হাতে একদিন সময় নিয়ে ঢাকা থেকে খুব অল্প বাজেটের মাঝেই ঘুরে আসুন কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী হাওর (Nikli Haor) থেকে। হাওড়ের দ্বিগন্ত বিস্তৃত স্বচ্ছ জলরাশির বুকে নৌকায় ঘুরে বেড়ানো, পানির মাঝে জেগে থাকা দ্বীপের মত গ্রাম, রাতারগুলের মত ছোট জলাবন, হাওড়ের তাজা মাছ ভোজন। সব মিলিয়ে একদিনের ট্যুরের জন্য আদর্শ একটি জায়গা। জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট প্লেসগুলোতে মানুষের ভিড়ে যখন অতিষ্ট, সেক্ষেত্রে কিশোরগঞ্জ জেলার এই নিকলী হাওর আপনাকে দেবে নিজের মত করে নিরিবিলিতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য সুন্দর একটি দিন। ইচ্ছে হলে বড় নৌকা ভাড়া নিয়ে রাতে নৌকায় থাকার ব্যবস্থা আছে।
রাতের বেলা জায়গাটা অতোটা নিরাপদ নয়। তাই বড় গ্রুপ না হলে নৌকায় রাতে না থাকাই বেটার।
কমলাপুর থেকে সকাল ৭.১৫ তে এগারোসিন্ধুর ট্রেনে উঠলে ১১ টায় কিশোরগঞ্জ নামিয়ে দেবে। স্টেশান থেকে নিকলি হাওড় সিএনজিতে যেতে সময় লাগবে একঘন্টা। যেখানে সিএনজি নামিয়ে দেবে, পাশেই কিছু হোটেল পাবেন মোটামুটি মানের। হাওড়ের ফ্রেশ মাছ দিয়ে লাঞ্চ সেরে ঘাট থেকে দরদাম করে নৌকায় উঠে যাবেন। হাওড়ে ঘুরে সন্ধ্যার মাঝে ঘাটে ফিরে আসবেন। নিকলি থেকে কিশোরগঞ্জ ফিরে রাতের বাসে ঢাকায়।
নিকলী ভ্রমণের উপযুক্ত সময় হলো বর্ষাকাল এবং তারপরের সময়টা। বর্ষা ছাড়া নিকলী হাওরে পানি পাওয়া যাবে না। আর আমরা সবাই খুব ভালো ভাবেই এটা জানি যে হাওরের মূল সৌন্দর্য্য হলো পানি। তবে জুনের শেষ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেশ ভালো পানি পাওয়া যাবে বর্ষায়। তাই এই সময়টাকেই নিকলী ভ্রমণের সেরা সময় হিসেবে বিচার করা হয়।
যদিও বর্ষা ছাড়াও হাওরের আলাদা একটা সৌন্দর্য্য আছে। এই সময় হাওর শুকিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন ধরনের ফসলের আবাদ করা হয় এবং কিছু জায়গা সবুজ ঘাসে ঢেকে থাকে যেন মনে হয় সবুজের গালিচা। তাই সারা বছরই আপনি চাইলে নিকলী ভ্রমণে যেতে পারবেন কিন্তু সেরা সময় বর্ষার সময়টা।
ঢাকা থেকে বাস কিংবা ট্রেন দুইভাবেই নিকলী হাওর যাওয়া যাবে।
ঢাকা থেকে বাসে যাওয়ার উপায়
ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে নিকলীর সরাসরি বাস আছে। বাস ভাড়া ১৫০-২৫০ টাকা। আবার সায়েদাবাদ থেকে কিশোরগঞ্জের বাসে গিয়ে কালিয়াচাপরা সুগার মিল গিয়ে টেম্পুতে নিকলী হাওরের সামনেই নামা যাবে। ১৬০ কি.মি. দূরত্ব। সময় লাগবে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা (যাত্রাবাড়ীর ট্রাফিক জ্যাম বাদে)।
সায়েদাবাদ এর গোলাপ বাগ থেকে বাসে উঠে পুলেরঘাট নামতে হবে, এটাই সহজ রুট। পুলেরঘাট নেমে দুপুরের খাওয়া খেয়ে অটোতে একজন ৬০ টাকা করে চলে যাবেন সোজা বেড়িবাধ স্পটে। সময় লাগবে ৩০-৩৫ মিনিট। এখান থেকে বড় নৌকা গুলো ঘন্টা হিসেবে ভাড়া দেয়। ঘন্টায় ৭০০ টাকা করে। ছোট নৌকা গুলোতে ভাড়া পড়বে ৩০০-৪০০ টাকা ঘন্টা।
ঢাকা থেকে ট্রেনে যাওয়ার উপায়
কিশোরগঞ্জে যাওয়ার সবচেয়ে আরামদায়ক ভ্রমণ হচ্ছে ট্রেন। সারা দিনে তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকা-কিশোরগঞ্জ আসা-যাওয়া করে। ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জগামী ট্রেনে সরারচর কিংবা মানিকখালি ষ্টেশনে নেমে সিনজি দিয়ে যেতে সময় লাগবে ১ ঘন্টা। এছাড়া কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসে করে ঢাকা থেকে গচিহাটা নেমে ইজিবাইকে ৩০-৪০ মিনিটে নিকলি চলে যাওয়া যায়।
ময়মনসিংহ থেকে যাওয়ার ব্যবস্থা
প্রথমেই ময়মনসিংহ থেকে বাসে কিশোরগঞ্জ সদরে চলে যাবেন। এরপর কিশোরগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড থেকে অটোতে করে কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশনে যেতে হবে। কিশোরগঞ্জ রেল স্টেশনের সামনেই রয়েছে নিকলী সিএনজি স্ট্যান্ড। এখান থেকে লোকাল সিএনজিতে ১০০ টাকা ভাড়ায় আপনি নিকলী হাওর যেতে পারবেন।
ভৈরব থেকে যাওয়ার উপায়
চট্টগ্রাম, সিলেট বা ভৈরবের আশেপাশের জেলা থেকে বাস কিংবা ট্রেনে নিকলী যেতে হলে আপনাকে ভৈরব বাস স্ট্যান্ডে অথবা ভৈরব রেল ষ্টেশনে নামতে হবে। এরপরে ভৈরব বাস স্টান্ড থেকে সিএনজি রিজার্ভ নিয়ে নিকলী যেতে পারবেন, সময় লাগবে দেড় ঘন্টা। রিজার্ভ নিলে ভাড়া পড়বে ৬০০-৮০০ টাকা এবং শেয়ারে গেলে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা।
সাম্প্রতিক সময়ে নিকলীতে পুরান বাজার রোডে শিমুল শপিং কমপ্লেক্স নামে একটি সাততলা শপিং কমপ্লেক্স হয়েছে যার এর ৬ষ্ঠ ও ৭ম তলায় রয়েছে হোটেল হাওর প্যারাডাইস। ননএসি/এসি/বাথটাব সহ চমৎকারভাবে সাজানো গোছানো কক্ষগুলো। এছাড়া “দ্যা মার্সি” নামে একটি রিসোর্ট তৈরি হয়েছে যেখানে সুইমিংপুল সুবিধা বিদ্যমান।
এছাড়া নিকলী ঈদগাহ মোড়ের কাছে বীর মুক্তিযুদ্ধা কারার বুরহান উদ্দিন চেয়ারম্যান মার্কেটের কাছে রয়েছে চেয়ারম্যার গেস্ট হাউজ। এখানেও এসি, ননএসি, সিঙেল, ডাবল সকল ধরনের রুম রয়েছে। ভাড়া ৫০০-৩০০০ টাকা পর্যন্ত।
এছাড়াও যদি কেউ অন্য কোন অপশন খুঁজে থাকেন তাহলে কিশোরগঞ্জ সদরে চলে যেতে পারেন। গাঙচিল, শ্রাবণী আর আল-মুসলিমের মতো উন্নত হোটেলগুলোতে থাকতে পারবেন।
ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ ট্রেনে ১৭৫ টাকা / বাস ভাড়া ২০০ টাকা। কিশোরগঞ্জ থেকে নিকলি সিএনজি ভাড়া ১০০ টাকা প্রতিজন।
Leave a Comment