মৌলভীবাজার

কালাপাহাড়

কুলাউড়া পাহাড় বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার কার্মধা ইউনিয়নের বেগুণছড়া পুঞ্জিতে অবস্থিত একটি পাহাড় যার উচ্চতা ১০৯৮ ফুট। কালাপাহাড় সিলেট বিভাগের সর্বোচ্চ পাহাড়চূড়া। এটা মূলত খাসিয়াদের গ্রাম। খাসিয়ারা গ্রামকে “পুঞ্জি” বলে। এর এক পাশে কুলাউড়া, অন্য পাশে জুড়ি উপজেলা ও ভারত সীমান্ত। এখানে আরো অনেক পুঞ্জি আছে। তাছাড়া এখানে ছোট বড় আরো বেশ অনেকগুলো পাহাড় আছে। আরো আছে চা বাগান সহ ছোট ছোট পরিষ্কার পানির ছড়া।

২০১৫ সালে একদল ভ্রমণপিয়াসী অভিযাত্রী ‘বিডি এক্সপ্লোরার’ এই চূড়াটি খুঁজে পায় এবং গারমিনচালিত জিপিএস দিয়ে এর সর্বোচ্চ বিন্দু এক হাজার ৯৮ ফুট (সমুদ্র স্তর থেকে) পরিমাপ করে। কালাপাহাড়কে স্থানীয় ভাষায় লংলা পাহাড় নামে ডাকা হয়।

বাংলাদেশ জিওগ্রাফিক সোসাইটির মতে, কালাপাহাড়টি ‘হারারগঞ্জ পাহাড়’ নামেও পরিচিত। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় অবস্থান করা এই পাহাড়ের ৬০ শতাংশ বাংলাদেশে পড়েছে এবং বাকি অংশ ভারতের উত্তর ত্রিপুরায় অবস্থিত। ত্রিপুরায় এই পাহাড়টির বাকি অংশ রঘুনন্দন পাহাড় নামে পরিচিত। ভারতের বিখ্যাত প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক লল ধর্মীয় স্থান ঊনকোটি এই পাহাড়টির পাদদেশে অবস্থিত। কালাপাহাড়ের সর্বোচ্চ বিন্দু থেকে হাকালুকি হাওরের নীল পানি দেখা যায়।
এক দিনের ট্যুর হিসেবে আদর্শ একটি ট্যুর।

জিপিএস কোর্ডিনেট

N 24°24.586’ E 092°04.792’

কিভাবে যাবেন

কুলাউড়া শহর থেকে কালাপাহাড় এর দূরত্ব আনুমানিক ৩৫ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়াগামী শ্যামলী, এনা পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি বাস রয়েছে। কুলাউড়া নেমে আজগরাবাদ চা বাগানগামী সিএনজিতে চড়ে বসুন। লোকাল গেলে ৪০ টাকার মতো খরচ পড়বে। রিজার্ভ করলে ২২০-২৫০ টাকা। আসগরাবাদ গিয়ে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই বেগুনছড়া পুঞ্জির পথ দেখিয়ে দেবে। খাসিয়াপল্লী পৌছে স্থানীয় কাউকে নিয়ে দেড় থেকে দুই ঘণ্টার পাহাড়ি ট্রেইল ধরে পৌছে যাবেন কালা পাহাড়ের চূড়ায়।

ফেরার সময় রাতের উপবন এক্সপ্রেস এ ফিরতে পারেন নয়তো বিকাল ৫.২০ মিনিটে এনা পরিবহনের একটা বাস ছড়ে  কুলাউড়া থেকে। ভাড়া পড়বে ৫০০ টাকা। এছাড়া বিভিন্ন পরিবহনের বেশ কিছু নাইট কোচ ছেড়ে আসে।

সবচেয়ে সহজ হয় যদি ঢাকা থেকে সিলেট গামী রাত ৯.৩০ মিনিটের উপবন এক্সপ্রেস এ যেতে পারেন। যা আপনাকে রাত ৪ টার দিকে কুলাউড়া ষ্টেশনে নামিয়ে দিবে। শোভন চেয়ার ভাড়া ৩২০ এবং শোভন ভাড়া ২৩০ টাকা।

কেউ যদি খরচ কমাতে চান তাহলে কুলাউড়া শহর থেকে বাসে করে যেতে পারেন রবিরবাজার, ভাড়া পড়বে ১০টাকা প্রতিজন। এরপর রবিরবাজার থেকে সিএনজিতে আজগরাবাদ টি স্টেট, ভাড়া ১০০/১২০।

পাহাড়ের যাবার ট্রেকিং পথটি অনেক সুন্দর। পাহাড়ে উঠার পথ একটা (পাহাড়ি পথ) কিন্তু নামার পথ দুইটা, ঝিরি পথ ও পাহাড়ি পথ ( ঝিরি পথে গেলেও আপনাকে বেশ কিছুটা পাহাড়ি পথ দিয়ে হাটতে হবে)। বেগুণছড়া পুঞ্জি থেকে নেয়া গাইড আপনাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে কালা পাহাড়ের চূড়ায়। মোটামোটি দুই থেকে আড়াই ঘন্টা লাগে। উঠতে নামতে মোট পাচ সারে পাচ ঘন্টা লাগে। আগেই বলেছি এই পাহাড়ের পরিবেশ বেশ বন্য, এর চূড়ার পরিবেশ ও ঠিক তেমনি বন্য। অন্যান্য পাহাড়ের চূরা থেকে যেমেন আসে পাশের পরিবেশ পরিষ্কার দেখা যায়, এর চূড়া থেকে তেমনটা দেখতে পারবেন না। মোট কথা আপনি যদি ভিউ চান তবে এই পাহাড় আপনার জন্য নয়, তবে যারা এডভেঞ্চার প্রিয় তাদের জন্য এ পাহাড় আদর্শ। কেন আদর্শ তা একটু পরেই বুঝতে পারবেন।

গাইড

বেগুনছড়াপুঞ্জি যাওয়ার পর লেম্বুদার বাসায় যাবেন। কাউকে জিজ্ঞাসা করলেই দেখিয়ে দিবে তাঁর বাসা। লেম্বুদাকে (01951649881) বললেই গাইড ঠিক করে দিবে। গাইড খরচ ৫০০ টাকার মত।

প্রস্তুতি

  • খাবারের জন্যে যা যা কিনবেন সব কুলাউড়া থেকেই কিনতে হবে। আজগরাবাদ টি স্টিটের পরে কালাপাহাড় পর্যন্ত আর কোনো দোকানপাট কিছু নেই।
  • ট্রেকিংয়ে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ হলো পানি। আজগরাবাদ টি স্টিটের পরে আপনি কোনো দোকান পাবেন না পানি কেনার জন্যে। তাই কুলাউড়া বা আজগরাবাদ টি স্টেট থেকেই আপনাকে পানি কিনে নিয়ে যেতে হবে।
  • ইনস্ট্যান্ট এনার্জির জন্যে খেজুর, স্যালাইন বা গ্লুকোজ পানীয় রাখতে পারেন।
  • কালাপাহাড়ের চূড়ায় একটা মাজার আছে। আপনার হাতে সময় থাকলে মাজার থেকে ঘুরে আসতে পারেন।

আপনি যদি একদিনে কম খরচের মধ্যে ছোটখাটো একটা অ্যাডভেঞ্চার করতে চান, পাহাড় ভালবাসেন, বন জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে ভালবাসেন, তাহলে কালাপাহাড় আপনার জন্যে ভালো একটা অপশন।

Leave a Comment
Share