মুন্নার

মুন্নার (Munnar) শহরটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬০০ মিটার উচ্চতায় কেরালায় অবস্থিত একটি শৈলশহর। মুন্নার শহরটি ছিল তদানীন্তন দক্ষিণ ভারতের ব্রিটিশ শাসকদের গ্রীষ্মকালীন ঘাঁটি যা মুথিরাপুঝা, নাল্লাথান্নি এবং কুন্দলা এই তিন নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত। বিস্তৃর্ণ অঞ্চল জুড়ে চা বাগান, ঔপনিবেশিকালের সব বাংলো, ছোট ছোট নদী, জলপ্রপাত এবং শীতল আবহাওয়া যা আপনাকে মোহিত করবে। এছাড়াও ট্রেকিং ও মাউন্টেন বাইকিংয়ের জন্য মুন্নার একটি উপযুক্ত স্থান।

কেরালাকে বলা হয় গডস ওউন কান্ট্রি। কেরালাকে একটি পছন্দের গন্তব্যস্থল হিসেবে বেছে নেওয়ার পিছনে মুন্নার এর বিশেষ অবদান রয়েছে। এখানকার মুন্নার এর চা বাগানে ঘেরা পরিবেশে কয়েকদিন কাটালেই মন ভালো হয়ে যাবে সন্দেহ নেই।

এরাভিকুলাম জাতীয় উদ্যান (Eravikulam National Park)

মুন্নার ও তার আশেপাশে অবস্থিত আকর্ষণীয় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এরাভিকুলাম জাতীয় উদ্যান। মুন্নার থেকে আনুমানিক ১৫ কিমি দূরত্বে অবস্থিত এই উদ্যানটি মূলত অবলুপ্তপ্রায় পাণীদের জন্য বিখ্যাত, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নীলগিরির বুনো ছাগ। আনুমানিক ৯৭ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত এই উদ্যান নানান ধরনের দুর্লভ প্রজাপতি, জীবজন্তু ও পাখিদের বসবাসস্থল। ট্রেকিংয়ের জন্য উপযুক্ত এই উদ্যানটি থেকে দূরে স্থিত চা-বাগানগুলি ও কুয়াশার আলিঙ্গনবদ্ধ সুদূর প্রসারিত পাহাড়ের ঢালগুলির অপরূপ শোভা দেখতে পাওয়া যায়। এই উদ্যানটি একটি চূড়ান্ত আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে ওঠে যখন পাহাড়ের ঢালগুলি নীলাকুরিঞ্জি ফুলের নীল গালিচায় আচ্ছাদিত হয়ে যায়। এটি পশ্চিমঘাট পর্বতমালার এই অঞ্চলটির একটি স্থানীয় ফুল যা প্রতি বারো বছর অন্তর একবার করে ফোটে। শেষবার এই ফুল ফুটেছিল ২০১৬ সালে।

আনামুদি চূড়া (Anamudi)

ইরাভিকুলম জাতীয় উদ্যান এর মধ্যে অবস্থিত শৃঙ্গের নাম আনামুদি শৃঙ্গ। এটি দক্ষিণ ভারতের পর্বতগুলির মধ্যে উচ্চমত পর্বতশৃঙ্গ যার উচ্চতা ২৭০০ মিটারের কিছু বেশি। এই শৃঙ্গে আরোহণের জন্য ইরাভিকুলমের বনবিভাগ ও বন্যপ্রাণ কর্তৃপক্ষের থেকে আগাম অনুমতি নিতে হয়।

মাটুপেট্টি বাঁধ (Mattupetty Dam)

মুন্নার শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরত্বে স্থিত আরেকটি দর্শনীয় স্থান হল মাটুপেট্টি বাঁধ। সমুদ্র সমতল থেকে আনুমানিক ১৭০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত মাত্তুপেত্তি বাঁধ ৩ টি দক্ষিণভারতীয় নদীর সঙ্গম স্থলে গড়ে ওঠা এই এলাকা মন কাড়তে বাধ্য যে কোনও পর্যটকেরই। মাটুপেট্টি এর খ্যাতি এখানকার ইন্দো-সুইস লাইভস্টক প্রোজেক্ট দ্বারা পরিচালিত দুগ্ধ উৎপাদন কেন্দ্রের জন্যও, যেখানে আপনি নানান প্রজাতির উচ্চ পরিমাণে দুধ প্রদানকারী গরু দেখতে পেতে পারেন। মেত্তুপেত্তি এর ঘন সবুজ চায়ের বাগান, বিগন্ত বিস্তৃত তৃণভূমি এবং শোলা বনভূমির জন্য ট্রেকিং করার জন্য নানান ধরনের পাখির বসবাসের জন্য আদর্শ একটি স্থান।

পল্লিভাসল (Pallivasal)

মুন্নারের চিথিরামপুর থেকে ৩ কিমি দূরত্বে অবস্থিত পল্লিভাসল কেরালার একটি জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। এটি অসম্ভব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটি স্থান এবং পিকনিক করার জন্য এটি খুব পছন্দের একটি জায়গা।

চিন্নাকনল (Chinnakanal)

মুন্নারের খুব কাছে অবস্থিত চিন্নাকনল, যার সুউচ্চ জলপ্রপাতগুলি, যা পাওয়ার হাউস ওয়াটারফলস নামে জনপ্রিয়, সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ২০০০ মিটার নিচে এসে পড়ে। এই অঞ্চলটি থেকে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার শৃঙ্গগুলি দেখা যায়।

আনাইরঙ্গল

চিন্নাকনল থেকে সাত কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে পৌঁছাতে হয় আনাইরঙ্গলে। মুন্নার থেকে ২২ কিমি দূরে স্থিত আনাইরঙ্গল ঘন সবুজ চা-বাগানো মোড়া। এখানকার সুদৃশ জালাধারে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা নিতান্ত সুখকর। আনাইরঙ্গল জলাধারের চারিপাশ চা-বাগান ও চিরহরিৎ বনভূমি দ্বারা পরিবেষ্টিত।

টপ স্টেশন

মুন্নার থেকে ৩ কিলোমিটার মতো দূরত্ব অবস্থিত টপ স্টেশন সমুদ্র সমতল থেকে কম-বেশি ১৭০০ মিটার উচ্চতায় স্থিত একটি শৈলশহর। মুন্নার-কোদাইকানাল সড়কের উপর এইটিই উচ্চতম স্থান। পর্যটকেরা এই স্থানটিকে বেছে নেন এখান থেকে পার্শ্ববর্তী রাজ্য তামিলনাড়ুর বিভিন্ন অঞ্চলগুলির নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করার জন্য। মুন্নারের এই অঞ্চলটির বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে নীলাকুরিঞ্জি ফুল ফুটতে দেখা যায়।

দেবীকুলাম

বর্ষার মৌসুমে প্রেম করার শ্রেষ্ঠ গন্তব্য হতেই পারে মুন্নার। তার কারণ মুন্নারের রোম্যান্টিক দেবীকুলামে বেড়াতে গেলে জায়গাটি পছন্দ হতে বাধ্য আপনার। দোবীকুলম একটি ছোট্ট চা বাগান। যেখানে আকাশের নীল মিশেছে পাহাড়ের সবুজে। এই জায়গায় মনোরম দৃশ্য আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বাধ্য।

কলুককুমালাই টি এস্টেট (Kolukkumalai Tea Estate)

অসাধারন একটি চা বাগান।

চা সংগ্রহশালা

মুন্নারের চা-বাগানগুলির উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের এক নিজস্ব উত্তরাধিকার রয়েছে। এই উত্তরাধিকারের কথা বিবেচনা করে এবং কেরালার উচ্চ ভূমির চা-শিল্পের উৎপত্তি ও বৃদ্ধির সূক্ষ্ম ও আকর্ষনীয় দিকগুলিকে সংরক্ষিত করে রাখার জন্য কয়েক বছর আগে টাটা চা কোম্পানির তরফে মুন্নারে একটি সংগ্রহশালা চালু করা হয়। এই চা সংগ্রহশালায় প্রচুর কিউরিও, ছবি ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করে রাখা আছে, যেগুলির প্রতিটিই আমাদেরকে মুন্নারে চা-শিল্প শুরু হওয়া ও বিস্তার লাভ করা সম্পর্কে কিছু না কিছু বলে। মুন্নারের টাটা চা কোম্পানির নাল্লাথান্নি টী এস্টেট অবস্থিত এই সংগ্রহশালাটি পর্যটকদের অবশ্য দ্রষ্টব্য।

কিভাবে যাবেন

মুন্নার এর নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন- থেনি (তামিলনাডু), প্রায় ৬০ কিমি দূরে, চেঙ্গানাচেরী প্রায় ৯৩ কিমি দূরে। রেলস্টেশন থেকে জীপে চেপে যেতে পারেন। এছাড়া নিকটতম বিমানবন্দর- মাদুরাই (তামিলনাডু), প্রায় ১৪০ কিমি দূরে, কোচিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় ১৯০ কিমি দূরে।

কোথায় থাকবেন

মুন্নারে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি হোটেল রয়েছে, যেমন এমএসএ রোডের গ্র্যান্ড প্লাজা মুন্নার, যোগাযোগ – ০৯৭৪৬৪৭০১১৮। এছাড়াও রয়েছে টি অ্যান্ড ইু লেজার হোটেল, যোগাযোগ – ০৪৮৬৫২৩৩০৮১। রয়েছে টি কাউন্টার মুন্নার হোটেল –  ০৪৮৬৫২৩০৪৬০। এছাড়াও মুন্নারের ‘টল ট্রিজ’ নামের রিসর্টটি চোখ ধাঁধাঁনোর মতো, যোগাযোগ নম্বর – ০৪৮৬৫২৩২৭১৬।

খাওয়া দাওয়া

ইডলি, দোসা, কেরালা মিল, কেরালা পরোটা, কারিমিন ফিশ ফ্রাই ইত্যাদি ট্রাই করে দেখতে পারেন। অথেনটিক কুইসিন ট্রাই করতে চাইলে রোড সাইড ধাবাতে খান। রাজকীয় পরিবেশে কেরালা খাবারের ঘরানার সঙ্গে পরিচিত হতে গেলে শেষ দিন আপনার ভ্রমণ সূচিতে রাখুন Villa Maya Trivandrum ( যদি trivandrum হয়ে ফেরেন)।

কেনাকাটা

মুন্নারে শাড়ি ফ্যাক্টরি, লোকাল চকোলেট প্রস্তুতকারকদের দোকান, মশলার দোকান পাবেন অনেকগুলো। এছাড়া প্রতিটা টুরিস্ট ডেস্টিনেশন এই পাবেন অনেক ছোটখাটো দোকান।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ indiaKeralamunnar