সুনামগঞ্জ

লাউড়ের গড়

সুনামগঞ্জের লাউড়ের গড় গ্রামটি যাদুকাটা নদীর তীরে তাহিরপুর উপজেলার ভারতের সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম। এই গ্রামের অদুরে সীমান্তের কাছাকাছি শাহ্ আরিফিনের মোকাম (মাজার) অবস্থিত। লাউড়ের গড়ের পাশের রাজারগাঁও গ্রামে অদ্বৈত আচার্য মন্দির গড়ে উঠেছে কিছুদিন আগে।  খূব বেশী মানুষের নজর এখনও কাড়তে পারেনি অপ্রকাশিত স্থান বলে। কিন্তু যারা একবার এখানে এসেছেন তারা এর প্রেমে মজেছেন। কেবলই নয়ন মেলে দেখার মত দৃশ্য। এখানে নীল আকাশ জলের সাথে মিতালী করে, আকাশ ঘুমিয়ে পড়ে পাহাড়ের কোলে। পাখির ভিড়ে সাদা হয় সবুজ পাহাড়, আকাশের নীলে নতুন রং পায় হাওরের জল, মেঘের ভেলা খেলা করে সারি সারি পাহাড়ের ভাঁজে। এমন একটি স্নিগ্ধ, শ্যামল আর রূপসী জায়গা যার নাম লাউড়ের গড় ।

প্রাচীন লাউর রাজ্যের স্মৃতি বহন করছে ভারত বাংলাদেশের সীমান্তের এই লাউড়ের গড় এলাকা। সুন্দর নিরিবিলি পরিবেশে খুব কাছ থেকে দেখতে পারেন স্তরে স্তরে সাজানো পাহাড় শ্রেণী। খোলামেলা নিরিবিলি শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশে স্বপরিবারে কিংবা দলবেধে পিকনিকে যাওয়ার জন্য এই এলাকা একটা সুন্দর স্থান। লাউড়ের গড় এ গেলে আপনি পেতে পারেন আর একটি বাড়তি উপভোগ্য বিষয় “শাহ আরেফিনের মেলা”, হিন্দু সম্প্রদায়ের দোলপূর্ণিমার ১৩ দিন পর লাউড়ের গড় এর অদূরে পণতীর্থ ধামে হয় বারুণী স্নান ও মেলা। একই দিনে লাউড়ের গড় এ শুরু হয় শাহ আরেফিনের মেলা, চলে ৩ দিন। এই দুই মেলাকে ঘিরে এখানে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসে লক্ষ লক্ষ মানুষ।

শাহ্ আরেফিনের মেলা

ভারতের মেঘালয় সংলগ্ন বাংলাদেশের লাউড়ের গড় (Laurer Garh) নামক স্থানে প্রতি বছর বসে এই মেলা। ঠিক কত বছর আগে শাহ্ আরেফিনের মেলা শুরু হয়েছিল সঠিকভাবে বলা মুশকিল। এটুকু জানা যায় এই মেলার বয়স ১০০ বছরেরও বেশী। আগে এই মেলার দিনে বিডিআর বিএসএফের সমঝোতায় ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেওয়া হত। দু’দেশের লোক জমায়েত হত তখন এই মেলায়। কিন্তু মেলায় গন্ডগোলের পর থেকে এখন আর সীমান্ত খোলা হয় না। তবে শাহ্ আরেফিনের আস্তানায় (ভারতের খাসিয়া পাহাড়ে) তার বেশ কিছু স্মৃতি চিহ্ন এখনো রয়েছে। ৭টি কূয়া, সুড়ুঙ্গ পথ, পাথরের উপর নামাজ পড়ার পদ চিহ্ন ইত্যাদি। মেলার এক পাশে বসে পশরা-সামগ্রীর বিকিকিনি। অন্য পাশে পীর ফকিরেরা তাদের দলবল নিয়ে গান করছে আলাদা আলাদা তাবু ফেলে। গরু, খাসি, মুরগী জবাই, রান্না-বান্না, খাওয়া-দাওয়া সবই হয় মেলা প্রান্তরে।

কিভাবে যাওয়া যায়

ঢাকা থেকে সিলেট (Sylhet) / সুনামগঞ্জ (Sunamganj) রুটে নন-এসি ও এসি উভয় ধরনের বাস (Bus) চলাচল করে, ননএসি ভাড়া– ৪৫০-৪৪০-৩০০ টাকা এবং এসির ভাড়া সর্বোচ্চ,১১০০-৯০০-৮৫০-৮০০০ টাকা। এসি বাসগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রীণ লাইন, আল-মোবারাকা, সোহাগ, সৌদিয়া ও এস.আলম পরিবহন । আর নন-এসি বাসগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্যামলী পরিবহন, হানিফ পরিবহন, মামুন, ইউনিক পরিবহন।

ঢাকা থেকে সরাসরি শ্যামলী পরিবহনে সুনামগঞ্জ, ভাড়া ৫৫০/- জনপ্রতি। নাস্তা খেয়ে সিএনজি বা হোন্ডা নিয়ে সরাসরি চলে যাবেন তীর্থস্থানে বা লাউড়ের গড়। ভাড়া হোন্ডা ২০০-৩০০/- দুইজন। সিএনজি ৪০০-৫০০/- চারজন।

তবে বর্ষাকালে সাহেব বাড়ি ঘাট হতে স্পীড বোট অথবা ইঞ্জিন বোটে গন্তব্যে পৌঁছা যায়। স্পীডাবোটে সময় লাগে ১.৩০ ঘন্টা আসা যাওয়া বাবদ খরচ আনুমানিক ৬,০০০/- পক্ষান্তরে ইঞ্জিন বোটে সময় লাগে ৪ ঘন্টা এবং আসা যাওয়ার খরচ ৩,০০০/- টাকা।

কোথায় থাকবেন

সুনামগঞ্জে ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকার মধ্যে থাকার জন্যে হোটেল (Hotel) ভাড়া পাবেন।

হোটেল নূর-পূর্ববাজার স্টেশন রোড সুনামগঞ্জ
হোটেল সারপিনিয়া-জগন্নাথবাড়ী রোড, সুনামগঞ্জ।
হোটেল নূরানী, পুরাতন বাস স্ট্যান্ড , সুনামগঞ্জ।
হোটেল মিজান, পূর্ব বাজার-সুনামগঞ্জ।

Leave a Comment
Share