চট্টগ্রাম

লেক ভিউ আইল্যান্ড, কাপ্তাই

সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাপ্তাই লেকের পাড়ের ছোট ছোট টিলা ঘেরা একটি পরিত্যক্ত ক্যাম্পেই গড়ে তোলা হয়েছে লেক ভিউ আইল্যান্ড। পাশাপাশি দুটি টিলার চার একরের অধিক এলাকা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে পর্যটন এলাকাটি। এখানে তৈরি করা হয়ছে দৃষ্টিনন্দন কটেজ। নৌকা নিয়ে হ্রদের পানিতে ঘুরতে বের হলে চোখে পড়বে পাহাড়ি টিলার গায়ে বড় আকারের ইংরেজি অক্ষরে লেখা LAKE VIEW ISLAND. পানি থেকে টিলার উপরে যাওয়া ইট কংক্রিটের তৈরি সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই দেখা মিলবে চারপাশে সবুজ গাছে ঘেরা কটেজ। নামকরণ হয়েছে ‘রিসোর্ট কর্ণফুলী’। রিসোর্টের শুরুতেই কাচে ঘেরা ‘গ্লাস হাউসে’ বসে হ্রদের সৌন্দর্য দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে সোফায় গা এলিয়ে দিলে কেবলই প্রশান্তি। হ্রদের বুক চিরে চলে যাওয়া ছোট ছোট নৌযান আর পাহাড়ের সারি দেখতে দেখতে মন ভালো হয়ে যায়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কিংবা সাধারণ যে কোনো কটেজে থাকা যাবে। কটেজ পার হয়ে পা বাড়াতেই চোখে পড়বে পানিতে ভাসমান কাঠের তৈরি বিশাল ‘বজরা’। চিত্রশিল্পী সুলতানের ‘বজরা’ এর আদলে গড়ে তোলা হয়েছে এই বজরা। নাম দেওয়া হয়েছে ‘নীলকৌড়ি’। এই নীলকৌড়ি ছোট কোনো পাখি নয়। এটি আসলে ৫০ ফুটের একটি অভিজাত বজরা নৌকা। এটি তৈরি করতে খরচ পড়েছে প্রায় ১২ লাখ টাকা। এতে রয়েছে বেতের তৈরি দুটি ডাবল খাট, সঙ্গে লাগোয়া টয়লেট। ছয়জনের রাতযাপনের ব্যবস্থা আছে এতে। শয়নকক্ষে আছে কুলার মেশিন। বারান্দায় এক সেট সোফায় বসে কিংবা ছাদে উঠে চা পান করতে পারেন আয়েশি ভঙ্গিতে।

লেক ভিউ আইল্যান্ড ছাড়াও কাপ্তাই হ্রদের ঐতিহাসিক বাঁধের সাথে লাগোয়া টিলায় রয়েছে ‘হিলটপ রিসোর্ট’ নামে একটি কটেজ। সেখানেও থাকা যাবে। হিলটপের জানালা দিয়ে দেখা যাবে কাপ্তাই বাঁধের স্লুইস গেট, কাপ্তাই বাঁধ আর হ্রদের জলরাশি। ইচ্ছে করলে রিসোর্টের পাশে সুইমিংপুলে ডুব দেওয়া যাবে।

ইয়েলো ও অরেঞ্জ জোন নামে দুটি টিলায় শিশুদের জন্য তৈরি করা হয়ছে কিডস কর্নার। রয়েছে গাছের উপর মাচাংঘর (ট্রি হাউস)। একটি মাচাং থেকে অন্য মাচাংয়ে যেতে তৈরি করা হয়েছে ঝুলন্ত সেতু। শিশু-কিশোরদের জন্য রয়েছে অ্যাডভেঞ্চার পার্ক।

অগ্রিম বুকিং ব্যবস্থা

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘লেক ভিউ আইল্যান্ড’ নামে একটি অফিশিয়াল পেইজ রয়েছে। সেই পেইজে থাকা মুঠোফোনের নম্বরে যোগাযোগ করে চাইলে বুকিং দেওয়া যাবে। তবে ভাড়ার ২৫ শতাংশ টাকা ব্যাংকের নির্দিষ্ট হিসাবে আগেই জমা দিতে হবে। যোগাযোগ নাম্বার – ০১৭৬৯৩২২১৮২ / ০১৭৬৯৩২২১৮৩ / ০১৮৪৭-১৯১৪২১

খরচ

লেক ভিউ আইল্যান্ডে ৫০ জনের পিকনিক স্পটের ভাড়া সরকারি ছুটির দিনে ১৫ হাজার আর অন্যদিন ১০ হাজার টাকা। ৫০ জনের অধিক হলে প্রতিজন খরচ হবে ২২৫ টাকা। এর বাইরে প্রতিটি চেয়ার ১০ টাকা, প্রতিটি টেবিল ভাড়া ১৫ টাকা। পাঁচ হাজার টাকায় ভাড়া পাওয়া যাবে মিউজিক সিস্টেম। প্রতিটি খাবার প্যাকেটের দাম পড়বে ২০০ টাকা।

কাঠের তৈরি ‘নীলকৌড়ির’ একদিনে ভাড়া ১০ হাজার টাকা। এ সময় একঘণ্টা বিনা মূল্যে কাপ্তাই হ্রদে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এর বাইরে কেউ অতিরিক্ত নৌভ্রমণ করতে চাইলে প্রতিঘণ্টা তিন হাজার টাকায় বাড়তি খরচ করতে হবে।

কটেজে না থেকে তাঁবুতে রাতযাপন করার ব্যবস্থাও রয়েছে। এক্ষেত্রে এক তাঁবুতে দুজন থাকলে একদিনের ভাড়া গুনতে হবে ১০০০ টাকা। ইচ্ছে করলে বড়শি দিয়ে হ্রদে মাছও ধরা যাবে। সে ক্ষেত্রে প্রতিছিপ একদিনের ভাড়া ৫০০ টাকা।

কক্ষভাড়া লেক ভিউ রিসোর্টে প্রতিটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের ভাড়া ৪০০০ টাকা। সাধারণ কক্ষ ২০০০ টাকা। হিল টপ রিসোর্ট প্রতিটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ ৩২০০ টাকা। ২৫ জন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন করপোরেট হল সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা। সেখানে রয়েছে সুইমিংপুলের সুবিধা। সাত বছরের শিশুদের জন্য ছাড় রয়েছে ৫০ শতাংশ। কর্মরত সেনা সদস্যদের জন্য ২৫ শতাংশ এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের জন্য ছাড় রয়েছে ২০ শতাংশ।

কিভাবে যাবেন

চট্টগ্রাম থেকে ৫৮ কিলোমিটার দূরে কাপ্তাই যেতে হলে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে বাসে উঠতে হবে। সময় লাগবে দুই ঘণ্টা থেকে সোয়া দুই ঘণ্টা। সিএনজি অটোরিকশা, নিজস্ব কার, মাইক্রোবাস কিংবা কাপ্তাই লাইনের বাসে যেতে পারেন। লেকভিউ আইল্যান্ড রিসোর্টে যাওয়ার জন্য কাপ্তাই বাঁধের সংরক্ষিত এলাকার সামনে নামতে হবে। এরপর সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে হিলটপ অবকাশকেন্দ্রে যেতে সময় লাগবে ১০ মিনিট।

Leave a Comment
Share