ঢাকার আশেপাশে সরিষা ক্ষেতের খোঁজ

ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত বাংলাদেশে সাধারনত শীতকাল থাকে এবং এ সময়টাতে চারপাশ সরিষা ক্ষেতে ঢাকা পড়ে যায়। যেদিকেই চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। প্রকৃতির নির্মল বাতাসে ভেসে বেড়ায় তখন সরিষা ফুলের মাতাল করা ঘ্রাণ। অনেকেই হয়ত খুঁজছেন যে ঢাকার কাছাকাছি এমন দিগন্ত জোড়া সরিষা ক্ষেত কোথায় আছে? এসব সরিষা ক্ষেতে কিভাবে যাওয়া যায়? তাদের জন্যেই আজ থাকছে ঢাকার খুব কাছেই বেশ কিছু সরিষা ক্ষেতের খোঁজ যা একদিনের ট্যুরে কভার করতে পারবেন।

ঝিটকা সরিষা ক্ষেত

ঢাকার কাছের জেলা মানিকগঞ্জের ঝিটকায় দিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে থাকে সরিষা ক্ষেত। দুই পাশে বিস্তৃত হলুদ ক্ষেতের মাঝে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে সারি সারি খেজুর গাছ। খুব সকালে ঝিটকা পৌছাতে পারলে বাড়তি পাওনা হবে গাছ থেকেই সদ্য সংগ্রহ করা খেজুরের রস। এসব জায়গায় সূর্য ওঠার মুহূর্তেই গাছ থেকে রস নামিয়ে ফেলেন।

ঝিটকা যাওয়ার উপায়

ঢাকার গুলিস্তান থেকে শুভযাত্রা ও বিআরটিসি পরিবহন, পুরান ঢাকার বাবু বাজার থেকে যানযাবিল ও শুকতারা, গাবতলী থেকে যাত্রীসেবা, পদ্মা লাইন, নবীনবরণ, ভিলেজ লাইন ও জনসেবা পরিবহনে প্রথমে মানিকগঞ্জ যেতে হবে। ভাড়া ৫০-৬০ টাকা। বি আর টি সি তে ভাড়া পড়বে ৯০ টাকা আর শুভযাত্রায় ৮০ টাকা। সেখান থেকে আবার লোকাল বাসে চড়ে ঝিটকা, সারাদিনই এ বাস পাওয়া যায়। ভাড়া ৩০ টাকা। নিজস্ব গাড়ি নিয়ে গেলে ঢাকা-আরিচা সড়কে মানিকগঞ্জ অতিক্রম করে তরা সেতু পেরিয়ে কিছুদূর সামনে গেলে বাঁ দিকের সড়কটি চলে গেছে ঝিটকায়।

আপনার ছবি তোলার জন্য অন্যের ফসলের ক্ষেত নষ্ট করবেন না।

মানিকনগর

ঢাকার খুব কাছেই সরিষা ফুলের সুন্দর রাজ্য আছে মানিকনগরে। ঢাকার হেমায়েতপুর থেকে সিঙ্গাইরের রাস্তা ধরে কিছুদূর গেলে ধলেশ্বরী ব্রিজ। সেটা পেরিয়ে বিন্নাডিঙ্গি বাজার থেকে বাঁয়ের সড়কে কয়েক কিলোমিটার চললেই মানিকনগর।

রোহিতপুর, কেরানীগঞ্জ

ঢাকার কাছের সরিষা ক্ষেত দেখতে যেতে পারেন কেরানীগঞ্জ এর রোহিতপুর এলাকায়। ঢাকার বাবুবাজারে বুড়িগঙ্গা সেতু পেরিয়ে সামনে দোহারগামী সড়ক ধরে যেতে হবে রোহিতপুর। গুলিস্তান এলাকা থেকে রোহিতপুরে যাওয়ার লেগুনা সার্ভিস আছে। এছাড়া কেরানীগঞ্জের আটিবাজার এও দেখা মিলবে সরিষা ক্ষেতের।

সরিষা ক্ষেতে যেয়ে ছবি তোলার সময় সতর্ক হোন, সরিষা গাছ না মাড়িয়ে ক্ষেতের আইল ধরে হাটুন কিংবা ছবি তুলুন। ক্ষেতে নামার আগে চাষী/মালিকের অনুমতি নিয়ে নিন।

ইসলামপুর, ধামরাই

গুলিস্তান, মহাখালি, গাবতলি যেকোন জায়গা থেকে সাভার ধামরাই এর বাসে চলে যেতে পারেন ধামরাই। এখান থেকে লেগুনায় মাত্র ৫ মিনিটের দুরুত্বে আছে ইসলামপুর যেখানে দেখা মিলবে আপনার কাঙ্ক্ষিত সরিষা ফুলের।

সাতগাঁও, শ্রীনগর

ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক লাগোয়া সরিষা ফুলের আরেক রাজ্য মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার সাতগাঁও এলাকা। এছাড়া মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীর সোনারং এলাকায়ও আছে প্রচুর সরিষা ক্ষেত।


একসঙ্গে অনেকজন এবং বিনা অনুমতিতে সরিষা ক্ষেতে প্রবেশ করবেন না।

বারদী, সোনারগাঁও

ঢাকার কাছে সরিষা ক্ষেত দেখতে যেতে পারেন নারায়ণগঞ্জ এর সোনারগাঁও উপজেলার বৈদ্যের বাজার কিংবা বারদী এলাকায়। ঢাকার গুলিস্তানে মেয়র হানিফ উড়াল সড়কের প্রবেশমুখ থেকে বারদী যাওয়ার বাস ছাড়ে।

সিঙ্গাইর, মানিকগঞ্জ

ঢাকা শহরের পশ্চিম পাশে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের মাঠে মাঠে এখন সরিষা ফুলে পরিপূর্ণ। যে কোনো ছুটির দিন সকালে সময় বের করে বেড়িয়ে পড়তে পারেন।

চান্দের পারা, নরসিংদী

নরসিংদী এর চান্দের পারায় দেখা মিলবে দিগন্ত বিস্তৃত সরিষা ক্ষেতের। গুলিস্তান বা মহাখালি থেকে বাসে চেপে নরসিংদী এর নতুন বাস স্টপেজে নামবেন। এরপর রিকশা কিংবা অটোবাইকে যাবেন সাটিরপাড়া, রজনীগন্ধা মোড়। সাটিরপাড়া থেকে অটোবাইকে করে চলে যাবেন সুইচ গেট বাজার অথবা চান্দের পাড়া।

আড়াইহাজার সরিষা ক্ষেত

দিগন্তজোড়া হলদে রঙের সেই সরিষা ফুলের সৌন্দর্য দেখতে যেতে পারেন আড়াইহাজারের সরিষা ক্ষেতে। আর সরিষা ফুলের সঙ্গে বোনাস হিসেবে থাকছে শীতের সকালে খেজুরের রস খাওয়া, মেঘনা নদীতে ঝাপঝাঁপি ও আড়াইহাজারের স্থানীয় খাবারের স্বাদ নেয়া।

যাওয়ার উপায়

রুট ১ঃ সায়েদাবাদ থেকে অভিলাস পরিবহন বাস ছাড়ে। ভাড়া ৬৫ টাকা। এটা মদন পুর দিয়ে যাবে। অথবা গুলিস্তান থেকে দোয়েল /সদেশ পরিবহন এ মদনপুর ৪৫ টাকা নেমে আড়াইহাজার এর সি এন জি ৫০ টাকা।

রুট ২ঃ কলাবাগান থেকে মেঘলা পরিবহন বাস ছাড়ে। ভুলতা/গাউসিয়া। ভাড়া ৬৫ টাকা। গাউসিয়া নেমে একটু সামনে যেয়ে লোকাল সি এন জি তে আড়াইহাজার বাজার। ভাড়া ৩০ টাকা।

রুট ৩ঃ কুরিল ফ্লাইওভার এর ৩০০ ফিট ক্রসিং থেকে লোকাল ট্যাক্সি তে গাউসিয়া। ভাড়া ৮০ টাকা। গাউসিয়া নেমে একটু সামনে যেয়ে লোকাল সি এন জি তে আড়াইহাজার বাজার। ভাড়া ৩০ টাকা।

আড়াইহাজার নেমে প্রথমেই খেজুরের রস দিয়ে যাত্রা শুরু করতে পারেন। এরপর অটোতে করে হলুদ ফুলের রাজ্যে প্রবেশ করুন। দুপুরটা কাটিয়ে দিন হলুদের রাজ্যেই। দুপুরের খাবার খেয়ে যেতে পারেন চৌদ্দার চর, মেঘনা পাড়ে।

Leave a Comment
Share