এই সেপ্টেম্বরে জম্মু-কাশ্মীরের লাদাখে গিয়ে ছিলাম যার প্রেক্ষিতে সতর্কতামূলক ও করণীয় কিছু অভিজ্ঞতা লিখছি –
Thiksey Village from Thiksey Monastery !!
লাদাখের মূল আকর্ষণ নুব্রা ভ্যালি ও প্যাংগং লেকের পারমিশন বাংলাদেশীদের জন্য বন্ধ। বন্ধ মানে বন্ধ। কেউ যদি আপনাকে বলে যে নিয়ে যাবে পারমিশন করিয়ে দিবে আসলে মিথ্যা বলছে। একান্তই যেতে চাইলে ৮ সপ্তাহ সময় হাতে রেখে দিল্লী হোম অ্যাফেয়ার্স এ পারমিশনের জন্য আবেদন করুন। কিন্তু এর জন্য তারা বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে লেটার দেখতে চায়। আর বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে এই লেটার পাওয়া সাধারণ বাংলাদেশিদের নাগালের বাইরে বলা চলে। একটা এজেন্সি আমাদের বলেছিল দিল্লি থেকে অল্প সময়ে পারমিশন করিয়ে দিবে কিন্তু তাদের প্যাকেজ নিতে হবে কিন্তু লাদাখ গিয়ে জানতে পারি যে আমাদের বাংলাদেশি না বরং ওয়েস্ট বেঙ্গল এর পরিচয় দেয়া হয়েছে। আমরা তাদের সাথে চুক্তি বাতিল করে লাদাখ লোকাল সাইট ঘুরে অল্টারনেটিভ প্ল্যান মতো ২ দিন পর কাশ্মীর চলে যাই।
লাদাখের মূল শহর লেহ যা সমূদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১১৫০০ ফিট উপরে। ছবির মতো সুন্দর এই শহরে বাতাসে অক্সিজেন লেভেল খুব কম। তাই বাংলাদেশিদের মতো লো ল্যান্ডের মানুষদের AMS – একিউট মাউন্টেইন সিকনেস দেখা দিতে পারে। অতি উচ্চতা, অতিরিক্ত ঠান্ডা আবহাওয়ার কারনে AMS এর লক্ষণ গুলো দেখা দেয়।
AMS – এর লক্ষণ গুলো হলো: মাথা ঘুরানো, দুর্বল লাগা, বমি বমি ভাব, মাথা ব্যাথা, শ্বাসকষ্ট। কিন্তু ঘাবড়াবেন না এগুলো লিখছি কারণ আপনাদের যেন প্রিপারেশন নেয়া থাকে ঠিক মতো।
প্রিপারেশন হলো লেহ পৌঁছে হোটেলে ১/২ দিন ফুল রেস্টে থাকতে হবে। ঘন ঘন পানি খান তাতে দেহে অক্সিজেন লেভেল বাড়বে। লেহতে সব ফার্মেসিতে অক্সিজেন মিনি ক্যান পাওয়া যায়। সাথে রাখতে পারেন কেউ প্রব্লেম মনে করলে ১/২ পাফ নিয়ে নিবেন।
যারা লাদাখ যেতে চান আগেই নুব্রা ভ্যালি /প্যাংগং লেকের পারমিশন ম্যানেজ করুন। নয়তো লেহ হয়ে কাশ্মীর (শ্রীনগর ) যেতে পারেন অথবা আগে শ্রীনগর গিয়ে ওখান থেকে লেহ আসতে পারেন। আজীবন মনে রাখার মতো একটা জার্নি হবে। সারি সারি বরফ জমা পর্বত আর সিন্ধু,ইন্দুস নদীর পাশ দিয়ে যাওয়ার দৃশ্য গুলো কখনো ভোলার মতো নয়।
লেহ থেকে শ্রীনগর যাওয়ার পথে যে স্পট গুলো পড়বে- ম্যাগনেটিক হিল, গুরুদুয়ারা পাথ্থার সহীব, হল অফ ফেম (এই তিনটা লেহ সাইট সিইং ), সঙ্গম পয়েন্ট (ইন্দুস ও জান্সকার রিভার মিলিত হয়েছে ), মুনল্যান্ড (লামায়ুরু ), লামায়ুরু মোনাস্ট্রি, মুলবেখ রক স্কাল্পচার, ফাটুলা পাস, নামিক লা পাস, কার্গিল শহর, দ্রাস ভিলেজ (পৃথিবীর দ্বিতীয় ঠান্ডা গ্রাম ), কার্গিল ওয়ার মেমোরিয়াল (দ্রাস ), জোজিলা পাস, সোনমার্গ, বালটাল ভ্যালি (হিন্দুদের অমর নাথ যাত্রা এই ভ্যালির মধ্য দিয়ে যায় ), থাজিওয়াজ, গ্লেসিয়ার (সোনমার্গ) ইত্যাদি।
লেহ থেকে সকাল সকাল রওনা দিলে স্পট গুলো দেখতে দেখতে কার্গিলে নাইট স্টে করতে পারেন অথবা সরাসরি সোনমার্গ গিয়ে থাকতে পারেন। সকালে ঘোড়ায় চড়ে সোনমার্গের থাজিওয়াজ গ্লেসিয়ার যাওয়া কোনো ভাবেই মিস করবেন না।
জুলাই-সেপ্টেম্বর বেস্ট সময় লাদাখ যাওয়ার। বাকি সময় সব জায়গা গুলো খুব দুর্গম হয়ে যায়।
যদি লাদাখ থেকে কাশ্মীর যান তাহলে লেহ মেইন বাজার থেকে হুজুগে কাশ্মীরি পশমিনা শাল /কাপড় কিনার কোনো দরকার নেই। এখানে দাম অনেক বেশি চাইবে আর অথেন্টিক নাও পেতে পারেন।
ড্রাই ফুড কিনলে লাদাখের এপ্রিকট খুব বিখ্যাত। এপ্রিকট লাদাখের খালসি নামক স্থানে ভালো হয়। লেহ -শ্রীনগর যাওয়ার পথেই পড়বে। নয়তো লেহ বাজারে ড্রাই ফুডের দোকান আসে ওখান থেকে নিতে পারেন।
এছাড়া জাফরান,আখরোট ,ব্ল্যাকবেরি ,ক্রাইন বেরি, মসলা শ্রীনগর থেকে নিবেন।
সঙ্গম পয়েন্ট ( ইন্দুস ও জান্সকার নদীর মিলনস্থল )
কিভাবে যাবেন
ঢাকা -কলকাতা -দিল্লী (এয়ার )
দিল্লী -লেহ (এয়ার )
অথবা
ঢাকা -কলকাতা (বাস )
কলকাতা -দিল্লি (ট্রেন )
দিল্লি -লেহ (এয়ার)
এছাড়া আপনি দিল্লি টু মানালি গিয়ে ওখান থেকে লাদাখ যেতে পারেন রিসার্ভ গাড়ি নিয়ে। আবার দিল্লি থেকে জম্মু হয়ে শ্রীনগর যেতে পারেন।
ট্রান্সপোর্ট
৬ জনের জন্য রিসার্ভ গাড়ি ( টাটা ইনোভা )
এয়ারপোর্ট পিক আপ -৫০০ রুপি
লেহ সাইট সিইং – ২৫০০/৩০০০ রুপি
লেহ টু শ্রীনগর – ১৩০০০-১৫০০০ রুপি
লেহ টু সোনমার্গ -১০০০০-১২০০০ রুপি
লেহ টু কার্গিল – ৭০০০-৮০০০ রুপি
আপনি বার্গেইন করে যে ভাবে নিতে পারেন।
সদস্য কম হলে ট্যাক্সি নিতে পারেন অথবা শেয়ারে যেতে পারবেন। আমরা ঢাকা থেকে আখাউড়া ল্যান্ডপোর্ট দিয়ে গিয়ে আগরতলা এয়ারপোর্ট থেকে দিল্লী গিয়েছি। এতে বিমান খরচ অনেক কমে গিয়েছে।
হোটেল
লাদাখে ১০০০-১৫০০ রুপির মধ্যে ভালো মানের ডাবল রুম পাবেন। আমরা প্রতি রুম এ ৩ জন করে খুব আরামেই থেকেছি।
টোটাল খরচ
ইন্ডিয়াতে – ১৭০০০ রুপি
বাংলাদেশ – ২০০০ টাকা ( ট্রাভেল ট্যাক্স , ঢাকা -আখাউড়া -ঢাকা ট্রেন ,সিএনজি ভাড়া )
এয়ার টিকিট : ১৮৫০০ টাকা (আগরতলা-দিল্লী , দিল্লী -লেহ ( রিটার্ন টিকিট )
জন প্রতি – ৪১০০০ টাকা প্রায় ( ৯ দিন )
Leave a Comment