শীতকালে মেঘালয় এর পাহাড়ে

স্কটল্যান্ড অফ ইস্ট খ্যাত মেঘালয় ঘুরে আসলাম ১৪-১৬ ই ডিসেম্বর। যদিও মেঘালয় এর প্রধান টুরিস্ট সিজন হল বর্ষাকাল ( জুন- সেপ্টেম্বর) কিন্তু শীতে গেলে আপনি পাবেন মেঘালয় এর অন্যরুপ। নিল বির্স্তিত আকাশ, স্বচ্ছ স্ফটিক জল আর পাবেন বাদামী প্রান্তর।

ভারতের ভিসা না থাকলে করে ফেলুন ডাউকি পোর্ট দিয়ে। আর অন্য পোর্ট দিয়ে করা থাকলে ডাউকি পোর্ট এড করে নিন।

ঢাকা থেকে সিলেট চলে যান বাই এয়ার (২-৩ হাজার), এসি বাস (১০০০-১২০০), নন এসি (৪৫০-৫০০)। আমরা গিয়েছিলাম এনা এসিতে। সিলেট বাস স্ট্যান্ড এ নেমে ডাউকি বর্ডার এ চলে যান। সিএনজি, লোকাল বাস বা মাইক্রো ভাড়া করে। সকাল ৮ টার আগে বর্ডার এ চলে যাওয়ার চেস্টা করুন।

সোনাংপেডেং, মেঘালয়

ট্রিক্স – ইমিগ্রেশন এর জন্য এম্বারকেশন ফর্ম ঢাকা থেকে পূরন করে নিয়ে যান (অল কেপিটাল লেটার), সময় ও কষ্ট দুটোই কমবে। যদি নাস্তা করার দরকার হয় অন্তত গ্রুপ একজন কে লাইন এ দাড়া করিয়ে রেখে যান।

দ্রুত ভারত এবং বাংলাদেশ এর ইমিগ্রেশনে শেষ করে ডাউকি বর্ডার পার হয়ে যান। এর পর চলে যান ডাউকি বাজার। অনেকে বলে বর্ডার থেকে ডাউকে বাজারে হেটে যাওয়ার জন্য কিন্তু আমি বলব ১০০-১৫০ রুপি দিয়ে টেক্সিতে যান। রাস্তাটা বেশ ভাংগা এবং ধুলাময়। ডলার বা টাকা ডাউকি বাজার এই চেইঞ্জ করে নিন কারন শিলং এ রেট তুলনামূলক অনেক কম পাবেন।

ডাউকি বাজার থেকে শিলং যাওয়ার জন্য গাড়ি নিয়ে নিন গ্রুপ এর লোকসংখ্যা অনুসারে। ৪ সিটের গাড়ি সরাসরি শিলং গেলে নিবে ২০০০-২২০০ রুপি। আমরা ৪ জন গিয়েছিলাম স্নোংপেডাং এবং ক্রাংসুরি ফলস দেখে তারপর শিলং। ভাড়া ৩০০০ রুপী।স্নোংপেডাং এ রাতে থাকার জন্য তাবু এবং ছোট কটেজ ও পাওয়া যায়। বোটিং করতে পারেন ১ ঘন্টা ৫০০ রুপি দিয়ে। শীতকালে বোটিং না করাটা বোকামি হবে।

এর পরে আমরা গিয়েছিলাম ক্রাংসুরি ফলসে। ফলসে পানি পাবেন এবং ফলস এর নীচে লেগুন এ চাইলে গোসল ও করতে পারেন। ক্রাংসুরি যাওয়ার পথে রাস্তাটায় থেকে ছবি তুলতে ভুলবেন না। পাহাড়ি রাস্তার পাশ ঘেসে বাদামি বিশাল মালভুমি আপনার মনে হবে এক অপরুপ সৌন্দর্যের লিলাভুমি।

ক্রাংসুরি ফলস, মেঘালয়

সব দেখে সন্ধ্যা নাগাদ চলে গেলাম শিলং পুলিশবাজার। ওটা মুলত ট্যুরিস্ট এলাকা। গিয়ে দেখে হোটেল নিয়ে নিন বা আগে থেকে বুকিং ডট কম বা ওয়ো এপ দিয়েও বুকিং করে যেতে পারেন।

পুলিশ বাজার এ অসংখ্য বাঙালি খাবার এর দোকান পাবেন। আমরা খেয়েছি হোটেল সেন্টার পয়েন্ট এর উল্টো দিকে ইডেন নামে রেস্টুরেন্ট এ। খাবারের স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। মনে রাখবেন শিলং এ সব কিছু রাত ৮ টায় বন্ধ হয়ে যায়।

পরেরদিন গিয়েছি চেরাপুঞ্জি। সকালে নাস্তা করে ৮ টায় বেরিয়ে পরেছি। ড্রাইভার হিসেবে পেয়েছি রওসন আলি ভাইকে। অসাধারন লোক। শিলং এর ইতিহাস, সভ্যতা সংস্কৃতি, মুঘল বাদশাহ সবকিছু নিয়ে গল্প জুড়ে দিতে ওস্তাদ রওসন আলি বাংলা, হিন্দি এবং থোরা থোরা হিন্দিতে কথা বলতে পারে। ওনাকে পেয়ে আমার মনে হয়েছে কেন শিলং ঘোরার জন্য একজন ভালো ড্রাইভার খুব জরুরি। ওনাকে ভালো লাগায় পরের দিনের জন্য ও অনাকে কনফার্ম করে নিলাম।

পানিশুন্য সেভেন সিস্টার্স ফলস, মেঘালয়

চেরাপুঞ্জিতে আমরা গিয়েছি নোহকালিকাই ফলস, ইকো পার্ক, মসমাই কেভ, মসমাই ফলস, মাওকডক ভিউ পয়েন্ট, টাইংগা ভিউপয়েন্ট, সেভেন সিস্টার ভিউপয়েন্ট। ভাড়া পরেছে ২০০০ রুপি।

আমার সাজেশন হল যদি চেরাপুঞ্জির জন্য ১ দিন বরাদ্দ রাখেন তবে এগুলো বেস্ট। তবে বেশি সময় থাকলে যেতে পারেন ডাবল ডেকার রুট ব্রিজ, লাইটলুম ইত্যাদি।

বিকেলটা বরাদ্দ রেখেছিলাম শপিং আর আশে পাশের এলাকা ঘুরে দেখার জন্য।

তৃতীয় দিন সকালে হোটেল এ নাস্তা সেরে রওসন ভাইকে নিয়ে চললাম ডাউকির উদ্দেশ্যে। পথিমধ্যে আমরা মিনি কাশ্মির ভিউ পয়েন্ট সহ ৪-৫ টা ভিউ পয়েন্ট এ থেমেছি। এখন ও চোখ বন্ধ করলে আমি সেই ভিউ দেখতে পাই। এক বিশাল সবুজের পাহড়ের দিকে তাকালে হারিয়ে যাবেন অন্য এক ভুবনে।

ডাইভার রওসন ভাই কে ধন্যবাদ দিয়েছি অসংখ্য, আমরা যেখানে গাড়ি থামাতে চেয়েছি উনি থামিয়েছেন। তারাহুরা দেখান নি বরং নিজেই অনেক যায়গায় গাড়ি থামিয়ে বলেছেন এখানে দাড়ান, ছবি তুলে দেই।

শিলং থেকে ডাউকি ফেরার পথে

দুপুর নাগাত পৌছালাম লিভিং রুট ব্রিজ এ, তারপর দেখলাম মাওলিননং – ক্লিনেজ ভিলেজ অফ এসিয়া। উল্লেখ্য যে দুপুরের খাবার টা ক্লিনেজ ভিলেজে খেয়ে নিতে ভুলবেন না। এত স্বাদের ভাত সবজি আর মুরগি বোধহয় আমি অনেক বছর খাইনি।

ক্লিনেজ ভিলেজ পার হয়ে ছুটলাম বর্ডার এর দিকে, পথে পড়ল ডাউকি নদী। অবশ্যই বোটিং করবেন নীল জলে আর আফসোস করবেন জাফলং থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে এই নীল স্বচ্ছ জল আপনার দেশের না বলে।

রওসন ভাইয়ের নম্বর- +91 9774158411

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ cherrapunjiMeghalayashillong