নাটোর

উত্তরা গণভবন

নাটোর জেলা শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি যা বর্তমানে উত্তরা গণভবন নামে পরিচিত। উত্তরা গণভবন হলো উত্তরবঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর স্থানীয় কার্যালয় ও বাসভবন। উত্তরা গণভবন দেখতে হলো জেলা প্রশাসনের অনুমতি লাগবে।

নাটোরের রানী ভবানী নায়েব দয়ারাম রায়ের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে তাকে দিঘাপতিয়া পরগনা উপহার দেন। এখানে তিনি গড়ে তোলেন বেশকটি প্রাসাদ। প্রায় ৪৩ একর জায়গাজুড়ে চারদিকে লেক ও প্রাচীর বেষ্টিত এ রাজবাড়িটিতে ছোট-বড় ১২টি ভবন আছে। রাজা প্রসন্ননাথের অবক্ষমূর্তি দক্ষিণ দিকে কুমার ভবন ও অতিথিশালা। মূল প্রাসাদ ভবনে রাজার সিংহাসন, আক্রমণ ঠেকানোর বর্ম এবং তলোয়ার আছে। রাজ প্রাসাদের ভেতরে আছে ইতালি থেকে সংগৃহীত ভাস্কর্যে সজ্জিত বাগান। উত্তরা গণভবনের প্রবেশ পথে চারতলা বিশিষ্ট পিরামিড আকৃতির প্রবেশদ্বার। আর এর চূড়ায় রয়েছে বিলেতের কোক অ্যান্ড টেলভি কোম্পানির শতবর্ষ প্রাচীন ঘণ্টা ঘড়ি।

এখানে আছে নীলমণিলতা, হাপরমালি, পারিজাত, রাজ-অশোক, সৌরভী, কর্পূর, যষ্টিমধু, হৈমন্তী, পেয়ালি, বনপুলক, তারাঝরা, সেঁউতি, মাধবী, সাইকাসসহ অনেক দুর্লভ প্রজাতির গাছ। প্রবেশপথের সামনে প্রথমেই চোখ যাবে ডান দিকের বিশাল পরিখায়, যা পুরো রাজপ্রাসাদ ঘিরে আছে। একটু এগিয়ে বামে গণপূর্ত অফিস, সে সময়কার গাড়ির গ্যারেজ। আছে গোলাপবাগান, বিশাল মাঠ। এখানে দোতলা হলুদ ভবনটি হলো কুমার প্যালেস, যার নিচতলাটি টর্চারসেল হিসেবে ব্যবহূত হতো। রয়েছে একতলা তহশিল অফিস। আর আছে সে সময়কার চারটি কামান। বিশাল রাজদরবারটি আছে। রাজপ্রাসাদ-সংলগ্ন বাগানে জমিদার দয়ারামের একটি ভাস্কর্য তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।

‘ইতালিয়ান গার্ডেন’ উত্তরা গণভবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অংশ। গার্ডেনটির বিভিন্ন আসবাব দয়ারাম ইতালি থেকে আনিয়েছিলেন বলেই এর এমন নামকরণ। এখানে রয়েছে পাঁচটি মার্বেল পাথরের মূর্তি, ঝরনা ও বসার বেঞ্চ। বেঞ্চগুলো অবশ্য কলকাতা থেকে আনা হয়েছিল। গায়ে ‘কলকাতা’ লেখা ট্রেডমার্ক আপনার চোখ এড়াবে না। ‘পাহাড়ি কন্যা’ শিরোনামের মূর্তিটির এক হাত ভাঙা। ১৯৭১ সালে এখানে লুটপাট হয়েছিল। এই হাতের কবজিটি স্বর্ণ দিয়ে বাঁধাই করা ছিল। সে সময় পাকিস্তানি সেনারা হাতটি ভেঙে স্বর্ণ লুট করে নিয়ে যায়!

সময়সূচীঃ

গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা, শীতকালে ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত উত্তরা গণভবন দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। টিকিট ১০ টাকা। রবিবার বন্ধ থাকে উত্তরা গণভবন।

কিভাবে যাবেনঃ

ঢাকা থেকে নাটোর চার ঘণ্টার পথ। গ্রিনলাইন ও হানিফ পরিবহনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসসহ শ্যামলী ও ন্যাশনাল ট্রাভেলসের বাস এ পথে নিয়মিত চলাচল করে। এ ছাড়া রাজশাহী গামী যে কোন বাসে অথবা ট্রেনে নাটোর যাওয়া  যাবে। সময় লাগে ছয় ঘণ্টা।

নাটোর বাসস্ট্যান্ড বা রেলস্টেশন থেকে সিএনজি অটোরিকশায় ১৫ মিনিটে যাওয়া যায় উত্তরা গণভবন।

কোথায় থাকবেনঃ

নাটোরে রাতে থাকার জন্য ভিআইপি হোটেলের কোনো বিকল্প নেই। কাছাকাছি মানের হোটেল আরপিতেও নির্দ্বিধায় রাত যাপন করতে পারেন। থাকতে পারেন হোটেল মিল্লাতেও। এছাড়া সাধারন মানের হোটেলের মধ্যে আরও আছে –  হোটেল রুখসানা (কানাইখালিতে অবস্থিত), হোটেল উত্তরা ফকির হাটের।

কোথায় খাবেনঃ

অল্প টাকায় খুব ভালোভাবে খাওয়ার জন্য আছে ইসলামিয়া পঁচুর হোটেল। একটু দূরে রেলস্টেশনের কাছে নয়ন হোটেলের খাবারও মন্দ নয়। তবে যাই করুন, কাঁচাগোল্লা খেতে এবং সঙ্গে নিয়ে আসতে যেন ভুল না হয়। তেমনি ভুলবেন না নাটোর রাজবাড়ি, পুঠিয়া রাজবাড়ি, চিনির মিল ও চলনবিল দেখতে।

Leave a Comment
Share