খাদিমনগর ন্যাশনাল পার্ক (Khadimnagar National Park) সিলেট শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর ইউনিয়ন ও গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। ৬টি চা বাগান দ্বারা পরিবেষ্ঠিত উঁচু নীচু পাহাড়ী এলাকা বিশিষ্ট খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান এর মোট আয়তন ৬৭৮.৮০ হেক্টর (১৬৭৬.৭৩ একর) যা সিলেট বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন সিলেট উত্তর রেঞ্জ-১ এবং খাদিমনগর বন বীট এর আওতাভূক্ত। আকর্ষণীয় বেত-বাঁশসহ বিভিন্ন উদ্ভিদ এবং বিরল পশুপাখির আবাসস্থল খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান প্রকৃতি ভ্রমণের জন্য অনন্য। খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানের পূর্বে ছড়াগাং চা বাগান, জালালাবাদ সেনানিবাস এবং হবিবনগর চা বাগান, পশ্চিমে বুরজান চা বাগান, কালাগুল চা বাগান, উত্তরে গুলনী চা বাগান এবং দক্ষিণে খাদিম চা বাগান।
সিলেট শহর থেকে জাফলং রোড ধরে ১০ কিমি এর মতো এগুলেই শাহপরান মাজার গেট পেরুনোর পর পরই খাদিম চৌমুহনা। খাদিম চৌমুহনা থেকে হাতের ডানদিকে চলে গেছে রাস্তা। রাস্তা ধরে সামনে গেলে খাদিমনগর চাবাগানের শুরু। বাগানের রাস্তা ধরে আরেকটু সামনে গেলে একটা কালভার্ট। কালভার্ট পেরিয়ে বামের রাস্তা না ধরে পথ ধরে এগিয়ে যেতে থাকলে আরো চা বাগান, চা বাগানের পর প্রাকৃতিক বনের হাতছানি। মুল সড়ক থেকে উত্তরের দিকে পাকা, কাঁচা ও ইট বিছানো পাঁচ কিমি পথ পেরুনোর পর খাদিমনগর রেইনফরেস্টের শুরু। পূর্বে ছড়াগাঙ্গ ও হাবিবনগর, পশ্চিমে বরজান ও কালাগুল, উত্তরে গুলনি, দক্ষিনে খাদিমনগর এই ছয়টি চা বাগানের মাঝখানে ১৬৭৩ একর পাহাড় ও প্রাকৃতিক বনের সমন্বয়ে গড়ে উঠা এই রেইনফরেস্টটি জাতীয় উদ্যান বলে সরকারী স্বীকৃতি পেয়েছে এবং ইউএসএইড এর সহায়তায় এর ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হচ্ছে।
খাদিমনগর ন্যাশনাল পার্ক এ হাঁটার জন্য ৪৫ মিনিট ও দুই ঘন্টার দুটো ট্রেইল আছে। বনবিভাগের বিট অফিসের সামনে ট্রেইল দুটোর মানচিত্র দেয়া আছে, এ ছাড়া স্থানীয় কাউকে গাইড হিসাবে ও সাথে নেয়া যেতে পারে।
রেইনফরেস্টের সামনে দিয়ে উত্তর দিকে যে রাস্তা চলে গেছে, সে দিক দিয়ে এগিয়ে গেলে এয়ারপোর্ট-হরিপুর সড়কে উঠা যায়, সেখান থেকে আবার রাতারগুল সোয়াম্পফরেস্টে ও সহজেই যাওয়া সম্ভব। কোন পর্যটক যদি একদিনের জন্য সিলেট ঘুরতে চান সে ক্ষেত্রে এই পথটি ব্যবহার করে চাবাগান, রেইনফরেস্ট, সোয়ামফরেস্ট দেখে যেতে পারেন।
এই পথের অধিকাংশ কাঁচা ও ইট বিছানো হলে ও গাড়ী নিয়ে যাওয়া যায় তবে বৃষ্টি থাকলে সে ক্ষেত্রে সিএনজি নিয়ে যাওয়া ভালো। খাদিম চৌমুহনাতে ভাড়ার সিএনজি পাওয়া যায়।
বাসে সিলেট
ঢাকা থেকে সিলেট এর উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায় গাবতলী এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে৷বাস গুলো সকাল থেকে রাত ১২.৪৫ পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময় পরপর ছেড়ে যায়৷ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সিলেটের বাসগুলো ছাড়ে। এ পথে গ্রীন লাইন পরিবহন, সৌদিয়া এস আলম পরিবহন, শ্যামলি পরিবহন ও এনা পরিবহনের এসি বাস চলাচল করে। ভাড়া ৮শ’ থেকে ১ হাজার ১শ’ টাকা। এছাড়া শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ইউনিক সার্ভিস, এনা পরিবহনের পরিবহনের নন এসি বাস সিলেটে যায়। ভাড়া ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা। এনা পরিবহনের বাসগুলো মহাখালী থেকে ছেড়ে টঙ্গী ঘোড়াশাল হয়ে সিলেট যায়।
ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টায় ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ০৯টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৪টায় ছাড়ে কালনী এক্সপ্রেস। ভাড়া দেড়শ থেকে ১ হাজার ১৮ টাকা। ট্রেনে গেলে রাত ৯.৫০ এর উপবন এক্সপ্রেসে জাওয়াটাই সব থেকে ভালো কারন আপনার যেতে যেতে সকাল হয়ে যাবে আর আপনি যদি রাতে ট্রেনে ঘুমিয়ে নিন তাহলে সকালে ট্রেন থেকে নেমেই আপনার ভ্রমন শুরু করতে পারেন আর সময় লাগবে ৭-৮ ঘন্টা।
চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেট
চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস। ভাড়া ১৪৫ থেকে ১ হাজার ১৯১ টাকা।ট্রেন এর টিকেট এর দাম: এসি বার্থ ৬৯৮ টাকা, এসি সিট ৪৬০ টাকা, ফার্স্ট ক্লাস বার্থ ৪২৫ টাকা, ফার্স্ট ক্লাস সিট ২৭০ টাকা. স্নিগ্ধা ৪৬০ টাকা, শোভন চেয়ার ১৮০ টাকা, শোভন ১৫০ টাকা, সুলভ ৯৫ টাকা।
ট্রেনের সময়সূচি এখানে দেখে নিন
(Bangladesh Railway/Train Time Schedule)
সিলেট বাই এয়ার / প্লেনে সিলেট
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, ইউনাইটেড এয়ার, রিজেন্ট এয়ার, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারের বিমান প্রতিদিন যায় সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরে।
সিলেটে থেকে বাস, মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিকশা বা লেগুনায় যাওয়া যায় খাদিমনগর ন্যাশনাল পার্কে। সিলেট শহর থেকে জাফলং রোড ধরে ১০ কিমি এর মতো এগুলেই শাহপরান মাজার গেট পেরুনোর পর পরই খাদিম চৌমুহনা।
যেতে আসতে সময় না লাগার কারনে আপনাকে আর থাকার চিন্তা করতে হবে না। সিলেটে থাকার মত অনেকগুলো হোটেল আছে, আপনি আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ অনুযায়ী যে কোন ধরনের হোটেল পাবেন। কয়েকটি পরিচিত হোটেল হল – হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা,কায়কোবাদ ইত্যাদি। লালা বাজার এলাকায় কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউস আছে৷ হোটেল অনুরাগ – এ সিঙ্গেল রুম ৪০০টাকা (দুই জন আরামসে থাকতে পারবেন), তিন বেডের রুম ৫০০টাকা(নরমালই ৪জন থাকতে পারবেন)। রাত যাপনের জন্য দরগা রোডে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। রুম ভাড়া ৫০০/- টাকা থেকে ৫০০০/- টাকা পর্যন্ত।
তামাবিল/জৈন্তাপুর এর দিকে বেশ কিছু রিসোর্ট আছে। আপনার থাকার ব্যবস্থা যদি এইদিকে কোথাও হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে হাদারপাড় থেকে আবার আগের মতই গোয়াইনঘাটে আসতে হবে। গোয়াইন ঘাট থেকে যেতে হবে সারি ঘাট। সিএনজি/লেগুনাতে করে যেতে পারেন। ভাড়া জনপ্রতি ৬০টাকা।
Leave a Comment