কক্সবাজার

মহেশখালী দ্বীপ

মহেশখালী দ্বীপ (Moheshkhali Island) কক্সবাজার জেলার একটি পাহাড়ি দ্বীপ যা কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে সাগরের মাঝে অবস্থিত। প্রায় ৩৬২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মহেশখালী উপজেলায় সোনাদিয়া, মাতারবাড়ি, ধলঘাটা নামে ৩টি দ্বীপ রয়েছে। ১৮৫৪ সালে গড়ে ওঠা এই দ্বীপ পান, মাছ, শুটকি, চিংড়ি, লবণ ও মুক্তার উৎপাদনের কারনে সুনাম অর্জন করলেও এখানকার মূল আকর্ষন মিষ্টি পান। মহেশখালী এই মিষ্টি পানের জন্যে দেশ জুড়ে বিখ্যাত।

ধারনা করা হয়, প্রায় ২০০ বছর পূর্বে বৌদ্ধ সেন মহেশ্বরের আম অনুসারে এই স্থানটির নামকরণ হয় মহেশখালী। যদিও অনেকের মতে, শিবের অপর নাম মহেশ এবং এই শিবের নাম অনুসারে জায়গাটির নামকরণ করা হয়েছে মহেশখালী।

মহেশখালী দ্বীপের দর্শনীয় স্থান

মহেশখালী বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ। এই দ্বীপটি আবার ৩টি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত। প্রতি বছরের ফাল্গুন মাসে এই দ্বীপে আয়োজন করা হয় আদিনাথ মেলা। মহেশখালীর দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম –

  • সোনাদিয়া দ্বীপ
  • আদিনাথ মন্দির ও আদিনাথ মেলা
  • বৌদ্ধ কেয়াং বা মন্দির
  • রাখাইন পাড়া
  • স্বর্ণ মন্দির
  • মৈনাক পর্বত

মহেশখালী ভ্রমণ গাইড

মহেশখালী ১ নং জেটি ঘাট থেকে এখানকার বিখ্যাত মিস্টি পান মুখে দিয়ে অটোরিক্সা রিজার্ভ করে দুপাশে ম্যানগ্রোভ বন রেখে জেটি ধরে প্রথমেই চলে যান বড় বৌদ্ধ কেয়াং বা মন্দির। এর ভেতরে আছে বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ মন্দির। বেশ কয়েকটি পিতলের বৌদ্ধ মূর্তিও আছে এখানে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ধ্যানমগ্ন বুদ্ধ, মাথায় হাতে শায়িত বুদ্ধ এবং দণ্ডায়মান বুদ্ধ ইত্যাদি। পথে যেতেই পানের বরজ চোখে পড়বে।

বৌদ্ধ মন্দির থেকে বেরিয়ে সরাসরি চলে যান স্বর্ণমূর্তি দেখতে। তারপর শ্রী শ্রী আদিনাথ মন্দিরে চলে যান। পাহাড় বেয়ে যেতে হবে মৈনাক পাহাড়ে। লোকমুখে প্রচলিত, ৫০০ থেকে ৬০০ বছরের পুরোনো মন্দিরের কারুকার্য সুন্দর। মৈনাক পাহাড় থেকে ম্যানগ্রোভ বন, সমুদ্র এবং পুরো মহেশখালী দেখতে পাওয়া যায়। পাহাড়ের ঢালে পানের চাষ দেখা যায়।

মন্দির থেকে নেমে পাশে আরেকটি জেটি ধরে সমুদ্রের কাছে চলে যেতে পারবেন। কেওড়া, গোলপাতাসহ সুন্দরী গাছের মনোরম দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই। ছবি তোলার জন্যে পারফেক্ট জায়গা।

সেখান থেকে ফিরে আসার সময় লবণ চাষাবাদ করার জায়গা আর শুটকি পল্লীতেও ঘুরে আসবেন।

যাওয়ার উপায়

মহেশখালী যেতে হলে আগে আপনাকে যেতে হবে কক্সবাজার। সড়কপথে ও আকাশপথে ঢাকা থেকে সরসরি কক্সবাজার যাওয়া যায়। এ পথে গ্রিন লাইন, সৌদিয়া, সোহাগ, হানিফ, টি আর ইত্যাদি পরিবহন সংস্থার শীততাপনিয়ন্ত্রিত বিলাসবহুল বাস চলাচল করে। ভাড়া ১৬০০-২০০০ টাকা। এ ছাড়া এস আলম, সৌদিয়া, শ্যামলী, ইউনিক, ঈগল, হানিফ, ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাসও চলে এ পথে। এ ছাড়া ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমান, ইউনাইটেড এয়ার ও জিএমজি এয়ার, রিজেন্ট এয়ার ও নভো এয়ারের বিমানে সরাসরি যেতে পারেন কক্সবাজার। 

কক্সবাজার কলাতলী সুগন্ধা বা লাবণী পয়েন্ট যেখান থেকেই উঠেন বলবেন ৬ নং জেটি ঘাট যাবো। ৬ নং জেটি ঘাট আসার পর স্পিড বোটে করে মহেশখালী ১ নং জেটি ঘাট। স্পিডবোটে ৭৫ টাকা ভাড়া।

এছাড়া নৌকা বা লঞ্চ করেও অল্প সময়েই মহেশখালী পৌঁছানো যায়। প্রতিদিন সকাল বিকেলে কক্সবাজার বাহার ছড়া ঘাট থেকে মহেশখালী যাওয়া যায়। ট্রলার জাতীয় নৌকায় জনপ্রতি ৩০ টাকায় প্রায় এক ঘণ্টায় মহেশখালী যাওয়া যায়।

ঘাটে নেমে অটোরিকশা রিজার্ভ নিতে পারবেন। দরদাম করে ৫০০ টাকায় পাবেন। সময় বেশি থাকলে সোনাদিয়া দ্বীপেও যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে সি এন জি ভাড়া ৩০০-৩৫০ টাকা পড়বে।

সড়ক পথে মহেশখালী

সড়ক পথেও মহেশখালী যাওয়া সম্ভব। চকোরিয়া হয়ে বদরখালী সেতু পেরিয়ে সরাসরি যাওয়া যাবে মহেশখালী। এ পথে ভালো কোনো বাস সার্ভিস নেই। তাই রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে যেতে হবে।

থাকার ব্যবস্থা

মহেশখালীতে খাবারের জন্য বেশ কয়েকটি হোটেল থাকলেও থাকার জন্য ভালো মানের তেমন কোন হোটেল নেই। যেহেতু পর্যটকরা কক্সবাজার থেকে ডে ট্রিপে মহেশখালী ভ্রমণে যেয়ে থাকেন তাই এই দ্বীপে এখনও সেভাবে থাকার হোটেল বা রিসোর্ট গড়ে ওঠে নি। আর এসব কারনে আপনাকে দ্বীপ ভ্রমণ শেষে আবার কক্সবাজার ফিরে আসতে হবে।

কক্সবাজারে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের বেশ কয়েকশো হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট। সব সময় মনে রাখবেন, অফসিজনে হোটেল ভাড়া অর্ধেকেরও বেশী কমে যায়। তবে রিক্সাওয়ালা কিংবা সিএনজিওয়ালার পরামর্শে হোটেল নেয়াটা উচিত নয়, এতে ভাড়া বেশী পড়বে।

কক্সবাজারে থাকার হোটেল / রিসোর্ট এর খোঁজ

সম্ভাব্য খরচ

  • সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে ৬ নং জেটি ঘাট যাওয়া আসা:২০*২=৪০
  • জেটি ঘাট থেকে স্পিড বোট যাওয়া আসা:৭৫*২=১৫০ অথবা ট্রলার এ করে যাওয়া আসা:৩০*২=৬০
  • অটো রিজার্ভ:৫০০/৫=১০০
Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ Coxsbazarislandmoheshkhali