নরসিংদী

বেলাবো বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ

বেলাবো বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ (Belabo Bazar Central Jame Masjid) নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলার এক ঐতিহাসিক ও স্থাপত্য-সমৃদ্ধ ধর্মীয় স্থাপনা। প্রায় চারশত বছরের পুরনো এই মসজিদটি শুধুমাত্র ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবেই নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত। এর স্থাপত্যশৈলী, ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং আধুনিক সংস্কারের ফলে এটি বাংলাদেশের অন্যতম আকর্ষণীয় মসজিদে পরিণত হয়েছে।

প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য

প্রায় ৪০০ বছর পূর্বে বীরবাঘবের গ্রামের জনাব মাহমুদ ব্যাপারী এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং জমি দান করেন। প্রাথমিক নির্মাণকালে এর সাতটি গম্বুজ ছিল, যা তৎকালীন অন্যান্য মসজিদের কাঠামো থেকে ভিন্ন ছিল। লোকমুখে প্রচলিত আছে যে, মসজিদটিতে অলৌকিকভাবে কুরআন তেলাওয়াত শোনা যেত, যার ফলে এটি “ফজিলতের মসজিদ” নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জুম্মার নামাজে মুসল্লিদের অতিরিক্ত ভিড় হতো, যা মসজিদের ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে যেত।

আধুনিক সংস্কার ও বর্তমান অবস্থা

ক্রমবর্ধমান মুসল্লিদের চাহিদা পূরণে ২০০৮ সালে নরসিংদী জেলার বিশিষ্ট শিল্পপতি, শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক, থার্মেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল কাদির মোল্লা প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মসজিদটির ব্যাপক সংস্কার করেন। এই সংস্কারের ফলে মসজিদটির ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর স্থাপত্যশৈলী আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে মসজিদটিতে প্রায় ১২,০০০ মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারেন।

স্থাপত্যশৈলী

আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই মসজিদটিতে ইসলামিক স্থাপত্যের বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। বিশাল গম্বুজ, উঁচু মিনার, সুন্দর কারুকার্য এবং প্রশস্ত প্রাঙ্গণ মসজিদটিকে একটি অনন্য রূপ দান করেছে।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভূমিকা

বেলাব বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয়, বরং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করে। এখানে নিয়মিত ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা হয়। এছাড়াও, বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড, যেমন দরিদ্রদের সাহায্য, অসহায়দের পুনর্বাসন ইত্যাদি কার্যক্রম এই মসজিদ থেকে পরিচালিত হয়।

পর্যটন আকর্ষণ

মসজিদটির স্থাপত্য সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য পর্যটক এই মসজিদ দেখতে আসেন। এছাড়াও, মসজিদটি উয়ারী বটেশ্বরের মতো ঐতিহাসিক স্থানের নিকটবর্তী হওয়ায় পর্যটকদের জন্য এটি আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

বেলাবো বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে বেলাব বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ যাওয়ার জন্য বিভিন্ন উপায় রয়েছে। আপনার সুবিধা অনুযায়ী যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন:

সরাসরি নরসিংদী হয়ে
  1. বাস: গুলিস্তান, সায়েদাবাদ অথবা আব্দুল্লাহপুর থেকে নরসিংদীগামী বাসে উঠুন। ভাড়া প্রায় ৬০ টাকা এবং সময় লাগবে প্রায় দেড় ঘণ্টা। নরসিংদী পৌঁছে বাস বা সিএনজি (ভাড়া প্রায় ২৫-৩০ টাকা) করে বেলাব উপজেলায় যান। সেখান থেকে রিকশা (ভাড়া প্রায় ১০ টাকা) করে মসজিদে পৌঁছাতে পারবেন।
  2. ট্রেন: কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে নরসিংদীগামী ট্রেনে যেতে পারেন। ভাড়া প্রায় ৩০ টাকা এবং সময় লাগবে প্রায় ১ ঘণ্টা। নরসিংদী থেকে বাস/সিএনজি এবং রিকশা করে মসজিদে যান।
ভৈরব হয়ে
  1. বাস: গুলিস্তান বা আব্দুল্লাহপুর থেকে ভৈরবগামী বাসে উঠুন। ভৈরবের মরজাল বাসস্ট্যান্ডে নেমে সিএনজি করে সরাসরি বেলাব বাজার যেতে পারেন।
  2. ট্রেন: কমলাপুর থেকে ট্রেনে নরসিংদী নেমে অটো/রিকশা করে ভেলানগর যান। ভেলানগর থেকে ভৈরবগামী বাসে বারৈচা বাসস্ট্যান্ডে নেমে সিএনজি করে বেলাব বাজার যান।

নরসিংদী হয়ে যাওয়া সহজ এবং কম খরচের। ভৈরব হয়ে যাওয়া কিছুটা দ্রুত হতে পারে, তবে অতিরিক্ত যানবাহন পরিবর্তন করতে হবে। আপনার পছন্দ এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিন।

বেলাবো বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ একটি ঐতিহাসিক, স্থাপত্য-সমৃদ্ধ এবং সামাজিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এর অতীত ঐতিহ্য এবং বর্তমান আধুনিকতার মিশ্রণ এটিকে একটি অনন্য রূপ দান করেছে। এই মসজিদ শুধুমাত্র একটি ইবাদত কেন্দ্র হিসেবেই নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করে।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ BelaboMasjidMosquenarsingdi