সিলেট

কুলুমছড়া

কুলুমছড়া সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। আসলে এটি ভারতের একটি ঝর্ণার শেষের অংশ। মেঘালয় থেকে বয়ে আসা ঝর্ণার পানি থেকে এই কুলুমছড়া এর উৎপত্তি। কুলুমছড়া গ্রামে অবস্থিত বলেই এর নাম কুলুমছড়া কিন্তু কুলকুল শব্দে বয়ে চলার কারনেও এর নামকরন কুলুমছড়া করা যাবে অনায়াসে। সিলেট সবসময়ই পর্যটকদের তীর্থস্থান। আর বর্ষাকালে সব ঝর্ণা পূর্ণ যৌবন ফিরে পাওয়ায় এসব জায়গায় এখন বেজায় ভিড়। বৃষ্টির পানিতে ঝরনাগুলো এইসময় টইটম্বুর, তা দেখতেই মানুষের এই ছুটে যাওয়া। সিলেট বলতে গেলে মেঘালয় পর্বতমালায় ঘেরা।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সোনার হাট সীমান্তবর্তী কুলুমছড়া একটি গ্রাম। এখানে ভারত সীমান্তের ঝরনাটিই কুলুমছড়া ঝর্ণা নামে পরিচিত। সিলেটের গোয়াইনঘাটের হাদারপাড় থেকে ট্রলারে করে রওনা দিন। একসময় নিজেকে আবিষ্কার করবেন খোলা প্রান্তরে। আপনার গন্তব্য খুব কাছে বুঝতে পারবেন। দেখবেন পাহাড়ের প্রায় পাদদেশে চলে এসেছেন। চারপাশটা অসম্ভব সুন্দর। ঝরনার কুলকুল ধ্বনি কানে আসবে। এবার নৌকা ছেড়ে জংলাপথ ধরে হেঁটে চলুন। দেখবেন ঝরনার শব্দ প্রবল হচ্ছে ক্রমেই। ঝরনার পানি গড়িয়ে বাংলাদেশ প্রান্তে আছড়ে পড়ছে।

এখানে ঝরনার পানিতে স্রোত খুব বেশি, একই অবস্থা বাংলাদেশ প্রান্তে ছড়ার। সুতরাং এখানে এলে এবং গোসলের সময় সাবধান থাকতে হবে। এখানে নানা প্রজাতির উদ্ভিদ, অর্কিড, ভেষজ গাছ-গাছড়ার দেখা পাবেন। কুলুমছড়া ঝর্ণা দেখার জন্য সকাল সকাল যাওয়াই ভালো। আর সন্ধ্যার আগেই ফেরত আসা উচিত। কেননা, এখানে চড়াই ভাঙতে দম ফুরিয়ে যাবে। আর সীমান্ত এলাকা বলে দিনের আলো ফুরিয়ে আসার আগেই ফিরে আসুন। ঝর্নার গভীরে না যাওয়াই ভালো।

কখন যাবেন

মধ্য জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কুলুমছড়া বেড়ানোর অনুকূল সময়। সবচেয়ে ভালো সময় জুলাই থেকে অক্টোবর মাস।

কিভাবে যাবেন

বাসে সিলেট

ঢাকা থেকে সিলেট এর উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায় গাবতলী এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে৷বাস গুলো সকাল থেকে রাত ১২.৪৫ পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময় পরপর ছেড়ে যায়৷ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সিলেটের বাসগুলো ছাড়ে। এ পথে গ্রীন লাইন পরিবহন, সৌদিয়া এস আলম পরিবহন, শ্যামলি পরিবহন ও এনা পরিবহনের এসি বাস চলাচল করে। ভাড়া ৮শ’ থেকে ১ হাজার ১শ’ টাকা। এছাড়া শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ইউনিক সার্ভিস, এনা পরিবহনের পরিবহনের নন এসি বাস সিলেটে যায়। ভাড়া ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা। এনা পরিবহনের বাসগুলো মহাখালী থেকে ছেড়ে টঙ্গী ঘোড়াশাল হয়ে সিলেট যায়।

ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট

ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টায় ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ০৯টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৪টায় ছাড়ে কালনী এক্সপ্রেস। ভাড়া দেড়শ থেকে ১ হাজার ১৮ টাকা। ট্রেনে গেলে রাত ৯.৫০ এর উপবন এক্সপ্রেসে জাওয়াটাই সব থেকে ভালো কারন আপনার যেতে যেতে সকাল হয়ে যাবে আর আপনি যদি রাতে ট্রেনে ঘুমিয়ে নিন তাহলে সকালে ট্রেন থেকে নেমেই আপনার ভ্রমন শুরু করতে পারেন আর সময় লাগবে ৭-৮ ঘন্টা।

চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেট

চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস। ভাড়া ১৪৫ থেকে ১ হাজার ১৯১ টাকা।ট্রেন এর টিকেট এর দাম: এসি বার্থ ৬৯৮ টাকা, এসি সিট ৪৬০ টাকা, ফার্স্ট ক্লাস বার্থ ৪২৫ টাকা, ফার্স্ট ক্লাস সিট ২৭০ টাকা. স্নিগ্ধা ৪৬০ টাকা, শোভন চেয়ার ১৮০ টাকা, শোভন ১৫০ টাকা, সুলভ ৯৫ টাকা।

ট্রেনের সময়সূচি এখানে দেখে নিন
(Bangladesh Railway/Train Time Schedule)

সিলেট বাই এয়ার / প্লেনে সিলেট

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, ইউনাইটেড এয়ার, রিজেন্ট এয়ার, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারের বিমান প্রতিদিন যায় সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরে।

সিলেট থেকে কুলুমছড়া

কুলুমছড়া যেতে হলে সর্বপ্রথম আপনাকে সিলেট নগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট যেতে হবে। সেখানে বিমানবন্দর রোডের দিকে সিএনজি স্টেশন আছে। সিএনজি রিজার্ভ করে হাদারপার নামক জায়গা পর্যন্ত গেলে ভাল হয়। পাঁচজন মিলে ১৫০০ – ২০০০ টাকায় সাধারণত ভাড়া নেওয়া হয়। তবে মানুষ কম থাকলে ৮০-২০০ টাকা জনপ্রতিও যাওয়া যায়। হাদারপার বাজারটি খুব একটা বড় না আবার ছোটও না। মোটামুটি সবকিছুই পাবেন। খাবার, পানি, কাপড় সবই কিনতে পাওয়া যায়। হাদারপার বাজারেই বিছনাকান্দি-কুলুমছড়া-পান্থুমাইলক্ষনছড়া যাওয়ার নৌকা পাওয়া যায়। সুন্দর বেশভুষা দেখে মাঝিরা ৩০০০টাকা চেয়ে বসতে পারে। ভুলেও রাজি হবেন না। নৌকা ভাড়া আসা-যাওয়া সর্বোচ্চ ১১০০-১৫০০ টাকা হলে ভাল। দরাদরি করে এর চেয়ে কমে পেলে ভাল তবে অবশ্যই এর বেশি দামে যাবেন না। এক নৌকায় বিছানাকান্দি, কুলুমছড়া, পান্থুমাইলক্ষনছড়া ঘুরে দেখাবে বলে নিবেন। নইলে পরে ঝামেলা করতে পারে।

বিছনাকান্দি দেখা শেষে এক পেছনে ফেলে নৌকা নিয়ে এগিয়ে যান কুলুমছড়ার দিকে। বিছনাকান্দি থেকে কুলুমছড়া ৩০-৪০ মিনিটের রাস্তা।

কোথায় থাকবেন

সিলেটে থাকার মত অনেকগুলো হোটেল আছে, আপনি আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ অনুযায়ী যে কোন ধরনের হোটেল পাবেন। কয়েকটি পরিচিত হোটেল হল – হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা,কায়কোবাদ ইত্যাদি। লালা বাজার এলাকায় কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউস আছে৷ হোটেল অনুরাগ – এ সিঙ্গেল রুম ৪০০টাকা (দুই জন আরামসে থাকতে পারবেন), তিন বেডের রুম ৫০০টাকা(নরমালই ৪জন থাকতে পারবেন)। রাত যাপনের জন্য দরগা রোডে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। রুম ভাড়া ৫০০/- টাকা থেকে ৫০০০/- টাকা পর্যন্ত।

শহরের শাহজালাল উপশহরে হোটেল রোজ ভিউ (০৮২১-৭২১৪৩৯)।
দরগা গেইটে হোটেল স্টার প্যাসিফিক (০৮২১-৭২৭৯৪৫)।
ভিআইপি রোডে হোটেল হিলটাউন (০৮২১-৭১৬০৭৭)।
বন্দরবাজারে হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল (০৮২১-৭২১১৪৩)।
নাইওরপুলে হোটেল ফরচুন গার্ডেন (০৮২১-৭১৫৫৯০)।
জেল সড়কে হোটেল ডালাস (০৮২১-৭২০৯৪৫)।
লিঙ্ক রোডে হোটেল গার্ডেন ইন (০৮২১-৮১৪৫০৭)।
আম্বরখানায় হোটেল পলাশ (০৮২১-৭১৮৩০৯)।
দরগা এলাকায় হোটেল দরগাগেইট (০৮২১-৭১৭০৬৬)।
হোটেল উর্মি (০৮২১-৭১৪৫৬৩)।
জিন্দাবাজারে হোটেল মুন লাইট (০৮২১-৭১৪৮৫০)।
তালতলায় গুলশান সেন্টার (০৮২১-৭১০০১৮) ইত্যাদি।

তামাবিল/জৈন্তাপুর এর দিকে বেশ কিছু রিসোর্ট আছে। আপনার থাকার ব্যবস্থা যদি এইদিকে কোথাও হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে হাদারপাড় থেকে আবার আগের মতই গোয়াইনঘাটে আসতে হবে। গোয়াইন ঘাট থেকে যেতে হবে সারি ঘাট। সিএনজি/লেগুনাতে করে যেতে পারেন। ভাড়া জনপ্রতি ৬০টাকা।

কোথায় খাবেন

খাওয়ার জন্য সিলেটের জিন্দাবাজারে বেশ ভালো তিনটি খাওয়ার হোটেল আছে। হোটেল গুলো হচ্ছে পাঁচ ভাই,পানশি ও পালকি। এগুলোতে প্রায় ২৯ প্রকারের ভর্তা আছে।

Leave a Comment
Share