তাবাকোশি

তাবাকোশি (Tabakoshi) মিরিক এর কাছে রংভাং নদীর ধারে ছোট্টো একটি পাহাড়ি গ্রাম যার উচ্চতা প্রায় ৩০০০ ফুট l কমলালেবু গাছ আর চা বাগানে ঘেরা একটা মিষ্টি পাহাড়ি জনপদl নামটা শুনতে কিছুটা জাপানি মনে হলেও আদতে এটি ভারতের উত্তরবঙ্গের

দার্জিলিং জেলায় অবস্থিত একটি ছোট্ট গ্রাম। তাবাকোশী, যা এক কথায় প্রকৃতিপ্রেমীর কাছে স্বর্গরাজ্য। মিরিক থেকে খুব কাছে এই জনপদ হই হট্টগোল কাটিয়ে শুধু সিনিক বিউটির জন্য সেরা ডেস্টিনেশন।

মিরিকের নীচে চায়ের বাগানে ঘেরা ছোট্ট সাজানো গ্রাম এই তাবাকোশি। সামনে দিয়ে বয়ে গেছে ছোট পাহাড়ি নদী। রাম্মামখোলা নদীর ঢালে অপরূপ প্রাকৃতিক শোভা একে অপরূপা করে তুলেছে। মিরিক থেকে মাত্র আট কিমি, গোপালধারা টি এসেস্টের কাছেই এর অবস্থান। রংভাঙ মোড় থেকে ছয় কিমি নিচে রংভাঙ নদীর পাশেই ছবির মতো সুন্দর তাবাকোশি। মিরিক থেকে দার্জিলিং রোড ধরে আরও খানিকটা এগিয়ে থুরবো চা বাগানের বুক চিরে গাড়ি নিয়ে চলে যেতে হবে রাঙ্গভং নদীর ধারে।

নামকরণ

তাবাকোশি গ্রামের নামকরণের পিছনে একটা ইতিহাস রয়েছে। অনেক অনেক আগে এই জায়গাটির নাম ছিল গোপালখাড়া, অনেকে আবার গোপালধারাও বলে থাকেন। ঠিক একই নামের একটি চা বাগান রয়েছে এই অঞ্চলে। চা বাগানের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ক্ষীণস্রোতা পাহাড়ি নদী রংভাং খোলা যার নেপালি নাম তাম্বাকোশি। বর্ষাকালে আগে যখন প্রচুর বৃষ্টি হত, শোনা যায় সেই সময় নাকি এই নদীর জল-কাদা সব একত্রে গুলে গিয়ে তামাটে রঙ ধারণ করে। সেই থেকেই সম্ভবত এই নদীর নাম হয়েছে তাম্বা। নেপালি ভাষায় ‘কোশি’ বলতে নদীকে বোঝায়। এই লোকশ্রুতি থেকেই সম্ভবত এই জায়গার নাম হয়েছে তাবাকোশি।

তাবাকোশিতে কি দেখবেন

তাবাকশির আনাচে-কানাচে রয়েছে কমলালেবুর বাগান, রয়েছে ভুট্টার ক্ষেত, এলাচের বাগান, আদার বাগান। এখান থেকে দূরে মিরিক টা দেখা যায় পাহাড়ের উপর। এখানে একটা ছোট্ট ঝর্ণা আছে, তার পাশে এলাচ বাগানে তাবুতে রাত কাটানোর ব্যবস্থা আছে। চা বাগানের মধ্যে দিয়ে হেঁটে ঘুরতে ঘুরতে দেখা যায় নানান পাখির আনাগোনা, চারদিকে সবুজের সমারোহ। উপরে চা বাগান থেকে নিচে রঙভঙ নদী ও মন্দির দেখতে দারুন লাগে। পথ চলতে চলতে No Hunting বোর্ড চোখে পড়লে বুঝে নিবেন এখানে মাঝেমধ্যে হরিণ চলে আসে জঙ্গল থেকে।

চাইলে খুব সকালে এখান থেকে গাড়ি নিয়ে টারজাম (Turzum) জায়গাটা ঘুরে আসা যায় যা তাবাকোশী থেকে ৩০ মিনিটের পথ। সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, পুরোটা চা বাগানের মধ্যে দিয়ে।

তাবাকশি থেকে জোড়পোখরি, লেপচাজগৎ, পশুপতির মার্কেট (ভারত-নেপাল সীমান্ত), গোপালধারা চা বাগান, মিরিক লেক, মিরিক মনেস্ট্রি ও পার্শ্ববর্তী এলাকা দেখতে পারবেন।

ভ্রমণের সেরা সময়

বছরের যে কোনও সময় তাবাকোশি যাওয়া যায়। তবে মার্চ মাস থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি সময় অথবা অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি উৎকৃষ্ট সময়।

তাবাকোশি যাওয়ার উপায়

সকালে এনজেপি (NJP) স্টেশন পৌঁছে একটা অটো নিয়ে শিলিগুড়ি জংশন চলে যেতে পারেন। তারপর সেখান থেকে মিরিক যাওয়ার একটা শেয়ার গাড়িতে চেপে বসুন, জনপ্রতি ভাড়া ১৫০ থেকে ১৭০ রুপির মত। শিলিগুড়ি থেকে শেয়ার গাড়িতে মিরিক পৌঁছে একটা গাড়ি নিয়ে তাবাকোশি রওনা দিয়ে দিন, জনপ্রতি ভাড়া ৫০-৭০ রুপী আর পুরো গাড়ি নিয়ে গেলে ভাড়া পড়বে ৭০০ থেকে ৮০০ রুপির মতো।

কোথায় থাকবেন

তাবাকোশিতে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি হোমস্টে রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য টি-ভিলেজ হোমস্টে, সুনাখারী (Sunakhari Homestay) হোমস্টে। একেবারে চায়ের বাগানের পরে ছোট্ট গ্রামের শুরুতেই সুন্দর সাজানো গোছানো হোমস্টে। হোমস্টেতে তিন রকমের ঘর রয়েছে নরমাল, ডিলাক্স আর স্টোন কটেজ।

  • টি ভিলেজ হোমস্টে। যোগাযোগ- বিজয় সুব্বা ৯৪৩৪১৩১৭৩৭
  • খুশি ফার্ম হাউস। যোগাযোগ- ৯১৬৩৪২৮৩৮৫
  • সুনাখারী হোমস্টে। যোগাযোগ – ০৯৩৩৯৫১৬৭৯৮
  • ঝর্না হোমস্টে। যোগাযোগ – ৯১৭৫৪৭৯৮৪৭২৮

খরচ

ডাবল বেডের মাথা পিছু ভাড়া দিনে ভাড়া ১২০০ টাকা আর ট্রিপল বেডের মাথা পিছু ভাড়া ১৩০০ টাকা। আপনি নিভৃতে একটু একা থাকতে চান? সে ব্যবস্থাও আছে। তবে প্রতিদিনের জন্য ভাড়া ১৫০০ টাকা। চার বেলা খাবার খরচের টাকা আলাদা করে দিতে হয় না, ভাড়ার টাকার মধ্যেই ধরে নেওয়া হয়।

এছাড়া হোম স্টে’তে না থেকে, তাঁবুতে থাকার ইচ্ছা হলে সে ব্যাবস্থাও আছে। চারজনের জন্য তাঁবুর ভাড়া তিন হাজার রুপী। তবে তাঁবুতে থাকলে খাবার আলাদা খরচ আছে। এছাড়া বেশি স্বাছন্দ পেতে বেশি ভাড়ার হোম স্টে’ও পাবেন।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ Darjeelingmirikoffbeattabakosi