মৌলভীবাজার

মাধবকুন্ড ঝর্ণা

মাধবকুন্ড ঝর্ণা যা বাংলাদেশের সুউচ্চ জলপ্রপাত হিসেবে পরিচিত। সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা নামক উপজেলায় এই সুন্দর নয়নাভিরাম জলপ্রপাতটির অবস্থান। একসময় পর্যটকদের কাছে প্রাকৃতিক জলপ্রপাত মানেই ছিলো মাধবকুন্ড। এখন দেশের ভেতরে আরো অনেক ঝর্ণার সন্ধান মিলেছে। তবে এখনো জলপ্রপাত অনুরাগী পর্যটকদের প্রধান আকর্ষন মাধবকুন্ড ঝর্ণা। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে দেশে-বিদেশে পরিচিত এই স্থানটিতে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের রেস্টহাউজ ও রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি উদ্যোগে পুরো এলাকাটিকে ঘিরে তৈরি করা হচ্ছে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক।

যে পাহাড়টির গা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে এ পাহাড়টি সম্পূর্ণ পাথরের যা পাথারিয়া পাহাড় (পূর্বনাম: আদম আইল পাহাড়) নামে পরিচিত। এর বৃহৎ অংশজুড়ে রয়েছে ছড়া। এই পাহাড়ের উপর দিয়ে গঙ্গামারা ছড়া বহমান। এই ছড়া মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত হয়ে নিচে পড়ে হয়েছে মাধবছড়া। অর্থাৎ গঙ্গামারা ছড়া হয়ে বয়ে আসা জলধারা [১২ অক্টোবর ১৯৯৯-এর হিসাবমতে] প্রায় ১৬২ ফুট উঁচু থেকে নিচে পড়ে মাধবছড়া হয়ে প্রবহমান। সাধারণত একটি মূল ধারায় পানি সব সময়ই পড়তে থাকে, বর্ষাকাল এলে মূল ধারার পাশেই আরেকটা ছোট ধারা তৈরি হয় এবং ভরা বর্ষায় দুটো ধারাই মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় পানির তীব্র তোড়ে। জলের এই বিপুল ধারা পড়তে পড়তে নিচে সৃষ্টি হয়েছে বিরাট কুণ্ডের। এই মাধবছড়ার পানি পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হতে হতে গিয়ে মিশেছে হাকালুকি হাওরে। মাধবকুন্ড ঝর্ণা থেকে ১৫-২০ মিনিটের হাটা দুরত্বে রয়েছে আরেকটি ঝর্ণা যা পরিকুন্ড ঝর্না নামে পরিচিত।

মাধবকুন্ড ঝর্ণাতে আসার পথে চোখে পড়বে উঁচু নিচু পাহাড়ি টিলায় দিগন্তজোড়া চা বাগান। টিলার ভাঁজে ভাঁজে খাসিয়াদের পানপুঞ্জি ও জুম চাষ। মাধবকুন্ড ঝর্ণার (Madhobkundo Waterfall) পাশেই রয়েছে কমলা বাগান, চা, লেবু, সুপারি ও পানের বাগান। ফলে মাধবকুন্ড বেড়াতে গেলে সহজেই ঘুরে আসা যায় এসব বাগানে।

মাধবকুন্ড ভ্রমণের সেরা সময়

মাধবকুন্ড যাওয়ার উত্তম সময় হচ্ছে বর্ষাকাল। এ সময় ঝর্ণা পানিতে পূর্ণ থাকে।

মাধবকুন্ড কিভাবে যাবেন

রাজধানী ঢাকার কমলাপুর ও ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন ৩টা ট্রেন ছাড়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে। ট্রেন গুলোর মধ্যে আছে জয়ন্তিকা,পারাবত,উপবন।  ট্রেনের ভাড়া প্রকার ভেদে ১২০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। আর সময় লাগবে ৭-৮ ঘণ্টা। ট্রেনে গেলে রাত ১০টার উপবন এক্সপ্রেসে যাওয়াটাই সবচেয়ে ভালো। কুলাউড়ায় এসে পৌছায় ভোর ৫ টায় ।কুলাউড়া থেকে  মাধবকুন্ডের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কি.মি ,আপনি এখান থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে সরাসরি মাধবকুন্ড যেতে পারেন । ভাড়া পড়বে ২৫০-৩০০ টাকা ।

ট্রেনের সময়সূচি এখানে দেখে নিন
(Bangladesh Railway/Train Time Schedule)

এছাড়া বাসেও যাওয়া যাবে। বাসে যেতে চাইলে অনেক বাস আছে। এর মধ্যে শ্যামলী, রূপসী বাংলা, হানিফ, সোহাগ, এনা,ইউনিক, উল্যেখযোগ্য। এছাড়াও আরো বিভিন্ন নামের একাধিক বাস রয়েছে, যেগুলো অপেক্ষাকৃত কম ভাড়ায় যাত্রী সেবা করে থাকে। ভোর থেকে শুরু করে রাত ১টা পর্যন্ত এসব বাস পাবেন। বাসে যেতে সময় লাগবে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা। ননএসি ৩০০/৩৫০ টাকা। এসি ৯০০ টাকা পর্যন্ত। সরাসরি বাসে আসলে বড়লেখার একটু আগে  “কাঠাঁলতলী” নামক জায়গায় নামবেন । এখান থেকে মাধবকুন্ড বেশি দূর নয় । তবে আপনাকে মাধবকুন্ড চূড়ার কাছে যেতে হলে এখান থেকে অবশ্যই সিএনজি বা রিক্সা নিতে হবে। জনপ্রতি গেলে সিএনজিতে ভাড়া পড়বে ১৫-২০ টাকা,আর আপনি পুরো ভাড়া করলে ১০০ টাকার কাছাকাছি নিবে।

বিমান পথে যেতে হলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ফ্লাইট নং 4H-0511 এ করে সিলেট গিয়ে সেখান থেকে পাবলিক বাসে করে মৌলভীবাজার আসতে হয়। মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, রবি সপ্তাহের এই চার দিন ঢাকা-সিলেট রুটে বিমানে করে যাওয়া যায়। ভাড়া ৩০০০ টাকা। যোগাযোগ: ৮৯৩২৩৩৮, ৮৯৩১৭১২।

কোথায় থাকবেন

এখানে জেলা পরিষদের ২টি বাংলো ও ২টি আবাসিক হোটেল রয়েছে।

তাছাড়া আপনি চাইলে সিলেট কিংবা মৌলভীবাজার শহরের হোটেলেও থাকতে পারেন। সিলেটে থাকার মত অনেকগুলো হোটেল আছে,সিলেটে আপনি আপনার প্রোয়োজন ও সামর্থ অনুযায়ী যে কোন ধরনের হোটেল পাবেন। কয়েকটি পরিচিত হোটেল হল – হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা,কায়কোবাদ ইত্যাদি। লালা বাজার এলাকায় কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউস আছে৷ হোটেল অনুরাগ – এ সিঙ্গেল রুম ৪০০টাকা (দুই জন আরামসে থাকতে পারবেন), তিন বেডের রুম ৫০০টাকা(নরমালই ৪জন থাকতে পারবেন)। রাত যাপনের জন্য দরগা রোডে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। রুম ভাড়া ৫০০/- টাকা থেকে ৫০০০/- টাকা পর্যন্ত।

শহরের শাহজালাল উপশহরে হোটেল রোজ ভিউ (০৮২১-৭২১৪৩৯)।
দরগা গেইটে হোটেল স্টার প্যাসিফিক (০৮২১-৭২৭৯৪৫)।
ভিআইপি রোডে হোটেল হিলটাউন (০৮২১-৭১৬০৭৭)।
বন্দরবাজারে হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল (০৮২১-৭২১১৪৩)।
নাইওরপুলে হোটেল ফরচুন গার্ডেন (০৮২১-৭১৫৫৯০)।
জেল সড়কে হোটেল ডালাস (০৮২১-৭২০৯৪৫)।
লিঙ্ক রোডে হোটেল গার্ডেন ইন (০৮২১-৮১৪৫০৭)।
আম্বরখানায় হোটেল পলাশ (০৮২১-৭১৮৩০৯)।
দরগা এলাকায় হোটেল দরগাগেইট (০৮২১-৭১৭০৬৬)।
হোটেল উর্মি (০৮২১-৭১৪৫৬৩)।
জিন্দাবাজারে হোটেল মুন লাইট (০৮২১-৭১৪৮৫০)।
তালতলায় গুলশান সেন্টার (০৮২১-৭১০০১৮) ইত্যাদি।

কোথায় খাবেন

মাধবকুন্ডে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে, মুটামুটি মানের রেস্টুরেন্ট আছে। দাম একটু বেশি পড়বে । তাই সবচেয়ে ভাল হবে আপনি যদি বাইরে থেকে খাবার সাথে করে নিয়ে যান। এছাড়া সিলেট শহরে ফিরে খাওয়ার জন্য জিন্দাবাজারে বেশ ভালো তিনটি খাওয়ার হোটেল আছে। হোটেল গুলো হচ্ছে পাঁচ ভাই,পানশি ও পালকি। এগুলোতে প্রায় ২৯ প্রকারের ভর্তা আছে।

Leave a Comment
Share