চট্টগ্রাম

ঝরঝরি ট্রেইল

সীতাকুন্ড মীরসরাই রেঞ্জের যে কয়েকটা এডভেঞ্চারাস ও সুন্দর ট্রেইল রয়েছে তারমধ্যে ঝরঝরি ট্রেইল (Jhorjhori Trail) অন্যতম। সবুজ পাহাড়ে ঘেরা শান্ত শীতল ঝিরিপথ ধরে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে যখন ঝর্ণার কাছে পৌছাবেন বিশ্বাস করুন আপনার সকল ক্লান্তি তখন গ্যাস বেলুনের মত উড়ে যাবে। ঝরঝরি ঝর্ণার পাশ দিয়ে পাহাড় বেয়ে উপড়ে উঠে গেলে বেশ কয়েকটি ক্যাসকেড ও ঝর্ণা আপনাকে আরো মুগ্ধ করবে বিশেষ করে স্বর্গের সিড়ি না অসম্ভব সুন্দর একটি ক্যাসকেড আছে যা সিড়ির মত ধাপে ধাপে খাজকাটা। এই ট্রেইলের শেষে রয়েছে মুর্তি ঝর্ণা। ঝরঝরি ঝর্ণা পর্যন্ত ট্রেইলটি খুব একটা কঠিন নয়, অনেক মহিলা এবং শিশু ট্রাভেলার কেউ যেতে দেখেছি সেখানে। এখনই ঝর্ণায় যাবার বেস্ট সময় আর এই সময় ঝর্ণায় পানির ফ্লো বেশ ভালো।

যারা জোঁকের কামড় খেতে ভালোবাসেন, যারা ঝিরি পথের উঁচু-নিচু পাথরের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আছাড় খেতে ভালবাসেন, যারা উঁচু খাড়া পাহাড় আর গাছের শেকড় ধরে উঠতে ভালোবাসেন তাদের জন্য আদর্শ স্থান চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ঝরঝরি ট্রেইল আর মুর্তিঝর্ণা। ঝরঝরি ট্রেইল এর প্রতিটি বাকে বাকে অদ্ভুত রকমের সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে যা নিজ চোখে না দেখলে বুঝা অসম্ভব।

অবস্থান – পন্থিশীলা, সীতাকুন্ড, চট্রগ্রাম।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বাসে/ট্রেনে/এয়ারে চট্টগ্রাম চলে যেতে হবে আগে। সেখান থেকে সীতাকুন্ড। সীতাকুন্ড থেকে বাস কিংবা লেগুনাতে ১০ মিনিট লাগবে পন্থিশীলা বাজার। বাজারে গিয়ে লোকাল কাউকে গাইড হিসেবে নিয়ে নিন। এই দিকটাতে সাথে একটা গাইড থাকা ভালো। এতে তার বাড়িতে ব্যাগ রাখা সহ কাপড় পাল্টানোর জন্যও সুবিধা পাবেন। গাইড খরচ ৩০০-৪০০ টাকা পড়বে।

কিছুদূর যাওয়ার পর রেললাইন পাবেন। রেললাইনে উঠে হাতের বামপাশ বরাবর ৫-৭ মিনিট হাটার পর একটা মাটির রাস্তা পাবেন। সেই রাস্তা ধরে প্রায় ২০ মিনিট পর ঝিরি পথের দেখা পাবেন। এর কিছুক্ষণ পর পাহাড়ে উঠতে হবে। পাহাড়ে উঠার পথটা কিছুটা দেবতা পাহাড়ের মত। এই পথটা একটু ভয়ংঙ্কর। এর পর ৩০ মিনিট হাটার পর পাবেন ঝরঝরির প্রথম ঝর্না এবং আরো ২০ মিনিট পর ২য় ঝর্ণা পাবেন। যেটা সিঁড়ির মত দেখা যায়। এইটুকু রাস্তা যেতে জোঁক, সাপে ভরা পাথুরে পিচ্ছিল পথ অতিক্রম করতে হবে।

এরপর প্রায় দেড় ঘন্টা বুনো দুর্গম অন্ধকার পথ হাঁটার পর মানুষ আকৃতির একটা মূর্তির দেখা মিলবে যার উপর ঝর্ণার পানির নীচেই অবস্থিত। ঝর্ণার পানির ভিতর দিয়ে উপরে উঠে যেতে হবে এবং এই ট্রেইলের সবচেয়ে বড় ঝর্নার দেখা পাবেন।

ঝরঝরি ট্রেইল শেষ করতে আসা যাওয়াতে ৫.৩০-৬ ঘন্টা সময় লাগবে। ঝরঝরি ট্রেইলে গেলে সাথে করে বাজার থেকে খাবার কিনে নিয়ে যাবেন এবং দুপুরবেলার খাবার অর্ডার দিয়ে যাবেন।

কোথায় থাকবেন

চট্টগ্রামে নানান মানের হোটেল আছে। নীচে কয়েকটি বাজেট হোটেলে নাম ঠিকানা দেয়া হলো। এগুলোই সবই মান সম্পন্ন কিন্তু কম বাজেটের হোটেল।

  • হোটেল প‌্যারামাউন্ট, স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম : নুতন ট্রেন স্টেশনের ঠিক বিপরীতে । আমাদের মতে বাজেটে সেরা হোটেল এটি। সুন্দর লোকেশন, প্রশস্ত করিডোর (এত বড় কড়িডোর ফাইভ স্টার হোটেলেও থাকেনা)। রুমগুলোও ভালো। ভাড়া নান এসি সিঙ্গেল ৮০০ টাকা, ডাবল ১৩০০ টাকা, এসি ১৪০০ টাকা ও ১৮০০ টাকা। বুকিং এর জন্য : ০৩১-২৮৫৬৭৭১, ০১৭১-৩২৪৮৭৫৪
  • হোটেল এশিয়ান এসআর, স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম : এটাও অনেক সুন্দর হোটেল। ছিমছাম, পরিছন্ন্ হোটেল। ভাড়া : নন এসি : ১০০০ টাকা, নন এসি সিঙ্গেল। এসি : ১৭২৫ টাকা। বুকিং এর জন্য – ০১৭১১-৮৮৯৫৫৫
  • হোটেল সাফিনা, এনায়েত বাজার, চট্টড়্রাম : একটি পারিবারিক পরিবেশের মাঝারি মানের হোটেল। ছাদের ওপর একটি সুন্দর রেস্টুরেন্ট আছে। রাতের বেলা সেখানে বসলে আসতে ইচ্ছে করবেনা। ভাড়া : ৭০০ টাকা থেকে শুরু। এসি ১৩০০ টাকা। বুকিং এর জন্য -০৩১-০৬১৪০০৪
  • হোটেল নাবা ইন, রোড ৫, প্লট-৬০, ও,আর নিজাম রোড, চট্টগ্রাম। একটু বেশী ভাড়ার হোটেল। তবে যারা নাসিরাবাদ/ও আর নিজাম রোড এলাকায় থাকতে চান তাদের জন্য আদর্শ। ভাড়া : ২৫০০/৩০০০ টাকা। বুকিং এর জন্য – ০১৭৫৫৫৬৪৩৮২
  • হোটেল ল্যান্ডমার্ক, ৩০৭২ শেখ মুজিব রোড, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম : আগ্রাবাদে থাকার জন্য ভালো হোটেল। ভাড়া-২৩০০/৩৪০০ টাকা। বুকিং এর জন্য: ০১৮২-০১৪১৯৯৫, ০১৭৩১-৮৮৬৯৯৭

খাবার ব্যবস্থা

ঝরঝরি ট্রেইল এলাকায় খাবার তেমন কোন ভালো খাবার দোকান নেই। চাইলে গাইডের সাথে কথা বলে তার ঘরেই দুপুরের খাবার ব্যবস্থা করতে পারেন কি কি খাবেন বলে দিবেন আর সেই অনুযায়ী বাজারের টাকা দিয়ে দিবেন। মুরগি, আলুভর্তা, কচুশাক, ডাল-ভাত এর সাথে মুরগি রাখতে পারেন। ৭-৮ জনের টিম হলে পার পারসন ১০০-১২০ টাকা করে পরতে পারে।

সতর্কতা

  • প্রচুর পানি ও হালকা খাবার নিয়ে যাবেন। যেমন বিস্কিট, খেজুর রুটি ইত্যাদি। কারন ডিহাইড্রেশন এর মারাত্বক সম্ভাবনা থাকে।
  • জোঁকের উপদ্রব খুব বেশি তাই সাবধান। কিছুক্ষন পরপরই পা চেক করুন। সাথে এন্টিসেফটিক ক্রিম কিংবা লবন রাখতে পারেন আর বাড়তি সতর্কতার জন্য পায়ে মোজা পড়ে নিতে পারেন।
  • শক্ত ও গ্রিপযুক্ত জুতা বা ট্রেকিং সু ব্যবহার করুন। ট্রেইলটা কয়েক জায়গায় বেশ পিচ্ছিল বিশেষ করে ঝরঝরি ঝর্ণার উপরে যতই যাবেন পিচ্ছিল রাস্তা।
  • যেহেতু লম্বা ঝিরিপথ পাড়ি দিবেন তাই হাতে একটা বাশ নিয়ে নিবেন যা আপনাকে ব্যালেন্স করতে সাহায্য করবে।
  • খুমে নামার ক্ষেত্রে যারা সাঁতার জানেন না নিরাপত্তা বিবেচনায় অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট পরিধান করবেন।
  • অবশ্যই একজন গাইড নিয়ে নিবেন। অনেক দুর্গম পাহাড় আর ঝর্না অনেক ভিতরে হওয়ায় পথ ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। স্থানীয়রা খুব মিশুক চাইলেই গাইড পাবেন।
Leave a Comment
Share