সুন্দরবন (Sundarbans) পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, UNESCO World Heritage Site. শহরের কোলাহলে আপনি যখন অনেকটাই একঘেয়েমি, ঘুরে আসতে পারেন সুন্দরবন থেকে। কথায় আছে “Talk to the forest because the forest always talks to you”। পুরো বনটিতে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, ছোট ছোট নদী, খাল-বিল, কাদাযুক্ত চর। নিজ চোখে খোলা পরিবেশেই দেখতে পাবেন বাঘ, হরিন, কুমির, বানর, অজগর সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও সরীসৃপ।
হাড়বাড়িয়া – এখানে প্রচুর বানর দেখতে পাবেন সেই সাথে সুন্দরী গাছ।
জামতলা সি বিচ – ভোরে শিপ থেকে নেমে ৩০ মিনিটের মত নির্জন বনের ভিতর ট্রেকিং করে যেতে হবে এই সি বিচে।বনের ভিতর চোখে পড়বে বাঘের পায়ের ছাপ। ২০১৮ সালের বাঘশুমারীর রিপোর্ট অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা আনুমানিক ১১৪ টি। ভাগ্য খুব বেশী ভাল না হলে বাঘের দেখা পাওয়াটা দুষ্কর। বিচে এসেই শুরুতেই যেটা নজরে আসবে সেটা হল সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা। যদিও সেটা এর সৌন্দর্যকে কোনভাবে ঢাকতে পারেনি। মনে হবে “Sometimes disaster brings it’s inner beauty”
কটকা অভয়ারণ্য – হাড়বাড়িয়া থেকে অনেকটা ন্যাচারাল লাগবে এই জায়গাটিতে। প্রচুর হরিণ দেখতে পাবেন এখানে। দল বেধে আসে এরা। চাইলে গাছের ডাল ভেঙে ওদের খাওয়াতে পারবেন। সেই সাথে দেখবেন বানর, বানরদের ফল খাওয়াতে পারেন। এখানে কোন প্রকার প্লাস্টিক সদৃশ বস্তু, বিস্কিটের প্যাকেট ফেলবেন না।
হিরণ পয়েন্ট – হিরণ পয়েন্ট যাওয়ার পথে দুপাশে কুমির দেখতে পাবেন। নেভি ক্যাম্প থাকার কারনে জায়গাটা ভালই উন্নত কিন্তু এইখানে ন্যাচারাল ভাবটা খুব কম।
দুবলার চর – নানা প্রজাতির মাছ – কাকড়া, শুটকির জন্যে দুবলার চর এর খ্যাতি আছে বেশ। বিকাল- সন্ধ্যার দিকে এখানে বাজার বসে, সেটি দেখে আসতে পারেন।
করমজল – অনেকটাই চিড়িয়াখানার ফ্লেভার। প্রথেই নজরে আসবে সুন্দরবনের ম্যাপ। কুমির, হরিণ দেখতে পাবেন। হরিণদের খাবার কিনে খাওয়াতে পারবেন। বন্দি অবস্থায় এদের দেখতে অনেকেরই ভাল নাও লাগতে পারে।
সুন্দরবন ভ্রমণের উপযুক্ত সময় শীতকাল। নির্দিষ্ট করে বললে নভেম্বর-ফেব্রুয়ারী। অন্যান্য সময় বনের ভেতরে, ঘন জঙ্গলে প্রবেশ করলে ভ্যাপসা গরম লাগতে পারে যা শীতকালে অনুভূত হবে না।
যারা সুন্দরবনের সকল স্পট ঘুরতে চান এবং গহীন বনের নদীতে রাত্রি যাপন করতে চান, তাঁরা ঢাকা থেকে ভালমানের ট্রেভেল এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করে তাদের প্যাকেজগুলো (ঢাকা টু সুন্দরবন) নিতে পারেন। এক্ষেত্রে প্যাকেজ খরচ জনপ্রতি ১০,০০০ থেকে শুরু। অথবা খুলনা যেয়ে শিপের প্যাকেজ নিতে পারেন সেক্ষেত্রে জনপ্রতি ৭৫০০ থেকে শুরু। প্যাকেজ গুলোতে সব কিছুই ইনক্লুড, খাবারও থাকবে ব্যুফে সিস্টেমে। শিপের মধ্যে MV Flamingo, MV Rainbow, MV Oboshor এই গুলো দেখতে পারেন।
আর যারা সল্প খরচে ট্যুর দিতে চান, সেক্ষেত্রে খুলনা থেকে ট্রলার রিজার্ভ নিয়ে ২/৩ টা স্পটে যেতে পারেন। এক্ষেত্রে বনে রাত্রি যাপনের কোনো সুযোগ নেই। সকাল সকাল ট্রেকিং করে বিচে যাবারও সুযোগ নেই।
সাধারণত প্রতি শুক্র থেকে রবিবার অথবা সোম থেকে বৃহস্পতিবার খুলনা লঞ্চঘাট থেকে অপারেটরদের প্যাকেজ থাকে। ১০-২০ জনের গ্রুপ হলেও প্যাকেজে নিজেরা একটি লঞ্চ নিতে পারবেন। এতে আপনাদের প্রাইভেসিও থাকবে, লোক কম হওয়ায় সার্ভিসও ভালো পাবার সম্ভাবনা থাকে। আর মংলা থেকে লঞ্চে সময়ও ৩ ঘণ্টা কম লাগে।
নিয়মিত প্যাকেজে যারা ভ্রমণপিপাসুদের সুন্দরবন নিয়ে যায়, এমন কয়েকটি কোম্পানির নাম:
খাবারের মান ও জাহাজ ভেদে মাঝারি ধরনের একটি ট্যুরে সাধারণত খরচ পড়ে ৬-৮ হাজার টাকা। আরেকটু ভালো চাইলে জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্যাকেজ আছে। ৩৫-৪০ জন হলে একটি লঞ্চে ফ্লোরিং করে ৪০০০-৫০০০ টাকার মধ্যেও তিন দিনের সুন্দরবন ভ্রমণ সম্ভব। এডভান্স দিয়ে এক মাস আগে বুকিং না দিলে ভ্যাসেল পাওযা কঠিন।
সতর্কতাঃ গহীন বনে অবশ্যই গার্ডের আশে পাশেই থাকবেন। বন্যপ্রাণী হাত দিয়ে না ধরাই ভাল। বন্যপ্রাণীর জন্য ক্ষতিকর এমন কোন কাজ করবেন না। বিদেশি পর্যটকদের সাথে ডিসেন্ট বিহেভ করুণ, যে কোন ধরণের ট্রল করা থেকে বিরত থাকুন। আর অবশ্যই বনের ভিতর অপচনশীল কোন বস্তু ফেলবেন না।
Leave a Comment