বান্দরবান

মিরিঞ্জা ভ্যালি

মিরিঞ্জা ভ্যালি (Mirinja Valley) সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৫০০ ফিট উঁচুতে বান্দরবানের লামা উপজেলার মিরিঞ্জায় অবস্থিত একটি পর্যটন স্পট। বান্দরবান শহর থেকে ৮৬ কিলোমিটার ও কক্সবাজার চকরিয়া উপজেলা হতে ২৭ কিলোমিটার দূরে মিরিঞ্জা ভ্যালি অবস্থিত। লামা উপজেলা শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে চকরিয়া-লামা সড়কের পাশে এই পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থান।

এখানে প্রায়শই মেঘের উড়াউড়ি দেখা যায়। বিশেষ করে ঘুম ভেঙ্গে সকালে দেখা মিলতে পারে মেঘের সমুদ্রের। এই মিরিঞ্জা ভ্যালির সবচাইতে আকর্ষণীয় সময় হল সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত, দুটোই দারুণভাবে উপভোগ্য এখানে। দখানেই দেখা মিলবে পাহাড়, মেঘ আর আকাশের মিতালির, আছে চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহ। চারদিক থেকে ধেয়ে আসা বিশুদ্ধ হাওয়াইয় প্রাণ ভরে নিশ্বাস নেয়ার সুযোগ। এখানে ইচ্ছে করলেই ছোঁয়া যায় মেঘ, আকাশকেও মনে হয় বেশ কাছে। রাতে শহরের আলোতে যেন সৌন্দর্য আরও বৈচিত্র্যময়।

বান্দরবানের লামা উপজেলার লামা-চকরিয়া সড়কের পাশেই অবস্থিত এই মনোহারিণী মিরিন্জা ভ্যালি। যেখানে গেলেই দেখতে পাবেন সারি সারি পাহাড় মেঘের সাথে মিতালি করে দাঁড়িয়ে আছে। কখনও কখনও আপনি মেঘের ভেলার ওপরে থাকবেন। মেঘ আপনাকে ছুঁয়ে দেবে। শীতল এই পরশে জুড়িয়ে যাবে হৃদয় ও মন। মেঘ আর কুয়াশার লুকোচুরি খেলার দেখা মিলবে একদম ভোর বা সন্ধ্যায়। বর্ষাকাল হলে সারা দিনই দেখা মিলবে মেঘের আসা-যাওয়া খেলা।

মিরিঞ্জা পাহাড় থেকে লামা শহরের দূরত্ব মাত্র ৬ কিলোমিটার। মিরিঞ্জা ভ্যালিতে দাঁড়িয়ে লামা শহরটি দেখা যায়। একই সঙ্গে দিগন্তজোড়া আলীকদম ও থানচি উপজেলা দেখতে পাবেন ভিউ পয়েন্টে দাঁড়িয়ে।

মিরিঞ্জা ভ্যালি যাওয়ার উপায়

বাংলাদেশের যেকোনো জায়গা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে চকরিয়া বাস টার্মিনালে নামতে হবে। সেখান থেকে লামা-আলীকদম পথে জিপ, বাস বা সিএনজি করে মিরিঞ্জা ভ্যালিতে যাওয়া যায়। লামা-আলীকদম সড়কে মিরিঞ্জা পাহাড়ের পাশে গাড়ি থেকে নেমে ১০ মিনিট হাঁটলেই মিরিঞ্জা ভ্যালি। চাইলে মোটরসাইকেল নিয়েও ভ্যালিতে যেতে পারেন। চকরিয়া থেকে মিরিঞ্জা পাহাড়ের দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার। বাস কিংবা শেয়ার জিপের যেতে চাইলে ভাড়া গুনতে হবে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। চাইলে সিএনজি বা প্রাইভেটকার নিয়েও যেতে পারেন। মিরিঞ্জা ভ্যালিতে যাওয়ার রাস্তাটা খুবই সহজ, কারন প্রায় সবটা পথই আপনি গাড়িতে চেপে যেতে পারবেন। পুরো জার্নিতে আপনাকে শুধু মিনিট দশেক হাটতে হবে।

কোথায় থাকবেন

মিরিঞ্জা ভ্যালিতে থাকবার জন্যে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন রিসোর্ট এবং মাচাং গড়ে উঠছে। তবে তাদের মধ্যে অন্যতম কিছু রিসোর্টের খোঁজ দেয়া হলো –

  • মিরিঞ্জা হিল রিসোর্ট – 01866286095
  • মিরিঞ্জা হ্যাভেন রিসোর্ট – 01876251994
  • মারাইংছা হিল রিসোর্ট। যোগাযোগ – 01886-673717
  • অনন্য রিসোর্ট, মিরিঞ্জা, লামা, বান্দরবান – 01819-635541
জঙ্গলবিলাস রিসোর্ট

এখানে মেঘ ছুঁয়ে যাবে আপনাকে। জঙ্গলবিলাস থেকেই আপনি বেস্ট ফ্রেমে সানসেট ও সান রাইজ উপভোগ করতে পারবেন। বাংলাদেশের যেকোন প্রান্ত থেকে জুমঘর/পড হাউস কিংবা টেন্ট বুকিং করতে পারেন। বুকিং করার জন্য ৩০% টাকা বুকিং মানি হিসেবে সেন্ড করতে হবে(বুকিং মানি অফেরতযোগ্য)। মিনিমাম ১ সপ্তাহ আগে বুকিং করতে হবে যদি আপনার পছন্দের জুমঘর/পটহাউস কিংবা কটেজ টিতে রাত্রি যাপন করতে চান। বুকিং এর জন্য সরাসরি কল করতে পারেন – 01602346222 /  01602345000

এছাড়া পর্যটকরা চাইলে লামা যেয়ে অবস্থান করতে পারবেন। তবে লামা যেহেতু পাহাড়ি এলাকা এবং বিশেষ করে রাত্রিযাপনের সুযোগ-সুবিধা সীমিত, তাই আগে থেকেই বুকিং করে যাওয়া ভালো। সব মিলিয়ে লামা উপজেলায় তংথমাং রিসোর্ট এন্ড রেস্টেুরেন্টে ২০ জন এবং অনন্য রিসোর্টে ৫০ জন পর্যটক থাকার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া লামা বাজারে মানসম্মত আবাসিত হোটেল সী-হিল, মাছ বাজারে জেলা পরিষদ গেস্ট হাউজ, প্রিজন হোটেল ও মিরিঞ্জা হোটেলে শতাধিক লোক থাকার ব্যবস্থা আছে।

খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা

মারাইংছা হিলে গড়ে উঠা প্রত্যেকটি রিসোর্টে তিন বেলা খাবার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ রয়েছে। এই খাবারের প্যাকেজ গুলো ৮০০ টাকা থেকে ১,১০০ টাকার মধ্যে। এসকল প্যাকেজে সকালের নাস্তায় থাকে ডিম-খিচুড়ি অথবা খিচুড়ি-মুরগির মাংস। দুপুরে থাকে সাদা ভাত, সাথে ডাল, সবজি, সালাত ও মুরগির মাংস। রাতে মুরগির মাংস, সাথে পরোটা। এছাড়া গেস্টরা চাইলে সন্ধ্যায় ক্যাম্পফায়ার করে বারবিকিউ করার ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে অনেকেই আছে খরচ বাঁচাতে মিরিঞ্জা বাজারে যেয়ে লোকাল খাবারের দোকান থেকে খেয়ে থাকেন।

মিরিঞ্জা ট্যুরে যাওয়ার সময় অবশ্যই আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সাথে নিয়ে নিবেন। যেহেতু ওখানে বিদ্যুৎ এর সংযোগ নেই, সেহেতু পাওয়ার ব্যাংক সাথে নিয়ে যাওয়াটা ভালো কাজে দিবে।
Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ BandarbanlamaMirinja