নওগাঁ

বলিহার রাজবাড়ি

নওগাঁ সদর উপজেলার বলিহার ইউনিয়নের নওগাঁ-রাজশাহী সড়কের পশ্চিমে অবস্থিত প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী বলিহার রাজবাড়ি। নওগাঁ জেলা শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার পশ্চিমে বলিহার ইউনিয়নের কুড়মইল মৌজায় বলিহার রাজবাড়ি অবস্থিত। দেশ বিভাগের সময়কালে বলিহারের রাজা ছিলেন বিমেলেন্দু রায়। দেশ বিভাগের সময় জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলে বলিহারের রাজা বিমেলেন্দু রায় চলে যান ভারতে। এরপর বলিহার রাজবাড়ি (Balihar Rajbari) ভবনটি দেখভাল করেন রাজ পরিবারের অন্যান্য কর্মচারীরা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এবং পরবর্তীতে রাজবাড়ির বিভিন্ন নিদর্শন, আসবাবপত্র, জানালা দরজাসহ বিভিন্ন সামগ্রী লুট হয়ে যায়।

রাজবাড়ীর সামনেই রয়েছে প্রকাণ্ড তোরন। ভেতরের কম্পাউণ্ডে নাটমন্দির, রাজ-রাজেশ্বরী মন্দির, জোড়া শিব মন্দির আর বিশাল দোতলা জমিদার বাড়ি। যদিও বিভিন্ন মন্দিরের দেয়ালের কারুকাজ, মূল্যবান রিলিফের কাজগুলো এখন অস্পষ্ট ও ভাঙ্গা। এই কারুকাজগুলো ছিল এই মন্দির গুলোর শোভাবর্ধক। বলিহারের জমিদারিতে ৩৩০টি দীঘি ও পুকুর ছিল। এর মধ্যে মালাহার, সীতাহার, বলিহার, অন্তাহার উল্লেখযোগ্য।

পূর্বে রাজবাড়ির একটি ভবন স্থানীয় একটি স্কুলের শ্রেণীকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল কিন্তু নতুন স্কুল ভবন নির্মিত হওয়ায় রাজবাড়ী ভবনটি এখন পরিত্যক্ত। প্রাসাদ এর ভিতরে অবস্থিত দেবালয় পূজা অর্চনার কাজে ব্যবহৃত হয়। প্রাসাদের সিংহদুয়ার এখন অনেকটাই শক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রাসাদের পেছনের মালিপাড়ায় এখনো বিশাল আকারের পাশাপাশি দুটি শিবলিঙ্গ আছে। কালো পাথরের শিবলিঙ্গ যাতে চুরি হয়ে না যায় সে কারণে গোড়ায় খোয়া সিমেন্ট দিয়ে মজবুত করে ঢালাই দিয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। দর্শনীয় প্রাসাদটির কয়েকটি ভবন বর্তমানে কোনোরকমে দাঁড়িয়ে একসময়ের বলিহার রাজাদের ঐতিহ্যের জানান দিচ্ছে।

মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সনদবলে নওগাঁর বলিহারের এক জমিদার জায়গির লাভ করেন। জমিদারদের মধ্যে জমিদার রাজেন্দ্রনাথ ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে বলিহারে রাজরাজেশ্বরী দেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মন্দিরে রাজেশ্বরী দেবীর অপরূপা পিতলের মূর্তি স্থাপন করেন। বলিহারের নয় চাকার রথ এ অঞ্চলে প্রসিদ্ধ ছিল। প্রাসাদের কিছুটা দূরেই ছিল বিশাল বাগানবাড়ি। সেখানে নিয়মিত জলসা বসতো। বলিহারের রাজাদের মধ্যে অনেকেই উচ্চশিক্ষিত ছিলেন। রাজা কৃষ্ণেন্দ্রনাথ রায় বাহাদুর ছিলেন লেখক। তার লেখা গ্রন্থগুলোর মধ্যে কৃষ্ণেন্দ্র গ্রন্থাবলি প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড অন্যতম।

কথিত আছে, বলিহারের জমিদারিতে ৩৩০টি দিঘি ও পুকুর ছিল। এখনো অনেক দিঘি ও পুকুর রয়েছে। নামগুলো শ্রুতিমধুর যেমন মালাহার, সীতাহার, বলিহার, অন্তাহার নানান নামেই দিঘি ও পুকুরগুলো পরিচিত ছিল। শৌখিন রাজাদের ছিল মিনি চিড়িয়াখানা। সেখানে ছিল বাঘ, ভল্লূক, বানর, হরিণসহ নানান প্রজাতির পশু ও পাখি। জনশ্রুতি আছে, মোগল সম্রাট আকবরের সেনাপতি রাজা মানসিংহ বার ভুঁইয়াকে দমন করতে এ দেশে আসেন। তিনি তার সৈন্যসামন্ত নিয়ে একপর্যায়ে বলিহার পৌঁছেন। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করায় সৈন্যরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। বিশ্রামের জন্য ও মানসিংহের প্রেরিত গুপ্তচরের মাধ্যমে বার ভুঁইয়াদের খবর জানার জন্য যাত্রাবিরতি করেন সেনাপতি মানসিংহ। ওই সময় চলছিল বরেন্দ্র অঞ্চলে শুষ্ক মৌসুম। বেশি দিন বসে থাকলে সৈন্যরা অলস হয়ে যেতে পারে ভেবে মানসিংহ সৈন্যবাহিনী দিয়ে ওই ৩৩০টি দিঘি ও পুকুর খনন করান।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে নওগাঁয় বেশ কিছু বাস চলাচল করে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এস আর ট্র্যাভেলসের এসি ও নন এসি বাস যা নিয়মিত নওগাঁয় যাতায়াত করে। নওগাঁয় পৌঁছে আপনি অটো রিক্সা করে বলিহার রাজবাড়ি যেতে পারেন।

কোথায় থাকবেন

থাকার জন্যে আপনাকে নওগাঁ শহরে চলে যেতে হবে। নওগাঁতে ফিরলে আপনি অনেক ভালো ভালো আবাসিক হোটেল পাবেন। নওগাঁয় থাকার জন্যে কয়েকটি হোটেল হলো – সান্তাহার রোডে হোটেল ফারিয়াল (০৭৪১-৬২৭৬৫), সান্তাহার রোডে হোটেল অবকাশ (০৭৪১-৬২৩৫৬), হোটেল রাজ (০৭৪১-৬২৪৯২), শহীদ কাজী নূরুন্নবী মার্কেটে হোটেল যমুনা (০৭৪১-৬২৬৭৪), হোটেল প্লাবণ, মুক্তির মোড়ে হোটেল আগমনী (০৭৪১-৬৩৩৫১), পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে হোটেল সরণি (০৭৪১-৬১৬৮৫) ও মোটেল চিসতী।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ baliharNaogaonpalacerajbari