বেঙ্গালুরু বা ব্যাঙ্গালোর দক্ষিনের উন্নত শহরের একটি। ব্যবসা– বানিজ্য, শিক্ষা–দিক্ষা আর চিকিৎসার দিক দিয়ে ব্যাঙ্গালোর খুবই উন্নত। আর ইতিহাসের বিখ্যাত ব্যক্তি টিপু সুলতানের অসংখ্য সৃতি নিয়ে আজও শহরে অনেক স্থাপনা বিদ্যমান।
বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ব্যাঙ্গালোর যাওয়া যায় না। বাঙ্গালোর যেতে হলে আপনাকে প্রথমে কলকাতা যেতে হবে। কলকাতা থেকে ট্রেন বা এয়ারে করে বেংগালুর যেতে হবে। ঢাকা থেকে এয়ারে যেতে চাইলে আপনাকে কলকাতা বা মুব্বাই ৬/৭ ঘন্টা ট্রানজিট নিয়ে তারপর ব্যাঙ্গালোর যেতে হবে। তাছাড়া শ্রিলংকার একটি ফ্লাইট শ্রিলংকা ট্রানজিট করে ব্যাঙ্গালোর যায়। তবে এগুলোর মধ্যে বেস্ট অপশনটি হচ্ছে কলকাতা ট্রানজিট করা। আমার টিকেটটি ছিল ঢাকা-কলকাতা-ব্যাঙ্গালোর। কলকাতায় ৭/৮ ঘন্টার ট্রানজিট। আমাদের ফ্লাইটটি ছিল স্পাইজেট এয়ার এ। ঢাকা থেকে সন্ধ্যা ৭টায় ফ্লাইট আর ৮টার মধ্যেই কলকাতা পৌছে ইমিগ্রেশন এর সকল ঝামেলা শেষ করে ফেলি। পরের দিন সকাল ৬:৫৫ তে আমাদের বাঙ্গালোর কানেক্টিন ফ্লাইট থাকায় আমরা এয়ারপোর্টে থাকার চিন্তা করলাম। কলকাতা এয়ারপোর্টে থাকার জন্য ডাবল বেড ১৬৮০ রুপি আর সিজ্ঞেল বেড ৮৫০ রুপির মত পরে। আপনি এয়ারপোর্টে ম্যানেজার এর সাথে কথা বলে রুম নিতে পারবেন এর জন্য আপনার পাসপোর্ট এর দরকার হবে। এয়ারপোর্টে ভিতরে খাবারের ব্যবস্থা থাকলেও একটু ব্যয়বহুল। আপনি ভাত মাছ খেতে চাইলে এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে হাতের ডান দিকে একটা কেন্টিন পাবেন। সেখানে গিয়ে ভাত, মাছ, সব্জি,ডাল খেতে পারেন। এর পর ইচ্ছা করলে দমদম এরিয়া একটু ঘুরে দেখতে পারেন। ইন্ডিয়ান সিম যদি বাংলাদেশ থেকে নিয়ে না যান তাহলে সিম কিনে নিবেন কলকাতা থেকে, কলকাতা এয়ারপোর্টের ভিতরে একটা দোকান আছে সিম বিক্রি করে যা রাত ৯ টার পর বন্ধ হয়ে যায। তাই আগেই চেস্টা করবেন সিম ম্যানেজ করে নেয়ার জন্য। তারপর পছন্দ অনুযায়ী প্যাকেজ কিনে নিতে পারেন। তবে টক টাইম থেকে নেট প্যাকেজটা বেশি কাজে লাগে।
আপনি কলকাতা এয়ারপোর্ট থেকে বাহিরে যাওয়ার সময় রুম ভাড়ার মানিরিসিট সাথে রাখবেন তা না হলে ভিতরে ঢোকার সময় ঝামেলায় পরতে হবে। যেহেতু সকাল বেলায় তাড়াতারি উঠতে হবে তাই আগে ঘুমিয়ে পরার চেস্টা করুন। একটু আগে আগে গিয়ে আপনার বুকিং কনফার্ম করে সামনের দিকে সিট নিতে চেস্টা করবেন এরপর ২ ঘন্টার মত সময় লাগবে বেংগালুর এয়ারপোর্ট যেতে। সেখানে গিয়ে আপনি UBER / OLA এর মাধ্যমে টেক্সি বুকিং করে ব্যাঙ্গালোর পৌছাতে পারেন ভাড়া পরবে ১০০০/১২০০ রুপি।
আমাদের হোটেল ছিল শমসের নগর এলাকায় এটি মুসলিম এলাকা। আমার কাছে শমসেরনগর এলাকাটি পুরান ঢাকার মত মনে হয়েছে। ইন্ডিয়ান সিম থাকলে আপনি নিজেই টেক্সি ভাড়া করতে পারবেন আর যদি সিম না থাকে তাহলে এয়ারপোর্ট টেক্সি ভাড়া করে নিতে পারেন সেক্ষেত্রে খরচ একটু বেশি পরতে পারে। আপনার শমসেরনগর পৌছাতে দুপুর হয়ে যাবে তাই হোটেল নিয়ে ফ্রেস হয়ে খেয়ে নিতে পারেন। আমাদের হোটেল ছিল মসজিদ ই আতিক এর রোডে এই রোডে অনেক গুলি হোটেল আছে যা ডাবল বেড ৮০০/১২০০ মধ্যে হয়ে যাবে। খাওয়ার জন্য কয়েকটা মুসলিম রেস্টুরেন্ট আছে তাছাড়া কলকাতার কিছু হোটেল আছে যেখানেও আপনি খেতে পারেন।
ট্রান্সপোটের জন্য আপনি বাস, টেক্সি, অটো, তাছাড়া স্কুটার ভাড়া নিতে পারবেন। Uber এ টেক্সি আর আটোটাই আমার কাছে অনেক ভাল মনে হইছে। আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স নাই তাই আমি স্কুটার ভাড়া নিতে পারি নাই। তা নাহলে স্কুটারই নিতাম।
আপনি বাংলাদেশে থেকে যাওয়া সময় কিছু রুপি নিয়ে যেতে পারেন কলকাতা আর টেক্সি ভাড়া সহ অন্যান্য খরচের জন্য। কলকাতা এয়ারপোর্ট বা ব্যাঙ্গালোর এয়ারপোর্টে ডলার ভাজ্ঞালে রেট কম পাবেন। ডলার ভাজ্ঞানোর জন্য আপনি ব্রিগেড রোড এরিয়াতে কয়েকটা মানিচেঞ্জার আছে যাচাই বাছাই করে ভাজ্ঞাতে পারেন। শমেসরনগর থেকে ব্রিগেড রোড এর ভাড়া অটোতে ৬০রুপির মত আসে আপনি উবার ব্যবহার করবেন।
আপনি এইদিন বিকেল বেলা লালবাগ ঘুরে দেখতে পারেন। লালবাগের ভিতরেই রয়েছে বোটানিক্যাল গার্ডেন। লালবাগ সম্পুর্ণ ঘুরে দেখতে দেখতে আপনার বিকেল থেকে রাত হয়ে যাবে। সেখান থেকে বের হয়ে আপনি চাইলে ব্রিগেড রোডে যেতে পারেন। এই খানে বেশকিছু ব্রান্ডের শপ আছে, তাছাড়া ড্যান্সক্লাব,নাইটক্লাব,বার,সিনেমা হল সবই আছে। আপনার পছন্দমত যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন। আমি লালবাগ থেকে বের হয়ে সরাসরি চলে যাই স্টিডিয়াম আইপিএল দেখতে।
এবার রাতের খাবার পেতে অনেক কস্ট হয়। যখন খেলা শেষ করে হোটেলে ফিরে আসি তখন খাবারের সব দোকানই বন্ধ ছিল। তাই ওই রাতে মসজিদের সামনে থেকে একটা ফালুদা খাই আর সেই ফালুদার স্বাদ কখনও ভোলার মত নয়। কেউ গেলে ফালুদা টা মিস করবেন না, অবশ্যই খেয়ে দেখবেন।
এবার রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে ঘুম। পরদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশহয়ে নাস্তা করে বের হয়ে পরলাম টিপু সুলতানের সামার প্লেস, টিপু সুলতান ফোর্ট, ন্যাশনাল পার্ক, কুবেন পার্ক, মিউজিয়াম, ন্যাশনাল লাইব্রেরী, ফ্রীডম পার্ক, আইচসিটি এগুলো দেখতে দেখতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেলো। তারপর সন্ধ্যার পর সিনেমা হলে গিয়ে রাম চড়নের একটা মুভি দেখে নেই। মুভিটি কর্নাটক ভাষায় থাকার কারনে ভালভাবে বুঝতে পারি নি। তবে আপনি চাইলে হিন্দী বা ইংলিশ মুভি দেখতে পারেন।
এবার আপনি টিপু সুলতান এর ইতিহাস জানতে চাইলে চলে যান টিপু সুলতানের রাজধানী মহীশূর। মহীশূর হচ্ছে এমন একটি শহর যেখানে না গেলে আপনি সত্যিই অনেক কিছু মিস করবেন। মহীশূর যাওয়ায় জন্য আপনি হোটেল থেকে বাসের প্যাকেজ নিতে পারেন তাছাড়া ৪/৫ জন হলে টেক্সিকরে যেতে পারেন। সকাল ৬টায় বাস ছেড়ে সারাদিন মহীশূর ঘুরিয়ে আপনাকে রাত ১১/১২ টার মধ্যে হোটেলে পৌছে দিবে। এক এক হোটেলের প্যাকেজ এক এক রকম হয়ে থাকে তাই কয়েকটা হোটেলে কথা বলে আপনার জন্য বেস্ট অপশন পছন্দ করে নিতে পারেন। তাছাড়া আপনি চাইলে আপনার মত বাসের টিকেট কেটে যেতে পারেন সেখানে একদুইদিন থেকে আপনার মত করে মহীশূর দেখে আসতে পারেন।
মহীশূর দেখার মত কিছু স্থান হচ্ছে শিবসমুদ্র জলপ্রপাত ,মহীশূর প্যালেস, বৃন্দাবন গার্ডেন, গীর্জা, বাধ, টিপু সুলতানের সমাধি, মহীশুর গামবাজ, চিড়িয়াখানা তাছাড়া ৫/৬ টি প্রাসাদ সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপণা।
মহীশূর দেখে এসে এবার কলকাতা হয়ে ঢাকায় ফেরার পালা। আপনি ট্রেন বা এয়ারে ফিরতি টিকেট আগেই কেটে রাখবেন কারন এতে আপনার খরচ অনেক কমে যাবে। ইন্সস্ট্যান টিকেটের দাম অনেক বেশি পরে আর অনেক সময় আছে ট্রেনের টিকেট পাওয়া যায় না। দুই একদিন অপেক্ষা করতে হয়। ফেরার সময় আপনি ইচ্ছা করলে কলকাতা ২/১ দিন থেকে শপিং করে দেশে ফিরতে পারেন। আমি ফেরার সময় মুব্বাই হয়ে আসছি তাতে আমার সময় ২/৩ ঘন্টা বেশি লাগছিলো ট্রানজিট সহ।
আমার টিকেট ছিল ঢাকা-কলকাতা-ব্যাঙ্গালোর ৮৪০০ টাকা ২৪ দিন আগে কেটেছিলাম। বাঙ্গালোর -মুব্বাই-ঢাকা ১৫৬০০রুপি ১ দিন আগে কেটেছিলাম জেট এয়ারের। আইপিএল এর সিজন থাকায় টিকেটের প্রাইজ একটু বেশি ছিল। আর কলকাতায় ট্রেনে আসার টিকেট ৪/৫ দিনের পরের টাও কনফার্ম ছিল না। আমার ১০ দিনে প্রায় ৪৮০০০ টাকার মত খরচ হয়েছিল।
Leave a Comment