গোচেলা ট্রেক (Goecha La Trek) বা গোয়েচা-লা ট্রেক পশ্চিম সিকিমের এখন একটি জনপ্রিয় ট্রেক রুট। কাঞ্চনজঙ্ঘার দক্ষিণ-পূর্বের রূপ কাছ থেকে দেখতে হলে আপনাকে যেতেই হবে গোচেলা। ইয়ুকসাম থেকে ট্রেক শুরু করে সাচেন (Sachen), সোখা (Tsokha), জোংরি (Dzongri), থানসিং (Thansing), লামুনে (Lamuney) হয়ে গোয়েচা লা (Goecha La), পথে পড়বে ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশানাল পার্ক’। সবুজের সমারোহ পেরিয়ে আর একটু উঠলেই তুষার রাজ্য আপনাকে স্বাগত জানাতে তৈরি। জোংরি (Dzongri) টপ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য হাসি মুখে কয়েক শো মাইল হাঁটা যায়। আর Goecha View Point থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য বিচার করতে যাওয়া বোধহয় একপ্রকার ধৃষ্টতা। তবে একটা জিনিস মাথায় রাখবেন, গোচেলা এমন একটি রোমাঞ্চকর ট্রেক যে যত বেশি সময় ধরে আপনি এই ট্রেক করবেন তত বেশি আপনি এর রূপ উপভোগ করতে পারবেন।
এপ্রিল থেকে মে মাস এবং সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাস।
Time needed: 8 days
আজকের হাঁটা পথ ৭ কিলোমিটার। সকালের শুরুতেই গাইড, রান্নার লোক, পোর্টার, ইয়াকম্যান নিয়ে তৈরি হয়ে নিন। প্রথম দিনের হাঁটা শুরু। কিছুটা এগোতেই কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্কের চেকপোস্ট। প্রত্যেকের পারমিশন করাতে হবে এখানে। পারমিট করিয়ে এগিয়ে চলার পালা। রাস্তা কোথাও চড়াই কোথাও উৎড়াই। প্রথম ঝুলন্ত ব্রিজ পেরিয়ে পৌঁছে যাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্কের গেটের সামনে। ব্রিজের নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে পেকচু নদীর জল। যেটা রঙ্গিত নদীতে গিয়ে মিশে পরে তিস্তায় রূপান্তরিত হয়েছে। এরপর বেশ কিছুটা পথ ট্রেকের পরে পৌঁছে যাবেন দ্বিতীয় নম্বর ঝুলন্ত ব্রিজ। সবশেষে সাচেনের ঠিক একটু আগে তৃতীয় লাস্ট সিমেন্টের তৈরি ব্রিজ পড়বে। এখান থেকে আর মাত্র ঘন্টা খানেকের মত রাস্তা বাকি থাকবে। কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে চলা শুরু করুন।
আজকের গন্তব্য সাচেন থেকে সোকা ভায়া বাখিম। পথ ৭ কিলোমিটার। আজকের রাস্তাটা মোটামুটি খুবই সংকীর্ণ আর বৃষ্টি হলে পিচ্ছিলও থাকবে বেশ। তাই পা একটু দেখে শুনে চালাতে হবে।মস্ত বড় বড় গাছ মাথার ওপরে তার মধ্যে আশ্রয় নিয়েছে অনেক লতাপাতা। কানের মধ্যে ভেসে আসবে ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ, পাখির নানান রকমের সুর। প্রায় ঘন্টা দেড়েক হাঁটার পর পৌঁছে যাবেন তৃতীয় এবং শেষ ঝুলন্ত ব্রিজে। এরপর রাস্তা সোজা ওপরে উঠছে। কিছুদূর পরেই বাখিম। আশা করা যায় বেলা ১২টা নাগাদ পৌঁছে যাবেন। কিছুক্ষণ জিড়িয়ে নিন এখানে। এরপর কিছুটা পথ পেড়িয়ে ঘন্টা দেড়েক পরে পৌঁছে যাবেন সোকা। আনুমানিক ৫-৫ঃ৩০ ঘন্টা সময় লাগবে সোকা পৌঁছতে।
আজ যেতে হবে সোকা থেকে জোংড়ি, ফেডং এর ওপর দিয়ে। হাঁটা পথ ৯ কিমি। এই যাত্রাপথটা একটু ক্ষেপাটে, একেবারে খাড়া চড়াই উঠেছে। পাশেই সোকা লেক ও মনেস্ট্রিকে টাটা বাই বাই করে উঠে পড়ুন উপড়ের দিকে। বেশ কিছুটা এগোতেই চোখে পড়বে কাঠের তৈরি রাস্তা। চারিদিকে রডোডেনড্রন এর গাছ আর মাঝখান দিয়ে এঁকে বেঁকে চলে গেছে রাস্তা। চারিদিকে না আছে কোন গাড়ি ঘোরার আওয়াজ না আছে মানুষের কোলাহল। বেলা বারোটা নাগাদ পৌঁছে যাবেন ফেডং এ। এখান থেকে এক কিলোমিটার রাস্তা পুরোটাই চড়াই, বেশ বেগ পেতে হবে। প্রায় দেড় ঘন্টা পর পথ শেষে পৌঁছে যাওয়া যাবে দেওরালি টপ। বসে কিছুক্ষণ জুড়িয়ে নিন। এরপর রাস্তা মোটামুটি সমতল। চারিদিকে শুধু রডোডেনড্রন গাছ। বেলা ৩-৪ টা নাগাদ পৌঁছে যাবেন জোংড়ি।
ভোররাতে উঠে রওনা দিতে হবে জোংড়ি টপের উদ্দেশ্যে। ৪০-৫০ মিনিটের হাঁটা পথ। সকালের অপার্থিব সূর্যোদয় দেখে ব্যাক করতে হবে ক্যাম্পসাইটে। সকালের নাস্তা খেয়ে বেরিয়ে পড়তে হবে, আজকের গন্তব্য কোকচুরাং এর দিকে। কিছুটা হেঁটে পৌঁছানো যাবে দোরেং। কপাল ভালো থাকলে পান্ডিমকে দেখতে দেখতে পৌঁছে যাওয়া যাবে কোকচুরাঙ। তবে আজকের রাস্তাটা বেশ ভালো। চারিদিকে শুধু ছোট ছোট গাছ আর ভ্যালি। পথ চলতে চলতে পৌঁছে যাবেন লালজেট্টি। এখান থেকে পুরো ২০০ মিটার নীচে এবার নামতে হবে। তো একটু সাবধান। এরপরে দেখা মিলবে পেকচু নদীর। কোকচুরাঙ এ পৌঁছে টেন্ট স্থাপন। আজকের ট্রেকে সময় লাগবে ৫-৬ ঘন্টা।
আজকের গন্তব্য লামুনে ভায়া থানসিং। আজকের হাঁটা পথ ৭ কিলোমিটার। হাঁটা শুরুর কিছুটা পরে গিয়ে কাঠের তৈরি দুটো সাঁকো পড়বে। সাঁকো পার করে এগিয়ে চলুন লামুনের দিকে। আজকের রাস্তা তেমন কষ্টদায়ক নয়। কিছুটা পরে পৌঁছে যাবেন থানসিং। বেশ খানিকটা এগোনোর পরে দূর থেকেই দেখা মিলবে নানান রঙের টেন্ট পিচ করা বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে। তার মানে বুঝতেই পারছেন যে বেশি দূর আর বাকি নেই লামুনে পৌঁছতে।
আজকের পথটা খুব একটা সহজ নয়। রাত ২-৩ টার মধ্যে রওনা করতে হবে গোচেলা ভিউ পয়েন্ট ১ এর উদ্দেশ্যে। সময় লাগবে ২-৩ ঘন্টা। সকালের সূর্যোদয় দেখতে চাইলে এর বাহিরে কোন উপায় নেই। সূর্যোদয়ের আগে পৌঁছে সূর্যোদয় উপভোগ করে ফিরে আসতে হবে লামুনে। কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে ফিরে চলতে হবে কোকচুরাঙ। এখানেই আজ রাতে থাকা।
শিলিগুড়ির SNT থেকে Jorethang পর্যন্ত শেয়ার গাড়ি পাবেন। Jorethang থেকে ইয়াকসাম যাবার শেয়ার গাড়িতে করে পৌঁছে যান ইয়োকসাম। কেউ এনজেপি থেকে যেতে চাইলে অটো করে SNT বাসষ্ট্যান্ড যেতে হবে। ভাড়া – ২০ টাকা। SNT থেকে Jorethang পর্যন্ত শেয়ার গাড়ি ভাড়া – ২৫০ টাকা। Jorethang থেকে Yuksum পর্যন্ত শেয়ার গাড়ি ভাড়া – ২০০ টাকা।
গাইড এর নম্বর – Phezang Lepcha ৮৩৪৮৪২৭২৫৬
Leave a Comment