কুলু শহরটি হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত এবং মানালি থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ধসপ্রবণ অনেকটা রাস্তা আর ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি টানেল পেরিয়ে কুলু শহর – ভ্যালি অফ গডস (Valley of the Gods)। মুনিঋষিদের আখড়া ছিল আজকের কুলু বা সেকালের কুলুত উপত্যকায়। কুলুকে ঘিরেই কতরকম ছন্দে তরঙ্গ তুলে বয়ে চলেছে বিয়াস, শতদ্রু, মেহু, পার্বতী, সরোবরী, চন্দ্র, ভাগা- এমনই সব পাহাড়ি নদী। ঋতু বদলায়। সাথে সাথে বদলে যায় ফুল-ফলের বাগ-বাহার। লাল-সোনালি আপেল থেকে নাশপাতি, চেরি, খোবানি, গরমে কুলুর অঙ্গে রডোডেনড্রনের রঙিন সাজ, ধান, যব, ভুট্টা ফসলের সোনালি বর্ণাভা- ঘাটতি নেই কিছুরই। প্রাচীনকাল থেকে মধ্য এশিয়ার গেটওয়ে কুলু হয়েই বাণিজ্যিক যোগসূত্র গড়ে উঠেছে। অক্টোবরে বিখ্যাত উৎসব দশেরা। হরজাই সাজে সেজে ওঠে কুলু। বিচিত্র সব বাজনার তালে জমে ওঠে উৎসব। দেবী হিড়িম্বা থেকে মালানা গ্রামের দেবতা জমলুও আসেন এই উৎসবে। রঘুনাথজি এঁদের মধ্যে কুলীনশ্রেষ্ঠ। কুলু থেকে আখারাবাজার হয়ে জগন্নাথ মন্দির বেড়িয়ে নেওয়া যায়। কুলু-মানালি পথে রয়েছেন বৈষ্ণোদেবী, মূল বাসস্ট্যান্ড থেকে দুর্গম পাহাড় ডিঙিয়ে পৌঁছে যাওয়া যায় ২,৪৬০ মিটার উচ্চতায়। ওখানে বিজলি বা বিজলেশ্বর মহাদেবের অধিষ্ঠান। অবশ্য জিপও চলাচল করে এপথে। কুলুতে মোটামুটি একরাতই যথেষ্ট। তবে প্রত্যেকটি জায়গাকে অনুভব করতে গেলে অন্তত দুরাত লাগবে। এর মধ্যে একদিন রাখতে হবে মণিকরণের (Manikaran) জন্য। কুলু থেকে ঘন্টায় ঘন্টায় বাস ছাড়ে। প্রায় আড়াই ঘন্টায় ভুন্টারজারি-কাসোল হয়ে ৪৪ কিলোমিটার দূরের মণিকরণে পৌঁছোনো যায়। পশ্চিমে বিষ্ণুকুন্ড, উত্তরে হরেন্দ্র পর্বত, পুবে ব্রহ্মনালা, দক্ষিণে পার্বতীগঙ্গা-এই বিস্তীর্ণ ভূভাগ জুড়ে মণিকরণতীর্থ। শিব-পার্বতীর পৌরাণিক আখ্যান, ধর্মনির্বিশেষে সকল মানুষের অবাধ পুণ্যার্জন, নানকের গুরুদোয়ারা-মণিকরণের পুরো ছবিটাই ভক্তিপ্রেমে উজাড় হওয়া এক তীর্থভূমির মতো। বিশ্বের উষ্ণতম প্রস্রবণটিও এখানেই। এখানকার মন্দিরে মন্দিরে বৈষ্ণোদেবী, হনুমান, ময়নাদেবী, শ্রীকৃষ্ণ, রাম প্রমুখ দেবতার অধিষ্ঠান। মণিকরণ ঘুরে ফিরে আসতে হবে কুলুতে। কুলু থেকে মনিকরণ যাবার দিনের শেষ বাসটি কুলু ফেরে সন্ধে ৬টায়।
কুলু (Kullu) এর আবহাওয়া স্থিতিশীল নয়। তবে, সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যবর্তী সময় এই স্থান পরিদর্শনের শ্রেষ্ঠ সময় বলে বিবেচিত হয়। যদি স্নোফল পেতে চান তাহলে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরে যাওয়াটাই উত্তম।
গাড়ি করে যাওয়া যায়। তবে সিমলা থেকে বাসে গেলেও খুব একটা অসুবিধে হবে না। দিনে ৪ বার সিমলা ছেড়ে বাস আসছে ১০ ঘন্টায়। এ পথের দূরত্ব ২২০ কিলোমিটার। এছাড়া পাঠানকোট থেকেও বাস মেলে কুলু যাবার।
অথবা আপনি চাইলে সরাসরি বিমানে যেতে পারেন, তবে বাংলাদেশ থেকে নয়। ভারতের ইন্টারনাল রুটে ভূন্টার বিমানবন্দর যাবেন যা কুলু মানালি বিমানবন্দর নামেও সুরিচিত, যা কুলু থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে এবং মানালি থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বিমানবন্দর থেকে গাড়ির মাধ্যমে কুলুতে পৌঁছাতে প্রায় ২০ মিনিট এবং মানালিতে পৌঁছাতে প্রায় ১ ঘন্টা সময় লাগে।
কুলুতে হিমাচল পর্যটনের দুটি হোটেল রয়েছে। হোটেল সিলভারমুন ও হোটেল শর্বরী। এছাড়া বেসরকারি হোটেলও প্রচুর। কুলুর এস টি ডি কোডঃ- ০১৯০২।
Leave a Comment