মৌলভীবাজার

বোবারথল

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের আসাম ও ত্রিপুরা ঘেঁষা এক জনপদ বোবারথল (Bobarthal), প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ভরপুর এই অঞ্চলটি এখনও অনেকটা অজানা ভ্রমণ প্রেমীদের কাছে। সুউচ্চ পাহাড়ি ট্রেইল, অগণিত প্রাকৃতিক ঝর্ণা, বিশাল লেক, গিরিখাত, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও ঐতিহাসিক স্থানীয় জীবনধারা নিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি ভ্রমণ গন্তব্য বোবারথল। ঢাকা থেকে প্রায় ২৩০ কিলোমিটার দূরে মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নে এর অবস্থান।

বোবারথল এক অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার। সবুজে ঘেরা পাহাড়, ঝর্ণা, লেক এবং চা বাগান মনকে করে তুলবে মুগ্ধ। শীত বা বর্ষা যে মৌসুমেই যান না কেন, প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য আপনাকে বিমোহিত করবেই।

বোবারথল এ দেখার আছে কি

বোবারথলে রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান:

  • ঝর্ণা: পেকুছড়া ঝর্ণা, করইছড়া ঝর্ণা, পরিরঢর ঝর্ণা, গগনটিলা ঝর্ণা, ষাটঘরি সীমান্ত ছড়া সহ অনেক ছোট-বড় ঝর্ণা।
  • অন্যান্য: গান্ধাই কয়লাটিলা, হরতকি চুনাপাহাড়, সাততলা টিলা, ছোটলেখা লেক, গগনটিলা, ছোটলেখা চা বাগান, জিংগাআলা শাহবাজপুর চা বাগান, গান্ধাইপুঞ্জি, আগারপুঞ্জি, ডিমাইপুঞ্জি, মাঝ গান্ধাইপুঞ্জি।

কমিউনিটি বেজড ট্যুরিজম

“অভিগো” নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় কমিউনিটি বেজড ট্যুরিজম চালু করেছে। তাদের মাধ্যমে আপনি স্বল্প খরচে হোম স্টে, স্থানীয় খাবার এবং গাইডেড ট্যুরের ব্যবস্থা করতে পারবেন।

বোবারথল যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে বোবারথলে যাওয়ার জন্য প্রথমে ট্রেনে কুলাউড়া জংশন পৌঁছাতে হবে। সেখান থেকে লোকাল বাস বা অটোরিকশায় বড়লেখা উপজেলা সদরে যেতে হবে। বড়লেখা থেকে মাত্র ১০ মিনিটের অটোরিকশা যাত্রায় পৌঁছানো যাবে বোবারথলের প্রবেশদ্বার ছোটলেখা বাজারে। এরপর শুরু হবে চাঁদের গাড়ি বা জিপে পাহাড়-টিলা আর চা বাগানের মধ্য দিয়ে এক রোমাঞ্চকর যাত্রা।

দুটি প্রবেশ পথ

বোবারথলে প্রবেশ করার জন্য দুটি রাস্তা রয়েছে:

  • গগনটিলা (হরতকি টিলা) পথ: এই পথ দিয়ে প্রবেশ করলে আপনি এলাকার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ গগনটিলার বিশালতা উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়াও দুটি প্রাকৃতিক ঝর্ণায় গা ভিজিয়ে নিতে পারবেন এবং খাসিয়া সম্প্রদায়ের গ্রাম গান্ধাইপুঞ্জি ঘুরে দেখতে পারবেন।
  • ছোটলেখা চা বাগান পথ: এই পথ দিয়ে গেলে আপনি চা বাগানের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন এবং ছোটলেখা লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে চারপাশের সুউচ্চ পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য দেখতে পারবেন। এছাড়াও আগারপুঞ্জি নামক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পল্লি ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন।

থাকবার ব্যবস্থা

বোবারথলে থাকার জন্য রয়েছে কমিউনিটি বেজড ট্যুরিজমের আওতায় স্থানীয়দের বাড়িতে হোম স্টের ব্যবস্থা। এটি আপনাকে স্থানীয় সংস্কৃতি ও জীবনধারার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হওয়ার সুযোগ দেবে। “অভিগো” নামের একটি সংস্থা এই হোম স্টের ব্যবস্থাপনা করে থাকে। তারা স্বল্প খরচে আবাসন সুবিধার সাথে ঐতিহ্যবাহী স্থানীয় খাবার এবং গাইডেড ট্যুরের ব্যবস্থা করে দেয়। ভ্রমণের আগেই অভিগোর ফেসবুক পেজের মাধ্যমে যোগাযোগ করে হোম স্টে বুকিং করে নেওয়া জরুরি। এতে আপনার যাত্রা আরও সুগম এবং আনন্দদায়ক হবে।

পরামর্শ

  • বোবারথল ভ্রমণের জন্য অন্তত দুই দিন সময় নেওয়া উচিত।
  • আগে থেকে হোম স্টে বুকিং করে নেওয়া জরুরি।
  • বোবারথল ভ্রমণের সাথে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও হাকালুকি হাওর ঘুরে দেখতে পারেন।

বোবারথল একটি অনন্য ভ্রমণ গন্তব্য যা আপনাকে মুগ্ধ করবে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি দিয়ে। একবার গেলে বারবার যেতে ইচ্ছে করবে।

Leave a Comment
Share