দামতুয়া ঝর্ণার পথে পথে

চট্টগ্রাম থেকে আমার টিম সকাল ৬ টা ২০ মিনিটের মারসাতে উঠে চাঁদগাও নতুন থানার সামনে থেকে আর আমি নতুন ব্রিজ থেকে ঐই বাসে উঠি। বাবারে বাবা যে উরাধুরা টান ২ ঘন্টায় কোন বিরতি ছাড়া সকাল সাড়ে ৮ টায় চকরিয়া আলিকদম বাস স্টেশনে নামিয়ে দিলো। নেমে আলিকদমের (Alikadam) লোকাল জিপ খুঁজতে লাগলাম। সময় নষ্ট না করার জন্য জিপ ওয়ালাদের জানালাম আমরা ১৭ কিলোমিটার আদুপারা পর্যন্ত রিজার্ভ যাবো দরদাম করে উঠে গেলাম। গাড়িতে উঠার আগে নাস্তা পানি শুকনা খাবার কিনে নিলাম। এরপর রওয়ানা হলাম আঁকাবাঁকা পাহাড়ী পথ ধরে।

আলিকদমের আগে প্রথম আর্মি চেকপোস্টে নেমে সবার পহ্ম থেকে আমি এন্ট্রি করে দিলাম এবং দামতুয়া (Damtua Waterfall) যাচ্ছি গন্তব্য জানালাম। এরপর আদুপারা যাওয়ার ৭ কিলোমিটার আগে শেষ এবং ভেজালের চেকপোস্ট। সাড়ে ১০ টায় ঐই চেকপোস্টের গেইটে পৌঁছাই। আবার আমি গিয়ে কথা বলি উনারা জানিয়ে দিলেন নতুন নিয়ম হয়েছে কেউ সকাল ১০ টার পর দামতুয়ার জন্য এই গেইট অতিক্রম করতে পারবে না। আমি রিকুয়েস্ট করার পর গেইটে দায়িত্ব থাকা আর্মি ভাই উনাদের উপরের কর্মকর্তাকে কল করে অনুমতি নিয়ে দেন আলহামদুলিল্লাহ। সবার নাম আর আমার বিস্তারিত দিয়ে বিদায় দেওয়ার সময় জানিয়ে দিলেন বিকাল ৫ টার মধ্যে এই গেইট অতিক্রম করতে হবে না হলে কপালে কি অপেক্ষা করবে জানবেনেও না। উনার সাথে আমি অনেক আন্তরিক ছিলাম বলে আমাকে বললেন সাড়ে ৫ টার বেশি করিয়েন না।

এরপর দ্রুত গেইট অতিক্রম করে ভিডিও তে দেখানো রাস্তা দিয়ে যাত্রা শুরু। বাংলাদেশের সর্ব উচ্চতায় অবস্থিত মোটরএবল রোড ডিম পাহাড়ের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় আশেপাশের ভিউ আপনার মন কেড়ে নিবে। সাইকেল নিয়ে এসেছিলাম এই পথে কিন্তু তখন শীতকাল ছিলো বলে পাহাড়ের সবুজ চেহারাটা দেখা হয় নি। আহা ভিউ দেখতে দেখতে ১০ টা ৫০ মিনিটে আদুপারাতে পৌঁছায় গেলাম। জিপ থেকে নেমে গাইড ঠিক করে আমাদের গন্তব্যে আগালাম। ২-৩ টা বড় বড় পাহাড় উঠতে নামতে হয়। মাঝপথে পাবেন ভিডিওতে দেখানো জুম চাষের পাহাড় বেশি সুন্দর প্লেসটা। প্রায় আড়াই ঘন্টা পর আমরা দামতুয়াতে। ৩০ মিনিট ঝর্ণাতে ইচ্ছা মতো দাপাদাপি করে রওযানা হলাম কারণ আমাদের সময় লিমিটেড।

বিকাল ৪ টা ৪৫ মিনিটে আদুপারাতে চলে আসতে পারলাম। পুরা টিম আসতে এবং গাড়িতে উঠতে ৫ টা ২০ মিনিট হয়ে যায়। আর্মি চেকপোস্টে প্রায় ৫ টা ৪৫ মিনিটে পৌঁছায়। সকালের উনারা ছিলেন না ডিউটি পরিবর্তন হয়ে নতুন দুজনের মুখ দেখলাম। উনারা দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাই বৃষ্টিতে পথ পিছলা হাওয়াতে আমাদের দেরি হয় এটা শুনে কিছু বলে নি যেতে দেয় আমাদের। রাত ৮ টায় আমরা চকরিয়া জিপ থেকে নেমে রাত ৯ টার বাসে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। আলহামদুলিল্লাহ একদিনের ভালো ট্রিপ দিয়ে রাত ১১ টায় বাসায় চলে আসি।

খরচের বিবরণ

  • চট্টগ্রাম থেকে চকরিয়া মারসা ১৮০ টাকা
  • জিপ চকরিয়া – আদুপারা – চকরিয়া ৪০০০ টাকা
  • গাইড খরচ ১০০০ টাকা
  • চকরিয়া থেকে চট্টগ্রাম এস আলম ১৮০ টাকা
  • নাস্তা ভাত পানি মিলিয়ে ১৯৫ টাকা
  • জনপ্রতি ১১৮০ টাকা খরচ হয়ে ছিলো মানুষ বেশি হলে অনেক কম খরচ হবে আমরা ৮ জন ছিলাম তাই বেশি লাগছে

কি কি লাগবে

  • ২ কপি ভোটার আইডি / জন্মনিবন্ধনের ফটোকপি অবশ্যই
  • ৬ ঘন্টা হাটার মতো মানসিক প্রস্তুতি
  • বেশি পরিমাণ পানি আর শুকনা খাবার
  • সবচেয়ে বেশি কাজ দিবে চকলেট পিনাট বার প্যাচ পালস চকলেট
  • দয়াকরে গ্রিপ ধরে এমন জুতা পরবেন আর পাহাড়ে উপযোগী কাপড় পরিধান করবেন যাতে চলাচলে সুবিধা হয়

দয়াকরে পরিবেশ নষ্ট করবেন না। যেখানে সেখানে প্যাকেট গুলি আর খালি বোতল না ফেলে কষ্ট করে সাথে করে নিয়ে আসবেন এবং গাইডের কথা মতো চলবেন। ধন্যবাদ।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ Alikadamdamtuaexpense