রাঙ্গামাটি

কমলক ঝর্ণা

সাজেক এর রুইলুই পাড়া থেকে দুই থেকে আড়াই ঘন্টার ট্রেকিং করে দেখে আসতে পারেন সুন্দর কমলক ঝর্ণাটি। কমলক ঝর্ণাটি অনেকের কাছে পিদাম তৈসা ঝর্ণা অথবা সিকাম তৈসা (Sikam toisa or Sikam toisha) ঝর্ণা নামে পরিচিত। মাঝে মাঝে মনে হবে আপনি ঠিক পথেই চলছেন তো? তারপর বিশাল এক ঝিরিপথ। আবার মনে হতে পারে আদৌ কি এই পথে কোনো ঝর্ণা আছে? এরপরে জাদিপাই এর মতো একটা ট্রেইল বেয়ে নিচে নামতে হবে। সামনে পড়বে হামহাম এর মত ঝিরিপথ। ঝিরিপথটিও অসম্ভব সুন্দর, এডভেঞ্চারটি ভালো লাগবে আশা করি। রাস্তাটি বর্ষার সময় খুব পিচ্ছিল থাকে তাই খেয়াল রাখবেন চলার সময়। ঝিরিপথ আর বুনো রাস্তা দিয়ে ৮০-৮৫ ডিগ্রি খাড়া পাহাড় বেয়ে নামতে আর উঠতে হবে অনেকখানি। এইভাবে আরো কিছুক্ষন ট্রেক করার পর পৌছে যাবেন ঝর্নার কাছে।

টানা এক দুই ঘন্টার বৃষ্টিতেই পাহাড়ি ঝিরিগুলো পানিতে ভরে যায় এবং প্রচুর স্রোত হয়, বড় বড় গাছ ভাসিয়ে নিয়ে যাবার মত স্রোত। কিছুক্ষণ আগেই যেই ঝিরিপথ দিয়ে হাটু পানিতে হেঁটে গেছেন এক দুই ঘন্টার ভারি বর্ষণে সেটাই ভয়ংকর রুপ ধারণ করবে। সমস্যাটা হচ্ছে পাহাড়ে এমন কিছু জায়গা থাকে যেখানে সাধারণত ঝিরিপথ ছাড়া অন্য কোন রাস্তা থাকেনা। সেটাই যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে বিপদ কতটা হতে পারে বোঝা যায়।

অবশ্যই গাইড নিয়ে যাবেন। প্রথমবার একা গেলে চিনবেন না। আর ঐখানকার কিছু লোকাল লোকদের খপ্পরে পরবেন না। মদ খাওয়ার জন্য ৫০ টাকা দিলেও এরা আপনাকে নিয়ে যাবে। কিন্তু এদের নিয়ে যাওয়াটা রিস্কি। মনে রাখবেন কমলক ঝর্ণা দেখতে হলে সাজেকে একদিন থাকতে হবে।

গাইডঃ পাতান, রুন্ময় রিসোর্টে কাজ করে – ০১৫৩৫০৮৩১০৪, ৩০০ টাকা নিবে।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে শ্যামলী (Shamoli), হানিফ (Hanif) ও অন্যান্য পরিবহনের বাসে খাগড়াছড়ি (Khagrachari) যেতে পারবেন। ভাড়া পড়বে ৫২০ টাকা। এ ছাড়া সরাসরি দীঘিনালা যেতে চাইলে শান্তি পরিবহনের (Shanti Paribahan) বাস যায় । ভাড়া ৫৮০ টাকা। এছাড়াও বিআরটিসি (BRTC) ও সেন্টমার্টিন পরিবহনের এসি বাস খাগড়াছড়ি যায় ।

যোগাযোগঃ

সেন্টমার্টিন পরিবহন (Saint Martin Paribahan) – আরামবাগঃ ০১৭৬২৬৯১৩৪১ , ০১৭৬২৬৯১৩৪০ । খাগড়াছড়িঃ ০১৭৬২৬৯১৩৫৮ ।
শ্যামলী পরিবহন – আরামবাগঃ ০২-৭১৯৪২৯১ । কল্যাণপুরঃ ৯০০৩৩৩১ , ৮০৩৪২৭৫ । আসাদগেটঃ ৮১২৪৮৮১ , ৯১২৪৫৪ । দামপাড়া (চট্টগ্রাম) ০১৭১১৩৭১৪০৫ , ০১৭১১৩৭৭২৪৯ ।
শান্তি পরিবহন- আরামবাগ ( ঢাকা ) – ০১১৯০৯৯৪০০৭ । অক্সিজেন(চট্টগ্রাম) ০১৮১৭৭১৫৫৫২ ।
চট্টগ্রাম থেকেও খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন । BRTC এসি বাস (চট্টগ্রাম) কদমতলীঃ ০১৬৮২৩৮৫১২৫ । খাগড়াছড়িঃ ০১৫৫৭৪০২৫০৭ ।

খাগড়াছড়ি থেকে জীপগাড়ি (লোকাল নাম চাঁন্দের গাড়ি) রিজার্ভ নিয়ে একদিনে সাজেক ভ্যালী ও কমলক ঝর্ণা ঘুরে আসতে পারবেন। ভাড়া নিবে ৬৫০০-৭৫০০ টাকা। এক গাড়িতে ১৫ জন বসতে পারবেন। লোক কম হলে শহর থেকে সিএনজি নিয়েও যেতে পারবেন । ভাড়া ৩০০০ টাকার মতো নিবে। যদিও সিএনজি নিয়ে যাওয়াটা খুব ঝুকিপূর্ণ। উল্টে যাবার সম্ভাবনা থাকে। অথবা খাগড়াছড়ি শহর থেকে দীঘিনালা গিয়ে সাজেক যেতে পারবেন। বাসে দীঘিনালা (Dighinala) জন প্রতি ৪৫ টাকা এবং মোটর সাইকেলে জন প্রতি ভাড়া ১০০ টাকা। দীঘিনালা থেকে ১০০০-১২০০ টাকায় মোটর সাইকেল রিজার্ভ নিয়েও সাজেক ঘুরে আসতে পারবেন। ফেরার সময় অবশ্যই সন্ধ্যার আগে আপনাকে বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্প পার হতে হবে। তা না হলে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। ক্যাম্পের ছবি তোলা নিষেধ এই বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখবেন।

কোথায় খাবেন

সাজেকে খেতে হলে রুন্ময় রিসোর্টে খাওয়া যায়। আর তা ছাড়া সাজেক রিসোর্টে থাকলে ওখানেও খাওয়া যায়। এ ছাড়া রুইলুই ও কংলক পাড়াতে আদিবাসিদের সাথে খাওয়া যায়। এ জন্যে অবশ্য আপনাকে আগে থেকে বলে দিতে হবে কজন খাবেন, কি খেতে চান এসব।

কোথায় থাকবেন

সাজেক রিসোর্টঃ এটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত রিসোর্ট। যার দ্বিতীয় তলায় চারটি কক্ষ আছে। ভি আই পি কক্ষ ১৫,০০০ টাকা। অন্যটি ১২,০০০ টাকা। অপর দুইটি ১০,০০০ টাকা করে প্রতিটি। খাবারের ব্যবস্থা আছে।
যোগাযোগঃ ০১৮৫৯০২৫৬৯৪ / ০১৮৪৭০৭০৩৯৫।

রুন্ময় রিসোর্টঃ এটি সাজেকে অবস্থিত। এর নীচ তলায় তিনটি কক্ষ আছে। প্রতিটির ভাড়া ৪৪৫০ টাকা। প্রতিটি কক্ষে ২ জন থাকতে পারবেন। ৬০০ টাকা দিয়ে অতিরিক্ত বেড নিতে পারবেন। উপরের তলায় দুইটি কক্ষ আছে ভাড়া ৪৯৫০ টাকা। প্রতিটি কক্ষে দুই জন থাকতে পারবেন। এটাতেও ৬০০ টাকা দিয়ে অতিরিক্ত বেড নিতে পারবেন। চারটি তাবু আছে প্রতি তাবুতে ২৮৫০ টাকা দিয়ে চার জন থাকতে পারবেন।
যোগাযোগঃ ০১৮৬২০১১৮৫২।

আলো রিসোর্টঃ এটি সাজেকের একটু আগে রুইলুই পাড়াতে অবস্থিত। এটিতে মোট ৬ টি রুম আছে। ডাবল রুম ৪ টি ( ২টি খাট করে)। যার প্রতিটির ভাড়া ১০০০ টাকা। সিংগেল রুম ২ টি। প্রতিটির ভাড়া ৭০০ টাকা। যোগাযোগঃ পলাশ চাকমা – ০১৮৬৩৬০৬৯০৬ অথবা ০৩৭১-৬২০৬৭।

আদিবাসিদের ঘরেঃ এ ছাড়া চাইলে আদিবাসিদের ঘরেও থাকতে পারবেন। জনপ্রতি ১০০-২০০ টাকা করে। যোগাযোগঃ মাখুমা – ০১৫৫৩০২৯৬১৭

ইমানুয়েল রিসোর্টঃ এটিতে ৮ টি রুম আছে। সব গুলো কমন বাথ। রুম প্রতি ভাড়া ১৫০০ টাকা ও ৭০০ টাকা। ১৫০০ টাকার রুমে দুইটি ডাবল বেড আছে। ৬ জন থাকতে পারবেন। ৭০০ টাকার রুমে ২ টি বেড আছে। যোগাযোগ: ০১৮৬৫৩৪৯১৩০, ০১৮৬৯৪৯০৮৬৮ (মইয়া লুসাই) ( বিকাশ) এই রিসোর্টটা একদম সাধারণ একটা রিসোর্ট ,বন্ধু বান্ধব বা যাদের থাকা নিয়ে কোন অভিযোগ নেই তারা এখানে থাকতে পারেন মেয়ে বা পরিবারের জন্য এটা আদর্শ রিসোর্ট নয়।

সারা রিসোর্টঃ এটি রুইলুই পাড়ায় অবস্থিত। এর মালিক রুইলুই পাড়ার কারবারী মনা দাদা। এখাণে ৪ টি রুম আছে। তিনটি এটাচ বাথ। একটি কমন বাথ। প্রতি রুমের ভাড়া ১০০০ টাকা। ৪ টি নিলে ৩৬০০ টাকা। প্রতি রুমে একটি খাট আছে। ২ জন থাকা যাবে। রুম গুলো একটু ছোট। টিনের তৈরী। সোলার আছে। যোগাযোগ: ০১৫৫৪৫৩৪৫০৭।

মেঘ মাচাংঃ ০১৮২২১৬৮৮৭৭

রুইলুই পাড়া ক্লাব হাউজঃ এটি সাজেকের একটু আগে রুইলুই পাড়াতে অবস্থিত। এখানে ১৫ জনের মত থাকতে পারবেন। ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা করে দিতে হবে। নিজেরা রান্না করে খেতে পারবেন। এর কেয়ার টেকার মইয়া লুসাই দাদা সব ব্যবস্থা করে দিবে। লক্ষন নামেও একজন আছে, প্রয়োজনে আপনাদের সহযোগীতা করবে। এখানে দুইটি টয়লেট আছে। একটি ফ্রি ব্যবহার করতে পারবেন। অন্যটির জন্য ২০০ টাকা প্রদান করতে হবে। যোগাযোগঃ (লক্ষন ০১৮৬০১০৩৪০২) অথবা (০১৮৩৮৪৯৭৬১২)

চাঁদের গাড়ির জন্যে যোগাযোগ

দীঘিনালার চাঁদের গাড়ির ড্রাইভার নূর আলম – ০১৮২০৭৩২০৪৩, রাজ – ০১৮২০৭৪১৬৬২, ০১৮৪৯৮৭৮৬৪৯, হানিফ – ০১৮২৮৮২৯৯০৮, মিধল – ০১৮৬৭১৩৫২১৪, শিবু- ০১৮২০৭৪৬৭৪৪ ।

Leave a Comment
Share