টাঙ্গাইল

নাগরপুর জমিদার বাড়ি

নাগরপুর জমিদার বাড়ি (Nagarpur) যা স্থানীয়দের কাছে নাগরপুর চৌধুরী বাড়ি নামে পরিচিত। টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলায় প্রায় ৫৪ একর জমির উপর জমিদার সুবিদ্ধা-খাঁ এর সূত্র ধরে যদুনাথ চৌধুরী নাগরপুরে জমিদারী শুরু করেন। যদুনাথ চৌধুরীর তিন ছেলে – উপেন্দ্র মোহন চৌধুরী, জগদীন্দ্র মোহন চৌধুরী, শশাঙ্ক মোহন চৌধুরী। বৃটিশ সরকার উপেন্দ্র মোহন চৌধুরীর বড় ছেলে সতীশ চন্দ্র রায় চৌধুরীকে সাধারণ জনগোষ্ঠীর জন্যে বিভিন্ন মুখীন সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ রায় বাহাদুর খেতাবে ভূষিত করে। ছোট ছেলে সুরেশ চন্দ্র রায় চৌধুরী অপেক্ষাকৃত পাশ্চাত্য সংস্কৃতিঘেষা। তিনি ছিলেন অনেকের চেয়ে সৌখিন প্রকৃতির মানুষ। তিনি ছিলেন খুব ক্রীড়ামোদী। উপ-মহাদেশের বিখ্যাত ফুটবল দল ইষ্ট বেঙ্গল ক্লাবের তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী।

১৯৪৭ এর দেশ বিভক্তির পর একসময় তদানিন্তন সরকার চৌধুরী বাড়ীর সকল সম্পদ অধিগ্রহণ করে। অট্টালিকাটির অভ্যন্তরের পুরো কাজটি সুদৃশ্য শ্বেত পাথরে গড়া। বর্তমানে চৌধুরী বাড়ীর এই মুল ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নাগরপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজ।

জমিদার বাড়ির স্থাপনা

বৈঠকখানা: পাশ্চত্য এবং মোঘল সংস্কৃতির মিশ্রনে এক অপূর্ব নান্দনিক সৌন্দর্যে নির্মিত জমিদার বাড়ির বৈঠকখানা বিল্ডিং এর উপরে ছিল নহবতখানা। প্রতিদিন ভোরে সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়া সানাই এর ভৈরবী ধ্বনীতে চৌধুরী বংশের তথা এলাকার প্রজাবৃন্দের ঘুম ভাঙ্গত। শোনা যায় রায় বাহাদুরের ছোট ভাই সুরেশ চৌধুরীকে নাগরপুরে রেখে সম্পূর্ণ রাজধানী কলকাতার আদলে নাগরপুরকে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। চৌধুরী বাড়ীর রঙ্গমহলের পাশে এক সুদৃশ্য চিড়িয়াখানা ছিল। সেখানে শোভা পেত – ময়ূর, কাকাতোয়া, হরিণ, ময়না আর শেষ দিকে সৌখিন সুরেশ চৌধুরীর ইচ্ছায় চিড়িয়াখানায় স্থান করে নিল বাঘ (কেতকী) এবং সিংহ(দ্যুতি)।

ঝুলন দালান: প্রাচীন ভারতে বিভিন্ন শিল্প কর্মে মন্ডিত চৌধুরী বংশের নিত্যদিনের পূজা অনুষ্ঠান হত এই ঝুলন দালানে। বিশেষ করে বছরে শ্রাবনের জ্যোৎস্না তিথিতে সেখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের নাটক, যাত্রা মঞ্চায়িত হত। এখানেই চৌধুরী বংশের শেষ প্রতিনিধি মিলন দেবী (মিলন কর্ত্রী) স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে চৌধুরীদের উপাসনা বিগ্রহ ‘‘বৃন্দাবন বিগ্রহ’’ – এর নিরাপত্তা দিতে গিয়ে দুষ্কৃতকারীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন।

ঘোড়ার দালান: জমিদারী পরিচালনা এবং বাবসায়িক প্রয়োজনে চৌধুরীবাড়ীতে সুঠাম সুদৃশ্য ঘোড়া পোষা হত। আর এই ঘোড়া এবং তার তদারকীতে নিয়োজিতদের থাকার জন্য নির্মাণ করা হয় শৈল্পিক কারুকাজ খচিত এই স্থাপনা। যা জমিদারদের ঘোড়ার দালান হিসাবে পরিচিত।

কিভাবে যাবেন

ঢাকার মহাখালী বাস স্টেশন থেকে বিনিময়, নিরালা, ধলেশ্বরী, ঝটিকা ইত্যাদি বাস যায় টাঙ্গাইল। ভাড়া ১২০ থেকে ১৬০ টাকা। এসব বাসে চড়ে টাঙ্গাইল নতুন বাসস্ট্যান্ডে নেমে অপেক্ষ্মান সিএনজি বেবীটেক্সী যোগে সরাসরি নাগরপুর চৌধুরী বাড়ী।

কোথায় থাকবেন

টাঙ্গাইলের দর্শনীয় স্থানগুলো ঢাকা থেকে একদিনে যেয়েই ( ডে ট্যুর) দেখে আবার ঢাকায় ফিরতে পারেন। তবে যদি কেউ সময় নিয়ে দেখতে চান তাহলে একরাত টাঙ্গাইল সদরে থাকতে পারেন। টাঙ্গাইলে থাকার জন্য বেশকিছু হোটেল ও গেস্ট হাউজ রয়েছে। এসবের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলো –

  • পলাশ হাউজ/ নাইট গন্ধা রেসিডেনসিয়াল হোটেল, মসজিদ রোড, টাঙ্গাইল। ফোনঃ ০৯২১-৫৩১৫৪
  • আল ফয়সাল হোটেল রেসিডেনসিয়াল, মসজিদ রোড, টাঙ্গাইল। ফোনঃ ০৯২১-৫৩৯১৮
  • হোটেল সাগর রেসিডেনসিয়াল, নিউ মার্কেট রোড, টাঙ্গাইল। ফোনঃ ০৯২১-৫৪৩০৮
  • আফরিন হোটেল, মসজিদ রোড, টাঙ্গাইল। মোবাইলঃ ০১৯১৬৭৮২৩৮৯
  • এস এস রেস্ট হাউজ, আকুরাতাকুর পাড়া, টাঙ্গাইল। ফোনঃ ০৯২১-৫৫১৮০
  • পল্লী বিদ্যুৎ রেস্ট হাউজ, টাঙ্গাইল। ফোনঃ ০৯২১-৫৩৩৯০
  • এলজিইডি রেস্ট হাউজ(সরকারি), টাঙ্গাইল। ফোনঃ ০৯২১-৫৪২৬১
  • সুগন্ধা হোটেল, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, টাঙ্গাইল। মোবাইলঃ ০১৬৭৪-৩৪৬৮১৫
  • নিরালা হোটেল, নিরালা মোড়, টাঙ্গাইল। ফোনঃ ০৯২১-৬১৩৬৩
  • পিয়াসি হোটেল, নিরালা মোড়, টাঙ্গাইল। মোবাইলঃ ০১৭১১-৩৫২৪৯৩
  • হোটেল কিছুক্ষন, নিরালা মোড়, টাঙ্গাইল। ফোনঃ ০৯২১-৫৫২১৯
  • হোটেল আদিত্য(আবাসিক), মধুপুর, টাঙ্গাইল। মোবাইলঃ ০১৭১৬-৭৯৬০৬৫
  • হোটেল ড্রিম টাচ (আবাসিক), মধুপুর, টাঙ্গাইল। মোবাইলঃ ০১৭১৭২১৮৭৯৯
  • শালবন রেসিডেনসিয়াল হোটেল, মধুপুর, টাঙ্গাইল। মোবাইলঃ ০১৭১৩৪৬২১০৩
  • ইসলামিয়া গেস্ট হাউজ, মধুপুর, টাঙ্গাইল। মোবাইলঃ ০১৯১৭৫৬৬২৩৪
  • ভাই ভাই গেস্ট হাউজ, মধুপুর, টাঙ্গাইল। মোবাইলঃ ০১১৯০৯৭৫৫৩৯
  • যমুনা রিসোর্ট লিমিটেড, কালীহাতি, টাঙ্গাইল। ফোনঃ ০৯২৩৯-৭৬০৩২-৪
  • এলেঙ্গা রিসোর্ট লিমিটেড রেসিডেনসিয়াল হোটেলস, এলেঙ্গা, কালীহাতি, টাঙ্গাইল। ফোনঃ ০২-৯৮৮৪৩২২
Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ jomidarpalacetangailzamindar