মেঘালয় কিংবা আসাম ভ্রমণে সহায়তামূলক কিছু টিপস

  • ফেরার পথে তামাবিল সীমান্তে প্রায় সময়ই সিলেট ফেরার গাড়ি/বাস/সিএনজি পাওয়া যায়না। তাই যাবার সময় কোন গাড়ি বা সিএনজি ড্রাইভারের নম্বর নিয়ে রাখলে ফেরার পথে বর্ডার পার হয়ে তাকে ফোন করলেই তামাবিল সীমান্তে সে চলে আসবে।
  • সিলেট থেকে তামাবিল বর্ডার পর্যন্ত সিএনজি ভাড়া সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা (শুধু যাওয়া বা আসা)। সময়ভেদে বেশীকম হবে।
  • যাবার সময় ডাউকি বাজারেই প্রয়োজন অনুযায়ী বাংলাদেশী টাকার বদলে ভারতীয় রূপি কিনে নিতে পারেন। এখনকার রেট হলো, প্রতি ১০০ টাকায় ৫৭ ভারতীয় রূপি। মনে রাখতে হবে, এ ব্যাপারটা সম্পূর্ণ বেআইনি বা অবৈধ।
  • ডাউকি বাজারে ডলার ভাঙ্গানো যায়না। ওরা শুধু বাংলা টাকা আর রুপি লেনদেন করে। তাই যারা শিলং যাবেন না, শুধু সোনাংপেডেং যাবেন তারা গেলে শুধুমাত্র বাংলা টাকা নিয়ে যাবেন। আরেকটা বিষয়, ডাউকি বর্ডারে রুপির বিপরীতে বাংলা টাকার রেট অনেক ওঠা নামা করে। এই বর্ডার দিয়ে বাংলাদেশ কয়লার ট্রাক আসে। যেই সপ্তাহে কয়লা ঢুকে ওই সপ্তাহে টাকার রেট কম দেয়।
  • ডলার ভাঙাতে হলে ডাউকি বর্ডার থেকে শিলং শহর পর্যন্ত যেতে হবে।
  • ভারতের ভেতরে ছবি তোলার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এক্ষেত্রে ট্যাক্সি ড্রাইভারই আপনাকে বলে দেবে কোথায় ছবি তুলতে পারবেন আর কোথায় পারবেন না।
  • শিলং-এর দর্শনীয় স্থানগুলোতে ঘোরার সময় অধিকাংশ স্থানেই এনট্রি ফি দিতে হয়। সাথে স্টিল বা ভিডিও ক্যামেরা থাকলে সেক্ষেত্রেও ফি প্রযোজ্য। শিলং-এর সবগুলো দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে গিয়ে এনট্রি এবং স্টিল ক্যামেরা ফি বাবদ আমার প্রায় ৫০০ রূপীর মতো বেরিয়ে গেল।
  • যারা ঢাকা থেকে ট্রাভেল ট্যাক্সের কাগজ নিয়ে যেতে ভুলে যাবেন, তারা তামাবিল যাবার পথেই জৈন্তাপুর বাজারের ভেতরে সোনালী ব্যাংক থেকে অবশ্যই ৫০০ টাকা দিয়ে ট্রাভেল ট্যাক্স -এর কাগজ নিয়ে নিজ নিজ পাসপোর্টসহ তামাবিল বর্ডারে যাবেন।
  • বাংলাদেশ ভারতের অন্যান্য সীমান্তের মতোই তামাবিল-ডাউকি বর্ডার সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
  • তামাবিল-ডাউকি বর্ডার আমার কাছে ঝামেলামুক্ত সীমান্ত মনে হয়েছে। কেননা ইমিগ্রেশন/কাস্টমস-এর কাজ দু’পারেই খুব দ্রুত হয়ে গিয়েছে। আর অন্যান্য সীমান্তের মতো এখানে এপার কিংবা ওপারে আমার থেকে কোন ঘুষ চায়নি বা নেয়নি কেউ।
  • গৌহাটিতে রাত ৯ টার পর অনেক দামী হোটেল ছাড়া কমদামী হোটেলে বাংলাদেশীদেরকে এরা থাকতে দেয়না। কারণ ভারতীয় পুলিশের অনুমতি নেওয়ার একটা ব্যাপার আছে, যেটার ঝামেলা রাত ৯ টার পর কোন কমদামী হোটেল কর্তৃপ নিতে চায়না।
  • ন’গাঁও থেকে ডিফু পর্যন্ত বাসে জনপ্রতি ১১৫ রূপী নিয়েছিল।
  • ডিফু থেকে শতাব্দী এক্সপ্রেস ট্রেনের এসি বগিতে জনপ্রতি ৩২০ রূপী নিয়েছিল।
  • গৌহাটী থেকে শিলং পর্যন্ত টাটা সুমো গাড়িতে শেয়ারে জনপ্রতি ১২০ রূপী নিয়েছিল।
  • গৌহাটীর খানাপাড়া থেকে ন’গাঁও বাস ভাড়া জনপ্রতি ১৫০ রূপী করে নিয়েছিল।
  • ন’গাঁও থেকে কাজীরাঙ্গা আপ-ডাউন রিজার্ভ টাটা ইণ্ডিকা গাড়িতে ১৬০০ রূপী খরচ হলো। ন’গাঁও থেকে কাজীরাঙ্গা পর্যন্ত গাড়ি রিজার্ভ করে যাওয়াটাই ভালো। কারণ সরাসরি কাজিরাঙ্গা সাফারী পার্ক পর্যন্ত কোন বাস যায়না।
  • শিলং-এর চেরাপুঞ্জী (সোহরা) এবং শিলং শহরের আশপাশ ঘুরতে হলে বাসের থেকে ট্যাক্সি রিজার্ভ করে নেওয়াটাই ভালো। এতে করে বেশ ভালো করে সময় নিয়ে জায়গাগুলো ঘুরে দেখা যাবে।
  • শিলং-এর চেরাপুঞ্জী (স্থানীয় ভাষায় ’সোহরা’) গিয়ে আপডাউন এবং সবগুলো স্পট ঘুরতে রিজার্ভ ট্যাক্সিতে সর্বোচ্চ ১৫০০-২৫০০ রূপী খরচ হবে। স্পটগুলো হলো: মকটক ভিউ পয়েন্ট, নকালীকাই ফলস, রামকৃষ্ণমিশন, ইকোপার্ক, মওসমী গুহা, সেভেন সিস্টারস ফলস, খরম্মা স্টোন। চেরাপুঞ্জী -এর সবগুলো জায়গাই আমার ভালো লেগেছে। তবে চেষ্টা করতে হবে অনেক সকালে রওনা হতে, তাহলে সবগুলো জায়গা সময় নিয়ে একদিনে দেখে আসা সম্ভব।
  • শিলং-শহরের আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরতে রিজার্ভ ট্যাক্সিতে ১২০০-১৮০০ রূপী খরচ হবে। স্পটগুলো হলো: গলফ কোর্স, ওয়ার্ডস লেক, লেডী হায়দারী পার্ক, চার্চ, উমিয়াম লেক (বরাপানি লেক), শিলং পিক, এলিফেন্ট ফলস। এই স্পটগুলোর মধ্যে উমিয়াম লেক এবং এলিফেণ্ট ফলস আমার ভালো লেগেছে। তবে চেষ্টা করতে হবে অনেক সকালে রওনা হতে, তাহলে সবগুলো জায়গা সময় নিয়ে একদিনে দেখে আসা সম্ভব।
  • শিলং-শহরের আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরতে হলে ট্র্যাফিক জ্যামের কথা মাথায় রাখতে হবে।
  • আমার অভিজ্ঞতা বলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং মেঘালয় রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ভালোভাবে থাকা এবং খাওয়া বাবদ দৈনিক ১০০০-১২০০ রূপী যথেষ্ট। আর ঘোরাঘুরির জন্যে রিজার্ভ ট্যাক্সি-এর থেকে শেয়ারে টাটা-সুমো কিংবা ট্রেনে ভ্রমণ করলে যথেষ্ট টাকা সেভ হবে। লাগেজ যথাসম্ভব কম রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ।
Leave a Comment
Share