মালদ্বীপ ভ্রমণের কিছু দরকারি তথ্য

মালদ্বীপ এ ঘুরতে যাওয়ার আগে অনেক ধরনের প্রশ্ন, ভয় ভীতি মনের মধ্যে ঘুরপাক খায়।গুগল এর সাহায্য নিয়ে অনেক কিছুর সমাধান হয় ঠিকই আবার কিছু জিনিস পুরোটা ক্লিয়ার হয় না বা মনের ভিতরের ভীতি কাটে না কাছের কারও কাছ থেকে রিভিউ পাওয়া যায় না বলে। তাই এই পোস্টে মালদ্বীপ ট্যুর নিয়ে কনফিউশন গুলো ক্লিয়ার করার চেস্টা করবো।

মালদ্বীপ এ on arrival visa, সুতরাং ভিসা নিয়ে টেনশন করার কোন দরকার নাই। নিজের কোন কাগজপত্র লাগবে না। লাগবে শুধুমাত্র তিনটি জিনিস।

  • নিজের পাসপোর্ট, ডলার এন্ডোর্সমেন্ট সহ। অবশ্যই মিনিমাম ৬ মাসের ভ্যালিডিটি থাকতে হবে।
  • হোটেল বুকিং এর কাগজপত্র ।
  • সবশেষে রিটার্ন টিকেট।

এবার আসি, হোটেল বুকিং এর কাগজপত্র কিভাবে ম্যানেজ করবেন? booking.com এ গিয়ে সার্চ দিলেই হবে, যেই হোটেলে বা রিসোর্টে থাকতে চান ঐটাতে বুকিং দিয়ে বুকিং কনফার্মেশনের কাগজ প্রিন্ট করলেই খেলা শেষ! বাই চান্স, বুকিং করা গেল না, তখন দিনপ্রতি আপনি মিনিমাম ৫০ ডলার খরচ করতে পারবেন এইটার সিউরিটির জন্য ডলার দেখাইতে হবে ইমিগ্রেশনে। তবে এইটা ঝামেলার কাজ! বুকিং বেটার !

আরেকটা কথা, on arrival visa এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ডলার এনডোর্স করা যাবে ২০০ ডলার পার পারসন! এটা জাস্ট নিয়ম। সর্বোচ্চ ৫০০০ ডলার নিয়ে যাওয়া যাবে। ঐগুলা কেউ জিজ্ঞেস করবে না। ক্রেডিট কার্ড থাকলে বেশ ভাল।

এবার আসি রিটার্ন টিকেট ম্যানেজ করার বিষয়ে। রিটার্ন টিকেট কাটার আগে কয়দিন থাকবেন আগে থেকে ঠিক করে নিতে হবে। ট্যুর প্ল্যান সেট করে নিন, এর পরে ফেরার দিন ধার্য হলে সেই দিনের রিটার্ন টিকেট কেটে নিন। একটা প্রিন্ট করে নিয়ে নিবেন।

এই তিনটি জিনিস ঠিক থাকলে ইমিগ্রেশনে কোন ঝামেলা হবে না।

এয়ারলাইন্স, টিকিট

একটু চেক করে নিতে হবে কোন এয়ারলাইন্সে গেলে খরচ কম পড়বে এবং সময় কম লাগবে। আমি Maldivian এয়ারলাইন্স এ গেসিলাম (Maldivian.aero), ভালোই লাগসে। তবে টাইমিংটা একটু ঝামেলার। পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেক রাত হয়ে যায়। চেন্নাই হয়ে যায়, চেন্নাইতে ৪৫ মিনিট থামে।

টিকেট করে রাখবেন মিনিমাম ১৫-২০ দিন আগে, তাইলে ৪০-৪৫ হাজার / পার পারসনে ( রাউন্ড ট্রিপ) হয়ে যাবে। ছুটির দিনে যেমন ঈদ,কোরবানের সময় গেলে ধরা খাওয়া নিশ্চিত, ওই টাইমে হোটেল ভাড়া থেকে শুরু করে প্লেইন ফেয়ার সবকিছুই খুবই বেশি। 
সুতরাং সময় নির্বাচন খুবই ইম্পরট্যান্ট।

হোটেল বা রিসোর্ট বুকিং

মালদ্বীপে সবগুলাই আইল্যান্ড। বিমান বন্দরটাও (Valena International Airport) HULHULE নামক একটা আইল্যান্ডে।

এয়ারপোর্ট থেকে ৫ কিলো দূরত্বের মধ্যে দুইটা আইল্যান্ড। একটা HULHUMALE (গাড়িতে যাওয়া যাবে), আরেকটা Male city যা ফেরিতে যেতে হবে। তবে সুখবর হলো ডিসেম্বরের মধ্যেই একটা ব্রীজ হয়ে যাচ্ছে,তখন আর ফেরি লাগবে না।

এইগুলা সিটি টাইপের হইলেও আইল্যান্ডগুলো ঘুরে ঘুরে দেখবেন, খুবই সুন্দর । এখানে তুলনামূলক খরচ অনেক কম। কিন্তু প্রাইভেট আইল্যান্ডে খরচ অনেক বেশি। ঐগুলো অনেক দূরে দূরে। মালদ্বীপে যাবেন, কিন্তু প্রাইভেট আইল্যান্ডে যাবেন না, ব্যাপারটা খুব আফসোসের। তাই যেতে হবে।

কিন্তু ওদের স্পিডবোটে কিংবা সি-প্লেনে যেতে হবে। ওই ফেয়ারটা খুবই বেশি। স্পিডবোটে ৫ কিলো দূরত্বের আইল্যান্ডে যেতেও ১০৪ ডলার/প্রতিজন ( রাউন্ড ট্রিপ) !!!

Sea-প্লেইনে আরো বহুত বেশি। তবে যেটাতেই যান, হোটেল বা রিসোর্ট কর্তৃপক্ষকে আগে থেকেই ইনফর্ম করতে হবে “ট্রান্সপোর্ট লাগবে” ! টাইমিংটা বলতে হবে, তখন ওরা এসেই আপনাকে খুঁজে নিয়ে যাবে ।

এয়ারপোর্ট থেকেই সব দিকে যাওয়া যায়, এয়ারপোর্টে একটা ইনফরমেশন সেন্টার আছে, ওখান থেকে সব জায়গায় ফ্রিতে ফোন করা যাবে। আরেকটা কথা, পুরা মালদ্বীপে “ডলার” চলে, সুতরাং ডলার এক্সচেঞ্জ করার কোন দরকার নাই।

যেদিন মালদ্বীপে যাবেন ওইদিন সিটিতে থাকাই বেটার, অনেকটা সময় চলে যায় বলে ঐদিন প্রাইভেট আইল্যান্ডে যাওয়াটা লস !

Hulhumale তে ৪০ ডলারের হোটেলও আছে, এইটা ওখানে লোয়েস্ট। তবে সব জায়গায় ট্যাক্স বেশি। ওদের আজব আজব কিছু ট্যাক্স আছে। ৪০ ডলারের হোটেল হয়ে যাবে সব কিছু মিলাইয়া মিনিমাম ৬০ ডলার !! 😂 হোটেলকেও বলে দিতে হবে এয়ারপোর্ট শাটল লাগবে, তাইলে তারা এসে নিয়ে যাবে, এটার জন্য খরচ পড়বে প্রায় ১৫-২০ ডলার। সবাই ছেলে হলে এইসব শাটল লাগে না, হেঁটে হেঁটে কিংবা এয়ারপোর্ট সার্ভিস (বাস) এ একদম কম খরচে হোটেলে পৌঁছা যাবে।

একটা কোকের ক্যান হইল ৩ ডলার প্রায় ! প্রাইভেট আইল্যান্ডে ৪ ডলার ! সুতরাং হিসাব করে খাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ।

ড্রাইভার থেকে শুরু করে ওয়েটার পর্যন্ত সবাই ধুমায়া ইংলিশ বলে, কোন ধরণের ধান্দাবাজ নাই, এইটাই শিক্ষার মান!!

Hulhumale তে প্রচুর বাঙালি আছে। প্রতিটা হোটেলেই পাওয়া যায় মিনিমাম একটা বাঙালি ওয়েটার। Tea times নামে মেইন রাস্তার পাশে একটা দোকান আছে, দেখলেই বোঝা যাবে বাঙালি দোকান! খুঁজে বের করতে পারলে খানাপিনা নিয়ে পেইন খাবেন না, নইলে খাবার নিয়ে প্যারা খাবেন।

সব হোটেলেই খাবার খাবেন মালদ্বীপের “লোকাল মেন্যু” থেকে, তাইলে খরচ অনেক কমবে। তবে বাঙালি রেস্টুরেন্ট খুঁজে পেলে শান্তি। ৫ ডলারের মধ্যে পেট ভরে খেতে পারবেন।

রাস্তায় হাঁটলে নিজেই অনেক কিছু আবিষ্কার করবেন, আর প্রতিটা স্টেপে স্টেপে নিজের দেশ আর এই দেশের পার্থক্য দেখে লজ্জা পাবেন 🙁

✳️✳️ প্রাইভেট আইল্যান্ড ✳️✳️

টানা ২-৩ দিন থাকবেন। ওখানে গার্ডেন ভিলা, সুপিরিয়র বিচ বাংলো,ওয়াটার ভিলা – ক্যাটাগরির মধ্যে সুপিরিয়র বিচ বাংলো বেটার । ওয়াটার ভিলায় শুধু শুধু টাকা অপচয় হয়। বিচ বাংলো চমৎকার। ঘুম থেকে উঠেই চোখের সামনে নীল সাগর, আহ !

সাজেস্ট করব এয়ারপোর্ট এর আশেপাশের আইল্যান্ডে যাওয়ার জন্য, সবদিকে সুবিধা। সব রিসোর্টের সৌন্দর্য প্রায় একই, পার্থক্য খালি রুমের দামের হেরফের। বুকিং করে রাখবেন ১৫-২০ দিন আগে, তাইলে কম দামে পাবেন। ১৫০ ডলারে সুপিরিয়র বিচ বাংলো পাওয়া যাবে। ২/৩/৪ জনের রুমও আছে, বুকিং করার সময় দেখে নিবেন।

এই ১৫০ ডলারে ব্রেকফাস্ট ফ্রী। ওখানে খাবারের দাম মারাত্মক। সুতরাং লাঞ্চ,ডিনার all-included offer নিতে পারেন। অথবা শুধু ডিনার+ব্রেকফাস্ট নিতে পারেন। দাম অনেক কমে যাবে।

সাবধান, অফারসহ না নিয়ে লাঞ্চ বা ডিনার করতে যাবেন না, তখন আপনারে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। 😂😂

রুম + খাবার একসাথে চেক করে বুকিং দিয়ে দিবেন। তবে এইটাও মাথায় রাখবেন। ২০০ ডলারের বিল ভ্যাট সহ ৩০০ ডলার হয়ে যাবে অনায়াসে !! এইটাই সমস্যা মালদ্বীপে। প্রচুর ভ্যাট, প্রচুর খরচ।

মোদ্দাকথা, ঠিকঠাক প্ল্যান করে গেলে দুইজন মিলে ( ২ রাত সিটিতে, ২ রাত প্রাইভেট আইল্যান্ডে ) ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার মধ্যে ভালোমত ঘুরে আসা সম্ভব। আরও এক রাত প্রাইভেটে কাটাইতে চাইলে ৩০,০০০ টাকা অথবা সিটিতে কাটাইতে চাইলে ১০,০০০ টাকা যোগ করতে হবে।

আর কোন প্যারা নিতে না চাইলে সরাসরি এজেন্সি, এক্ষেত্রে একটু বেশি পড়তে পারে।

সবশেষে

ফেরার আগের দিন সিটিতে চলে আসা বেটার। প্রাইভেট আইল্যান্ড থেকে সিটিতে দুপুরের দিকে চলে আসবেন। সিটি ঘুরবেন। বিশ্বাস করেন, একটা বারের জন্যও বিরক্তি আসবে না। পুরো মালদ্বীপই খুব বেশি সুন্দর। শহর কিংবা প্রাইভেট আইল্যান্ড সবদিকেই শুধু স্বচ্ছ নীল জলরাশি, এ যেন এক টুকরো স্বর্গ ধরার বুকে !

আপনি যদি কোন ওয়াটার এক্টিভিটি করতে চান ( স্নোর্কলিং, ডাইভিং, ফিশিং ইত্যাদি) তবে তা সব জায়গাতেই পারবেন। সিটিতে হলে কম দামে হয়ে যাবে, কিন্তু প্রাইভেট আইল্যান্ডে প্রচুর খরচ হবে ! কাহিনী সেইম, খালি টাকা বেশি!

এই হলো মালদ্বীপ এর টুকটাকি। ঘুরে আসেন মালদ্বীপ। আসার পর সাজেশনের জন্য ধন্যবাদ দিতে ভুলবেন না যেন 😆😆

Leave a Comment
Share