লাইটলুম গ্রান্ড ক্যানিয়ন
মেঘালয় ইংরেজী (Meghalaya) উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি রাজ্য। ২১ জানুয়ারী ১৯৭২ সালে রাজ্য হিসাবে ঘোষনা হয়। এই রাজ্যের উত্তর ও পূর্ব দিকে অসম (আসাম) রাজ্য এবং দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র অবস্থিত। মেঘালয়ের রাজধানী শিলং।
মেঘালয় হচ্ছে মেঘেদের বাড়ি। কবিদের অনুপ্রেরনার ও চিত্রকরদের ক্যানভাস। বেড়ানোর জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় জায়গা। মেঘালয় ছবির মত সুন্দর একটি রাজ্য। ক্যালচার ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ, মেঘের সমাবেশ, জীবনের কিছু রঙ্গিন মুহুত্ব কাটানোর জন্য উপযুক্ত জায়গা। মেঘালয় সেভেন সিস্টার খ্যাত উত্তর পূর্ব অঞ্চলে অত্যতম একটি সুন্দর রাজ্য। মেঘালয় পাঁচটি প্রশাসনিক জেলায় ভাগ হয়েছে – জয়িন্তা পাহাড়, পূর্ব এবং পশ্চিম গারো পাহাড়, পূর্ব এবং পশ্চিম খাসি পাহাড়। শিলং ও চেরাপুঞ্জির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এখানে প্রচুর বৃষ্টি হয়। আর একারণেই বর্ষার সিজনই উপযুক্ত সময় মেঘালয়ে বেড়াতে যাওয়ার। তাই মে থেকে অক্টোবরই ভাল সময়।
এটি মেঘালয়ের West Jaintia hills এলাকার জোয়াই রোডে অবস্থিত। সিলেটের তামাবিল সীমান্ত থেকে মাত্র ৪০ কিঃ মিঃ দূরে এর অবস্থান। Thlu amwi falls আঁকা বাঁকা পথে প্রবাহিত হয়ে পাহাড়ের গাঁ বেয়ে একসময় এই অসাধারণ ঝর্ণাটি তৈরি করেছে। এর তীব্র পানিপ্রবাহ আর স্বচ্ছ নীলাভ সবুজ জলরাশি মুগ্ধ করবে আপনাকে। তবে বর্ষা শেষে এর পানিপ্রবাহ আস্তে আস্তে কমতে কমতে সর্ম্পূণ Tourquise কালার ধারন করে। এটি অধিক পরিচিত Krang suri falls থেকে এটি মাত্র ১২ কিঃ মিঃ দূরে অবস্থিত। স্থানীয়ভাবে একে Lahoo falls নামেও ডাকা হয়। উচ্চতায় আনুমানিক প্রায় ২১৭ ফুট।
যাওয়ার উপায়
শিলং থেকে ৮২ কিমি দূরে এবং জোয়াই এর পথে জোয়াই থেকে ২০ কিমি দূরে আর ক্র্যাংসুরী থেকে ৫ কিমি আগে ক্র্যাংসুরী রিসর্টের সামনের ছোট পাহাড়ী নদীটি ছোট্ট নৌকোতে করে পেরিয়ে নদীর ধার দিয়ে প্রায় ২কিমি সবুজ মাঠ পায়ে হেঁটে পার করার পরে পাওয়া যাবে ঝর্ণার নিজস্ব শব্দ। তবে না পথের শেষ এখানেই নয় বরং কষ্টের শুরু এখান থেকেই। খাড়া পাহাড়ের ঢালে ঝাড়ুর জঙ্গলে কিছু স্থানীয় মানুষের চলার জন্য যে রাস্তা তৈরী হয়েছে সেটাকে আর যাই হোক রাস্তা বলা চলে না। কিন্তু ওই একমাত্র পথ যে পথেই নামতে হবে ফি ফি দর্শন করতে। খাড়া পাহাড়ের ঢাল বেয়ে হলেও এই রাস্তাটি ঝুরঝুরে মাটির, যেটার উপর পা দিলেই ঝুরঝুরে হয়ে ঝরে পড়ে, তাই ভরসা হবে ঝাড়ু গাছ। ওই গাছের ডাল পাতা ধরেই প্রায় পুরো রাস্তা ওঠা নামা করতে পারবেন। কিছু রাস্তা নামার পরেই ঝর্ণার যে রূপ দেখা যাবে সেটাই নীচে নামাটাকে ত্বরান্বিত করবে আর কষ্ট ভুলিয়ে দেওয়ার জন্যও যথেষ্ট।
সহজ ভাবে যেতে চাইলে, ডাউকি থেকে আমলারেম (Amlarem) হয়ে Jowai রোডের Paradise Adventure camp এলাকায় যেতে হবে প্রথমে। এখান থেকে ৪০-৫০ মিনিট ট্রেকিং করলে দেখা মিলবে এই ঝর্ণার। তবে সাথে গাইড নিয়ে নেয়া প্রয়োজন। Paradise Adventure camp থেকে চাইলে গাইড নিতে পারবেন। খরচ পড়বে মাথাপিছু ২০০ রূপি। ভ্রমণসঙ্গী বেশি হলে আগে থেকে গাইড খরচ ঠিক করে নেওয়া ভালো।
যাওয়ার পথে সারি সারি পাইন গাছ, বয়ে চলা ঝিরিপথ, সবুজ ঘাসের বিস্তীর্ন ভূমি মুগ্ধ করার মত। আরও আছে মাটির নিচে কয়লার মত ভূতাত্তিক সম্পদ যা ধারনা করা হয় লক্ষ বছরের বিবর্তনে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন গাছপালা মাটিচাপা পড়ে। ঝিরিপথ ধরে এগোতে থাকলে এক সময় ঝর্ণার Upperstream এ দেখা মিলবে বোনাস হিসাবে আরও একটি ঝর্ণা, যা দুটি ধারায় প্রবাহিত। এটি দেখা শেষে এবার মূল গন্তব্যে এগিয়ে যাওয়ার পালা। তবে তার আগে পাড়ি দিতে খুবই খাড়া আর ঢালু একটি পাহাড়। অবশেষে যখন এই মায়াবিনীর দেখা মিলবে তা নিশ্চিতভাবে প্রান জুড়াবে এর উন্মত্ত ভয়ংকর সৌন্দর্য্যে। সচ্ছ পানির প্রবাহ পাথরে আছঁড়ে পড়ে অনেক দূর পর্যন্ত ভিজিয়ে দিতে সক্ষম। এর সামনে অনেকটা অংশ জুড়ে সচ্ছ সমতল প্রবাহ প্রাকৃতিক swimming pool এর আবহ তৈরি করেছে। চাইলে লাইফ জ্যাকেট নিয়ে আসা যায় Paradise Adventure camp থেকে জলে গাঁ ভাসাতে। তবে পানি যথেষ্ট শীতল। এখানে চাইলেই একটি বেলা অনায়াসে কাটিয়ে দেওয়া যায় এর সৌন্দর্য অবলোকন করতে করতে।
কিছু সতর্কতা
শিলং থেকে ৯৪ কিমি এবং ক্র্যাংসুরী রিসর্ট থেকে ৫৭ কিমি দূরে আর জোয়াই থেকে প্রায় ২৫ কিমি দূরে এবং জাতীয় সড়ক ৪৪ থেকে ১০ কিমিদূরে মুটং গ্রামে উমঝাই নদী থেকে সৃষ্ট এই মপুন জলপ্রপাত। মো কথার অর্থ পাথর আর পুন কথার অর্থ যোগযোগ। তাই মপুন কথার অর্থ পাথরের সেতু।১১ ফুট লম্বা ৩৩ ফুট চওড়া এবং ৮ ফুট লম্বা এই ঝর্ণা জঙ্গলের মাঝে সৌন্দর্যের মুকুটে পালকের মতই। বর্ষা ছাড়া অন্যান্য সময়ে জল অল্পই থাকে তবে বর্ষায় ফুলে ফেঁপে তা অন্যরূপে দেখা যায় যেমন রূপ তেমনই গর্জন। এই জলপ্রপাতের দুটি ধাপ রয়েছে। গাড়ী রাখার জায়গা থেকে ৩০০ মিটারের মধ্যে সুন্দর করে সাজানো সিঁড়ি বেয়ে জলপ্রপাতের একদম নীচে যাওয়া যায়। ভিউপয়েন্ট কিম্বা নীচ থেকে সব ক্ষেত্রেই সে সমান সুন্দরী।
ডাউকি থেকে ৪৫ মিনিট লাগে Pomshutia গ্রামে যেতে, মুলত এই রোড দিয়েই চেরাপুঞ্জির দিকে যায়। গ্রামের ভেতর দিয়ে একটু এগিয়ে যেতেই কিছুক্ষণ পর চেকপোস্ট পড়বে। এখানে গাড়ি প্রতি ৩০ রুপী দিতে হবে ফেরার সময়। চেকপোস্ট এর পরে আর গাড়িতে করে যাওয়া যায় না সুতরাং গাড়ি থেকে নেমে সরু সিড়ি বেয়ে উঠা-নামার মধ্য দিয়ে ২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে। সিড়ি গুলো অনেক পিচ্ছিল তাই সাবধানতার জন্যে নিচের দিকে নামার সময় রেলিং ধরে নামাটাই হবে আপনার প্রধান কাজ। এই ঝর্ণার একদম পিছন দিয়ে রাস্তা আছে। এখনও মানুষজনের কাছে খুব একটা পরিচিত হয়ে উঠেনি, তাই সকল গাড়ির ড্রাইভার এই ঝর্ণা নাও চিনতে পারেন।
লাইটলুম (Laitlum Grand Canyons) একটি ভিউ পয়েন্ট। যেখানে সব সময় থাকে মেঘের আনাগোনা। শহর থেকে প্রায় ২৪ কিমি দূরে অবস্থিত এই অসম্ভব সুন্দর জায়গাটি না জানার কারনে অনেকেরই হয়তো যাওয়া হয় না। মেঘ বাতাসের খেলা আর পাহাড় গুলোর মনোরম দৃশ্য দেখে আমাদের মনে হয়েছিলো “Meghalaya – The abode of clouds” নাম কে Laitlum খুব ভালো ভাবেই জাস্টিফাই করে।
লাইটলুম এর রাস্তা দিয়ে আরো আড়াই/তিন ঘন্টার মতো ড্রাইভ এর পর Wahrashi Falls এর দেখা মিলবে। এ রাস্তাটা বেশ সুন্দর একটি রাস্তা। Syntung গ্রামে অবস্থিত এই জলপ্রপাতটি শিলং থেকে প্রায় ৭০ কি.মি. দূরে। আপ স্ট্রিম ডাইন স্ট্রিম মিলিয়ে ৫টি জলপ্রপাত আছে এখানে।
শিলং থেকে ট্যাক্সি রিজার্ভ করে গেলে ভাড়া পরবে ২৫০০-২৭০০ রুপীর মতো। প্রথমে লাইটলুম এবং এর পরে Wahrashi Falls। এই জায়গা গুলোতে যাওয়ার জন্য তেমন ভালো কোন লোকাল ট্র্যান্সপোর্ট খুব একটা নেই। তবে খরচ আরো কমানোর জন্য Syntung পর্যন্ত লোকাল বাস বা শেয়ার ট্যাক্সিতে গিয়ে তারপর ট্যাক্সি রিজার্ভ নেয়া যায়। Wahrashi Falls এর রাস্তা খুব একটা ভালো নয় তাই ট্যাক্সি থেকে জীপ নিয়ে যাওয়াই উত্তম।
কিনরেম ফলসটি উচ্চতার দিকে ভারতের সপ্তম উচু ঝর্ণা। তবে শুধু উচ্চতা দিয়ে এই ঝরনাটির বিশালতা আর সৌন্দর্য্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সম্পূর্ণ ঝর্ণাটি ৩ টি স্তরে বয়ে চলেছে। এর উচ্চতা প্রায় ১০০১ ফুটএবং এটি চেরাপুঞ্জি থেকে মাত্র ১৭ কিঃ মিঃ দূরে East Khasi Hills এলাকায় অবস্থিত।
চেরাপুঞ্জির সর্বাধিক পরিচিত Seven sisters Falls থেকে এর দূরত্ব মাত্র ১৩ কিঃ মিঃ। তবে Seven sisters falls থেকে এখানে যাওয়ার রাস্তাটা যথেষ্ট এবড়ো থেবড়ো। তাই সহজে এইখানে কোন ট্যাক্সি ড্রাইভার যেতে চায় না। বর্ষায় এটা এতটা উন্মত্ত রুপ ধারন করে যার কারনে ঝর্ণা থেকে অনেকটা দূরে দাঁড়িয়েও ভিজে যেতে হয়। এর উপরের প্রান্ত প্রায়ই মেঘে ঢাকা থাকে। দেখতে মনে হয় আাকাশ থেকে সরাসরি মেঘ পাহাড়ের গা বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে এবং কাছাকাছি আারও কয়েকটি ঝর্ণা গড়িয়ে পড়ায় অসাধারণ পরিবেশ সৃষ্টি করে যা মূলত বর্ষাকালেই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
শিলং বাইপাস হয়ে জোয়াই এর পথে পড়ে তার্সি/তির্সি ঝর্ণা। বৃষ্টি হলে কিছুটা আগেই গাড়ীর ওপর ভরসা ত্যাগ করে আস্থা রাখতে হবে নিজের পদযুগলের ওপরেই। সেক্ষেত্রে পথটা প্রায় সাড়ে তিনশো সিঁড়ি নিয়ে তিন থেকে চার কিলোমিটার। বয়স্ক মানুষ বা শিশুর ক্ষেত্রে কষ্ট সাপেক্ষ হতেই পারে। সিঁড়িগুলোতে নামা খানিক সহজ হলেও ওঠাটা একটু কষ্টের। তবে কষ্ট করলেই তো কেষ্ট মেলে। তাই শরীরে কোন সমস্যা না থাকলে আর প্রকৃতি বিশেষ করে ঝর্ণাকে ভালোবাসলে চোখ বন্ধ করে সেই কষ্ট করে নেওয়াই ভালো।
তার্সি ঝর্ণা থেকে বেরিয়ে কিছুটা এগিয়ে এলেই ডান দিকে একটি বাঙালী হোটেল আছে যেখানে বাঙালী মানুষের সাথে বাঙালী খাওয়ারও পাওয়া যায়।মুরগীর ঝোল ভাত -মাথা পিছু ১৮০টাকা।
টাটাসুমো দিন প্রতি ৪০০০ করে। যোগাযোগ-8257887186(মৃদুলদা) বাংলা, হিন্দী, ইংরেজী, মনিপুরী, আসামী, খাসী, নাগামীস সব ভাষাতেই কথা বলতে পারেন। সময় নিয়ে খুব সচেতন তবে ঘোরা নিয়ে তাড়া দেননা একদমই।
বাংলাদেশ সীমান্তের খুব কাছে মেঘায়লয় এর এক জলপ্রপাত। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা শহর থেকে ১২ কি.মি উত্তর পশ্চিম দিকে অবস্থিত এই জলপ্রপাত পেলগা। বিস্তির্ণ পাথরের পাহাড়ি ভাজ আর বাশের তৈরী ঝুলন্ত সেতু আপনার মনকে প্রশান্তিতে ভরে তুলবে নিঃসন্দেহে। একদম কোলাহল মুক্ত এবং নিবিড় পরিবেশে ঘুরে আসতে পারেন খুব সহজে।
পেলগা ফলস যাওয়ার উপায়
ঢাকা মহাখালী হতে সরাসরি শেরপুর / নালিতাবাড়ী গামী বাসে চলে যান নালিতাবাড়ী। ভাড়া ৩০০ টাকা। ভোর ৬টা থেকে গাড়ি আছে। ১০টার মাঝেই পৌছে যাবেন, সেখান থেকে অটো/সিএনজি তে ২০ মি. এ চলে যান নাকুগা স্থলবন্দরে (ভারতীয় ভিসাতে বাই রোড ডালু সংযুক্ত থাকতে হবে)। এই বন্দরে তেমন কোন ভিড় নেই, ইমিগ্রেশন করে সকাল ১১ টার মাঝেই পৌছে যাবেন ভারতের সীমান্তে ডালু বাজারে। সেখান থেকে বাসে/ সেয়ার জিপে করে ১/২ ঘন্টায় তুরা শহরে পৌঁছে যাবেন, ভাড়া ১০০ রুপি। দুপুরে হালকা কিছু খেয়ে সিএনজি নিয়ে চলে যান পেলগা ফলস ভাড়া ৩০০/৪০০ রুপি আপ/ডাউন। ফিরে আসতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যাবে। তুরা শহরের কেন্দ্রে তুরা সুপার মার্কেটে সময় কাটাতে, শপিং করতে পারেন। রাত্রি যাপনে তুরাতে ১০০০/১২০০ রুপির মাঝেই হোটেল রুম পেয়ে যাবেন।
ডাউকি বর্ডার থেকে মাত্র ৪৫.২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি গ্রাম শিলিয়াং জাসার। এই গ্রামের মানুষ তাদের গ্রামটাকে মানুষের মঝে পরিচিত করার জন্য সকল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ তেমন কেউই চেনে না গ্রামটা। অথচ এই গ্রামেই আপনি মিনিমাম ৩ দিনের একটা ট্যুর করতে পারবেন। দেখতে পাবেন গোটা দশেকের বেশি জলপ্রপাত।
শিলিয়াং জাসার এ যেতে চাইলে বা এখানকার ঝর্ণাগুলো এক্সপ্লোর করতে চাইলে Bahbah Lrs Khongthohrem এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, উনি এই গ্রামেরই লোক। আপনি চাইলে এখান থেকেও তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
Leave a Comment