বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড (Bangabandhu Island) এর অবস্থান খুলনা জেলায় যা দুবলার চর থেকে ২৫ কিলোমিটার এবং হিরণ পয়েন্ট থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গপোসাগরের মধ্যে জেগে ওঠা একটি চর। এটি মংলা বন্দর থেকে ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড লম্বায় প্রায় ৪ কিলোমিটার এবং প্রস্থে প্রায় ২ কিলোমিটার আর আয়তন প্রায় ৭.৮৪ বর্গ কিলোমিটার। দ্বীপটি ত্রিকোণাকৃতির আর এর চারিদিকেই সমুদ্র সৈকত রয়েছে। তবে দ্বীপের আয়তন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। দ্বীপের সমুদ্র সৈকত ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৫০০ মিটার প্রস্থ। এ সমুদ্র সৈকতে সূ্র্যোদয় ও সূর্যাস্ত অবলোকন করা যায়। দ্বীপটি সবুজ শ্যামল ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট, একপাশে কাঁশবন। এ দ্বীপে কেওড়া, গেওয়া, পশুর, গরান গাছ ও বিভিন্ন লোনা পানির ফার্ণ জাতীয় লতাগুল্ম আছে। দ্বীপটি জীব বৈচিত্র্যময়। লাল কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুক ও কচ্ছপ আছে এ দ্বীপে। স্বচ্ছ নীল জলে ঘুরে বেড়ায় সামুদ্রিক মাছ। সৈকতে বসে মাঝে মধ্যে দেখা যায় ডলফিনের খেলা। দ্বীপে আছে অগনিত গাঙচিল, বালিহাঁস। বালিহাঁস ডিমে তা দিচ্ছে এমন দৃশ্যে চোখ জুড়িয়ে দিবে আপনার। পুরো আইল্যান্ড জুড়ে লাল কাঁকড়ার বিচরণ।
বঙ্গবন্ধু দ্বীপ সমুদ্র থেকে প্রায় দুই মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এখানে কোন চোরাবালির সন্ধান পাওয়া যায় নি। দ্বীপটির আশেপাশে কোন মানববসতি না থাকায় চারিদিকে সুনসান নীরবতা আর প্রচুর শীতল বাতাস।
নব্বই দশকের শুরুর দিকে (১৯৯২ সালে) রামপালের জেলে মালেক ফরাজি আরও দুই সঙ্গীসহ হিরণপয়েন্টের দক্ষিণে বঙ্গপোসাগরে নতুন জেগে উঠা একটি দ্বীপ আবিষ্কার করেন। এটি দুবলার চর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার এবং হিরণপয়েন্ট থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। দ্বীপটির প্রায় ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত পুটনির দ্বীপ। দ্বীপটি প্রথম অবস্থায় জেলেদের নিকট পুটনির চর নামে পরিচিতি লাভ করে। জেলে মালেক ফরাজি ছিলেন বঙ্গবন্ধু প্রেমিক। ২০০৪ সালে তিনি দ্বীপটিতে ‘বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড’ নামে একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দেন। সেই থেকে এর নাম হয়ে যায় বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড।
সুন্দরবন কেন্দ্রিক স্পটগুলো অনেক রেঞ্জ দিয়ে যাওয়া যায়। আপনি চাইলে সাতক্ষীরা রেঞ্জ দিয়ে যেতে পারেন কিংবা মংলা হয়ে যেতে পারেন।
ঢাকার সায়দাবাদ থেকে মংলাগামী সরাসরি বেস কিছু বাস সার্ভিস চালু আছে। এক্ষেত্রে সুন্দরবন ও পর্যটক সার্ভিসের বাসে মংলা পর্যন্ত জনপ্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ভাড়া পড়বে। চাইলে কেউ বাগেরহাট যেয়ে বাগেরহাট থেকে মংলা যেতে পারেন। এক্ষেত্রে ঢাকার গাবতলী কিংবা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে মেঘনা পরিবহন (01717-388583), পর্যটক পরিবহন (01711-131078) সাকুরা পরিবহন (01711-010450), সোহাগ পরিবহন (01718-679302) ইত্যাদি বাসে সহজেই বাগেরহাট যেতে পারবেন। এরপর মংলা বন্দর থেকে বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড যাওয়ার জন্যে ট্রলার ভাড়া করতে পারবেন। অথবা মংলা থেকে হিরণ পয়েন্ট যেয়ে ওখান থেকে ট্রলার নিতে পারেন।
ঢাকা থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগরগামী যেকোন বাসে শ্যামনগর নামবেন। এরপর শ্যামনগর থেকে মুন্সী গঞ্জগামী বাসে উঠলে পথে পরবে বংশীপুর বাজার। বাজারের বামদিকের রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে মুন্সীগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড। স্ট্যান্ডে নেমে অটোতে বামদিকের রাস্তা ধরে গেলে সামনে কলবাড়ি বাজার। বাজারের বামের রাস্তায় আরো তিন কি.মি. গেলে নীল ডুমুর বাজার। বাজারের ডানে বোট ঘাট। ঘাট হতে রিজার্ভ বোটে ৮/১০ ঘন্টায় হিরণ পয়েন্ট। হিরণ পয়েন্ট থেকে দক্ষিণে ২ ঘন্টায় বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড।
বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড থেকে দিনে ফিরে মংলায় বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল পশুর এ ৬০০ থেকে ২০০০ টাকায় থাকতে পারবেন। রুম বুক করতে যোগাযোগ করতে পারেন 04662-75100 নাম্বারে। এছাড়াও মংলা শহরে সাধারণ মানের হোটেলগুলোতে ২০০ থেকে ৮০০ টাকায় রাত্রিযাপন করতে পারবেন।
যদি সুন্দরবনে রাত কাটাতে চান তবে ট্যুরিস্ট ভেসেলে রাত কাটাতে পারবেন। এছাড়া হিরণপয়েন্টের নীলকমল, টাইগার পয়েন্টের কচিখালী এবং কাটকায় বন বিভাগের রেস্ট হাউজে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। নীলকমল ও কচিখালীতে কক্ষ প্রতি ৩০০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। তবে কচিখালীতে ৪ কক্ষ ভাড়া নিলে ১০,০০০ টাকায় থাকতে পারবেন। কটকা রেস্ট হাউজে রুম নিতে লাগে ২০০০ টাকা। বিদেশি ভ্রমণকারীদের এই সব রেস্ট হাউজে রাত কাটাতে রুম প্রতি গুনতে হবে ৫০০০ টাকা।
Leave a Comment