীর প্রেমে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে বিয়ে করেন। পরবর্তী সময়ে ওই নারীর নাম পরিবর্তন করে বিবি আশরাফুন্নেসা রাখা হয়।

জনশ্রুতি আছে বাড়িটি থেকে নবগঙ্গা নদীর নিচ দিয়ে একটি সুড়ঙ্গ ছিল। সুড়ঙ্গের প্রবেশমুখ এখনো চিহ্নত করা যায়। নদীতে যে ভাবে বাঁধ দিয়ে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছিল সেভাবে তৈরি আর কোন পুরানো দালান ঝিনাইদহ শহরে দেখা যায় না।

মিয়ার দালান যাওয়ার উপায়

ঝিনাইদাহ যাওয়ার সব থেকে সহজ দুটি উপায় হলো সড়ক পথ এবং রেল পথ। ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে ঝিনাইদাহ সদরের সরাসরি বাস পাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী থেকে ঝিনাইদহ যাবার জন্যে বেশ কিছু বাস আছে – রয়েল, JR, সোনার তরী, চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স,এসবি (ননএসি ৪৫০, এসি ৬০০)। আর ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকার কমলাপুর রেল ষ্টেশন থেকে যমুনা সেতু ও চুয়াডাংগা হয়ে ঝিনাইদাহ যাওয়া যাবে। এই রুটের ট্রেন গুলোর মধ্যে চিত্রা, তূর্ণা ও সুন্দরবন এক্সপ্রেস এর মধ্যে অন্যতম।

ঝিনাইদহ পৌছে আরাপপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে অটো বা ইজি বাইকে করে সরাসরি মিয়ার দালান চলে যাওয়া যায়। ঝিনাইদহ শহর আরাপপুর থেকে এটির দুরুত্ব প্রায় ২.৫/৩ কিলোমিটার।

দিনাজপুরে কোথায় থাকবেন

হোটেল ড্রীম ইন্টারন্যাশ্নাল (ননএসি ৭০০, এসি ১৫০০), হোটেল কুটুম – ননএসি ৫০০,এসি ৮০০), এছাড়া কম দামের ও হোটেল আছে।

খাওয়া-দাওয়া

ঝিনাইদাহ শহরে – আহার, ফুড সাফারী, সুইট, ঘরোয়া নামের রেস্টুরেন্ট গুলো তাদের খাবারের কারনে বেশ প্রসিদ্ধ। স্থানীয় যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে। এছাড়া ঘোষ এর মিষ্টি, পায়রা চত্ত্বরের পিউর ছানা, ছানার জিলাপী ইত্যাদি ট্রাই করতে পারেন।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ jhenaidahmiar dalanmiyar dalan