দেশে বা বিদেশে আপনার একটি আন্তর্জাতিক পরিচয়পত্রের নাম পাসপোর্ট। যে কোনো কারণে যে কোনো সময় আপনার পাসপোর্ট চুরি হতে পারে বা হারিয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে আপনার পাসপোর্ট কীভাবে ফিরে পাবেন? বিশেষত বিদেশে গিয়ে পাসপোর্ট হারালে দেশে ফিরে আসাটাই অনেক সময় বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। তবে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। দেশে বা বিদেশে পাসপোর্ট হারালেও দ্রুত পাসপোর্ট ফিরে পাওয়ার সুযোগ আছে। আপনার জন্য কিছু করণীয় এখানে দেয়া হলো।
নানান কারণে বা দুর্ঘটনায় আপনার মহামূল্যবান পাসপোর্টটি হারিয়ে যেতে পারে কারণ বিপদ বলে কয়ে আসে না। সর্বপ্রথম যে কাজটি করবেন আপনি যেদিন আপনার পাসপোর্টটি হাতে পাবেন সেদিনই আপনার পাসপোর্টের অনেকগুলো ফটোকপি এবং স্ক্যান করে আপনার গুগল ড্রাইভ কিংবা মোবাইলে সেভ করে রাখুন।
তারপরে আপনি যেদেশের ভিসা পাবেন ভিসা পাওয়ার সাথে সাথে ভিসারও কয়েককপি ফটোকপি করে রাখুন এবং অবশ্যই গুগল ড্রাইভে বা ফেসবুকে আপলোড করে রাখুন প্রাইভেসি দিয়ে। এরপরে আপনি যে দেশে যাবেন সেখানে এরাইভাল হওয়ার সাথে সাথে আবারও ওই এরাইভাল হওয়ার সীলগুলো আপনাকে অবশ্যই ফটোকপি করে রাখতে হবে, পারলে নিজের মোবাইলে ছবি তুলে নিন।
আপনার যদি কোনো কারণে পাসপোর্ট হারিয়ে যায় তাহলে আপনার সর্বপ্রথম কাজটি হলো বাংলাদেশের দূতাবাস খুঁজে বের করা। বিদেশি বাংলাদেশের অ্যাম্বাসির তালিকা পাবেন এই ঠিকানায়।
বাংলাদেশের দূতাবাস খুঁজে বের করে সরাসরি চলে যান ওখানে। তারাই আপনাকে যাবতীয় সাহায্য করবে। তারা আপনাকে প্রথমে বলবে যেখানে আপনার পাসপোর্টটি হারিয়ে গিয়েছে ওই স্থানের আওতাধীন থানায় রিপোর্ট করে একটি জিডি করতে। আপনি সরাসরি থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়রী বা জিডি করে ফেলুন। তারপরে আপনি বাংলাদেশের দূতাবাসে গিয়ে ওখানে আপনার যাবতীয় কাগজপত্র যেমন-
অতঃপর তারা আপনার কাছে এক বা দুইদিন সময় নিবে যদি আপনার কপাল ভালো থাকে তাহলে আপনি সেদিনই আপনাকে আপনার Travel Permit দিয়ে দিবে। ট্রাভেল পারমিট-টি আপনার পাসপোর্টের মতো কাজ করবে আর ট্রাভেল পারমিটে একটা সিরিয়াল নম্বর দেয়া থাকে।
আপনি যদি ইন্ডিয়াতে পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেন তাহলে আপনি বাংলাদেশ দূতাবাস হতে প্রাপ্ত ট্রাভেল পারমিট ও ট্রাভেল ইন্সুরেন্স নিয়ে ইন্ডিয়ার অবস্থিত Foreign Regional Registration Office (FRRO) এ গিয়ে এক্সিট পারমিট নিতে হবে। এক্সিট পারমিটের জন্য আপনাকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আবেদন করতে হলে আপনাকে আপনার-
যদি আপনি C Form ছাড়া আবেদন করতে যান তাহলে আপনাকে ফেরত আসতে হবে। তাই মনে রাখবেন আপনাকে অবশ্যই C Form নিতে হবে আপনি যে হোটেলে থাকেন সে হোটেল থেকে। সব কাগজ দিয়ে অনলাইনে আবেদন করে ফেলুন। করে FRRO অফিসের এর ভিতরে গিয়ে আপনার সমস্যা গুলো খুলে বলুন। আশা করি একদিন বা দুইদিনের মধ্যেই আপনি এক্সিট পারমিট নিয়ে দেশে চলে আসতে পারবেন।
প্রথমেই পাসপোর্টটি যে থানা এলাকায় হারিয়ে গেছে সেই থানায় পাসপোর্ট হারানোর সাধারণ ডায়েরি করতে হবে। পাসপোর্টে যদি কোনো দেশের মেয়াদ আলা ভিসা লাগানো থাকে তবে সেই বিষয়টি সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করতে হবে।
কোনো ব্যক্তির পাসপোর্ট হারানো বা চুরি হলে থানায় সাধারণ ডায়েরি বা মামলা রুজুর পর পুলিশ ইমিগ্রেশন ডাটাবেজে পাসপোর্টটি কালো তালিকাভূক্ত করবে যাতে উক্ত পাসপোর্ট ব্যবহার করে অন্য কেউ বিদেশ গমন করতে না পারে।
তাই হারানো বা চুরি হওয়া পাসপোর্ট পাওয়া গেলে একইভাবে ইমিগ্রেশন ডাটাবেজের কালো তালিকা হতে পাসপোর্টটি প্রত্যাহারের নিমিত্তে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করতে হবে।
পাসপোর্ট পাওয়া না গেলে সাধারণ ডায়েরির কপিসহ পুনরায় আবেদন করলে পাসপোর্ট অফিস আপনাকে নতুন একটি পাসপোর্ট দিবে।
পাসপোর্ট একটি অত্যন্ত মূল্যবান নিস। তাই ভ্রমণকালে এটি যত্নের সাথেই সংরক্ষণ করা উচিৎ। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে সঙ্গে রাখা যায় পার্সপোর্টের একাধিক রঙিন ফটোকপি। এরপরও পাসপোর্ট যাতে চুরি না যায় সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে আপনাকেই।
মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে যারা চাকরি নিয়ে যান তাঁদের অনেককে মালিকের কাছে পাসপোর্ট জমা দিতে হয়। মালিক পক্ষ থেকে তাদের সরকারি বিভিন্ন অনুমোদ করিয়ে দেওয়া হয়। তবে নিজের প্রয়োজনে পাসপোর্টের ফটোকপি সঙ্গে রাখতে হবে। কিন্তু কেউ যদি ব্যবসা, ফ্রি ভিসায় চাকরি করতে যান তাঁদের উচিত পাসপোর্ট সব সময় সঙ্গে রাখা।
তারপরও দুর্ঘটনাবশত পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে আপনাকে বাংলাদেশের দূতাবাসে যোগাযোগ করতে হবে। পাসপোর্টের ফটোকপি ও রোডপাস বা রাস্তায় চলাচলের প্রত্যয়নপত্র (যদি সঙ্গে থাকে) নিয়ে যোগাযোগ করলে দূতাবাসের পক্ষ থেকে আপনাকে নতুন পাসপোর্ট তৈরিতে সহায়তা করা হবে।
আপনার বিদেশ ভ্রমণের পুরো আনন্দটাই মাটি হতে পারে যদি আপনি পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেন। কোনো কারণে যদি তা হারিয়েই ফেলেন তাহলে সবার আগে আপনাকে যোগাযোগ করতে হবে বাংলাদেশ হাই কমিশনে। কোনো ট্যুর অপারেটর বা ট্র্যাভেল এজেন্সি যদি আপনার ভ্রমণে সহায়তা করে থাকে তবে তারাই আপনাকে বাংলাদেশ হাই কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সহায়তা করবে।
এরপর আপনাকে সহায়তা করবে বাংলাদেশ হাই কমিশন। বাংলাদেশের পাসপোর্ট অফিস ও ইমিগ্রেশন আপনার সব তথ্য পর্যবেক্ষণ করে বাংলাদেশ হাই কমিশনকে একটি পত্র বা দরখাস্ত পাঠাবে। এ পত্র বা দরখাস্তই আপনাকে সুন্দরভাবে দেশে ফিরে আসতে সহায়তা করবে।
বিদেশে নিজের বৈধতার সনদ হচ্ছে পাসপোর্ট। এই পাসপোর্টের ভিত্তিতেই নির্ধারণ করা হবে আপনি বৈধ, না অবৈধ। তাই পাসপোর্ট যত্ন করে রেখে দেবেন। কোনোভাবেই হাতছাড়া করবেন না। বিদেশে বৈধ পাসপোর্ট অনেকে অবৈধভাবে বেচাকেনা করে। টাকার বিনিময়ে একজনের বৈধ পাসপোর্ট অবৈধ ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেয়।
তাই পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে দ্রুত পদক্ষেপ নিন। অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান কর্মীদের পাসপোর্ট রেখে এর বিনিময়ে একটি ‘পাস’ বা কার্ড দেয়। কর্মীরা যাতে পালিয়ে গিয়ে অন্য কোথাও কাজ করতে না পারে, তার জন্য এমনটি করা হয়। বাস্তবতা যাই হোক না কেন বিদেশে গেলে পাসপোর্টের প্রতি আপনাকে বাড়তি সতর্ক হতেই হবে।
বিদেশে অবস্থান করার সময় নিজের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবে সে দেশের বাংলাদেশ দূতাবাস। দূতাবাসের কনস্যুলার শাখা থেকে বাংলাদেশিরা তাদের পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারবেন। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাসের আগেই নবায়ন করা ভালো
Leave a Comment