সূর্যের মতোই উজ্জ্বল, হাসিমাখা মুখে যেন ফুটে আছে সূর্যমুখী ফুল। দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ জুড়ে হাজার হাজার সূর্যমুখীর সমাহার যেন এক অপরূপ সৌন্দর্যের নীলাভূমি। নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় তেলবীজ শস্য হিসেবে বপন করা এই সূর্যমুখী বাগান (Sunflower Garden) এখন স্থানীয়দের বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। হলুদের আভায় চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে অপার মুগ্ধতা। বাতাসে দোল খাওয়া পাঁপড়িগুলো যেন দর্শনার্থীদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে এর সৌন্দর্য উপভোগে।
নরসিংদীর শেখ হাসিনা সেতু সংলগ্ন মেঘনা নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলে গড়ে উঠেছে এই “সূর্যমুখী কর্নার”। এই বিশাল চরাঞ্চলের হাজার বিঘা জমি বছরের একটি সময় পতিত থাকত। এই জমিকে কাজে লাগানোর জন্য স্থানীয় এক যুবক কৃষি বিভাগের পরামর্শে গত বছর প্রথমবারের মতো পাঁচ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ শুরু করেন। বর্তমানে এই চাষ বিস্তৃত হয়েছে ২০ বিঘারও বেশি জমিতে।
ফুল ফোটার পর থেকেই দর্শনার্থীদের আনাগোনা শুরু হয়েছে এই বাগানে। বাগান রক্ষা এবং দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। একদিকে স্বল্প ব্যয়ে বেশি লাভ, অন্যদিকে বাগানগুলো বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হওয়ায় কৃষকরা পাচ্ছেন বাড়তি আয়। এরই অংশ হিসেবে বাগানটিতে নান্দনিক গেট, সেলফি বুথ ও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে।
নরসিংদী সদরের নাগরিয়াকান্দি এলাকায় ১৫ বিঘা জমির ওপর তৌহিদুল ইসলাম মাসুম ও মাহবুবুর রহমান এই সূর্যমুখী বাগান গড়ে তুলেছেন। এবার বারি ২, বারি-৩ ও হাইসান জাতের সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। বাগানটির অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে দিন দিন এটি মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
প্রতিদিন ঢাকা, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, গাজীপুর সহ বিভিন্ন জেলা থেকে অসংখ্য প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ ভিড় করছে এই বাগানে। কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে, কেউ বন্ধুদের সাথে ঘুরতে আসছে। অনেকে ফুলের সাথে ছবি তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে। ছোট ছোট মৌমাছিগুলোও ফুল থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জায়গাটি নানা বয়সের মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
বাগানটিতে দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে নান্দনিক সাজসজ্জা। “আপন রেস্টুরেন্টে” বসে প্রিয়জনের সঙ্গে খাবার খাওয়ার সুযোগও রয়েছে। বর্তমানে সূর্যমুখীর পাশাপাশি আপন ও দর্শনার্থীদের মনে জায়গা করে নিয়েছে তার সৌন্দর্যের কারণে। এই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রবেশ মূল্য মাত্র ৩০ টাকা।
ঢাকা থেকে নরসিংদীর সূর্যমুখী বাগানে যাওয়ার জন্য কয়েকটি উপায় আছে:
মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে নরসিংদীগামী বাসে উঠতে পারেন। নরসিংদী পৌঁছে সিএনজি বা অটোরিকশা করে শেখ হাসিনা সেতু সংলগ্ন মেঘনা নদীর তীরবর্তী সূর্যমুখী বাগানে যেতে পারবেন। স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা করলেই “সূর্যমুখী কর্নার” এর ঠিকানা পেয়ে যাবেন। গুলিস্তান থেকেও নরসিংদীগামী বাস পাওয়া যায়।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে নরসিংদীগামী ট্রেনে করে যেতে পারেন। নরসিংদী রেলস্টেশন থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা করে সূর্যমুখী বাগানে যেতে পারবেন।
ঢাকা থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ধরে নরসিংদী যেতে পারেন। শেখ হাসিনা সেতু পার হয়ে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা করলে সূর্যমুখী বাগানের ঠিকানা পেয়ে যাবেন। গুগল ম্যাপ ব্যবহার করলেও সুবিধা হবে।
কিছু টিপস
সূর্যমুখীর হাসিতে ঝলমল করছে নরসিংদী। এই উদ্যোগ কৃষকদের আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় পর্যটনকেও সমৃদ্ধ করছে।
Leave a Comment