সাগরকন্যা কুয়াকাটা ভ্রমণ সহায়িকা

কম টাকায় ট্যুরটাকে আরো বেশি এনজয়েবল করতে চান? সারা জীবন মনে রাখার মত একটি ট্যুর দিতে চান? প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য অবলোকনে বিন্দু পরিমাণও কিছু মিস করতে চান না? তাহলে কুয়াকাটা নিয়ে এই লেখাটি আপনার জন্য।

কুয়াকাটা (Kuakata) যাওয়ার আগে অনেক পোষ্টে, ব্লগে যা পড়েছি তাতে কুয়াকাটার মানুষ ও স্থানীয় বাইকারদের সম্পর্কে রীতিমত একটা নেগেটিভ ধারণা সৃষ্টি হয়েছিল। যাহোক এই পোষ্টে তা নিরসনের চেষ্টা করব। 

কুয়াকাটা ঢাকা থেকে দুইভাবে যাওয়া যায় জলপথে লঞ্চে ভায়া বরিশাল বা পটুয়াখালী হয়ে। আবার স্থলপথে ঢাকা থেকে সরাসরি কুয়াকাটায় বিভিন্ন বাস যায়। যেগুলো ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে যায়। যেমন হানিফ, সাকুরা,সৌরভী,সমুদ্র সৈকত পরিবহন ইত্যাদি ভাড়া ৬০০-৬৫০। এখন যেহেতু শীতকাল তাই আমি বাসে যাওয়া ই সাজেস্ট করব কেননা লঞ্চের ডেকে রাতেরবেলা অসহনীয় শীতের কষ্ট ভোগ করতে হবে। বাসে গেলে রাস্তায় যানজটের ঝামেলা না থাকলে সকাল ৭-৮ টার মধ্যে কুয়াকাটা থাকবেন। তারপর আপনার প্রথম কাজ হচ্ছে কম টাকায় থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল খোজে বের করা।

বীচের কাছেই কয়েকটা হোটেল আছে – হোটেল সৈকত,হোটেল সাগর নীড় এগুলোতে ৮০০-১০০০ টাকায় ভাবল বেডের রুম পেয়ে যাবেন(একটু দামাদামি করতে হবে)। প্রতিরুমে অনায়াসে ৫-৬ জন থাকতে পারবেন। হোটেল তো পেয়ে গেলেন, এখন দরকার কম টাকায় ভালো খাবার। হোটেলের কাছেই চার রাস্তার মোড়ে বেশ কয়েকটা খাবার হোটেল আছে যেগুলোতে অবশ্যই প্যাকেজ সিস্টেমে খাবেন। যেকোন মাছ দিয়েই খান না কেন প্রতিবেলা ১২০-১৪০ এর বেশি খরচ হবে না।

থাকা খাওয়া তো ম্যানেজ হল এখন ঘুরে দেখার পালা। কুয়াকাটায় সবমিলিয়ে ১০-১২ স্পট আছে। বাইকাররা বলবে ১৮ টা স্পট। কিন্তু স্পট গুলো খুব বেশি দুরে দুরে নয়। সবচেয়ে দূরবর্তী যেটা ক্রেব আইল্যান্ড সেটা কিন্তু খুব আহামরি কিছুনা। আপনি পশ্চিমাংশের তিন নদীর মোহনার আগেও প্রচুর লাল কাকড়া দেখতে পারবেন। প্রথমেই আমি বলে নিছি সারাজীবন মনে রাখার মত ট্রুর যদি দিতে চান। তাই আমি সাজেস্ট করব পায়ে হেঁটে হেঁটে কুয়াকাটার স্পটগুলো ঘুরার। এতে দুই ই লাভ এক টাকা ও বাঁচবে দুই প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের গভীরে প্রবেশ করা যাবে। আমি লেবুরচরের দিকে দুইজন ফরেনারকেও দেখেছি যারা আমাদের মত পায়ে হেঁটে ঘুরতে বেড়িয়েছেন। যারা সুদূর নেদারল্যান্ড থেকে আমাদের দেশে এসেছেন সূর্যদয় আর সূর্যাস্ত দেখতে।

এখন আসি পায়ে হেঁটে ঘুরাঘুরির টোটাল প্ল্যানিং এ

সকালের নাস্তা করে হোটেলে এসে রেস্ট নেন যেহেতু সারারাত বাস জার্নি। তারপর বীচে হালকা হাটাহাটি করে দুপুরে খাবার খেয়ে ৩টা দিকে বীচের পাড় দিয়ে পশ্চিম দিকে হাটঁতে শুরু করেন কিছুদূর যাওয়ার পর ই পড়বে শুটকির পল্লি তারপর লেবুরবন,(ঐদিকে যাওয়ার পথেই দেখতে পারবেন আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ সূর্যাস্ত) ফাতরার বনের পূর্বাংশ ও তিন নদীর মোহনা একসাথেই, ঐদিকে প্রচুর লাল কাকড়াও দেখেতে পাবেন। তিন নদীর মোহনা দেখে আবার একই রাস্তায় ব্যাক করেন। রাতে কুয়াকাটা বীচ থেকে বড় একটা টুনা মাছের বাড়বিকিউ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন দাম নিবে ৫০০-৬০০।

পরদিন খুব সকালে সূর্য ওঠার আগে ঘুম থেকে ওঠে বীচের পাড় দিয়ে পূর্বদিকে হাঁটা শুরু করেন কিছুদূর গেলেই দেখতে পাবেন ঝাউবন, আর দেখতে পারবেন আপনার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সূর্যদয়। তারপর হাটতে হাটতে একসময় গঙ্গামতির লেকের পাড় চলে আসবেন। আমি মনে করিনা আর সামনে যাওয়ার দরকার আছে তারপর একই রাস্তায় ব্যাক করেন। কুয়াকাটায় এসে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করেন। তারপর দুইমিনিট হেটেই চলেন যান কুয়াকাটার কুয়া(যেটার নামে কুয়াকাটার নামকরণ করা হয়েছে),অষ্টধাতুর বোদ্ধ মুর্তি ও রাখাইন মার্কেট ঘুরতে। আর বাকি আছে শুধু একটা প্লেস সেটা হলো মিশ্রিপাড়ার বোদ্ধ মুর্তি ও কুয়া ।সেখানে চাইলে ইজিবাইক নিয়ে ঘুরতে আসতে পারেন। তারপর আপনার নিজের মত বিকালটা ঘুরে ফিরে সন্ধ্যার বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সব বাসগুলোই ৭-৮ টার মধ্যে ছেড়ে দেই। 

আমি কুয়াকাটার সবগুলো স্পট বাইকে ও ঘুরেছি এবং হেটে ও ঘুরেছি। আমার কাছে পায়ে হেঁটে ঘুরাটাই সবচেয়ে ভালো লেগেছে। এখন কারোর পক্ষে যদি পায়ে হেটে ঘুরাটা খুব কষ্টকর হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই আপনি বাইকে ঘুরবেন। আমি একজন বাইকারের নাম্বার দিচ্ছি ওনি আপনাকে কুয়াকাটার সবগুলো স্পট ৫০০ টাকায় ঘুরিয়ে দেখাবেন। এক বাইকে দুইজন করে বসতে পারবেন। বাইকার ইব্রাহীম ভাই 01722841433 (খুবই অমায়িক একজন মানুষ)। 

Leave a Comment
Share