ঢাকা

রোজ গার্ডেন

পুরান ঢাকার টিকাটুলির কেএম দাস লেনে রোজ গার্ডেন (Rose Garden) নামের প্রাসাদসম বাড়িটি অবস্থিত যা বলধা গার্ডেন থেকে অল্প দূরত্বে। পাশেই রয়েছে খ্রিষ্টান কবরস্থান। ১৯৪৯ সালে এই রোজ গার্ডেনেই গঠিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। শ্বেত পাথরের মূর্তি, কৃত্রিম ফোয়ারা, ঝর্ণা, শান বাঁধানো পুকুর ও অনন্য স্থাপত্য শৈলিতে নির্মিত ভাস্কর্য– এক রাজকীয় বাগানবাড়ি রোজ গার্ডেন। বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে যা চিরদিনের মত যুক্ত হয়ে গেছে। কালের পরিক্রমায় রোজ গার্ডেন এখন রশিদ মঞ্জিল।

রোজ গার্ডেন এর পশ্চিম ও উত্তর দিকের দেয়ালের মধ্যবর্তী অংশে দুটি মূল ফটক আছে। প্রবেশ ও বাহির হওয়ার জন্য পশ্চিম দিকের ফটক দিয়ে প্রবেশ করলে প্রথমেই আছে একটি বিস্তীর্ণ খোলা প্রাঙ্গণ। এখানে মঞ্চের ওপর দণ্ডায়মান রয়েছে কয়েকটি সুদৃশ্য নারী মূর্তি। পূর্বাংশের মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে একটি আয়তকার পুকুর। পুকুরের পূর্ব ও পশ্চিম পাশের মাঝামাঝি একটি করে বাঁধানো পাকা ঘাট আছে। এর পূর্ব দিকে আছে পশ্চিমমুখী একটি দোতলা ইমারত। যার বর্তমান নাম ‘রশিদ মঞ্জিল’। রশিদ মঞ্জিলের প্রবেশপথের সামনের চত্বরে ইট ও সিমেন্ট নির্মিত একটি সুন্দর ফোয়ারা রয়েছে। একটি সাত ধাপ বিশিষ্ট সিঁড়ি দিয়ে রশিদ মঞ্জিলের প্রথম তলায় যেতে হয়। এর সামনের দিকের মাঝামাঝি অংশের প্রতি কোঠার পাশাপাশি তিনটি খিলান দরজা আছে। ওপরের তলায় প্রতিটি খিলানের ওপর একটি করে পডিয়াম আছে। টিমপেনামগুলো লতাপাতার নকশা এবং রঙিন কাচ দিয়ে শোভিত। এর সামনে আছে বাইরের দিকে উপবৃত্তাকার বেলকনি। এর দুপাশে একটি করে করিনথীয় পিলার আছে। পিলারগুলোর দুই পাশের অংশে প্রতি তলায় আছে একটি করে দরজা। এদের প্রতিটির কাঠের পাল্লার ভ্যানিশিং ব্লাইন্ড ও টিমপেনামে লতাপাতার নকশা দেখা যায় এবং সামনেই অপ্রশস্ত খোলা বেলকনি আছে। এর ওপরের অংশে কার্নিস বক্রাকার যা বেলস্ট্রেড নকশা শোভিত। মধ্যবর্তী অংশ ছাদের সামনের ভাগে আছে আট কোনাকার এবং খিলান সংবলিত বড় আকারের ছত্রী। এর ছাদ একটি আধাগোলাকার গম্বুজ ঢাকা। ইমারতটির দুই কোণে দুটি করিনথীয় পিলার আছে এদের ওপরে দিকেও ছত্রী নকশা আছে। প্রতি তলায় মোট ১৩টি ছোট ও বড় আকারের কোঠা আছে। প্রথম তলায় প্রবেশের পর পশ্চিমাংশের বাঁদিকে আছে ওপরের তলায় যাওয়ার জন্য ঘূর্ণায়মান সিঁড়ি। ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন নাটক ও টেলিফিল্ম শুটিং স্পট হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।

রোজ গার্ডেনের গোড়াপত্তনের ইতিহাস ঘাটতে গেলে জানা যায়, হৃষিকেশ দাস নামক এক লোক এই বাড়ির নির্মাতা যিনি ঢাকার একজন জমিদার ছিলেন। হৃষিকেশ দাস একদিন বলধা গার্ডেনে গিয়েছিলেন বলধার জলসা ঘরের জলসা দেখতে। তবে প্রচণ্ড অপমানিত হয়ে তাকে ফিরে আসতে হয়। শোনা কথা, রূপলাল বাবু যেমন আহসান মঞ্জিল দেখে রূপলাল হাউস বানিয়েছিলেন, তেমনি হৃষিকেশ বাবু বলধা গার্ডেনের জলসায় অপমানিত হয়ে বানালেন প্রাসাদসম রোজ গার্ডেন।

অবশ্য শুরুতে এমন প্রাসাদসম ভবন নির্মাণ করেননি। প্রথমে তিনি কেএম দাস এলাকায় ২২ বিঘা জমি কেনেন। তারপর সেই জমিতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মাটি ও গোলাপ এনে একটি গোলাপ বাগান তৈরি করেন, সেটা ১৯৩০ সালের ঘটনা।
১৯৩১ সালে সেই গোলাপ রেখে পেছনে কারিনিয়ান পিলার ঘেরা প্রাসাদসম যে ভবন নির্মাণ হয়, সেটিই কালে কালে রোজ গার্ডেন হিসেবে খ্যাতি লাভ করে।

হৃষিকেশ দাস ভবন নির্মাণের অল্প কিছু দিন পর অর্থাভাবে পড়লে সেটি বিক্রি করে দেন ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদের কাছে। এখনও ভবনটির গায়ে আব্দুর রশিদের নাম খোদাই করা দেখতে পাওয়া যায়। বিখ্যাত প্রভিন্সিয়াল লাইব্রেরি এখানেই প্রতিষ্ঠিত হয়, যার মালিক ছিলেন ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ। ১৯৬৬ সালে আব্দুর রশিদের ভাই কাজী হুমায়ূন ভবণের মালিকানা লাভ করেন। তারপর থেকে ভবনটির নাম হুমায়ূন সাহেবের বাড়ি নামে বিখ্যাত হয়ে ওঠে। ১৯৭০ সালে কাজী হূমায়ূন বাড়িটি তৎকালীন চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা মোশন পিকচার্স লিমিটেডের কাছে ভাড়া দেন। সেই সময় ভবনটি বেঙ্গল ষ্টুডিও নামে বিখ্যাত হয়ে ওঠে। ১৯৯৩ সালে বেঙ্গল ষ্টুডিও চলে গেলে আবার বাড়িটি চলে আসে কাজী হূমায়ূন পরিবারের কাছে। ততদিন আর কাজী হুমায়ূন বেঁচে ছিলেন না, ভবনটির মালিকানা পান তার বংশধর কাজী রকিব।

খোলা-বন্ধের সমসসূচী

রোজ গার্ডেন দেখতে হলে ছুটির দিন বাদে অন্য যে কোনো দিন বের হতে হবে। বন্ধের দিন রোজ গার্ডেন প্রবেশাধিকার নেই।

কিভাবে যাবেন

ঢাকার গুলিস্তান বা যাত্রাবাড়ি থেকে রিক্সায় টিকাটুলির কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেন। অনেক রিক্সাওয়ালাই রোজ গার্ডেন নামে চিনে না। তাই রিক্সাওয়ালাকে বলতে হবে হুমায়ূন সাহেবের বাড়ি যাবো।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ dhakapalacerose garden