মুম্বাই এর টাটা মেমোরিয়াল হসপাতাল (Tata Memorial Hospital) বর্তমানে ক্যান্সার চিকিৎসায় উপমহাদেশে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছে।বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসা অপ্রতুল হওয়ায় আজকাল অনেকেই টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যেমন যাচ্ছেন, আবার অনেককেই বাংলাদেশের ডাক্তাররাই পরামর্শ দিচ্ছেন টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে যাওয়ার জন্য। তাই যাদের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসায় নেওয়ার প্রয়োজন, তাদের সুবিধার্থে টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতাল সর্ম্পকিত বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হসপিটালে যারা নতুন ডাক্তার দেখাতে যান, তাদের জন্য তো বটেই, এমনকি যারা পুরনো রোগী তাদেরও কাজে লাগবে এমন কিছু তথ্য এখানে তুলে ধরা হলো।
সবসময় চেষ্টা করবেন রোগীর পুরো ফাইলের ফটোকপি করিয়ে একটি ব্যাকআপ রাখার যাতে কখনও ফাইল হারিয়ে গেলেও সমস্যা না হয়। যখনই ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন পাবেন, সেটা ফটোকপি করে ব্যাকআপ হিসেবে ভিন্ন একটা ফাইলে রেখে দিবেন।
ডাক্তারের নির্দেশনা অনুসারে মেমো তৈরি করে নিতে হবে। বিকেল ৫টার পর বা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ক্যাজুয়ালিটির (কক্ষ#৭৭) রিসিপশন থেকে বারকোডসহ মেমো সংগ্রহ করতে হবে। আগে হোমিবাবা সার্ভিস ব্লকের ষষ্ঠ তলার ব্লাড ব্যাংক থেকে একসেপটেন্স স্বাক্ষর সংগ্রহ করার নিয়ম ছিল। এখন আর ওই নিয়ম নেই। ফলে সরাসরিই হোমিবাবা গোলচত্বরের ব্লাড কালেকশন সেন্টার থেকে ব্লাড স্যাম্পলের বোতল সংগ্রহ করে নিতে হবে। বিকেল ৫টার পর বা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ক্যাজুৃয়ালিটির পাশের ইমার্জেন্সি ল্যাব রুম থেকে স্যাম্পল নিতে হবে। পরের কাজ সোজা। হোমিবাবা ব্লকের তৃতীয় তলার ব্লাড ব্যাংকে মেমোসহ রক্তের স্যাম্পলটি জমা দিতে হবে। এরপর সিরিয়াল প্রাপ্তির সুবিধার্থে হোমিবাবা ব্লকের পঞ্চম তলায় ডে কেয়ার সেন্টারে আগেভাগে ফাইল জমা দেওয়াই ভালো।
নতুন বা পুরনো রোগীদের যদি বোনম্যারো পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে প্রথমেই রোগীর ফাইল নিয়ে গোল্ডেন জুবিলির ৩ তলার কাউন্টারে গিয়ে বুকিং দিতে হবে। এরপর মেইন বিল্ডিংয়ের নিচতলার কোনো একটি কাউন্টারে গিয়ে বানাতে হবে মেমো। যদি ’সাইটোজেনেটিকস’ টেস্ট থাকে, তাহলে এনেক্স বিল্ডিংয়ের ৭ তলায় “সাইটোজেনেটিকস” বিভাগে গিয়ে অপর একটি মেমো বানাতে হবে।
চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার আগে নিচের কাজগুলোর দিকে লক্ষ্য রাখুন –
টাটা ক্যান্সার হাসপাতাল, মুম্বাই এ ভর্তি করতে হলে প্রাইভেট ক্যাটাগরি ও বিদেশি রোগীদেরকে ডেপোজিট হিসেবে দুই লাখ রুপি জমা দিতে হয়। তবে এক লাখ রুপি বা তার কিছু বেশি রাখলেও এডমিট করানো যায়। সেক্ষেত্রে মেডিকেল সুপারিন্টেন্ডেন্ট বরাবর একটি আবেদনপত্র জমা দিয়ে তাতে সুপারের সম্মতিসূচক স্বাক্ষর নিতে হয়। এরকম আবেদনপত্রের নমুনা ডাউনলোড করে রাখতে পারেন। মনে রাখবেন, চিঠিতে লাল রঙে চিহ্নিত জায়গাগুলো আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে।
মুম্বাইয়ে চিকিৎসা করাতে এসে অনেকেরই ভিসা এক্সটেনশন করানোর প্রয়োজন পড়ে। সেক্ষেত্রে মুম্বাই সিআইডি অফিসে গিয়ে শুরুতেই একটি আবেদনপত্র জমা দিতে হয়। এরকম আবেদনপত্রের নমুনা ডাউনলোড করে রাখতে পারেন।
মুম্বাইয়ে এসে কারো যদি ছয় মাসের বেশি থাকার প্রয়োজন পড়ে বা ভিসা এক্সটেনশনের প্রয়োজন পড়ে, তাহলে মুম্বাইয়ে আসার ১৪ দিনের মধ্যে মুম্বাই সিআইডি অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। ভুলক্রমে কেউ যদি রেজিস্ট্রেশন না করেন, তাহলে জনপ্রতি ৩০ ডলার জরিমানা দিতে হয়। এই জরিমানা দেওয়ার জন্যও একটি আবেদনপত্র জমা দিতে হয়। এরকম আবেদনপত্রের নমুনা ডাউনলোড করে রাখতে পারেন।
মুম্বাই এর টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই মেডিকেল ভিসা নিয়ে যেতে হবে। টাটা মেমোরিয়াল ক্যান্সার হাসপাতালে টুরিস্ট ভিসায় চিকিৎসা করানো যায় না।
মুম্বাই আপনি বেশ কয়েকটি উপায়ে যেতে পারেন। ঢাকা থেকে সরাসরি ফ্লাইটে মুম্বাই যেতে পারেন অথবা ঢাকা – কলকাতা হয়ে কলকাতা – মুম্বাই প্লেনে বা ট্রেনে করে যেতে পারেন। সরাসরি ঢাকা – মুম্বাই প্লেনে গেলে খরচ অনেক বেশী পড়বে। সে তুলনায় ভেঙ্গে ভেঙ্গে গেলে খরচ কম। বিশেষ করে ভারতের আভ্যন্তরীন প্লেনের খরচ খুবই কম। আবার ট্রেনে সময় বেশী লাগলেও খরচ তুলনামূলক বেশ কম। এছাড়া টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের রোগী এ মর্মে প্রমানপত্র থাকলে ট্রেনে ৭৫% ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়।
মুম্বাইতে পৌঁছানোর পর আপনাকে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে তা হলো থাকা-খাওয়ার সমস্যা। কেননা মুম্বাইতে সব হোটেলে বাংলাদেশীদের থাকতে দেওয়া হয় না! তাই আপনার পকেটে অনেক টাকা থাকলেও আপনি থাকার জন্য তেমন ভাল সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। তবে টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের সবচেয়ে কাছে যেসব হোটেলে বাংলাদেশীদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে তাদের মধ্যে আছে – হোটেল শান্তিদূত এবং কে.জি.এন নামক প্রতিষ্ঠান, এ দুটোই প্যারেলে অবস্থিত।
Leave a Comment