সিলেট

জুগিরকান্দি মায়াবন

জুগিরকান্দি মায়াবন (Jugirkandi Mayabon) সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা একটি জলারবন। গোয়াইনঘাট উপজেলার আলীরগাঁও ইউনিয়নে জুগিরকান্দি হাওরে অবস্থিত এ নয়নাভিরাম বনের নাম স্থানীয়ভাবে দেয়া হয়েছে মায়াবন। ধারনা করা হচ্ছে এটি বাংলাদেশের সব থেকে বড় জলারবন। প্রায় এক হাজার একর ভূমি জুড়ে বিস্তির্ণ এ বন তার রূপের মায়াবী ইন্দ্রজাল ছড়িয়ে পর্যটকদের মন আকৃষ্ট করে।

মায়াবন এর চারদিকের অথৈ পানিতে সারি সারি গাছের বিশাল এক জঙ্গল। জুগিরকান্দির এই জলারবনের নিবিড় প্রকৃতি মনকে নিয়ে যায় রূপকথার অজানা দেশে। যেখানে প্রবেশ করলে আর ফিরে আসতে মন চায় না। ডাহুক, ঘুঘু, সারি, দোয়েল-শ্যামাসহ নাম না জানা অসংখ্য প্রজাতির পাখির কূজনে বিমোহিত প্রাণ বনের গভীর থেকে গভীরে হারিয়ে যাওয়ার বাসনা যোগায়। স্বচ্ছ-স্নিগ্ধ পানির উপরে পতিত বৃক্ষের জল ছবিতে পানসির দোলানো ছোট ছোট ঢেঁউ যেন চতুর্দর্শী নর্তকির নৃত্যাভিনয়। এই মায়াবনের উত্তরে রয়েছে সারি ও পিয়াইন নদীর মিলনস্থল। অদুরে রয়েছে ভারতের মেঘালয় পাহাড়।

জুগিরকান্দি মায়াবনে আছে মাছরাঙা, বিভিন্ন প্রজাতির বক, ঘুঘু, ফিঙে, বালিহাঁস, পানকৌড়িসহ নানা প্রজাতির পাখি। বন্যপ্রাণীর মধ্যে আছে বানর, উদবিড়াল, কাঠবিড়ালি, মেছোবাঘ ইত্যাদি। বিভিন্ন প্রজাতির গুঁইসাপ ও নানা ধরণের সাপের অভয়াশ্রমও এই বন।

মায়াবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে অবশ্যই নি:শব্দে যেতে হবে। কোনো রকম শোরগোল, চিৎকার, চেচামেচি করলে এর প্রকৃত সৌন্দর্য কোন ভাবেই উপভোগ্য হবে না। নি:শব্দে ঘুরলে পানির ভেতর অবস্থিত এই বনের ঘুঘুর ডাক, বানরের লাফালাফি দেখা যায়। এটাই মায়াবনের সৌন্দর্য।

জুগিরকান্দি মায়াবন যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে বাসে সিলেট

ঢাকা থেকে সিলেট এর উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায় গাবতলী এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে৷বাস গুলো সকাল থেকে রাত ১২.৪৫ পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময় পরপর ছেড়ে যায়৷ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সিলেটের বাসগুলো ছাড়ে। এ পথে গ্রীন লাইন পরিবহন, সৌদিয়া এস আলম পরিবহন, শ্যামলি পরিবহন ও এনা পরিবহনের এসি বাস চলাচল করে। ভাড়া ৮শ’ থেকে ১ হাজার ১শ’ টাকা। এছাড়া শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ইউনিক সার্ভিস, এনা পরিবহনের পরিবহনের নন এসি বাস সিলেটে যায়। ভাড়া ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা। এনা পরিবহনের বাসগুলো মহাখালী থেকে ছেড়ে টঙ্গী ঘোড়াশাল হয়ে সিলেট যায়।

ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট

ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টায় ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ০৯টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৪টায় ছাড়ে কালনী এক্সপ্রেস। ভাড়া দেড়শ থেকে ১ হাজার ১৮ টাকা। ট্রেনে গেলে রাত ৯.৫০ এর উপবন এক্সপ্রেসে জাওয়াটাই সব থেকে ভালো কারন আপনার যেতে যেতে সকাল হয়ে যাবে আর আপনি যদি রাতে ট্রেনে ঘুমিয়ে নিন তাহলে সকালে ট্রেন থেকে নেমেই আপনার ভ্রমন শুরু করতে পারেন আর সময় লাগবে ৭-৮ ঘন্টা।

চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেট

চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস। ভাড়া ১৪৫ থেকে ১ হাজার ১৯১ টাকা।ট্রেন এর টিকেট এর দাম: এসি বার্থ ৬৯৮ টাকা, এসি সিট ৪৬০ টাকা, ফার্স্ট ক্লাস বার্থ ৪২৫ টাকা, ফার্স্ট ক্লাস সিট ২৭০ টাকা. স্নিগ্ধা ৪৬০ টাকা, শোভন চেয়ার ১৮০ টাকা, শোভন ১৫০ টাকা, সুলভ ৯৫ টাকা।

ট্রেনের সময়সূচি এখানে দেখে নিন
(Bangladesh Railway/Train Time Schedule)

ঢাকা থেকে প্লেনে/এয়ারে সিলেট

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, ইউনাইটেড এয়ার, রিজেন্ট এয়ার, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারের বিমান প্রতিদিন যায় সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরে।

সিলেট থেকে জুগিরকান্দি মায়াবন

সিলেট শহর থেকে সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক হয়ে ৩৭ কিলোমিটার অতিক্রম করার পর সারিঘাট নামক স্থান থেকে সারিঘাট-গোয়াইনঘাট সড়কে দিয়ে আরও ৮ কিলোমিটার অতিক্রম করে বেখরা ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে থামতে হবে। এখান থেকে ছোট নৌকা ভাড়া করে বেখরা খাল হয়ে আগাতে হবে। খালের দু’তীর জুড়ে শ্যামল চাদরে আবৃত লোকায়ত বাংলার রূপ দেখতে দেখতে মিনিট দশেকের মাথায় প্রবেশ করতে পারবেন মায়াবন।

কোথায় থাকবেন

যেতে আসতে সময় না লাগার কারনে আপনাকে আর থাকার চিন্তা করতে হবে না। সিলেটে থাকার মত অনেকগুলো হোটেল আছে, আপনি আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ অনুযায়ী যে কোন ধরনের হোটেল পাবেন। কয়েকটি পরিচিত হোটেল হল – হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা,কায়কোবাদ ইত্যাদি। লালা বাজার এলাকায় কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউস আছে৷ হোটেল অনুরাগ – এ সিঙ্গেল রুম ৪০০টাকা (দুই জন আরামসে থাকতে পারবেন), তিন বেডের রুম ৫০০টাকা(নরমালই ৪জন থাকতে পারবেন)। রাত যাপনের জন্য দরগা রোডে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। রুম ভাড়া ৫০০/- টাকা থেকে ৫০০০/- টাকা পর্যন্ত।

  • শহরের শাহজালাল উপশহরে হোটেল রোজ ভিউ (০৮২১-৭২১৪৩৯)।
  • দরগা গেইটে হোটেল স্টার প্যাসিফিক (০৮২১-৭২৭৯৪৫)।
  • ভিআইপি রোডে হোটেল হিলটাউন (০৮২১-৭১৬০৭৭)।
  • বন্দরবাজারে হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল (০৮২১-৭২১১৪৩)।
  • নাইওরপুলে হোটেল ফরচুন গার্ডেন (০৮২১-৭১৫৫৯০)।
  • জেল সড়কে হোটেল ডালাস (০৮২১-৭২০৯৪৫)।
  • লিঙ্ক রোডে হোটেল গার্ডেন ইন (০৮২১-৮১৪৫০৭)।
  • আম্বরখানায় হোটেল পলাশ (০৮২১-৭১৮৩০৯)।
  • দরগা এলাকায় হোটেল দরগাগেইট (০৮২১-৭১৭০৬৬)।
  • হোটেল উর্মি (০৮২১-৭১৪৫৬৩)।
  • জিন্দাবাজারে হোটেল মুন লাইট (০৮২১-৭১৪৮৫০)।
  • তালতলায় গুলশান সেন্টার (০৮২১-৭১০০১৮) ইত্যাদি।

তামাবিল/জৈন্তাপুর এর দিকে বেশ কিছু রিসোর্ট আছে। আপনার থাকার ব্যবস্থা যদি এইদিকে কোথাও হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে হাদারপাড় থেকে আবার আগের মতই গোয়াইনঘাটে আসতে হবে। গোয়াইন ঘাট থেকে যেতে হবে সারি ঘাট। সিএনজি/লেগুনাতে করে যেতে পারেন। ভাড়া জনপ্রতি ৬০টাকা।

Leave a Comment
Share