ভ্রমণ বিষয়ে উপন্যাসিক পাওলো কোয়েলহোর সেরা ৯টি টিপস

অনেকেরই প্রিয় উপন্যাসিক পাওলো কোয়েলহো। পর্যটকদের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ বিষয়ে তার সেরা ৯টি টিপস নিম্নে উল্লেখ করা হলো ঃ

অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলাম আমার জন্য শেখার সবচেয়ে ভাল উপায় হল ভ্রমণ। এখনও আমার সেই পথিক সত্ত্বাটা আছে, তাই আমি যা শিখেছি তার কিছু কিছু এখানে বলতে চাই, আমার মত অন্য পর্যটকদের কাজে লাগবে।

১। জাদুঘর পরিহার করেন – পরামর্শটা শুনতে অদ্ভুত লাগলেও আসেন একটু চিন্তা করে দেখি। আপনি যদি কোন অচেনা শহরে আসেন, তাহলে তার অতীত খোঁজার চেয়ে বর্তমানটাকে দেখাই কি বেশি আগ্রহের ব্যাপার না? মানুষ খালি যাদুঘরে যাওয়াকে আবশ্যক মনে করে কারণ ছেলেবেলা থেকেই তারা শিখেছে যে ভ্রমণ হল সেই সংস্কৃতিটার অনুসন্ধান করা। অবশ্যই যাদুঘরের গুরুত্ব আছে, কিন্তু তার জন্য অনেক সময় ও বস্তুনিষ্ঠতার দরকার হয়- যদি আগে থেকে না জানেন যে যাদুঘরে কী দেখতে চান, তাহলে কিছু মৌলিক জিনিস দেখার অনুভূতি নিয়েই চলে আসতে হবে, যা পরে কিছু মনেও থাকবে না।

২। বারগুলোতে ঘুরেন – বার হচ্ছে সেই জায়গা যেখানে একটা শহরের প্রাণের দেখা মেলে, যাদুঘরে না। বার বলতে নাইটক্লাব বুঝাচ্ছি না, বরং ঐ সব জায়গা যেখানে সাধারণ মানুষ যায়, চা-পানি খায়, আবহাওয়া নিয়ে চিন্তা করে, আর গল্প-গুজব করে। একটা পত্রিকা কিনে বসেন আর মানুষের স্রোতটাকে উপভোগ করেন। কেউ এসে কোন আলাপ শুরু করে দিলে তা যত ফালতুই হোক, তাতে যোগ দেন। একটা পথের সৌন্দর্য কখনোই তার প্রবেশপথ দেখে বিচার করা যায় না।

৩। খোলামেলা হন – সবচেয়ে ভাল ভ্রমণ গাইড হল এমন কেউ, যে ঐ জায়গাটাতে বাস থাকে, এর সম্পর্কে সব জানে, তার নিজের শহর নিয়ে গর্ব করে, কিন্তু কোন ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করে না। রাস্তায় বের হন, একজন লোক দেখে তাকে কিছু জিজ্ঞাস করেন (গীর্জাটা কোন দিকে? পোস্ট অফিস কোন জায়গায়?)। এতে কাজ না হলে আরেকজনকে জিজ্ঞেস করুন – নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি দিনের শেষে আপনি খুব ভাল একজন সঙ্গী পাবেন।

৪। একা একা ভ্রমণের চেষ্টা করেন (যদি বিবাহিত হন – স্ত্রী/স্বামীর সাথে) – ব্যাপারটা কঠিন, আপনার কিছু খেয়াল রাখার জন্য কেউ থাকবে না, কিন্তু শুধু এই ভাবেই আপনার নিজের দেশটাকে পিছনে ফেলে আসা সম্ভব হয়। দল বেঁধে ঘুরতে যাওয়া মানে ভিনদেশে গিয়ে নিজের ভাষাতেই কথা বলতে বলতে দলের পোলাপাইন যা যা বলে তা করা, আর যে জায়গায় ঘরতে এসেছেন তার চাইতে নিজেদের আলাপেই বেশি মেতে থাকা।

৫। তুলনা করবেন না – কোন কিছুই তুলনা করবেন না – দাম, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, জীবন যাত্রার মান, যাতায়াত ব্যবস্থা, কোন কিছুই না। অন্যদের চেয়ে আপনার নিজেদের জীবন ভাল, এই কথা প্রমাণ করার জন্য তো আর ভ্রমণ করছেন না। আপনার উদ্দেশ্য হল অন্যরা কীভাবে থাকে, আপনি কী শিখতে পারেন, তারা কীভাবে বাস্তবতার সাথে মানিয়ে চলে এই সব জিনিস দেখা।

৬। মনে রাখবেন, আপনার কথা সবাই বুঝে – এখানকার ভাষাটা যদি নাও পারেন, ভয়ের কিছু নাই। আমি এমন অনেক জায়গায় গিয়েছি যেখানে আমার কোন কথাই তারা বোঝে না, কিন্তু ঠিকই দিক নির্দেশনা, পরামর্শ এমন কি প্রেমিকাও পেয়েছি। কেউ কেউ মনে করে একলা ঘুরলে রাস্তা হারিয়ে নিখোঁজ হয়ে যাবেন। খালি হোটেল কার্ডটা যত্ন করে পকেটে রাখবেন – একেবারেই কোন উপায় না থাকলে একটা ট্যাক্সি থামিয়ে ড্রাইভারকে কার্ডটা দেখিয়ে দিবেন।

৭। বেশি কিছু কিনবেন না – যেসব জিনিস বয়ে বেড়াতে হয় না সেই খাতেই টাকা খরচ করেন – রেস্টুরেন্ট, বাস ভাড়া, ভাল একটা নাটকের টিকেট। এখনকার ইন্টারনেটের যুগে বোঝা বয়ে বেড়ানো ছাড়াই বসে বসে যেকোন জিনিস কেনা যায়।

৮। এক মাসে পুরো দুনিয়া দেখে ফেলার চেষ্টা করবেন না – এক সপ্তাহে পাঁচটা শহর ঘুরার চেয়ে একটা শহরে তিন চার দিন থাকা অনেক ভাল। একেকটা শহর হচ্ছে খেয়ালি নারীর মতোঃ আপনার আহবানে সাড়া দিতে ও নিজেকে উন্মোচন করতে খানিকটা সময় নেয়।

৯। প্রত্যেক ভ্রমণই একেকটা এডভেঞ্চার – হেনরি মিলার বলতেন রোমে গিয়ে দুই লক্ষ মানুষের হৈ হল্লার মধ্যে আবশ্যিকভাবে সিস্টাইন চ্যাপেল দেখার চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো এমন একটা গীর্জা খুঁজে বের করা, যার নামও কেউ কোন দিন শুনে নাই। সিস্টাইন চ্যাপেলে অবশ্যই যাবেন, কিন্তু রাস্তায়ও ঘুরাঘুরি করে দেখেন, গলিগুলার ভিতরে ঢুকে দেখেন, অজানা কোন কিছু, যা হয়তো আপনার জীবনই পালটে দিতে পার, খুঁজতে থাকার মধ্যে যে স্বাধীনতা আছে তার স্বাদ নেন।

মূল ইংরেজী লেখার লিঙ্কঃ পাওলো কুয়েলহোর ব্লগ।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ coelhopaulotipstravel