ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়ি (Bhai Girish Chandra Sen Museum) নরসিংদী সদর উপজেলার পাঁচদোনা গ্রামের ড্রিম হলিডে পার্ক সংলগ্ন মেহেরপাড়ায় অবস্থিত যা ভারতীয় হাই কমিশনের অনুদানে পেয়েছে নতুন রূপ। সংস্কারের ক্ষেত্রে এর আদি রুপকে আটুট রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। নরসিংদী জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিদের মধ্যে ভাই গিরিশ চন্দ্রের নাম বাংগালী মুসলিমদের কাছে বেশ পরিচিত। গিরিশ চন্দ্র সেন পবিত্র কুরআন শরীফের প্রথম পূর্ণাঙ্গ অনুবাদকারী। তার এই অসামান্য অবদানের জন্য মুসলিম সমাজে তাকে ভাই বলে সম্বোধন করা হত। এর আগে মুসলিমদের মধ্যে অনেকেই কুরআনের অনুবাদ করেছেন তবে সর্বপ্রথম গোটা কুরআনের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ করেন ভাই গিরিশ চন্দ্র সেন। ১৮৮১ থেকে ১৮৮৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ গবেষনা করে তিনি কুরআন শরীফের বাংলা অনুবাদ করেন। মুসলিমদের মধ্যে মৌলভী আব্বাস আলী সর্বপ্রথম ১৯০৭ সালে কুরআনের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ করেন।
গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়ি সংস্কারের ক্ষেত্রে চুন, সুড়কির পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আনা মুল্যবান কাঠ ও টালি ব্যবহার করা হয়েছে। আর বাড়ীর অন্দরমহল সাজানো হয়েছে ব্রিটিশ আমলের আসবাপত্র দিয়ে। এছাড়া সামনে স্থাপন করা হয়েছে তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী সহ একটি আবক্ষ মূর্তি। জাদুঘরে গিরিশ চন্দ্র সেনের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, বাস্তুভিটায় আবিষ্কৃত প্রত্নতত্ন এবং তাঁর লেখা বই সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।
ভাই গিরিশচন্দ্র সেন (১৮৩৪ – ১৯১০) পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কুরআন-এর প্রথম বাংলা অনুবাদক হিসেবেই অধিক পরিচিত। ইংরেজী ১৮৩৪ সালে নরসিংদী জেলার পাঁচদোনা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহন করেছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একাধারে সাহিত্যিক, গবেষক ও ভাষাবিদ ছিলেন। তিনি ইসলাম ধর্মের অনেক গ্রন্থ নিয়ে গবেষণা ও অনুবাদ করেছেন। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হয়েও গিরিশ চন্দ্র সেনই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি কোরআন শরীফের পবিত্রতা রক্ষা করে বঙ্গানুবাদ করার সাহসিকা দেখিয়ে ছিলেন। তখন বেশিরভাগ ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল যে, মূলভাষা থেকে অনূদিত হলে গ্রন্থটির পবিত্রতা ক্ষুণ্ন হবে। পবিত্র কুরআন সম্পর্কেও এমন ধারণা ছিল। এ কারণে অনেক মুসলিম মনীষী এর বঙ্গানুবাদ করতে সাহস পাননি। গিরিশচন্দ্র সেনই অন্য ধর্মাবলম্বী হয়েও এই ভয়কে প্রথম জয় করেন। কুরআন শরীফ ছাড়াও তিনি ইসলাম ধর্ম বিষয়ক অনেক গ্রন্থ অনুবাদ করেন।
ব্রাহ্মধর্ম প্রচারক হিসেবে তাঁকে “ভাই” খেতাবে ভূষিত করা হয়। পরবর্তীতে আরবি, ফার্সি ভাষার ব্যুৎপত্তি অর্জন ও কোরআন হাদিসের প্রথম অনুবাদক হিসেবে তাঁকে “মৌলভি” উপাধি দেওয়া হয়। ১৯১০ সালের ১৫ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
প্রতি সপ্তাহের রবিবার ব্যতিত সপ্তাহের বাকী ৬ দিন ভাই গিরিশ চন্দ্র জাদুঘর সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে।
গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়ি যেতে চাইলে প্রথমে নরসিংদীর পাঁচদোনায় আসতে হবে। ঢাকার গুলিস্থান থেকে মেঘালয়/রয়েল বাস ছাড়াও বেশকিছু পরিবহণের বাস পাঁচদোনার পথে যাতাযাত করে। পাঁচদোনা থেকে সিএনজি কিংবা অটোতে চড়ে ডাঙ্গা বাজার পৌঁছে সেখান থেকে সহজেই ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়িতে যেতে পারবেন। আবার মহাখালি থেকে কুড়িল বিশ্ব রোড দিয়ে কাঞ্ছন ব্রিজ পার হয়ে মায়ার বাড়ী মোড় হতে অটো নিয়ে গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়ী যাওয়া যায়।
নরসিংদীতে থাকার জন্য বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হোটেল, গেস্ট হাউজের রয়েছে।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় আছে
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আছে
নরসিংদীতে ফাল্গুনি হোটেল, বাবুর্চি আলমগির হোটেল, বন্ধু হোটেল ও খোকন হোটেলের মতো বেশকিছু খাবার হোটেল পাবেন। এছাড়া নরসিংদীর রসগোল্লা, লালমোহন, খিরমোহন মিষ্টি ও শাহী জিলাপি বেশ জনপ্রিয়।
Leave a Comment