একদিনের ট্যুরে হরিণমারা এবং বোয়ালিয়া ট্রেইল

অনেকদিন থেকে কোথাও যাওয়া হয় না, চিন্তা করলাম বাড়ির কাছে মিরসরাই এর বোয়ালিয়া ও সাথে হরিনমারা ট্রেইল ঘুরে আসি। আমাদের ১২ জনের টিম, ঢাকা থেকে ৮ জন ও আমরা চট্টগ্রাম থেকে ৪ জন।

হরিণমারা ট্রেইল

নীলাম্বর লেক

সকাল ৯ টায় ছোট কমলদহ বাজারে নামলাম। ছোট কমলদহ থেকে হাতের বামদিকে যেতে হবে। ৫ মিনিটের মতো হাটলে রেল লাইন পাবেন তার আগে হাতের ডানপাশে ঈদ্গাহ পরবে। স্থানীয় এক ছেলে নিয়ে রেল লাইন পার হয়ে ক্ষেতের মাঝ এর রাস্তা ধরে গিয়ে বাম দিকে পাহাড়ি পথে ১০/১৫ গেলে ওয়াটার ড্যাম পরবে। ড্যামের কারনে পানি জমে লেকের সৃস্টি হয়েছে। এটাই নীলাম্বর লেক বা বাওয়াছড়া লেক। অনেক সহস্রধারা যাওয়ার সময়ের লেকটার মতো।

নীলাম্বর লেক

হাটু ভাঙ্গা ঝর্ণা

লেকের বাম দিকে হাটা শুরু করলে ১৫ মিনিট মতো বাউয়াছড়া ঝিরি পাবেন, চাইলে নৌকা দিয়েও লেক পার হওয়া যায়, ভাড়া জন প্রতি ৪০/৫০ টাকা, এ ঝিরি দিয়ে ২/৩ মিনিট হাটলে পাবেন Y জংশন। এটার বাম দিকে ৩/৪ হাটলে পাবেন হাটুভাঙ্গা ঝর্ণা ।

হরিন মারা

হরিণমারা ঝর্ণা

এবার আবার Y জংশনে ফিরত আসতে হবে, এসে ডানের ঝিরিতে ১০ মিনিটে মতো হাটলে Y জংশন পাবেন। হাটতে হবে বামের ঝিরিতে, ৪/৫ মিনিট হাটলে পাবেন হরিণ মারা ঝর্ণা

সর্প প্রপাত

আবার Y জংশনে ফিরত এসে ডানের ঝিরি ধরে কিছু দূরগেলে সর্প প্রপাত দেখতে পাবেন। কিছুটা খাড়া চাইলে ঝণা বেয়ে উপরে উঠতে পারেন।

আমরা পিচ্চি গাইডকে ২৫০ টাকা দিয়েছিলাম। সকাল ৯ টায় শুরু করে ১১.৪৫ মাঝে ৩ টা শেষ করে আমার বাজারে চলে আসি। এবার গন্তব্য বেয়ালিয়া ট্রেইল। বাজার থেকে লেগুনা নিয়ে সরাসরি মিরসরাই বাজার হয়ে ব্রাক পোল্ট্রি অফিস। ভাড়া ৩৫০ টাকা

বোয়ালিয়া ট্রেইল

বোয়ালিয়া ঝর্ণায় যেতে চাইলে মিরসরাই মূল স্ট্যান্ড থেকে যেতে হবে। স্ট্যান্ড থেকে প্রথমে ব্র্যাক পোল্ট্রি অফিস এর সামনে যেতে হবে। দুরত্ব প্রায় ২.৫ কিঃমিঃ এরমত। সি এন জি বা রিকসায় যেতে পারবেন। সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ১৫ টাকা , রিজার্ব ৭৫টাকা। কিন্তু ঢাকা থেকে রাতের বাসে গেলে সাধারনত খুব ভোরে নামিয়ে দেয় । তখন রিকসা বা সি এন জি পাওয়া যায় না। তাই সময় নষ্ট না করে পূর্ব দিকে রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করবেন। রাস্তাটিতে চাঁদপুর গোভনীয়া সড়কের উন্নয়ন প্রকল্পেরফলক দেয়া আছে। মিরসরাই ডিগ্রী কলেজের নির্দেশক বোর্ডও আছে।

ট্রেইল শুরু করার আগে দোকানে বলে গেলে আপনার দের দুপুরে খাবার করে রাখবে। আমরা হালকা পাতলা খেয়ে গাইড নিয়ে ১২.৩০ দিকে রওনা দিলাম। আনুমানিক ৪০ মিনিট হাটার পর একটা Y জংশন পাবেন। ওখানে ছোট একটা মাচার ঘর আছে। ডানে বোয়ালিয়া বামে বাউশ্যা ও বাকিগুলা। আমরা আগে বামে রওনা দিলাম

পালাকাটা খুম

জংশন থেকে হাটার ৫ মিনিটের পর হাতের ডানে একটি ঝিরি পরবে । ওই ঝিরি ধরে ৫ মিনিটের মত গেলে ঝিরি মুখে এটি দেখতে পাবেন।

উঠান

আগের পথে এসে ৫ মিনিট হাটলে ঝিরির মাঝে প্রায় সমতল জায়গায় অনেক গুলো বড় পাথর ছড়িয়েছিটিয়ে আছে। সমতলের কারনে উঠান বলে।

আন্দার মানিক ঝর্ণা

উঠান থেকে ঝিরি পথে ৫ মিনিট হাটলে হাতের বামদিকে একটা ঝিরিমুখ পাবেন। এপথে ২/৩ মিনিট হাটলে পাবেন ঝণা। এই ঝর্ণার ঝিরিটি আন্ধারমানিক বাগান থেকে পড়ার কারনে এর নাম আন্ধারমানিক ঝর্ণা।

বাইশ্যা ছড়া

বোয়ালীয়া ঝর্ণা হয়ে এখানে যেতে হবে। এটি ঠিক বোয়ালীয়া ঝর্ণার উপরে। ঝর্ণার বাম পাশ ধরে উপরে উঠে গেলে এটি পাবেন।আপনি ঝিরি ও পাহাড়ি পথে উঠান ঝণা হয় যেতে পারবেন। আন্দারমানিক থেকে ১৫/২০ হাটলে পাবেন বাউশ্যা ঝণা। বাউশ্যার যাওয়ার আগে একটা জংশন পাবেন, ডানে গেলে বাউশ্যা।

নহাতে খুম

বাউশ্যা থেকে মূল ঝিরি ধরে গেলে ঝিরিমুখে পরবে নহাতে খুম। নহাতে খুমের ২/৩ মিনিট আগে হাতের বামে পরবে তিন নং ছড়ার ঝিরি। রাস্তা খারাপ থাকায় আমরা তিন নং ছড়ার মুখ পর্যন্ত যেয়ে ফিরে আসছি।

লতা বায়ানী

ন হাতে ও বাউশ্যা যাওয়ার সময় হাতের ডানে গিয়েছিলাম, এবার হাতের বামে যেতে হবে। এখানে গাছের লতা সিঁড়ির মত ঝুলে আছে যা বেয়ে আপনি অনেক উপরে উঠতে পারবেন। স্থানীয় লোকেরা এই লতা বেয়ে উপরে উঠে ঔষুধি গাছ সংগ্রহ করে।

নাম জানি না

লতা বায়ানী ঝণা ঝিরি ধরে পরে উঠলে আরেক টা ঝনা পাওয়া যায়, অনেকটা মাতাইতুয়ারী ঝনার মতো। গাইড নাম বলতে পারলো না ওটার। ঝিরি ধরে আরো উপরে যাওয়ার ইচ্চা ছিলো, কিন্তু সময় ও টিম মেম্বার বাকিদের কথা চিন্তা করে আর যাওয়া হয় নাই। ১২ জনের টিমের খালী ৫ জন ঐ পযন্ত গিয়েছিলা, বাকিরা পথে আমাদের জন্য অপেক্ষায় ছিলো।

বোয়ালীয়া ঝর্ণা

হাটা শুরুর পর যে জংশন থেকে আলাদা হয়ে বামে গিয়েছিলাম, আবার ওখানে ফিরত আসলাম। মাচায় ৩/৪ মিনিট বসে, এবার ডানে হাটা দিলাম। স্থানীয়রা অনেকে বোয়াইল্ল্যা বলে। হাতের ডানে ১৫/২০ মিনিট গেলে পাবেন বোয়ালিয়া ঝর্ণা। এটার যাওয়ার ২ টি রাস্তা একটা গলা পানি পার হয়ে আরেকটা খাড়া পাহাড়ী রাস্তা দিয়ে। আমরা ৪/৫ জন পাহাড়ী রাস্তায় যাই বাকিরা গলা পানি পার হয়ে। এবার ভিজো কারন সারাদিন কোন ঝণায় সময় দেই নাই ভিজার জন্য , মানে অল্প সম ছিলাম। এখানে প্রায় ৪০/৫০ মিনিটের মতো ভিজলাম। ঝণার পানি পিঠে যেন পাথরের মতো পড়তেছিলো।

গোসল করে ৪.৩০ দিকে আবার ব্রাক অফিসে ফিরত আসলাম। যাওয়ার সময় খাবার অর্ডার করা ছিলো। সবার পেটে ক্ষুদা যে য়ার মতো দাড়িয়ে বসে খাওয়া শুরু করলাম। ভাত, সবজি, ডাল, আলু ভর্তা ও মুরগী, ১১০ টাকার প্যাকেজ। মুরগী বাদে সব আনলিমিটে। গাইডের খাবারের খরচ ও আমাদের ছিলো। ৫০০ টাকা গাইড খরচ, যদিও সে ৮০০/ চাইছিলো।

যাওয়া

ঢাকার মানিকনগর বা টিটিপাড়া থেকে থেকে স্টার লাইন বা এনাতে ( জীবনের মায়া না থাকলে উঠতে পারেন) রাতে শেষ বাসে উঠলে, ৩/৪ দিকে ফেনী নামিয়ে দিবে ভাড়া ২৭০-৩৫০ টাকা। তারপর ওখানে নাস্তা করে ফ্রেশ হয়ে ৬ টার দিকে ফেনী চট্রগ্রামের বাসে উঠে বললে হবে ছোট কমলদহ বাজারে নামবেন ভাড়া ৫০ টাকা। ফিরার সময় মিরসরাই বাজারে হানিফ বা শ্যামলীর রানিং বাসে উঠে পড়তে পারেন। বা ফেনী এসে স্টার লাইন করে ঢাকা

বাকি কথা

আমরা ১২ জনই ঠিক করেছিলাম বোয়ালিয়া বাদে বাকি ঝর্ণাগুলাতে যেয়ে ১৫/২০ মিনিটের মতো থেকে চলে আসবো। ধুমায়ে ছবি নাই, তাই সময় ছিলো ভালোই আমাদের হাতে। অল্প কয়েকটা ছবি যার ফোনে তোলা হইছিলো, তার ফোন এখন আইসিইউতে। তাই ঝর্ণার ছবি নাই।

পরিশেষে ২ টা ট্রেইলে আমরা একেবারে পরিষ্কার পেয়েছি। আমরা ট্রেইলে কোন ময়লা ফেলিনি। যাতে পরে যারা আসবে তারা যেন আমাদের মতো পরিষ্কার ট্রেইল পায়। তো আপনারাও আশা করি কোন ময়লা ফেলবেন না ট্রেইলে।
Leave a Comment
Share