ধর্মশালা (Dharamsala) শহরটি ভারতের হিমাচল প্রদেশের কাংড়া জেলায় অবস্থিত যা দলাই লামার আবাসস্থল হিসাবে সুপরিচিত। অনেকে ধরমশালাও বলে থাকে। ফলস্বরূপ, তিব্বতীয় সংস্কৃতি এই অঞ্চলে বেশ বিশিষ্টভাবে প্রকট এবং পর্যটকরা প্রকৃতপক্ষে তিব্বতে না গিয়েই তিব্বতী সংস্কৃতির অনুভূতি গ্রহণের জন্য এখানে ঘুরতে আসে। ধরমশালা শুরুতে ভাগসু নামে পরিচিত ছিল। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪৫৭ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত।
ধর্মশালাতে যে দৃশ্যটি সবচাইতে বেশি নজর কাড়ে সেটি হলো এখানকার পাহাড়ের গায়ে জমে থাকা বরফগুলো। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কয়েক হাজার ফুট সোজা উপরে উঠে যাওয়া পাহাড়গুলোর গায়ে আবৃত বরফগুলো কী যে নয়নাভিরাম, সেটি নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। ম্যাকলিয়ডগঞ্জ, বাসুনাগ, নাদি ও ধলাধার নামক পাহাড়ে এমন বরফ দিন-রাত স্থানীয় নাগরিকসহ পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
ধর্মশালার জনবসতি বেশ পরিকল্পিত। নির্দিষ্ট দূরত্বের প্রতিটি বাড়ি, স্কুল, কলেজ, অফিস, বাসস্টপ এমনকি চলার পথও অভিজাত রুচির পরিচয় বহন করে।
ম্যাকলিয়ডগঞ্জ হলো ধর্মশালার সবচাইতে উঁচু পাহাড়। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬,৩৮১ ফুট উঁচু এই পাহাড়টিতে অবস্থান করেই তখন দালাইলামা ও তার শিষ্যরা বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের কাজ চালিয়ে গেছেন। সেখানকার সুরম্য বৌদ্ধাশ্রমটি সব সময়ই পর্যটকদের বিশেষভাবে আর্কষণ করে।
কাংড়া শিল্পের মিউজিয়ামঃ নামের বাস্তবিকতা অনুসারে, মিউজিয়ামটি বেশ কিছু কাংড়া-শৈলী শিল্পকর্মকে ধারন করে রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র অঙ্কনচিত্র, মন্দিরের খোদাইকার্য, বুননকার্য, হাতিয়ার, পালকি, সূচিকর্ম এবং আরোও অনেক জিনিষ।
সূগলাগখাঙ্গ ভবনঃ এটি বৃহত্তম তিব্বতি মন্দির যেটি তিব্বতের বাইরে অবস্থিত। মন্দিরটিতে শাক্যমুনি বু্দ্ধের সুন্দর মূর্তি ও ধ্যান সভাগৃহ রয়েছে। আপনি তিব্বতিয় প্রার্থনা চক্রকে যত পারেন দ্রত ঘুরিয়ে আপনার ভাগ্য জানার ইচ্ছাও পূর্ণ করতে পারেন। ধূপকাঠির সুবাস, প্রার্থনার প্রশান্ত শব্দ ও সন্ন্যাসীদের বিভিন্ন ধ্যানমগ্ন চিত্র নিশ্চিতরূপে আপনার আত্মাকে কিছুটা শান্তি দিতে পারে। এছাড়াও আপনার আত্মার ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য, আপনি নীচ তলে অবস্থিত ক্যাফে থেকে উদর পুরণের জন্য কিছু সুস্বাদু নিরামিষ খাবার নিতে পারেন।
তিব্বত মিউজিয়ামঃ যারা তিব্বতি সংস্কৃতি সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং অন্বেষণ করতে চান, তাদের জন্য ধরমশালার ম্যাকলিওড গঞ্জের প্রধান মন্দির প্রাঙ্গনের অভ্যন্তরে অবস্থিত, তিব্বত মিউজিয়াম, তিব্বতের ঐতিহাসিক ঘটনাবলীকে বিবৃত করে। তারা তিব্বতি ইতিহাস সংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষার কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং ভ্রমণীয় মিউজিয়াম উপকরণ, ক্যাটালগ (সূচী-তালিকা) ও পত্রিকা প্রদান করে।
সঞ্চালিত শিল্পের তিব্বতি প্রতিষ্ঠানঃ এটি এমন একটি মঞ্চ যেখানে আপনি ঐতিহ্যপূর্ণ তিব্বতি নৃত্য ও সঙ্গীতের আভাসকে অনুধাবন করতে পারেন। এছাড়াও তিব্বতের থিয়েটারি ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করতে, সমসাময়িক নাটকও সম্পাদিত হয়।
আর্ট গ্যালারীঃ গ্যালারীটিতে এলিজাবেথ বুকমান ও এ.ডব্লু.হাল্যেট-এর দ্বারা বেশ কিছু জলরং, আক্র্যেলিক ও তৈল চিত্র প্রদর্শিত রয়েছে। আপনি যদি একজন শিল্প রসিক হন, তবে এটি আপনার জন্য অবশ্য দর্শনীয় স্থান হবে।
ধরমকোটঃ এটি ধরমশালা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং পর্বতের আশ্চর্য্যজনক দৃশ্যের দরুণ এটি একটি বড় পিকনিক স্থল রূপে উপলব্ধ রয়েছে।
ধর্মশালায় এ ছাড়াও দেখবার মতো যায়গাগুলি হলো – দলাই লামার আবাসস্থল, ডাল লেক, ভাগসুনাগ জলপ্রপাত, সেন্টস জনস চার্চ, কুনাল পাথারি গুহা মন্দির, কাবেরী সরোবর, কালী ও দূর্গাসা মন্দীর, ওয়ার মেমোরিয়ালটি (শহিদ স্মরণে) ইত্যাদি।
গ্রীষ্মকাল ধর্মশালা ঘুরতে যাওয়ার জন্যে সেরা সময়। শীতকালে এখানে প্রচুর ঠান্ডা পড়ে।
ধর্মশালাতে থাকার মতো অনেক হোটেল আছে। কিছু হোটেলের নাম ও ফোন নাম্বার দেওয়া হলো কাজে লাগতে পারে।
এস.বি.আই ব্যাঙ্কের এটিএম- কোতয়ালী বাজার, ধরমশালা-১৭৬২১৫ . স্টেট ব্যাঙ্ক অব পাটিয়ালা- লোয়ার ধরমশালা, রেড ক্রস বিল্ডং, ধরমশালা- ১৭৬২১৫
কলকাতা থেকে বিমানে সরাসরি ধর্মশালা যাওয়া যায়। পাঠানকোট থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরের ধর্মশালা যেতে পারেন বাসে করে, ২ ঘন্টার মত সময় লাগবে। ডালহৌসি থেকেও ধরমশালা যেতে পারেন বাসে করে যার দূরত্ব ১২৬ কিলোমিটার মতো। সেক্ষত্রে পাঠানকোট যাবার দরকার হবে না। এছাড়া দিল্লী অথবা চন্ডিগড় থেকে বাসে ধর্মশালা যেতে পারেন।
Leave a Comment