অবস্থানগত ভাবে হাজাছড়া ঝর্ণা রাঙামাটির অন্তর্গত হলেও এটি ভ্রমণ করার জন্যে খাগড়াছড়ি হয়ে যাওয়াটাই উত্তম। এটি শুকনাছড়া ঝর্ণা (Shuknachara Falls) নামেও পরিচিত। এই ঝর্ণাটির স্থানীয় পাহাড়ীদের দেয়া নাম হল চিত জুরানি থাংঝাং ঝর্ণা (মন প্রশান্তি ঝর্ণা)। খাগড়াছড়ির দিঘীনালা থেকে হাজাছড়া রওনা দিতেই আপনার চোখে পড়বে প্রকৃতির নিজের হাতে আঁকা দৃশ্যপট। তীর ছুঁয়ে যাওয়া মাইনী নদীর জলের স্রোত। পাহাড়ি ঢলে নদীর দুতীর জুড়ে উপচে পড়া জলের স্রোত। রাস্তার দুপাশ জুড়ে আদিবাসীদের বসবাস। পথের ধারেই নানান শস্যের জুমের ক্ষেত। সবুজে ঘেরা ঝিরি পথ পেরোলেই স্বাগতম জানাবে হাজাছড়া বিশালকায় ঝরনা (jhorna)। পুরো বর্ষায় হাজাছড়ার রূপের তুলনা সে নিজেই।
সাজেক ভ্যালী ঘুরে ফেরার পথে স্নিগ্ধ হওয়ার মত এক জায়গা হাজাছড়া ঝর্ণা (Hajachora Waterfall)। এটা রাঙামাটি (Rangamati) পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের বাঘাইহাট এলাকায় অবস্থিত। বাঘাইছড়ি উপজেলার ১০ নম্বর রাস্তার পাশে এই ঝরনা পযর্টকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। রাস্তা থেকে ১৫ মিনিট ঝিরিপথ ধরে হেঁটে পৌঁছানো যায় ঝরনার পাদদেশে।
অপূর্ব অসাধারন আর নয়নাভিরাম এ ঝর্না। এটি এতই দৃষ্টিনন্দন আর ব্যতিক্রম যে কারো আর দেরী সইবে না। ঝর্নার নিচে ঝাপিয়ে পরতে মন চাইবে। ঝর্ণার নীচে দাড়িয়ে অনায়েসেই গোসলের কাজটি সেরে নেয়া যায়। দীর্ঘ ক্লান্তিকর হাটার কষ্ট মুহুর্তেই ধুয়ে যাবে ঝর্ণার জলে। ঝর্ণার জলের শীতল পরশ আপনাকে ক্ষনিকের জন্য হলেও ভুলিয়ে দেবে আবার কতটা পথ আবার হাটতে হবে ফেরার জন্য।
এখানে সারা বছরই পানি থাকে। শীতে জল প্রবাহ কমে যায়। আর বর্ষার হয়ে উঠে পূর্ণ যৌবনা। তবে শীতের আগে ও বর্ষার শেষে এখানে ঘুরতে যাওয়া উত্তম সিদ্ধান্ত। ঝর্নার আশে পাশে কেবল যেন সবুজেরই সমারোহ। পাশের পাহাড় গুলোতে চলে জুম চাষ। পাহাড়ের সবুজের মাঝে জুম ফসলের মাঠ যেন যোগ করেছে ভিন্ন এক সবুজের।
হাজাছড়া ঝর্ণায় যেতে হলে অপনাকে প্রথমে খাগড়াছড়ি যেতে হবে। ঢাকার কমলাপুর, সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, কলাবাগান থেকে সরাসরি বাস রয়েছে খাগড়াছড়িতে। উপকূল সেন্টমার্টিনের এসি বাস, এস আলম, সৌদিয়া, শান্তি পরিবহন,ও শ্যামলী পরিবহনের যে কোনো একটি বেঁচে নিতে পারেন। নন-এসিতে গুণতে হবে ৫২০ টাকা। আর এসিতে গুনতে হবে ৭০০টাকা। চট্টগ্রাম থেকে আসতে হলে অক্সিজেন অথবা কদমতলী বিআরটিসি বাস টার্মিনাল যেতে হবে। অক্সিজেন থেকে রয়েছে শান্তি পরিবহন ও লোকাল বাস এবং কদমতলী থেকে বিআরটিসি। চট্টগ্রাম থেকে আসতে ১৮০-২২০ টাকা গুণতে হবে। খাগড়াছড়ি নেমে বাস, মটর সাইকেল, চান্দের গাড়িতে প্রথমে যেতে হবে দিঘীনালা।
অথবা ঢাকা থেকে শান্তি পরিবহনে করে সরাসরি আপনি দিঘীনালা পৌছে যেতে পারেন।
দিঘীনালা বাসটার্মিনাল থেকে মোটরবাইক বা চাঁদের গাড়ি করে বাঘাইহাটের আগে ১০ নম্বরে নেমে ১৫ মিনিটের হাঁটাপথ শেষ করে ঝরনায় পৌঁছানো যায়। খাগড়াছড়ি থেকে দিঘীনালার হাজাছড়া-তৈদুছড়া ঝর্নায় অথবা রামগড়ে আসা-যাওয়ায় খরচ মাথাপিছু খরচ হবে ৪০০টাকার মতো।
ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি যায় এমন কিছু বাসের নাম্বারঃ
চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি যায় এমন কিছু বাসের নাম্বারঃ
চট্টগ্রাম থেকেও খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন । BRTC এসি বাস কদমতলী (চট্টগ্রাম): ০১৬৮২৩৮৫১২৫ । খাগড়াছড়িঃ ০১৫৫৭৪০২৫০৭ ।
হাজাছড়া ঝর্ণার আশেপাশে থাকা বা খাওয়া কোন ব্যবস্থা নেই। ঝর্ণায় যাওয়ার সময় সাথে কিছু শুকনো খাবার ও পর্যাপ্ত পানি নিয়ে যেতে পারেন। অথবা খাগড়াছড়ি শহরের কাছেই পানখাই পাড়ায় ঐতিহ্যবাহী সিস্টেম রেস্তোরার (System Restaurant) অবস্থান। এখানে খাগড়াছড়ির ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে পারবেন। যোগাযোগঃ ০৩৭১-৬২৬৩৪ , ০১৫৫৬৭৭৩৪৯৩ , ০১৭৩২৯০৬৩২২ । এখান থেকে অল্প সময়েই আপনি ঘুরে আসতে পারেন নিউজিল্যান্ড পাড়া থেকে। ভাড়া পরবে ১০ টাকার মত।
হাজাছড়া ফলস দেখতে যাবার জন্যে খাগড়াছড়ি (Khagrachari) হয়ে যাওয়াটাই উত্তম হওয়ার কারনে আপনাকে থাকতে হবে খাগড়াছড়িতেই। পর্যটকদের জন্য খাগড়াছড়িতে রয়েছে অনেক আবাসিক হোটেল (Hotel)। শহরের প্রবেশমুখে চেঙ্গী নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত পর্যটন মোটেলের ডবল রুম নন-এসি ১০৫০ টাকা, ডবল এসি রুম ১৫০০ টাকা, ভিআইপি স্যুইট ২৫০০ টাকা। এ ছাড়াও রয়েছে জেলা সদরের মিলনপুরে হোটেল গাইরিং ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় হোটেল ইকোছড়ি ইন। সেখানে থাকা-খাওয়ার সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। খাগড়াছড়ি বাজার এলাকার হোটেল আল-মাসুদ, হোটেল লবিয়ত, হোটেল ফোর স্টারসহ অনেকগুলো হোটেলে থাকতে পারবেন সুলভে।
কিছু হোটেল এর ফোন নাম্বার দেওয়া হলো
পর্যটন মোটেলঃ ৬২০৮৪ ও ৬২০৮৫
হোটেল শৌল্য সুবর্ণঃ ৬১৪৩৬
জিরান হোটেলঃ ৬১০৭১
হোটেল লিবয়তঃ ৬১২২০
চৌধুরী বাডিং: ৬১১৭৬
থ্রি ষ্টার: ৬২০৫৭
ফোর ষ্টারঃ ৬২২৪০
উপহারঃ ৬১৯৮০
হোটেল নিলয়ঃ ০১৫৫৬-৭৭২২০৬
Leave a Comment