Altitude Sickness কে আমরা AMS (acute mountain sickness) বলি। আপনারা যারা ভ্রমণ পিপাসু মানুষ আছেন তাদের পক্ষে এর সম্পূর্ণ তথ্য জানা সকলের সম্ভব না কিন্তু তাও কেউ কেউ জেনে / না জেনে অনেকেই High Altitude Tour করতে চলে যাচ্ছেন। আর যাওয়ার আগে কর্পূর, কোকা-৩০, Diamox ওষুধ সাথে নিয়ে যাচ্ছেন। এই Altitude Sickness টা কি, কিভাবে হয়, কি কি উপসর্গ দেখা দেয় এবং তার সমাধান কি আছে তারই কিছুটা ধারণা আজ আমি আপনাদের কাছে সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করবো।
আমার চোখে High Altitude Trekking করা এবং High Altitude Tour করা একই ব্যাপার। মূলত ভারতবর্ষে যে সমস্ত High Altitude tour আছে সেগুলি হলো লেহ – লাদাখ, স্পিতি ভ্যালি, অরুণাচল এর বুম লা পাস্ ও মাধুরী লেক এবং সিকিম এর গুরুদংমার লেক। এই সব ট্যুর করার সময় কখনো Hectic Schedule রাখবেন না। High Altitude Tour করার সময় যতই নাকে কর্পূর টানেন আর যতই জিভে কোকা- ৩০ দিন না কেন, Altitude Sickness সমস্যার সময় এসব কোনো কাজেই দেবে না। আপনি যেকোনো পাহাড়ে ঘুরতে যান না কেন ১টা ব্যাপার আপনার মাথায় রাখতে হবে “সমতল থেকে যত Altitude ভেঙে ওপরের দিকে উঠবেন ততই অক্সিজেন এর পরিমান আস্তে আস্তে কমতে থাকে”. Altitude এর সাথে সাথে অক্সিজেন এর পরিমান এর চার্ট টা দিয়ে দিলাম…
যাদের একটু healthy চেহারা অথবা বয়স্ক, তারা এই Altitude Sickness এর সমস্যায় আগে পরে। কারণ তাদের altitude acclimatization করতে অনেকটা সময় লেগে যায়, আর সেটা ৫০০০ ফিটেও হতে পারে। সাধারণত সবার ৮০০০ ফিট এর পর থেকে Altitude Sickness এর সমস্যা দেখা দেয়। আর এই সমস্যাগুলি হলো মাথাধরা, বমি বমি ভাব, হজম কম হওয়া, মাথাঘোরা এবং ঘুম না হওয়া।
Altitude Sickness প্রধানত দুই রকম….. HAPE (high altitude pulmonary edema) এবং HACE (high altitude cerebral edema). এই HAPE (high altitude pulmonary edema) হলো- ফুসফুসে জল চলে আসা, এই সমস্যা তাদের হয় যারা ১/২ দিনের মধ্যে ৮০০০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছাবে। এই ক্ষেত্রে ঘুম কম হওয়া, বুক ভার, কফ, মাথা ধরা, শরীর দুর্বল হওয়া এইসব উপসর্গ দেখা দেবে। এই ক্ষেত্রে সেই Altitude এ ১টা দিন পুরো বিশ্রাম নেওয়া ভালো, তাহলেই ঠিক হয়ে যাবে।
আর HACE (high altitude cerebral edema) হলো রক্তের তরল পদার্থ মস্তিষ্কে বাধা। এই সমস্যা সকলেরই হতে পারে যদি না প্রতিটা altitude acclimatization না করে একেবারে ১৩০০০ ফুট উচ্চতায় চলে যায়। এই ক্ষেত্রে মাথা যন্ত্রনা, চেতনা হ্রাস, জ্বর এবং স্বাস-প্রস্বাসে সমস্যা দেখা দেবে। এমতাবস্থায় যদি কোনো মানুষ এইসব সমস্যায় ভোগেন এবং তাকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে চিকিৎসা না দিতে পারলে হার্ট এটাক / কোমা / মৃত্যু হতে পারে।
এই পরিস্তিতিতে ভুক্তভোগী শারীরিক ক্রিয়াকলাপ না করাই ভালো এবং তাকে Diamox ট্যাবলেট খাইয়ে অক্সিজেন সাপ্লাই দিতে হবে নতুবা দ্রুততার সাথে Low Altitude এ নিয়ে আসতে হবে।
সমতল থেকে গাড়ি করে যখনি পাহাড়ে উঠবেন অথবা ১টা Altitude থেকে আরেকটা Altitude এ যাবেন, তখন কোনো রকম গাড়ির কাঁচ বন্ধ করবেন না। নাক এবং কান বন্ধ করে রাখবেন না। গাড়ী যত Altitude ভেঙে ওপরে উঠবে ততই আপনারা Altitude এর সাথে সাথে Weather acclimatization করতে থাকবেন। আর Weather acclimatization আমাদের কান এবং নাক খুব দ্রুততার সাথে Body Adjustment করে।
সমতল থেকে ওপরে ওঠার সময় শরীরকে যতটা বেশি সম্ভব ঠান্ডা উপভোগ করতে দিন, শরীর যতটা সহ্য করতে পারবে ততটা। তারপরে আপনি শীতবস্ত্র পরতে পারেন। High altitude ওঠার পর কোকা- ৩০ খেয়ে লাভ নেই, তা খেতে হবে যাত্রার ১ সপ্তাহ আগে থেকে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে৩/৪ ফোটা করে।
যারা দিল্লী থেকে বিমানে লেহ যাবেন এবং মানালি থেকে স্পিতি ভ্যালি যাবেন, তাদের উদ্দ্যেশে একটাই কথা বলতে চাই, এই রুটে হাথে ১টা দিন Altitude acclimatization এর জন্য ধরে রাখবেন, সেদিন কোথাও ঘোরা-ঘুরি না করে ভালো করে বিশ্রাম নেবেন, তা না হলে আপনার বিপদ আপনি নিজেই ডেকে আনবেন।
আমাদের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কচি-কাঁচাদের ভিড় আছে। ভ্রমণের পূর্বে তাদের চিন্তাটাই মাথায় প্রথমে আসে, বিশেষ করে তা যদি হয় পাহাড়ি এলাকায় বেড়ানো। বাবা – মা রা এই ক্ষেত্রে দোটানায় পরে যায়। এর প্রধান কারণ হলো বাচ্চারা তাদের শারীরিক কষ্টের কথা আমাদের সামনে সঠিক ভাবে ব্যাক্ত করতে পারেনা, অনেকেতো আবার চুপ করে থাকে, ফলে বোঝা দায় হয় যে সমস্যাটা কোথায়, সমাধান তো পরের কথা। প্রথমে আমাদের বাচ্চাদের বয়স দেখে বিভাজন টা বুঝতে হবে, বিভাজন-টা অনেকটা নিম্নরূপ…
৩ বছরের নিচে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে তারা পরিবর্তিত যে কোনো পরিবেশে বেড়াতে গেলেই তাদের ঘুম, ক্ষিদে, মুড্- এর মধ্যে একটা আমূল পরিবর্তন চলে আসে। ৩ থেকে ৮ বছরের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এবং যাদের শোনা – বলার অসুবিধা তাদের ক্ষেত্রে শারীরিক কষ্ট ব্যাক্ত করা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। আর ৮ বছর ওপরের বাচ্চাদের সঙ্গে প্রাপ্ত বয়স্কদের শারীরিক অবস্থা কে সম-মানের ধরা হয়। ৪০০০ মিটার (১৩১২৩ ফুট) ওপরে প্রি-স্কুলের কম বয়সী বাচ্চাদের নিয়ে রাত্রিযাপন না করাই ভালো। নাহলে রক্তে কার্বনডাই-অক্সাইড এর মাত্রা কমে গিয়ে স্বাশ-কষ্ট হবে।
সাধারণতঃ অবিভাবকরা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যে সমস্ত সমস্যার সম্মুখীন হয় সেগুলি হলো বায়ুর চাপ জনিত কান ব্যাথা, যেটি নানা কারণে হতে পারে। যেমন : রোপওয়ে অথবা গাড়ি করে স্বল্প সময়ে দীর্ঘ উচ্চতায় উঠে যাওয়া। যে সমস্ত বাচ্চাদের আগে থেকেই সর্দি-কাশি, টনসিল এর সমস্যা থাকে তাদের এই কান ব্যাথার সমস্যা বেশি দেখা দেয়। শারীরিক দিক দিয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ বাচ্চাদেরকেই High Altitude এ নিয়ে যাওয়া উচিত। আপনারা বাচ্চাদের কে বলতে পারেন মাঝে মাঝে নিজেদের নাকে, ঠোঁটে চিমটি কাটতে। যাতে সহজে নাক ও ঠোঁট অবশ না হয়ে যায়। আর নাক দিয়ে রক্ত পরাটা অত্যন্ত সাধারণ ব্যাপার। শুষ্ক অঞ্চলের জন্য এটা হওয়া স্বাভাবিক। নাক দিয়ে জল টানলেই এটা সেরে যায়।
এবারে আসা যাক কি কি সমস্যার সম্মুখীন হলে আপনারা কি কি ব্যাবস্থা গ্রহণ করবেন…
পাহাড়ে ভ্রমণের সময় আপনারা যাত্রা পথে বাচ্চাদের কে নানারকম প্রশ্ন করতে পারেন। যেমনঃ
এই সমস্ত প্রশ্নের আশা মূলক উত্তর না পেলে আপনারা ব্যবস্থা নিতে শুরু করবেন। পারলে গাছ-পালা আছে এমন জায়গা দেখে দাঁড়িয়ে পরবেন।
একটা কথা মনে রাখবেন, High Altitude ভ্রমণে শিশু / বাচ্চারা অসুস্ততা বোধ করা কালীন তাদের সামনে প্যানিকগ্রস্থ অথবা কান্নাকাটি করবেন না। বাচ্চারা মা / বাবাকে প্যানিকগ্রস্থ অথবা কান্নাকাটি করতে দেখলে তারা আরো ভয় পেয়ে যায়, তাতে ওদের সমস্যার কথা সঠিক ভাবে জানতে পারবেন না। একদম সাধারণ ভাবে ওদের সাথে ব্যবহার করে অসুবিধা জানার চেষ্টা করুন এবং মনে সাহস দিন। সাধারণত ৩ বছরের ঊর্ধ্যে যে সমস্ত বাচ্চারা খুব দুরন্ত, তারা ৫০০০ ফুট থেকে ১২০০০ ফুট উচ্চতার মধ্যে যে কোনো Altitude -এ একজন প্রাপ্ত-বয়স্কের থেকেও খুব তাড়াতাড়ি Acclimatization করতে পারে, কারণ তাদের Cardiovascular প্রাপ্ত-বয়স্কদের থেকেও ভালো। তাই বলে শিশু / বাচ্চাদের নিয়ে খুব হেক্টিক জার্নি / হেক্টিক ভ্রমণ পরিকল্পনা না করাই ভালো। ভ্রমণকালে আমাদের কচি-কাঁচারা যদি ভালোভাবে প্রকৃতিকে উপভোগই না করতে পারে তাহলে আমাদের সম্পূর্ণ যাত্রাটাই মাঠে মারা যাবে। তাই সুস্থ থাকুন, সুস্থ রাখুন এবং প্রাণ ভোরে সবাইকে নিয়ে প্রকৃতিকে উপভোগ করুন।
Leave a Comment