কোদাইকানাল

সবুজ গাছপালা, বিভিন্ন রঙের ফুলে ভরা দক্ষিণ ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালার ছোট্ট সুন্দর এক পাহাড়ি শহর এই কোদাইকানাল। উচ্চতা প্রায় ৭০০০ ফুট এবং তামিলনাড়ু রাজ্যের দিন্দিগাল জেলায় অবস্থিত। তামিল ভাষায় কোদাইকানাল এর অর্থ হল “ পাহাড়ের উপহার”,আর এখানে এলে বোঝা যায় সত্যিই যথার্থ এই নামকরন। ভারতের পূর্বে রয়েছে ‘কুইন অফ হিলস’ দার্জিলিং, আর দক্ষিণে ‘প্রিন্সেস অফ হিল স্টেশন’ কোদাইকানাল। সমতলের প্রচণ্ড গরম থেকে বাঁচতেই কোদাইকানাল শহরের গোড়াপত্তন করা হয় ১৮৪৫ সালে। পর্যটনই এখানকার প্রধান আয়ের পথ। সারা বছরই এখানে লেগে রয়েছে ক্যামেরা গলায় ট্যুরিস্টদের ভিড়। দক্ষিণ ভারত যখন গরমে ত্রাহি ত্রাহি করে সেখানে কোদাইকানাল যেন এক ওয়েসিস, প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি এক শীতল জায়গা। গরম জায়গার নিয়মটিকে অমান্য করে আশ্চর্য এই ঠাণ্ডা জায়গা স্বভাবতই এখানের সবাইকে আকর্ষণ করে।

এখানে সারা বছরই পর্যটকরা আসতে পারেন। তবে সবচেয়ে ভালো সময় হল এপ্রিল থেকে জুন। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর বর্ষা চলে তাই এসময়ে ভিড় সবচেয়ে কম থাকে।তবে যারা বর্ষার পাহাড়ি সৌন্দর্য্য দেখতে বেশি ভালবাসেন তাদের জন্যে এটা আদর্শ সময়।কোদাইকানালের মধ্যমনি হল ‘কোদাই লেক’, একে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে শহর। পরিবার নিয়ে বেড়াতে বা ট্রেকিং করতে অনেকেই আসেন। আর হনিমুন এর জন্যেও কোদাই আদর্শ জায়গা। হনিমুনে এসে শান্ত সুন্দর এই প্রকৃতির কোলে একান্তে হারিয়ে যেতে কে না চায়।

কোদাইকানাল (Kodaikanal) থেকে সবচেয়ে কাছের রেলওয়ে স্টেশন ‘কোদাইরোড’। এখান থেকে বাই রোড প্রায় ৮০ কিলোমিটার কোদাইকানাল, পৌছতে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় লাগে। পুরো রাস্তা মনোরম দৃশ্যে পূর্ণ,  পথ থেকে পালানি হিলস‌্ এর সোভা তারপর অরণ্যছায়ায় ঘেরা পাহাড়ি সর্পিল পথ ঘাটস্  রোড বেয়ে উপরে ওঠা অতি নিরস প্রকিতির ব্যাক্তির মনেও রোমাঞ্চের সৃষ্টি করতে বাধ্য। কোদাই পৌঁছে বেড়াবার মত অনেক টুরিস্ট স্পটস‌্ আছে। সেগুলোর কথায় একটু পরে আসছি। আর যারা ট্রেকিং ও অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় তারা এখানকার লোকাল গাইড নিয়ে বেরিয়ে পরতে পারেন নির্দিষ্ট টুরিস্ট স্পটের বাইরে।

প্রধান দর্শনীয় স্থানসমূহ

কোদাই লেক – এটি কোদাইকানাল এর মুখ্য টুরিস্ট স্পট। সুন্দর এই লেকে বোটিং এর ব্যবস্থা আছে। লেকের গা বরাবর ৫ কিমি. পথ করা আছে যেখানে পায়ে হেটে বেরানো যায়। কিমবা সাইকেল, ঘোড়া এসবও আপনি ভাড়া করতে পারেন।

ব্রায়ান্ট পার্ক – লেকের থেকে খানিকটা এগোলেই খুবই সুন্দর এই বোটানিক্যাল গার্ডেন। বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালায় সুসজ্জিত এই বাগান। প্রতি গ্রীষ্মে এখানে ফ্লাওয়ার শো হয়।

কোকার্স ওয়াক – এটি ১ কিমি. পায়ে হাটার পথ পাহাড়ের গা বেয়ে তৈরি করা। এটি খুবই প্রসিদ্ধ। এখানে হাঁটতে হাঁটতে পুরো উপত্যকার সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। প্রবেশ মূল্য খুবই কম আর সারা বছর পর্যটকদের জন্য এটি খোলা থাকে।

পিলার রকস বাসস্ট্যান্ড থেকে ৮ কিমি. দুরে ৪০০ ফুট উঁচু উঁচু পাথরের স্তম্ভ। নির্দিষ্ট ভিউপয়েন্ট থেকে দেখতে হয়।

গুনা কেভস এটি আরেকটি টুরিস্ট স্পট। তবে আগের কিছু দুর্ঘটনার জন্য পর্যটকদের অবাধ বিচরণ নিসিদ্ধ। গুহার নির্দিষ্ট কিছু অংশই খালি তারা দেখতে পারেন। এই গুহার নামকরন তামিল চলচিত্ত্র ‘গুনা’র এখানে চিত্রায়ন করার থেকে হয়েছে।

বিয়ার শোলা ফল‌স‌ – শোনা যায় ভাল্লুকরা এখানে জল খেতে আসার জন্য এই জলপ্রপাতের এমন নামকরন । এটি একটি লম্বা জলপ্রপাত রিসার্ভ ফরেস্ট এর অন্তরগত। জায়গাটি ভীষণ শান্ত। সরু পায়ে হাঁটা পথ দিয়ে প্রপাত এর কাছে পৌছতে হয়। তবে বর্ষার পর এখানে বেশী জল থাকে। অন্য সময় ততটা নয়।

ডলফিন নোস – এটি চ্যাপ্টা পাথরের স্তম্ভ। দেখতে ডলফিনের নাকের মত বলে এরম নাম। এখান থেকে পাহাড় ও উপত্যকার দুর্দান্ত ভিউ পাওয়া যায়।

কুরিঞ্জি মন্দির – খুব সুন্দর এই মন্দিরটি নীলগিরির বিখ্যাত ফুল কুরিঞ্জির থেকে নামকরন। এটি কার্তিক ও গণেশ মন্দির।

আর এছারাও রয়েছে – লা সালেটে চার্চ, পাইন ফরেস্ট, গ্রিন ভ্যালি ভিউ, সিলভার ক্যাসকেড, গল‌ফ‌্ কোর্স, কোদাইকানাল সোলার অবসার্ভেটরি, শেমবাগানুর মিউজিয়াম ইত্যাদি।

কিভাবে যাবেন

কোদাইকানাল থেকে সবচেয়ে কাছের এয়ারপোর্ট হল মাদুরাই (১২০ কিমি.) এবং কোয়েম্বাতুর (১৮০ কিমি.)। আর ট্রেনে সবচেয়ে কাছের স্টেশন কোদাইরোড (৮০ কিমি.)। এছাড়া বাসেও যাওয়া যেতে পারে। কলকাতা থেকে কন্যাকুমারী এক্স – ১২৬৬৫ ট্রেনে করে কোদাইকানাল যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

প্রচুর হোটেল ও লজের সুব্যাবস্থা আছে। কম বেশী সব রকম দামেরই পাওয়া যায়। নেটে আগে থেকে বুক করতে পারেন বা ওখানে গিয়েও করতে পারেন। তবে হাই সিজনে আগে থেকে বুকিং করা থাকলেই সুবিধা। দি কার্লটন (৫ তারকা হোটেল), হোটেল জায়, কোদাই রিসোর্ট হোটেল, কোদাই সানশাইন হোটেল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ indiakodaikanaltamil nadu