কাশফুল – ঢাকার কাছের কিছু কাশবনের খোঁজ

কাশফুলকে কেন্দ্র করে শরৎকালে কাশবনে জমে উঠে দর্শনার্থীদের মাতামাতি। আর হবেই না কেন? কাশফুলকে কেন্দ্র করেই শরতের প্রতি এত ভালোলাগা। “শরৎ মানে থকথকে নীল আকাশ, শরৎ মানেই কাশফুলের আভাস” বর্ষার পরে প্রকৃতিতে এমনই আগমনী বার্তা পাঠিয়ে সান্নিধ্য ঘটায় শরৎকাল। শুভ্রতার প্রতীক বলা হয় এই ঋতুকে। অনেকের কাছেই শরৎকাল বেশ প্রিয় একটি ঋতু। আর এই শরতের প্রধান আকর্ষণ কাশফুল। যদিও এই ফুলগুলোর নেই কোনো চাকচিক্য, নেই সুঘ্রাণ, তবুও যেন শরৎ এলেই দর্শনার্থীদের মনে অতুলনীয় আনন্দের জাল বুনে এই ফুলগুলো। কাশফুল নিয়ে দূরদর্শিতার অন্ত নেই কল্পনাপ্রেমীদের মনে। কেননা কাশফুলের সাথে মিশে আছে কত না অগোছালো খুশি, জড়িয়ে আছে কত না দুরন্তপনার স্মৃতি। শরৎ এলে যা এখনো বুঝি পিছু ডাকে, ভাগিয়ে নিয়ে যায় শৈশবে ফেলে আসা দুরন্তপনার সেই দিনগুলোতে।

শরতে শিউলির ঘ্রাণে রংধনু রাঙানো বিকেলে, রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরি ক্ষণে, পেঁজা তুলোর মতো দিগন্তে ভেসে চলা মেঘের ভেলা আর কাশফুলের মেলা যেন এক অন্যরকম অনুভূতি জাগিয়ে তোলে জাগ্রত মনে। শরতের মৈত্যকুল মাতানো কাশফুল শুধু জন মনেই নয় সাড়া জাগিয়েছে কবি মনেও , শরতের রংধনু মাথা মেঘহীন নীল আকাশে কবিতারাও যেন অন্তমিল খুঁজে পেয়েছে। তাই বুঝি কবি লিখেছেন –

“ভেবেছিলাম প্রথম যেদিন ফুটবে তোমায় দেখব,
তোমার পুষ্প বনের গাঁথা মনের মত লেখব।
তখন কালো কাজল মেঘ তো ব্যস্ত ছিল ছুটতে,
ভেবেছিলাম আরো ক’দিন যাবে তোমার ফুটতে।….”

আজ তাই ঢাকার কাছাকাছি অবস্থিত এবং খুব সহজেই ঘুরে আসতে পারার মতো এমনই কিছু কাশবন নিয়ে আলোচনা করবো আজকের এই পর্বে।

দিয়াবাড়ি

ইট পাথরের শহরে কাশবনের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত দিয়াবাড়ি এখন আদর্শ জায়গা। বিগত কয়েক বছরে পর্যটকদের পদচারণাই প্রমান করে দিয়েছে এই জায়গার জনপ্রিয়তা। মূলত কাশবনকে কেন্দ্র করে ওখানে শরৎকালে জমে উঠে দর্শনার্থীদের আনাগোনা। কাশবন দর্শনের পাশাপাশি চমৎকার একটা বিকেলও উপভোগ করা যাবে দিয়াবাড়িতে। দিয়াবাড়ি যাওয়ার জন্য উত্তরা হাউস বিল্ডিং নেমে মাস্কট প্লাজার সামনে থেকে যেকোনো লেগুনা কিংবা রিক্সা চালককে দিয়াবাড়ি বটতলার কথা বললেই নিয়ে যাবে।

ছবি তুলেছেন – মশিউর রহমান

বসুন্ধরা ৩০০ ফিট

কাশফুল পরিদর্শনের জন্য ঢাকার মধ্যে আরো একটি চমৎকার জায়গা ৩০০ ফিট। বসুন্ধরা ৩০০ ফিটে পিচঢালা রাস্তার দু’ধারে কাশফুলের সমারোহে খোলা প্রান্তরে চমৎকার এক ভালোলাগা কাজ করে বিনোদন-প্রেমীদের মনে। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে সিএনজি ভাড়া করে নিলেই সরাসরি যাওয়া যাবে ৩০০ ফিটে।

যমুনার চর

যমুনা নদীর তীরে জেগে উঠা চড়ে কাশবনের ভীড়ে হারিয়ে যেতে চাইলে চলে আসতে পারেন মানিকগঞ্জে যমুনার চড়ে। যমুনার চড়ে যাওয়ার জন্য গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে শুভযাত্রা কিংবা লাক্সারি পরিবহনের বাসে চড়ে আরিচার পুরনো ফেরিঘাটে চলে যেতে হবে। তারপর সেখান থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাড়া করে সরাসরি যমুনার চড়ে যাওয়া যাবে।

দক্ষিণখান কাশবন

ষড়ঋতুর চক্রে শরৎ এলে কাশফুলেরাও আরেক পসরা বসায় দক্ষিণখানের কাশবনে। খিলক্ষেত বাজার থেকে উত্তরমুখী রাস্তা ধরে চললেই রাস্তার দু’ধারে দেখা মিলবে শুভ্রতার রাজ্যের।

ছবি তুলেছেন – জাকির হোসেন

মায়াদ্বীপ

মেঘনার বুকে উঁকি দেয়া দ্বীপে কাশফুলের সন্ধান করতে চাইলে চলে যেতে পারেন মায়াদ্বীপে। এই দ্বীপে যেতে হলে গুলিস্থান থেকে দোয়েল কিংবা বোরাকের এসি বাসে চড়ে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা চলে আসতে পারেন। তারপর সেখান থেকে অটোরিকশা ভাড়া করে চলে আসুন বারদী বৈদ্দের বাজার ঘাটে। তারপর শুধু একটি নৌকা ভাড়া করে সরাসরি চলে আসুন মায়াদ্বীপে।

আফতাব নগর

আফতাব নগর কাশের রাজ্যে যেতে চাইলে প্রথমে রামপুরা ব্রিজে চলে আসুন। সেখানে ব্রিজের পাশেই দেখতে পাবেন আফতাব নগরের গেট। গেটের সামনে থেকে রিক্সা চালককে বললেই নিয়ে যাবে সেখানে।

আমুলিয়া মডেল টাউন

ডেমরা স্টাফ কোয়াটারের পাসেই আমুলিয়া মডেল টাউন আর টাউনের ভিতরে এভাবেই ফুটে থাকে শুভ্র কাশফুল গুলো। আমুলিয়া মডেল টাউনে ঢোকার গেইট থেকে শুরু করে অনেক দূর ভিতরে পর্যন্ত এভাবেই ফুটে থাকে কয়েকশ একর জুড়ে কাশফুল গুলো। সময় করে ঘুরে আসতে পারেন একটি সুন্দর বিকেলবেলা। নিরাপত্তা দিনের বেলায় যথেষ্ট ভালো, পুলিশ থাকে সব সময়।

ছবি তুলেছেন – মাসুম হোসেন

যাওয়ার উপায়: গুলিস্তান থেকে ফ্লাইওভার দিয়ে ডেমরা স্টাফ কোয়াটার আসবেন, ভাড়া নিবে ৩০টাকা। তার পর সেখান থেকে রামপুরা গামী রাস্তার দিকে রিক্সা ৩০ টাকা নিবে। আর বাসে/লেগুনা করে গেলে ৫ টাকা নিবে। আমুলিয়া মডেল টাউন বললেই নামিয়ে দিবে। আবার রামপুরা ব্রিজের উপর দিয়েও আসতে পারবেন। সেখান থেকে ডেমরা স্টাফ কোয়াটার গামী বাসে করে আসবেন, গাড়ী রামপুরা বনশ্রী হয়ে আসে। আমুলিয়া মডেল টাউনের সামনে বললেই নামিয়ে দিবে। ভাড়া নিবে ২৫ টাকা।

পদ্মা নদী

শরৎকালে শুভ্র কাশের আভাস ছড়িয়ে পড়ে পদ্মার তীরবর্তী নানা স্থানে। এসময় কাশফুল দেখতে চাইলে বেড়িয়ে পড়ুন মাওয়া শিমুলিয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে। তারপর শিমুলিয়া ঘাট থেকে নৌকা যোগে নদী দেখতে দেখতে চলে যান কাশফুলের খোঁজে। 

আশুলিয়া কাশবন

সড়কপথে আনন্দময় ভ্রমণ উপভোগের পাশাপাশি কাশফুল দেখতে চাইলে যেতে পারেন আশুলিয়া কাশবনে। মিরপুর বেড়িবাঁধ থেকে আশুলিয়ার দিকেই দেখা পাবেন এই কাশবনের।

হযরতপুর

কালিগঙ্গা নদীর বাঁকে বাঁকে ও নদীর তীরবর্তী বিস্তীর্ণ ভূমিতে চোখে পড়ে শরতের শুভ্র কাশফুল। কালিগঙ্গা নদীর বাঁকে বাঁকে সাঁজানো এই কাশফুল দেখতে হলে আসতে হবে কেরাণীগঞ্জের হযরতপুরে। এক্ষেত্রে প্রথমে বসিলা সেতু থেকে আটিবাজার হয়ে কিছুদূর এগুলেই পৌঁছে যাবেন হযরতপুরে। তারপর সেখান থেকে নৌকা যোগে নদী পার হলেই পেয়ে যাবেন কাশবনের দেখা।

মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ

বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে কাশফুলের খোঁজে উন্মুক্ত বালুকাময় প্রান্তরে পর্যটকদের ঢল জমে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে। শরতের শোভা কাশফুল দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে দর্শনার্থীরা ছুঁটে  আসে এই বেড়িবাঁধে।

সতর্কতা ও পরামর্শ

  • সাধারণত নির্জন বা নিরিবিলি স্থানেই কাশফুল ফুটে। তাই কাশবনে ঘুরতে গেলে নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে দলবদ্ধভাবে বের হওয়াটাই শ্রেয়।
  • কাশফুল অনেকটা ধারালো এবং এ ফুলের রেণু আঠালো ধরণের। ফলে সাবধানতা অবলম্বন না করলে যেকোনো সময় হাত কেটে যেতে পারে কিংবা কাপড় নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
  • বৃষ্টি হলে কাশফুলের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। তাই কাশফুলের পরিপূর্ণ সৌন্দর্য উপভোগের করতে বৃষ্টির দিন পরিহার করুন।
  • ঘুরতে যাওয়ার আগে যেখানে যাচ্ছেন সেখানে কাশফুল ফুটেছে কি না তা নিশ্চিত হয়ে নিন। কারণ শরৎকালে যেকোনো সময় কাশফুল ফুটে।
  • এলার্জি কিংবা এজমা রোগীদের জন্য বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক।
Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ daytripkashbonkashfull