নরসিংদী

মনু মিয়া জমিদার বাড়ি

মনু মিয়া জমিদার বাড়ি (Monu Mia Zamidar Bari) নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালে অবস্থিত যা মূলত ঘোড়াশাল জমিদার বাড়ি। অপরিচিতদের জন্য ঘোড়াশাল জমিদার বাড়ির চেয়ে মনু মিয়ার জমিদার বাড়ি নামে খুঁজে পাওয়াটা অপেক্ষাকৃত সহজ। স্থানীয়রা এই নামেই ভালো চেনেন। তবে মনু মিয়া জমিদার বাড়ি নামে ডাকা হলেও আদতে ঘোড়াশাল জমিদার বাড়ি (Ghorashal Zamidar Bari) তিনটি পৃথক বাড়ি নিয়ে গঠিত। পাশাপাশি অবস্থিত বাড়ি তিনটি হলো – মৌলভী আবদুল কবিরের বাড়ি, নাজমুল হাসানের বাড়ি এবং মনু মিয়ার বাড়ি। তবে মনু মিয়া এই এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন বলে তাঁর নামেই পরিচিতি পেয়েছে।

ঐতিহাসিক এই স্থাপনার বয়স প্রায় ২৪৭ বছর। বাড়িটির নির্মাণ সাল ১১৭৬ বঙ্গাব্দ। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জমিদার সাজদা মিয়া। এই বংশের উত্তরসূরি আহমাদুল কবির মনু মিয়া ঘোড়াশালের জমিদার আবু ইউসুফ লুৎফুল কবির ওরফে ফেনু মিয়ার পুত্র। জন্ম ১৯২৩ সালে। ১৯৪২-৪৩ সালে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ক্রীড়া সম্পাদক, ১৯৪৫-৪৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর প্রথম সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি অর্থনীতিতে গ্রাজুয়েশন করে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ায় যোগদান করেন। ১৯৫০ সালে তিনি পাকিস্তানের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। ১৯৫৪ সালে দৈনিক সংবাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে তিনি সংবাদ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০১ সালে তিনি প্রধান সম্পাদক হন এবং আমৃত্যু এ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। ১৯৭৯ ও ১৯৮৬ সালে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালে ৮০ বছর বয়সে কলকাতার এ্যাপোলো গ্লেইনগল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

প্রায় ১০ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত মনু মিয়া জমিদার বাড়ির বাইরে থেকে বোঝার কোন উপায় নেই যে ভেতরে কি অপরূপ সৌন্দর্য অপেক্ষা করে আছে। ভেতরে ঢুকতেই বাম পাশের মসজিদটির দিকে সর্ব প্রথম নজর পড়বে। প্রতিটি বাড়িই অসাধারণ কারুকাজ আর সাদা রঙে রাঙায়িত। সেই সাথে সবুজ ঘাস এবং গাছ পালার বিস্তৃতি এক অপরূপ সৌন্দর্যে রুপ দেয়। ভেতরে রয়েছে আলিসান ভাবে শান বাধানো দুইটি পুকুর। রয়েছে অসংখ্য ল্যাম্প পোস্ট। এছাড়াও দেখা মিলবে বহু ফুলের গাছ এবং ৪ প্রকার কাঠ গোলাপ ফুলের গাছ। খোলামেলা পরিবেশ আর গাছ-গাছালিই মনু মিয়ার জমিদার বাড়ির অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য। ভেতরের পরিবেশ দেখলেই বোঝা যায় যে বাড়ির মালিক কতটা রুচিশীল এবং আরাম আয়েশ প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। মনুমিয়ার খোলামেলা পরিপাটি এই বাড়িটি আপনার মনকে প্রশান্তিতে ভরিয়ে তুলবে। আপনারা ২ এবং ৩ নং বাড়িটা দেখতে তেমন কোন সমস্যায় পড়বেন না, তবে গিয়ে প্রবেশের এবং ছবি তোলার অনুমতি নিয়ে নিবেন। আর ১ নং বাড়িটা দেখতে চাইলে গেটে দারোয়ান এর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করবেন।

মনু মিয়া জমিদার বাড়ি কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে দুই উপায়ে খুব সহজেই মনু মিয়ার জমিদার বাড়ি যেতে পারবেন।

উপায়-০১ (ট্রেনে)

ঢাকার কমলাপুর রেল ষ্টেশন থেকে সকাল সাড়ে আটটায় কর্ণফুলি একপ্রেস ছেড়ে যায়, ভাড়া ২৫ টাকা। এক/দেড় ঘন্টা সময় লাগে।

উপায়-০২ (বাসে)

ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে প্রতি ঘন্টায় PPL, বাদশাহ, KTL, চলনবিলসহ আরও অনেক বাস নরসিংদীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া ৭০-৮০ টাকা। ঘোড়াশাল নেমে রিক্সা নিয়ে প্রথমে চলে যাবেন মনু মিয়ার বাড়ি, রিক্সা ভাড়া ২০ টাকা।

এছাড়া যারা টংগী কিংবা আব্দুল্লাহপুর থেকে যেতে চান, তাঁদের টঙ্গী আবদুল্লাহপুর হয়ে নরসিংদী যাবার পথে ঘোড়াশাল ব্রীজে নামতে হবে। ব্রীজ থেকে সিঁড়ি দিয়ে নেমে অটো বা সিএনজিতে ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে সোজা মনু মিয়া জমিদার বাড়ি পৌঁছে যাবেন।

এছাড়া ঢাকার গুলিস্থান থেকে নরসিংদীর বাসে চেপে নরসিংদীর পাঁচদোনা মোড় বাসস্ট্যান্ড নামতে পারেন। তারপর সেখান থেকে সিএনজিতে/বাসে ঘোড়াশাল। ঘোড়াশাল পৌঁছে স্থানীয়দেরকে জিজ্ঞেস করলেই হবে মনু মিয়ার জমিদার বাড়ি দেখিয়ে দিবে। সিএনজি ভাড়া ৫০-৬০ টাকা।

এটি একটি ব্যক্তিগত সম্পতি, কোন টুরিস্ট স্পট নয়। তাই দলবল নিয়ে না গিয়ে ২-৩ মিলে যান। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না। লক্ষ রাখবেন আপনার দ্বারা যেন এর পরিবেশ নষ্ট না হয়।
Leave a Comment
Share