মেঘালয় ট্যুর প্ল্যান এবং খরচপাতি

৩ রাত ৪ দিনের ট্যুরে সাত জনের জন প্রতি মোট খরচ ১০০০০ টাকা। একটু হিসেব করে চললে ৮০০০/৯০০০ টাকার এর মধ্যে হয়ে যাবে।

ভিসা

ভিসা লাগবে ডাউকি বর্ডার (Dawki/Tamabil Border) দিয়ে। বর্ডারে ডলার চেক করে। সাথে করে ডলার নিয়ে যাবেন দেশ থেকেই। ট্রাভেল ট্যাক্স দেশেই দিয়ে যাবেন। তাইলে বর্ডার দ্রুত পার হতে পারবেন। ট্রাভেল ট্যাক্স জমা দিতে হয় সোনালী ব্যাংকে। চট্টগ্রামের ধলিয়ানপাড়া, দেওয়ানহাট শাখায় জমা দিতে হয়।

ট্যুর প্ল্যান

১ম দিন

সকালে তামাবিল বর্ডার পার হয়ে ওপারে গিয়ে জিপে। বাংলা টাকা ডাউকি বাজারে ভাঙ্গাতে পারেন। স্টেট ব্যাংক এ নিচে এক মুদির দোকান থেকে ভাঙ্গাতে পারবেন। ৮০ টাকা করে পেয়েছিলাম তাও দরদাম করে। ডলার শিলং এ ভাঙ্গাতে পারেন। শিলং (Shillong) এ রেট ভাল ডাউকি বাজারের তুলনায়।

  • বরহিল ফলস,(Borhill Falls)
  • উমক্রেম ফলস,(Umkrem falls)
  • লিভিং রুট ব্রিজ, (Living root bridge)
  • মাওলিনং ভিলেজ (Mawlinnong village) ঘুরে একেবারে চেরাপুঞ্জি যাবো, পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। রাতে চেরাপুঞ্জি (Cherrapunji) থাকব।
চেরাপুঞ্জি

খাবার

আশে পাশে হোটেল আছে। আটটায় সব বন্ধ হয়ে যায়। তার আগে খেয়ে নিবেন অথবা ফয়েল পেপার দিয়ে মুড়িয়ে হোটেলে নিয়ে যেতে পারেন। ডাউকি থেকে চেরাপুঞ্জি যাওয়ার পথে অনেক দোকান পড়ে। গাড়ি থামিয়ে খেয়ে নিতে পারেন গরম গরম মম আর নুডলস।

চেরাপুঞ্জি হোটেল ডিটেইলস

সাত জনের জন্য এই হোটেলটা ছিল জোশ। ২ টা ডাবল বেড ও ২টা সিঙ্গেল বেড ছিল। যদিও দুজন আমরা নিচে বেড পেতে শুয়েছিলাম। এতে অসুবিধা হয় নি কোন। হোটেল ভাড়া – ৬০০০ রুপি

Laiaiker Inn
Mawpun kyrtiang sohra, 793108
East khasi Hills District Meghalaya
+917005196810
+919863063705
Email: laiaikerinn@gmail.com

লিভিং রুট ব্রিজ

২য় দিন

  • রামকৃষ্ণ মিশন (Ramkrishna Mission)
  • নোহকালিকাই ফলস,(Nohkalikai Falls)
  • মৌসুমি কেইভ, (Mawsamai Falls)
  • সেভেন সিস্টার ফলস (Seven sister Falls)
  • ওয়াকাবা ফলস
  • এলিফেন্ট ফলস / ডাইন্হেলেন ফলস (Elephent Falls/ Dianthelen Falls) দেখে শিলং শহরে আসব।

ডলার ভাঙ্গানো যাবে সেন্টাল পয়েন্ট, পুলিশ বাজার। কোন দোকানদার কে জিজ্ঞেস করলে দেখিয়ে দিবে।

শিলং এ খাবার

স্ট্রিট ফুড ট্রাই করতে পারেন। এছাড়াও সেন্টাল পয়েন্টেত পাশে মসজিদ গলিতে পাবেন ডমিনোজ এর পিজ্জা। সব দোকান ৮ঃ০০ /৮ঃ৩০ এ বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে খেয়ে নিবেন অথবা ফয়েল পেপার দিয়ে মুড়িয়ে হোটেলে নিয়ে যাবেন। এখান থেকে যা পারেন শপিং করে নিয়েন। কারণ আর মার্কেটের দেখা পাবেন না।

শিলং হোটেল ডিটেইলস

হোটেলের মান যথেষ্ট ভাল। রুমে ব্যালকনি ছিল। তা দিয়ে রাতের শিলং শহরের আলোগুলো খুব সুন্দর দেখা যায়।

Daina guest house
New kench’s Trace,bishnupur, Near stat sang Temple,Shilong-793002,Meghalaya
Mobile: 9862131877
হোটেল ভাড়া -৪৫০০রুপি

নোহকালিকাই ফলস

৩য় দিন

লাইটলুম গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন, (Lytlam Grand canion), এটা মাস্ট রাখিয়েন। অসম্ভব রকমের সুন্দর।বিশাল সবুজের চত্বর আর মেঘ পাহাড়ের খেলা দেখতে পাবেন এখানে গেলে। 

ক্রাংসুরি ফলস,( Krang suri Falls) দেখে সোনাংপেডাং এ চলে আসব

সোনাংপেডাং হোটেল ডিটেইলস

Shatsngi Homestay
এই পেইজ থেকে ওদের হোটেল বুক করতে পারবেন। এই ছাড়াও ওদের বললে ওরা শিলং,চেরাপুঞ্জি সব হোটেল বুক করে রাখে। তবে এরকম হলে দরদাম করবেন। 
নাম্বারঃ 9612089521
হোটেল ভাড়া-৪৫০০রুপি

খাবারঃ

পাশেই বিটলনাট রেস্টুরেন্ট এ খেতে পারেন। কয়েকধরনের বিরিয়ানি অর্ডার করছিলাম। ২৫০ রুপিতে পরিমাণ ভালই। খুব বেশী খাদক না হলে শেষ করতে কষ্ট হয়ে যাবে। এটাও সাড়ে আটটার দিকে বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া হোটেলের আশে পাশে ছোট খাট দোকান আছে। ওখান থেকেও খেতে পারেন।

লাইটলুম

৪র্থ দিন

সকাল বেলা দেখতে পারেন সাসপেনশান ব্রীজ। একদম হোটেলের পাশেই। এরপর উমংগট নদীতে বোটিং করে এদিক সেদিক ঘুরে ডাউকি এসে বর্ডার পার হবেন।

জীপ ড্রাইভার – 09378184554 (প্রদীপ)। মোটামুটি বাংলা বুঝে হালকা পাতলা। বর্ডার থেকে নিয়ে যাওয়া থেকে বর্ডার অব্দি পোঁছে দেওয়া মোট খরচ ১৫০০০ রুপি দিয়েছি। কোন থাকা খাওয়া খরচ দিতে হবে না।

উমগট নদী ও সাসপেনশান ব্রিজ

আমরা দেশ থেকে সমস্ত হোটেল বুক করে গিয়েছি। আমাদের জন্য সমস্ত হোটেল বূক করে রেখেছে carol. যেতে চাইলে তাকে ওয়াটস এপে নক দিলে হবে। সে আপনাকে আপনার দরকার অনুযায়ী হোটেল কনফার্ম করবে। আর ভালো হোটেল ও দিবে৷ জিপ আলাদা ভাবে ঠিক করলেও আমরা আসার পর আমাদের রিভিউ দেখে প্রদিপ দা এখন এই ক্যারলের সাথে কাজ করে। তাই ক্যারলের সাথে কথা বললে আপনার জিপ আর হোটেল নিয়ে ভাবতে হবে না। ক্যারোল সব বুক করে দিবে। প্রয়োজন অনুযায়ী দরদাম করে নিবেন। ট্যুর প্ল্যান ঠিক রেখে জাস্ট হোটেল আর জিপের ব্যাপারে ক্যারলের সাথে কথা বলবেন। ক্যারোলের ওয়াটস এপ নাম্বার – +91 72288 45448

বর্ষাকালে মেঘালয়ের যাওয়ার উপযুক্ত স্থান হলেও এই সময় চেরাপুঞ্জিতে ঝর্নার দেখা পাওয়া কিছুটা ভাগ্যের উপর নির্ভর করে। মেঘের কারণে আমাদের সেভেন সিস্টার ফলস দেখতে পারেনি অনেকক্ষন অপেক্ষা করার পরেও। নোহকালিকাই ফলস দেখেছিলাম তাও ৩/৪ মিনিটের জন্য। ভাগ্য কতটা ভাল হলে ক্রাংসুরি ফলসের পানি পেয়েছিলাম একদম ক্রিস্টাল ক্রিয়ার। আর যাওয়ার দিন উমগট নদীর পানি চায়ের কালার থাকলেও যেদিন বোটিং করেছিলাম সেদিন পানি ছিল পুরা সবুজ।

ক্রাংসুরি ফলস

ঈদের সময় গেলে বর্ডারে প্রচুর জ্যাম থাকে। অনেকের নির্দিষ্ট দিনের প্ল্যান নিয়ে যায়। বর্ডারে জ্যামের কারণে প্রথম দিনের প্ল্যান বাদ যায়।আমাদের ও এমনটাই হয়েছিল। কিন্তু বুদ্ধি করে প্রথম দিনের পুরা প্ল্যান শেষ দিন এড করে দিয়েছি। খেয়াল করলে দেখবেন শেষ দিন তেমন দেখার কিছু নাই। আর ১ম দিনের সব প্ল্যান ডাউকি বাজারের কাছেই। তাই কোন কারণে ১ম দিনের প্ল্যান ভেস্তে গেলেও মন খারাপ না করে প্ল্যান বদলে ফেলুন যদি আপনাদের নির্দিষ্ট দিনে ফেরার তাড়া থাকে তো। ড্রাইভারের সাথে কথা বলে ঠিক করে নিন। আমাদের ১ম দিনের প্ল্যান শেষ দিন এড করার কারণে এক্সট্রা ৪০০০ রুপি দিতে হয়েছিল ড্রাইভারকে (সব মিলিয়ে ১৫০০০রুপি। আমাদের ১ম দিনের প্ল্যান ফেল না মারলে তাহলে ১২/১৩ হাজার রুপিতে হয়ে যাবে। দরদাম ওইভাবে করবেন)। তবে খুশির ব্যাপার এই যে প্ল্যান মত সব হয়েছিল। যেখানে যাবেন সেটা সম্পর্কে যতটুকু সম্ভব ধারণা নিয়ে যাবেন। এতে করে অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবেন। যেকোন সময় প্ল্যান আপনার মত করে বদলাতে পারবেন।

যেখানে সেখানে ময়লা ফেলতে চাইলেও পারবেন না। চারপাশটা এত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। আপনার মন কখনো সায় দিবে না পরিবেশ নোংরা করার। তারপরেও অনুরোধ থাকল পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার।
Leave a Comment
Share