কম খরচে সুনামগঞ্জের শিমুল বাগান ঘোরার প্ল্যান

সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর নিকটবর্তী মানিগাঁও গ্রামে যাদুকাটা নদী সংলগ্ন লাউয়ের গড়ে প্রায় ১০০ বিঘারও বেশি জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে শিমুল গাছের বাগান। ২০০২ সালে গড়ে তোলা এই শিমুল বাগানই (Shimul Bagan) বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিমুল বাগান। জাদুকাটা নদীর ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড় আর এপারে শিমুলের রক্তিম ফুলের সমারোহ। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ধনাঢ্য ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন ২০০২ সালে নিজের প্রায় ২ হাজার ৪০০ শতক জমিতে সৌখিনতার বসে শিমুল গাছ রোপণের উদ্যোগ নেন। তখন তিনি প্রায় তিন হাজার শিমুল গাছ রোপণ করেন। দিনে দিনে বেড়ে ওঠা শিমুল গাছগুলো এখন হয়ে উঠেছে শিমুল বাগান। বসন্ত এলে দুহাজার শিমুল গাছ ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। ফাগুনের অরুণ আলোয় ফোটে বাগানের শিমুল ফুলগুলো। চোখের তৃষ্ণা মেটাতে টাঙ্গুয়ার হাওর, মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে ও রূপের নদী যাদুকাটার মধ্যস্থলের বিশাল শিমুল বাগানে ফুটে ওঠা টুকটুকে লাল শিমুল ফুলগুলো দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন শত শত পর্যটক।

শিমুল বাগান যাওয়ার উপযুক্ত সময়

শিমুল বাগান ভ্রমণের সেরা সময় সাধারনত বসন্তের একদম শুরুতে। বাংলাদেশের বসন্ত কাল শুরু হয় ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে বা মাঝামাঝিতে। তাই শিমুল বাগানের রক্তিম রুপ দেখতে হলে আপনাকে ফেব্রুয়ারি মাসের ২য় সপ্তাহ থেকে মার্চ এর শুরুতে যেতে হবে। তবে চেষ্টা করবেন ফেব্রুয়ারির মধ্যে যাওয়ার কারন এই শিমুল ফুলগুলো বেশিদিন থাকে না। খুব তাড়াতাড়িই ঝরে যায়।

কম খরচে শিমুল বাগান ঘোরার প্ল্যান

ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে সরাসরি সুনামগঞ্জের এন এসি বাস আছে। নন এসি বাসে ভাড়া পড়বে ৫০০ টাঁকা। তাছাড়া ঢাকা থেকে আল মোবারকা বাসে সুনামগঞ্জ যেতে পারবেন ৩৫০ টাকায়, কোয়ালিটি সেমি লোকাল বাস। ঢাকা থেকে রাত ১০-১১ টার বাসে উঠলে খুব সকালে সুনামগঞ্জ পৌছে যাবেন। এতে আপনার যাত্রা স্মুথ হবে কিন্তু খরচ একটু বেড়ে যাবে। যেহেতু এটা বাজেট ট্যুরের প্ল্যান করা হচ্ছে তাই আমরা অল্টারনেটিভ রুট এর দিকে যদি নজর দেই তাহলে কি দাঁড়ায় দেখে নেয়া যাক।

ঢাকা থেকে রাতের ট্রেনে কমলাপুর থেকে চলে যাবেন সিলেট, ট্রেন ছাড়ার সময় রাত ৮টা বেজে ৩০ মিনিট। শোভন চেয়ার ভাড়া নিবে ৩২০ টাকা, প্রথম শ্রেণী ৪২৫ টাকা এবং কেবিন ৬৯০ টাকা। সিট পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে আগে থেকেই টিকেট কেটে নিতে হবে। অনলাইন থেকে ১০ দিন আগেই টিকেট কাটা যায়। ট্রেন খুব সকাল বেলা, আনুমানিক ৬টার সময় আপনাকে সিলেট নামিয়ে দিবে।

ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার ট্রেনের সময়সূচি ২০২১

ট্রেনের নামছাড়ার সময়পৌছানোর সময়বন্ধ
৭০৯ – পারাবত এক্সপ্রেসভোর ০৬:২০দুপুর ০১:০০মঙ্গল
৭১৭ – জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসসকাল ১১:১৫সন্ধ্যে ০৭:০০নেই
৭৩৯ – উপবন এক্সপ্রেসরাত ০৮:৩০ভোর ০৫:০০বুধ
৭৭৩ – কালনী এক্সপ্রেসবিকেল ০৩:০০রাত ০৯:৩০শুক্র

ঢাকা থেকে সিলেটের ট্রেনের টিকেটের মুল্য / ভাড়া ২০২১

আসনের শ্রেণীটিকেট মূল্য
২য় শ্রেণী সাধারণ৳ ৮০
২য় শ্রেণী মেইল৳ ১১০
কমিউটার৳ ১৩৫
সুলভ৳ ১৬০
শোভন৳ ২৬৫
শোভন চেয়ার৳ ৩২০
১ম শ্রেণী চেয়ার৳ ৪২৫
স্নিগ্ধা৳ ৬১০
১ম শ্রেণী কেবিন৳ ৬৪০
এসি সীট৳ ৭৩৬
এসি কেবিন৳ ১০৯৯

ট্রেন থেকে নেমে রেল স্টেশন থেকে একটা রিক্সা নিয়ে চলে যেতে পারেন পানসী কিংবা পাচ ভাই অথবা ভোজনবাড়ি রেস্টুরেন্ট। ভাড়া ৩০ টাকা। সকালের নাস্তা সেরে আরেকটা রিক্সা নিয়ে চলে যাবেন আম্বরখানা। রেস্টুরেন্ট থেকে আম্বরখানা পর্যন্ত ভাড়া নিবে ১৫-২৫ টাকা। আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সুনামগঞ্জ এর বাস যেখান থেকে ছাড়ে সেখান পর্যন্ত শেয়ারে সি এন জি যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১৫ টাকা। সুনামগঞ্জের বাসস্ট্যান্ড এর জায়গার নাম কুমারগাও। সি এন জি থেকে নেমে হাতের ডানে টিকেট কাউন্টার আছে সুনামগঞ্জ গামী বিরতিহীন বাসের। ভাড়া ৯০ টাকা। সময় লাগবে দেড় থেকে ২ ঘন্টা।

সুনামগঞ্জ নেমে বাসস্ট্যান্ড থেকে অটোতে করে নতুন ব্রিজ যাবেন, ভাড়া ১০ টাকা। নতুন ব্রীজের ওই পাড়ে মোটরবাইক দাঁড়িয়ে থাকে অনেক। কথা বলে বারেক টিলা নদীর এই পাড় পর্যন্ত ভাড়া নিবে ২০০ টাকা। আপনি যদি দরকাষাকষিতে পটু হোন তাহলে ১৫০ টাকাতেও যাওয়া সম্ভব! যদিও সিজনে সেটা আদতে একটা অসম্ভব ব্যাপার। কারন সিজনে এই বাইকারদের চাহিদা অনেক। একটা বাইকে ২ জন চড়া যায়, তাই জনপ্রতি তাহলে পরল ১০০ করে। জাদুকাটা নদীর সামনে মোটর বাইক আপনাকে নামিয়ে দিবে। ১০ টাকা দিয়ে খেয়া অতিক্রম করে ওই পাড়ে গেলেই বারেক টিলা, যা থেকে সুন্দর পুরো জাদুকাটা নদী দেখা যায়। পাশেই সীমান্ত তাই উত্তর দিকে বেশীদূর না যাওয়াই ভালো।

বারেক টিলা এর গোড়ার দিকে বেশ কিছু চায়ের দোকান আছে। তাদের জিজ্ঞেস করলেই শিমুল বাগান যাওয়ার পথ দেখিয়ে দিবে। বিকেল পর্যন্ত হেটে হেটে ঘুরে, ছবি তুলে আবার বারেক টিলার ফিরে মোটরবাইক নিয়ে সুনামগঞ্জ ফেরত।

রাতের খাবার সেরে রাতের বাসে সরাসরি সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকা ফেরা সম্ভব। অথবা যাদের বাস জার্নিতে সমস্যা হয় তাঁরা আবার সিলেট এসে ট্রেনে করেও ঢাকা ফেরা সম্ভব।

আরা যারা শিমুল বাগানের সাথে আরও কিছু স্থান ভ্রমণ করতে চান, তাঁরা তাদের ট্যুরে টেকেরঘাট, লাইমস্টোন লেক যা অনেকের কাছে নীলাদ্রি লেক নামেও পরিচিত, লাকমাছাড়া ঝর্ণাও যুক্ত করে নিতে পারেন। আপনি চাইলে লাইমস্টোন লেকে গোসলও করতে পারবেন এবং নৌকায়ও ঘোরার সুযোগ রয়েছে বর্তমানে। ঘন্টা হিসেবে ভাড়া নিয়ে ১০০ টাকার মতো নিবে। এখানে একটা শহীদ মিনার আছে আর আছে একটি ব্রিটিশ আমলের একটা রেললাইন। এছাড়া শুকনো মৌসুমের টাঙ্গুয়ার হাওরের আলাদা রকমের একটা সৌন্দর্য্য আছে। শীতকালীন অতিথি পাখি, বিস্তীর্ণ প্রান্তরে ক্যাম্পিং আপনার জীবনকে একটি সোনালি দিন উপহার দিবে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

থাকার ব্যবস্থা

যারা একটি রাত সুনামগঞ্জে কাটাতে চান তাদের জন্যে তাহিরপুরের ডাক বাংলো একটি সেরা অপশন হতে পারে। শিমুল বাগান ঘুরে একটা মোটরবাইক নিয়ে তাহিরপুর উপজেলা চলে যেতে পারেন। সেখানে ডাক বাংলোতে অল্প খরচে থাকা যায়। যাবার পথে টেকেরঘাট, লাইমস্টোন লেকও ঘুরে যেতে পারবেন।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ shimul baganSunamganjtahirpur